লগইন করুন
দেবতারা আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিতে সক্ষম : তারা মনে করতো যে, ওয়াদ, সুয়া‘ ও অন্যান্য আউলিয়া ও ফেরেশ্তাদের নামে নির্মিত লাত, উজ্জা ও মানাত নামের মূর্তি সমূহের আল্লাহর নিকটে অনেক মর্যাদা ও সম্মান রয়েছে, তারা তাদের সে মর্যাদার মাধ্যমে তাদের ভক্তদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিতে সক্ষম। সে জন্যই শরীর ও অন্তরের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন উপাসনার মাধ্যমে তারা সে সব দেবতাদের সন্তুষ্টি অর্জন করে আল্লাহর নিকটবর্তী হতে চাইতো। মূর্তির উপাসনার পিছনে এটাই যে তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল সে সম্পর্কে তারা স্পষ্ট করেই বলতো :
﴿مَا نَعۡبُدُهُمۡ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَى ٱللَّهِ زُلۡفَىٰٓ﴾ [الزمر: ٣]
‘‘দেবতারা যাতে আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়, কেবল সে উদ্দেশ্যেই আমরা তাদের উপাসনা করি।’’[1] তারা যেহেতু আখেরাতে বিশ্বাসী ছিল না, সেহেতু দেবতাদের মাধ্যমে আল্লাহর নিকটবর্তী হতে পেরে আল্লাহর পক্ষ থেকে পার্থিব আরাম, আয়েশ ও সুখ, শান্তি লাভ করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য।
আউলিয়া নামের দেবতাদেরকে শাফা‘আতকারী মনে করা :
তারা আউলিয়াদের নামে নির্মিত মূর্তি ও অন্যান্য দেবতাদের ব্যাপারে এ ধারণা পোষণ করতো যে, আল্লাহর সাথে এদের যে সম্পর্ক রয়েছে এবং তাঁর দরবারে এদের যে মর্যাদা ও সম্মান রয়েছে, সে সবের বদৌলতে তারা আল্লাহর দরবারে শাফা‘আত করে তাদের ভক্তদের পার্থিব কল্যাণ এনে দিতে এবং অকল্যাণ দূর করতে সক্ষম। তারা যে এমন ধারণা পোষণ করতো সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন :
﴿ وَيَقُولُونَ هَٰٓؤُلَآءِ شُفَعَٰٓؤُنَا عِندَ ٱللَّهِۚ ﴾ [يونس: ١٨]
‘‘তারা বলতো: এরা (দেবতারা) আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য শাফা‘আতকারী।’’[2]
আর এ-ধারণার ভিত্তিতেই তারা দেবতাদেরকে আহ্বান করে সেগুলোর নিকট তাদের বিভিন্ন আবেদন ও নিবেদন করতো।
দেবতার নিকট থেকে ভাগ্য যাচাই করা :
কোথাও যাওয়া বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ কর্ম করার পূর্বে তারা হুবল দেবতার নিকটে রাখা ভাগ্য নির্ধারক তীর দ্বারা ভাগ্য পরীক্ষা করে নিতো। ‘কাজ কর’ এ মর্মে লিখিত তীর উঠলে এতে তারা দেবতার অনুমতি রয়েছে বলে মনে করতো। তাদের এ কর্মসহ আরো কিছু কর্মের সমালোচনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে :
﴿إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَيۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ وَٱلۡأَزۡلَٰمُ رِجۡسٞ مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّيۡطَٰنِ ﴾ [المائدة: ٩٠]
‘‘নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ আর কিছু নয়।’’[3]
পৃথিবীর ঘটনা প্রবাহে নক্ষত্রের প্রভাবে বিশ্বাস করা :
