লগইন করুন
আল্লাহ তাআলা বলেন, “---বল, আল্লাহই সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনেন ও পরে ওর পুনরাবর্তন ঘটান। সুতরাং তোমরা কেমন করে সত্য-বিচ্যুত হচ্ছাে? তুমি বল, তোমরা যাদেরকে (আল্লাহর) শরীক কর তাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে সত্যের পথ নির্দেশ করতে পারে? বল, আল্লাহই সত্য পথ নির্দেশ করে থাকেন। অতএব যিনি সত্যপথ নির্দেশ করেন তিনিই আনুগত্যের অধিকতর হকদার, নাকি যে তার পথ-প্রদর্শন ব্যতীত পথ পায় না সে? সুতরাং তোমাদের কি হয়েছে, কেমন তোমাদের বিচার? আসলে তাদের অধিকাংশই অনুমান ও কল্পনারই অনুসরণ করে থাকে। অথচ নিশ্চয় সত্যের পরিবর্তে অনুমান কোন কাজে আসে না। তারা যা করে আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত।” {সূরা ইউনুস ৩৪-৩৬ আয়াত) কল্পনার কলে পড়ে যেমন এ শ্রেণীর লোকেরা সত্যকে প্রত্যাখান করে ঠিক তেমনিই বহু উদ্ভট অসত্য বিশ্বাস করে থাকে এরা। শুধু এরা এদের নিজ ধারণা ও চিন্তাবলে সত্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে অনেক সময় অনেক চিন্তাবিদ সত্যাশ্রয়ীদের নিকট হাস্যস্পদ হয়ে ওঠে। যেমন এক শহুরে চিন্তাবিদ পাড়া-গ্রামে এসে দেওয়ালে খুঁটে দেখে এই চিন্তাদ্বন্দ্বে পড়েছিল যে, এই দেওয়ালে গরু কিভাবে উঠে বিষ্ঠা ত্যাগ করল?!' তদনুরূপ বাদরের সাথে মানুষের আকৃতির। মিল দেখে বহু চিন্তাবিদের ধারণা হল, 'বহু কাল পূর্বে মানুষ আসলে বানর ছিল, পরে এর বিবর্তন ঘটেছে!' অর্থাৎ, তারা নাকি বাদরের জাত!!
মোট কথা, পরকালে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীর জীবন-ধারা এক নয়। হতেও পারে না এক। একজন জানে যে, তাকে আমানতে দেওয়া প্রত্যেক পয়সা ও প্রত্যেক আয়-ব্যয়ের যথার্থ হিসাব লাগবে। আর একজন পরের ধনে পোদ্দারি করে এবং মনে করে যে, তাকে একটি পয়সারও হিসাব লাগবে না। তার আয়-ব্যয়ের হিসাব নেওয়ার মত কেউ নেই। এই উভয় লোকের খরচে ও স্বাচ্ছন্দ্যে বিরাট পার্থক্য আছে। পুঁজি ভেঙ্গে খেতে ভালো, ভিটেন গাঙে যেতে ভালো, যত কষ্ট বুঝতে আর উজুতে।' একজন জানে যে, সে কেবল পরের জমা করা ধন ভেঙ্গে খেয়ে যাবে, আর তাকে হিসাব বুঝাতে হবে না। নদীর ভাটার টানে তার নৌকা আপনা-আপনিই বয়ে যাবে এবং পরবর্তী কালে উঝানে আর উঠতে হবে না এমন লোক; আর যে জানে যে, তাকে তার ঐ ভেঙ্গে খাওয়া অর্থের পুঙ্খানুপুঙ্খরূপ হিসাব লাগবে, প্রত্যেক কাজ ও খরচের জন্য জবাবদিহি করতে হবে, জীবন-তরীকে পার্থিব ভোগ-বিলাস ও খেয়াল-খুশীর ভাটায় ভাসিয়ে দিলেও একদিন তাকে উঝান বেয়ে ফিরে যেতেই হবে। -এই উভয় মানুষের জীবন-পদ্ধতি, আহার-বিহার, চাল-চলন এক হতে পারে না। মানুষকে ভেবে দেখা উচিত যে, এ জীবনের মূল উদ্দেশ্য কি? মূল লক্ষ্য কি? কেন সে সৃষ্টি হয়েছে? তার কর্তব্যই বা কি? মূল লক্ষ্য কি কেবল রিপু ও ইন্দ্রিয়-সেবন? আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য কি পার্থিব সুখ ও সফলতা? যদি তাই হয় তবে তা তো চিরস্থায়ী নয়। এ বিপুল সুখের ভরপুর আয়োজন ক’দিনের জন্য? সে সুখের স্বপ্ন নিদ্রাভঙ্গ হলেই যে নিঃশেষ হয়ে যাবে। তারপর কি? মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি, আর তোমরা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে না?” (সূরা মুমিনুন ১১৫ আয়াত)
