লগইন করুন
আমরা প্রথম অধ্যায়ে জাহেলী যুগের শির্কের কেন্দ্রসমূহের ধরণ ও প্রকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এখানে আমরা এ বিষয়টি খতিয়ে দেখবো যে, বাংলাদেশে অবস্থিত শির্কের কেন্দ্রসমূহের সাথে সে যুগের কেন্দ্রসমূহের কতটুকু সাদৃশ্য বা বৈসাদৃশ্য রয়েছে। এ ক্ষেত্রে চিন্তা করলে দেখা যায় যে, ইসলাম পরবর্তী যুগে বিভিন্ন মুসলিম বা অমুসলিম দেশে বিশেষ করে আমাদের দেশে ওলীদের কবর বা তাঁদের নিদর্শনের উপর যে সব কেন্দ্র তৈরী করা হয়েছে, সেগুলোর বিশেষ ধরনের মিল রয়েছে নূহ ‘আলাইহিস সালাম-এর জাতির মধ্যকার ওয়াদ্দ, সুয়া‘, ইয়াগুস, ইয়া‘উক ও নসর নামের ওলিদের কবরে নির্মিত কেন্দ্রসমূহের সাথে; কেননা, তাঁদের নামে পৃথক পৃথক মূর্তি তৈরী করার পূর্বে তাঁদের ভক্তরা তাঁদের কবরগুলোর সাথে ঠিক সেরকমই আচরণ করেছিল যেরূপ আচরণ অধিকাংশ সাধারণ মুসলিমরা আজ তাদের ওলীদের কবরসমূহের সাথে করে থাকে।
সে সময় থেকে আরম্ভ করে সর্বশেষ নবী ও সর্বশেষ রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনের পূর্ব পর্যন্ত লোকেরা তাদের আউলিয়া ও নবীদের সম্মান ও তা‘জিম করতে গিয়ে এবং তাঁদেরকে সাধারণ মানুষের জীবনের কল্যাণার্জন এবং অকল্যাণ দূরীকরণের ক্ষেত্রে শাফা‘আতকারী মনে করার কারণেই তাঁদের কবরগুলোকে শির্কের কেন্দ্র বানিয়ে নিয়েছিল। ধীরে ধীরে মুসলিমরাও তাদের ওলীদের সম্মান ও তা‘জিম করতে গিয়ে এবং দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণার্জন ও অকল্যাণ দূরীকরণের ক্ষেত্রে তাঁদেরকে আল্লাহ ও তাদের মাঝে মধ্যস্থতাকারী ও শাফা‘আতকারী হওয়ার ধারণা করার ফলে তাঁদের কবর ও কবরগুলোকে ঠিক একই কায়দায় শির্কের কেন্দ্র বানিয়ে নিয়েছে।
পাগলদের কবরসমূহে নির্মিত কেন্দ্রসমূহ বা তথাকথিত বেলায়েতের দাবীদাররা নিজেদের জন্য যে সব কেন্দ্র নির্মাণ করেছে, সেগুলোরও ওলীদের কবরে নির্মিত কেন্দ্রের সাথে সম্পর্ক রয়েছে। এরা যদিও ওলীদের অন্তর্ভুক্ত নয়, তথাপি লোকেরা তাদেরকে অজ্ঞতাবশত ওলীদের মাঝে গণ্য করে নিয়েছে। এ ছাড়াও সে কালের গণকদের সাথে এদের বিশেষ রকমের মিল রয়েছে; কেননা, সে কালের গণকদের সাথে শয়তান জিনের সম্পর্ক ছিল, বর্তমান কালের বেলায়াতের দাবীদারদের সাথেও শয়তান জিনের গোপন সম্পর্ক রয়েছে।
এ জিনদের সহযোগিতাতেই যেমন গণকরা জনগণের উপকার করতো, তেমনি এরাও জিনদের সহযোগিতায় জনগণের উপকার করে থাকে। তাই সাধারণ লোকদের দৃষ্টিতে এরা আল্লাহর ওলি হয়ে থাকলেও মূলত তারা শয়তানের ওলি ও বন্ধু। সে জন্যেই তারা নিজেদের বেলায়াত লাভের বিষয় গোপন না রেখে পত্রিকান্তরে প্রকাশ করে। সাধারণত কা‘বা শরীফ ও মসজিদে নববী যিয়ারতের বদলে তারা আজমীর ও বাগদাদে যায়। নিজ নিজ খানকাতে ওরস পালনের নামে জাহেলী যুগের মুশরিকদের ন্যায় ঈদ পালন করে।
অবশিষ্ট বিভিন্ন গাছপালা, পুকুর, কূপ ও জীব জন্তুকে কেন্দ্র করে যে সকল শির্কের কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে, সেগুলোর মিল রয়েছে আরবের মুশরিকদের ‘লাত’ ‘উয্যা’ ‘মানাত’ ও ‘যাতে আনওয়াত’ নামের পাথর ও গাছকে কেন্দ্র করে নির্মিত শির্কের কেন্দ্রসমূহের সাথে; কেননা সেগুলোও গাছ ও পাথরকে কেন্দ্র করেই নির্মাণ করা হয়েছিল।