লগইন করুন
এনাবত ‘إنابة’ শব্দের অর্থ হচ্ছে- অগ্রসর হওয়া, ধাবিত হওয়া, তাওবা করা। আল্লাহর দিকে ধাবিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে- অপরাধ করে বা না করে সর্বাবস্থায় অন্তরকে আল্লাহমুখী করে রাখা। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন :
﴿ وَأَنِيبُوٓاْ إِلَىٰ رَبِّكُمۡ وَأَسۡلِمُواْ لَهُ﴾ [الزمر: ٥٤]
‘‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দিকে ধাবিত হও এবং তাঁরই নিকট আত্মসমর্পণ কর।’’[1]
এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আমাদেরকে সর্বদা আল্লাহমুখী হয়ে থাকতে হবে, জীবনের যে কোনো অভাব ও অভিযোগের কথা সরাসরি কেবল তাঁরই নিকট পেশ করতে হবে। সর্ব অবস্থাতেই কোনো পীর বা অলির শরণাপন্ন হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে; কেননা, আমরা সর্বদাই তাঁর মুখাপেক্ষী, অপর কারো মুখাপেক্ষী নই। তিনি বলেছেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ أَنتُمُ ٱلۡفُقَرَآءُ إِلَى ٱللَّهِۖ وَٱللَّهُ هُوَ ٱلۡغَنِيُّ ٱلۡحَمِيدُ ١٥ ﴾ [فاطر: ١٥]
‘‘হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহর প্রতি মুখাপেক্ষী, আর আল্লাহ হলেন অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত।’’[2]
আমাদের অন্তরকে আল্লাহর প্রতি ধাবিত না করে আমরা যদি নিজের জীবনের কোনো অভাব অভিযোগ বা বিপদের কথা কোনো মৃত অলি ও দরবেশের কাছে বা তাঁদের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে পেশ করি, তা হলে আমরা অন্তরের ‘এনাবতের’ উপাসনায় তাঁদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করে নেবো; কারণ আমাদের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে :
﴿ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ﴾ [غافر: ٦٠]
‘‘তোমরা আমাকে আহ্বান করো, আমি তোমাদের আহ্বানে সাড়া দেব।’’[3]
সৎ এবং অসৎ নির্বিশেষে সকলের প্রতি এ আহ্বান থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি তার অভাব ও বিপদের সময় গায়রুল্লাহর শরণাপন্ন হয়, তা হলে সে যেন গায়রুল্লাহকেই তার ইলাহ ও প্রতিপালক বানিয়ে নিল। এখানে স্মর্তব্য যে, কোনো সৎ জীবিত মানুষকে অভাব মোচন ও বিপদ দূরীকরণের মালিক মনে না করে এবং তাঁকে মানুষের সমস্যাদি আল্লাহর নিকট উপস্থাপনের মাধ্যম মনে না করে তাঁর কাছে গিয়ে বিপদ দূরীকরণের জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করার জন্য বলা যেতে পারে। কোনো মানুষ মরে যাওয়ার পর তার কাছে কোনো দু‘আ কামনা করা যায় না। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
‘‘মানুষ যখন মরে যায় তখন তার যাবতীয় কর্ম বন্ধ হয়ে যায়’’।[4]
সার কথা :
একজন মুসলিম যখন এ কথার স্বীকৃতি দিবে যে, একমাত্র আল্লাহই আমার উপাস্য ও প্রতিপালক, তখন তাকে তার শরীরের বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং অন্তরের সাথে সম্পর্কিত যাবতীয় উপাসনা একমাত্র আল্লাহর জন্যেই করে তার এ স্বীকৃতির যথার্থতার প্রমাণ দিতে হবে। তাকে মনে রাখতে হবে যে, এ পৃথিবীতে আমার বাঁচা ও মরা, আমার যাবতীয় কাজ ও কর্ম কেবল আল্লাহর জন্যেই নিবেদিত হবে। প্রতিটি মুসলিমের মনের অভিব্যক্তি যে সর্বদা এটাই হতে হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
﴿قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٦٢ لَا شَرِيكَ لَهُۥۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرۡتُ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ١٦٣ ﴾ [الانعام: ١٦٢، ١٦٣]
‘‘বলুন : আমার সালাত, কুরবানী, জীবন ও মৃত্যু (সব কিছুই) সমগ্র জগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যেই নিবেদিত। তাঁর কোনো শরীক নেই, এ ঘোষণা দেওয়ার জন্যেই আমি আদিষ্ট হয়েছি, আর আমিই হলাম প্রথম আত্মসমর্পণকারী।’’[5]প্রত্যেকের মনের এ অভিব্যক্তিকে সত্যে পরিণত করতে হলে নিজেকে একজন যথার্থ মু’মিন বলে প্রমাণ করার জন্য নিজের উপাসনায় কোনো প্রকার শির্ক আছে কী না তা খতিয়ে দেখতে হবে এবং থাকলে তা পরিহার করে তাওবাহ ও ইস্তেগফার করে নিজের ঈমান ও ‘আমলকে সংস্কার করে নিতে হবে।
>[2]. আল-কুরআন, সূরা ফাত্বির : ১৫।
[3]. আল-কুরআন, সূরা গাফির : ৬০।
[4]. হাদীসটি নিম্নরূপ : إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ...ّ দেখুন: মুসলিম, প্রাগুক্ত; কিতাবুল ওয়াসিয়্যাহ, বাব নং ৩, ৩/১২৫৫; তিরমিযী, প্রাগুক্ত; কিতাবুল আহকাম, বাব নং ৩৬, হাদীস নং : ১৩৭৬; ৩/৬৬০; ইমাম আহমদ, প্রাগুক্ত; ২/৩৭২।
[5]. আল-কুরআন, সূরা আন‘আম : ১৬২।