“মানুষ কি মনে করে যে, তাকে এমনিই ছেড়ে দেওয়া হবে?” (সূরা কিয়ামাহ ৬) না কক্ষনই না। “আমি দানব ও মানবকে তো আমার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি।” (সূরা যারিয়াত ৫৬)
“মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার অস্থিসমূহ একত্রিত করতে পারব না? বস্তুতঃ আমি ওর অঙ্গুলিগুলো পর্যন্ত পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম। তবুও যা অবশ্যম্ভাবী মানুষ তা অস্বীকার করতে চায়।” (সূরা কিয়ামাহ ৩-৫ আয়াত)
পূর্বোক্ত আলোচনার পরেও কোন যুবকের মনে আর কোন প্রশ্ন থাকা উচিত নয় যে, ধর্মহীন, লাগামছাড়া হওয়া সত্ত্বেও ওরা পার্থিব ব্যাপারে কত উন্নত জাগতিক সুখ ওদের পায়ে লুটিয়ে পড়েছে। আর আমাদের অবস্থা এমন হয়েছে যে, যে করবে ধম্ম, তার কাঁদতে যাবে জন্ম। কারণ, আমরা সে সুখ প্রতিযোগিতায় নামতে চাইনি। তাছাড়া আমাদের জন্য রয়েছে আমাদের প্রতিপালকের আশ্বাসবাণী; তিনি বলেন, “তোমাদেরকে যা কিছু দেওয়া হয়েছে, তা তো পার্থিব-জীবনের ভোগ ও শোভা এবং যা আল্লাহর নিকট আছে তা উত্তম ও স্থায়ী। তোমরা কি বুঝ না? যাকে আমি উত্তম পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি -যা সে পাবে, সে কি ঐ ব্যক্তির মত যাকে আমি পার্থিব জীবনের ভোগ-সম্পদ দিয়েছি, যাকে পরে কিয়ামতের দিন অপরাধীরূপে উপস্থিত করা হবে?” (সূরা কাসাস ৬০-৬১ আয়াত)
“বস্তুতঃ তোমাদেরকে যা কিছু দেওয়া হয়েছে তা পার্থিব জীবনের ভোগ্য; কিন্তু আল্লাহর নিকট যা আছে তা যারা ঈমান রাখে ও নিজেদের প্রতিপালকের উপর নির্ভর করে তাদের জন্য উত্তম ও স্থায়ী।” (সূরা শুরা ৩৬ আয়াত)।
ছন্নছাড়া সে কাফেরদের সুখ-সম্ভােগ দেখে কোন মুসলিমের চোখ টাটানো উচিত নয়। সাধারণতঃ সেই জিনিসে মানুষের ঈর্ষা জন্মে, যাতে আছে উপকার ও কল্যাণ পার্থিব ভোগবিলাসে ক্ষণকালীন সুখ ছাড়া চিরকালীন কল্যাণ নেই। অতএব সে সম্পদে ঈর্ষা জন্মানো। মুসলিমের সমীচীন নয়।
মহান আল্লাহ বলেন, “আমি অবিশ্বাসীদের কতককে তাদের পরীক্ষা করার জন্য পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য-স্বরূপ ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়ে রেখেছি, তার প্রতি তুমি কখনো দৃষ্টি ফিরিয়ে দেখো না। তোমার প্রতিপালকের উপজীবিকাই উৎকৃষ্টতর ও চিরস্থায়ী।