লগইন করুন
দান ও সদকা মানুষের দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণার্জন ও অকল্যাণ দূরীকরণের ক্ষেত্রে একটি উপকারী মাধ্যম। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জন্য উৎসাহ প্রদান করে বলেছেন :
«اتَّقُوْا النَّارَ وَ لَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ»
‘‘তোমরা খেজুরের অর্ধেক দান করে হলেও আগুন থেকে বাঁচ।’’[1]
তিনি আরো বলেছেন :
«عَلٰى كُلِّ مُسْلِمٍ صَدَقَةٌ»
‘‘প্রত্যেক মুসলিমের উপর সদকা করা একান্ত জরুরী।’’[2]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকার ফযীলত বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন : তা বিপদ দূরীকরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যেমন তিনি বলেছেন :
«لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ الأَرْضَ جَعَلَتْ تَمِيدُ، فَخَلَقَ الجِبَالَ، فَقَالَ بِهَا عَلَيْهَا فَاسْتَقَرَّتْ، فَعَجِبَتِ المَلَائِكَةُ مِنْ شِدَّةِ الجِبَالِ. قَالُوا: يَا رَبِّ هَلْ مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنَ الجِبَالِ؟ قَالَ: نَعَمُ الحَدِيدُ. قَالُوا: يَا رَبِّ فَهَلْ مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنَ الحَدِيدِ؟ قَالَ: نَعَمُ النَّارُ. فَقَالُوا: يَا رَبِّ فَهَلْ مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنَ النَّارِ؟ قَالَ: نَعَمُ المَاءُ. قَالُوا: يَا رَبِّ فَهَلْ مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنَ المَاءِ؟ قَالَ: نَعَمُ الرِّيحُ. قَالُوا: يَا رَبِّ فَهَلْ مِنْ خَلْقِكَ شَيْءٌ أَشَدُّ مِنَ الرِّيحِ؟ قَالَ: نَعَمْ ابْنُ آدَمَ، تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ بِيَمِينِهِ يُخْفِيهَا مِنْ شِمَالِهِ»
‘‘আল্লাহ তা‘আলা যখন পৃথিবী সৃষ্টি করেন তখন তা দুলতে থাকে। অতঃপর আল্লাহ তাতে পর্বত সৃষ্টি করলে তা স্থির হয়ে যায়। তা দেখে ফেরেশতাগণ আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললেন : প্রভু হে! পর্বতের চেয়ে শক্তিশালী তোমার অপর কোন সৃষ্টি আছে কি? আল্লাহ বললেন: ‘হ্যাঁ, এর চেয়ে শাক্তশালী হলো লোহা।’ তারা বললেন : প্রভু হে! লোহার চেয়ে শক্তিশালী আর কিছু আছে কি? আল্লাহ বললেন : ‘‘হ্যাঁ, তা হলো আগুন।’’ তারা বললো : প্রভু হে! আগুনের চেয়ে শাক্তিশালী কিছু আছে কি? আল্লাহ বললেন : ‘হ্যাঁ, আগুনের চেয়ে শক্তিশালী হলো বাতাস। তারা আবার বললো : প্রভু হে! বাতাসের চেয়ে শক্তিশালী কিছু আছে কি? আল্লাহ বললেন : ‘হ্যাঁ, আদম সন্তান উদার চিত্তে যে দান করে তা (বিপদ দূরীকরণের ক্ষেত্রে) বাতাসের চেয়েও অধিক শক্তিশালী।’’[3]
সদকা সঠিক হওয়ার শর্ত :
সদকা করার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম, এতে কারো দ্বি-মত নেই। কিন্তু এ সদকা সঠিক হওয়া ও এটিকে উপাসনায় পরিণত করার জন্য যে দু’টি পূর্ব শর্ত রয়েছে, সে সম্পর্কে অনেকেরই জ্ঞানের অভাব রয়েছে।
সদকা সঠিক হওয়ার প্রথম শর্ত : সদকা স্বাভাবিক আর অস্বাভাবিক যে অবস্থায়ই করা হোক না কেন তা কেবল আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যেই হতে হবে। কোনো প্রকার লোক দেখানো ভাব থেকে তা মুক্ত হতে হবে।
দ্বিতীয় শর্ত :
উপরে বর্ণিত দাহহাক রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীসের মর্মানুযায়ী যে স্থানের নামে সদকা করা হয়েছে সে স্থানটি শির্ক সংঘটিত হওয়ার সম্ভাব্য স্থান হওয়া থেকে মুক্ত হতে হবে।এ দু’টি শর্তের আলোকে বলা যায়, কেউ যদি সদকা করার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টির পাশাপাশি সামান্যতম লোক দেখানোরও উদ্দেশ্য করে, তবে এতে সে ব্যক্তি শির্কে আসগরে নিমজ্জিত হবে। আর কবর ও মাযার যেহেতু শির্ক সংঘটিত হওয়ার সম্ভাব্য স্থান, সেহেতু সেখানে সদকা করার কোনো বৈধতা নেই। যেহেতু শরী‘আতে মাযার নির্মাণ অবৈধ এবং মাযারে দান করাও অবৈধ, তাই মাযারের অবৈধ টাকায় সেখানে কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলাও অবৈধ।
মাযারে টাকা দান করা যেহেতু হারাম, সুতরাং সেখানে কোনো ফকীর, মিসকীন ও ভবঘুরে লোকদেরও ভিড় জমাবার কোনো আবশ্যকতা নেই। সাধারণত মাযারে যারা দান করে তারা এ দানের মাধ্যমে মাযারস্থ অলির সন্তুষ্টি লাভ করে তাঁর নিকট থেকে বা তাঁর মাধ্যম্যে আল্লাহর নিকট থেকে তাদের দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণ সাধনের জন্যেই তা দান করে। এ জাতীয় দান ও কামনা শির্কে আকবারের অন্তর্গত। কাজেই সাদকা দানের ক্ষেত্রে শির্ক থেকে বাঁচতে হলে যে সমস্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অলিদের মাযার কেন্দ্রিক নয়, কেবল সেখানেই সাদকা করতে হবে।
>[2]. মুসলিম, প্রাগুক্ত; কিতাবুজ যাকাত, বাব নং ১৬, হাদীস নং ১০০৮; ২/৬৯৯; ইমাম আহমদ, প্রাগুক্ত; ৪/৩৯৫।
[3].ইমাম আহমদ, প্রাগুক্ত; ৩/১২৪; ইবনু কাইয়্যিম আল-জাউযিয়্যাহ, মিফতাহু দারিস সা‘আদাঃ, (বৈরুত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, সংস্করণ বিহীন, তারিখ বিহীন), পৃ. ২১৮। [হাদীসটি তিরমিযীতেও এসেছে, নং ৩৩৬৯; তবে হাদীসটি দুর্বল। সম্পাদক]