পৃথিবীর ঘটনা প্রবাহে তারা নক্ষত্রের প্রভাবে বিশ্বাস করতো। কোন কোন তারকার প্রভাবে বৃষ্টি হতো বলেও বিশ্বাস করতো।[4] হাদীসে কুদসীতে এ-জাতীয় বিশ্বাসকে কুফরী বিশ্বাস বলে আখ্যায়িত করে মহান আল্লাহ বলেন,
« مَنْ قَالَ مُطِرْنَا بِنَوْءٍ كَذَا وَ كَذَا فَذَلِكَ كَافِرٌ بِيْ وَ مَؤْمِنٌ بِالْكَوْكَبِ»
‘‘... যে বলে অমুক অমুক তারকা উদিত বা অস্ত যাওয়ার ফলে বৃষ্টি হয়েছে, সে আমার সাথে কুফরী করলো এবং তারকার প্রভাবের প্রতি বিশ্বাসী হলো।’’[5]
ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদেরকে প্রতিপালকের বৈশিষ্ট্য দান করা:
তৎকালের ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্মীয় আহবার ও রুহবানদেরকে হালাল ও হারাম নির্বাচনকারী বানিয়ে নিয়েছিল। তারা কোনো বস্তুকে হালাল বা হারাম বললে তারা সে বস্তুকে তা-ই জ্ঞান করতো। তাদের কিতাবাদিতে সে বস্তুটির বিধান তাদের কথার বিপরীত লেখা থাকলেও তারা সে লেখার প্রতি কোন কর্ণপাত করতো না। আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ জাতীয় কর্মের সমালোচনা করে বলেন :
﴿ٱتَّخَذُوٓاْ أَحۡبَارَهُمۡ وَرُهۡبَٰنَهُمۡ أَرۡبَابٗا مِّن دُونِ ٱللَّهِ﴾ [التوبة: ٣١]
‘‘ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্মগুরুদেরকে আল্লাহ তা‘আলার বদলে অসংখ্য প্রতিপালক বানিয়ে নিয়েছিল।’’[6]
কোন কোন রোগ নিজ থেকে সংক্রমিত হয় বলে বিশ্বাস করা:
দাদ, একজিমা ও প্লেগ ইত্যাদি রোগ আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে নিজ থেকে অন্যের গায়ে সংক্রমিত হয়ে থাকে বলে তারা বিশ্বাস করতো। অনুরূপভাবে কোথাও যাওয়ার সময় পথিমধ্যে সামনে দিয়ে কোনো পাখি বা বন্য হরিণ বাম দিক থেকে ডান দিকে গেলে এটাকে তারা যাত্রা শুভ বলে মনে করতো, আর ডান দিক থেকে বাম দিকে গেলে এটাকে যাত্রা অশুভ বলে মনে করতো। এমনিভাবে রাতের বেলা গাছের ডালে বা ঘরের উপরে বসে পেঁচা অথবা নাম না জানা কোনো পাখি আওয়াজ করলে এটাকেও তারা অশুভ লক্ষণ বলে মনে করতো। তাদের এ জাতীয় শির্কী বিশ্বাসের সমালোচনা করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«لاَ عَدْوَى وَ لاَ طِيَرَةَ وَ لاَ هَامَّ»
‘‘আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছার বাইরে কোনো রোগ নিজ থেকে অন্যত্র সংক্রমিত হয় না, কোনো পাখিও কারো ভাগ্যের মঙ্গল অমঙ্গল জেনে ডানে বা বামে উড়ে যায় না, পেঁচা বা নাম না জানা কোনো পাখি গাছের ডালে বা কারো ঘরের উপর বসে রাতের বেলায় ডাকলে তাতে কোন অমঙ্গল নেই।’’[7]
>[2]. আল-কুরআন, সূরা ইউনুস : ১৮।
[3]. আল-কুরআন, সূরা মায়েদাহ্ :৯০।
[4]. মুহাম্মদ ইবন আব্দুল ওয়াহহাব, মাসাইলুল জাহিলিয়্যাহ; (মদীনা : মাতাবিউ জামে‘আতিল ইসলামিয়্যাহ, সংস্করণ বিহীন, ১৩৯৬হিজরী), পৃ১২৮।
[5]. ৬১ নং টীকা দ্রষ্টব্য।
[6]. আল-কুরআন, সূরা তাওবাহ : ৩১।
[7]. ইবনে হাজার আল-আস-কালানী, ফতহুল বারী বিশরহিল বুখারী; কিতাবুত্ত্বিব, বাব : কুষ্ঠরোগের বিবরণ, ১/১৫৮; মুসলিম, প্রাগুক্ত; ৪/১৭৪৩; ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, প্রাগুক্ত; ১/১৭৪।