(সূরা ত্বহ ১৩১ কাফেররা দুনিয়ায় সুখ ভোগ করবে। এটাই বিধির বিধান। তাদেরকে দুনিয়া দেওয়া হয়েছে। এবং হবেও। আর মুসলিমদের জন্য রয়েছে আখেরাত। দুনিয়াটাই হল কাফেরদের বেহেশু। তারপর চিরস্থায়ী আযাব। আর মুসলিমের ক্ষণকাল দুঃখ হলেও তার জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী বেহেস্তী সুখ পরকালে বেহেশ্যে। আল্লাহ তাআলা বলেন, “সত্য-প্রত্যাখ্যানে মানুষ এক মতাবলম্বী হয়ে পড়বে এই আশঙ্কা থাকলে দয়াময় আল্লাহকে যারা অস্বীকার করে তাদেরকে তিনি ওদের গৃহের জন্য রৌপ্যনির্মিত সিঁড়ি দিতেন, রৌপ্যনির্মিত দরজা ও বিশ্রামের পালঙ্ক দিতেন। আর দিতেন স্বর্ণের অলঙ্কার। কিন্তু এ সব তো পার্থিব জীবনের ভোগ-সম্ভার। আর সংযমীদের জন্য তোমার প্রতিপালকের নিকট পরলোকের কল্যাণ আছে।” (সূরা যুখরুফ ৩৩-৩৫ আয়াত)।
“অতএব ওদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাকে মুগ্ধ না করে। আল্লাহ তো ওর দ্বারাই ওদেরকে পার্থিব জীবনে শাস্তি দিতে চান।” (সূরা তাওবাহ ৫৫ আয়াত)।
ওরা কতই বা উন্নত? প্রগতির নামে অধোগতির সমাজে কত যে দুর্গতি তাদের, তা বহু মানুষই জানে। তারা পার্থিব জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ সত্য, কিন্তু তারা পার্থিব জীবনের বাহ্যিক দিক সম্বন্ধে অবগত, পক্ষান্তরে ওরা পরকাল সম্বন্ধে একেবারে গাফেল।” (সূরা রূম ৭ আয়াত)
ওরা পার্থিব ঐ উন্নতি নিয়ে চাদে যেতে পারে, মঙ্গল বা অন্য কোন গ্রহে বাস করতে পারে, কিন্তু বেহেশ্যে পৌছতে পারে না নিশ্চয়। আর মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত’ হলেও, চাদে বা অন্য গ্রহে না যেতে পারলেও বেহেস্তে যাওয়ার পথ তার জন্য সুগম। পার্থিব ও বৈজ্ঞানিক উন্নতির পথে ইসলাম তো বাধা দেয় না; বরং যে কাজেই মানুষের কল্যাণ আছে সেই কাজেই ইসলাম মুসলিমকে অনুপ্রাণিত করে। তবুও প্রগতিশীল মানুষদের ধারণা যে, ইসলাম বিজ্ঞানের পথে বাধাস্বরূপ। যেমন কবি বলেছেন,
‘বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে তখনো আমরা বসে,
বিবি-তালাকের ফতোয়া খুঁজেছি ফিকা ও হাদীস চষে।
কিন্তু আমরা যদি কবিকে প্রশ্ন করি যে, আপনিও তো বসে আছেন, অথচ লোকে চাঁদে গেল, মঙ্গল গ্রহে পা রাখল?
‘বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে তখনো আমরা বসে,
কলম ধরিয়া কবিতা লিখেছি মনের রস ও রোষে।
তখন নিশ্চয় কবি বলবেন, 'চাদে যাওয়ার কাজ তো আমার সাধ্যে নয়। আমার সে উপায়। উপকরণ নেই। তাহলে যারা ফিকা ও হাদীস চষে বিবি-তালাকের ফতোয়া খুঁজেন তারাও নিশ্চয় বলবেন, ও কাজ আমাদের নয়। আমাদের ও কাজে সাধ্য ও উপায়-উপকরণ কিছুই নেই। এখন চাদে যদি না-ই যেতে পারি, তাহলে ধর্মও কি ছেড়ে বসতে হবে? হারামহালালের তমীজও কি বাদ দিতে হবে?’ পরন্তু মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর বিধানে হারামহালালের তমীজ করা হল ফরয। আর কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে চাদে যাওয়া হল বড় জোর মুস্তাহাব। চাঁদ বা মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার চেয়ে আমাদের কাছে বেহেস্তে যাওয়া অধিকতর। গুরুত্বপূর্ণ। তবুও চাদে যেতে ইসলাম মানা করেনি। তবে ইসলাম ও তার উলামা সমাজের প্রতি এ কটাক্ষ কেন?
এ কটাক্ষ করা চলে তাদের প্রতি, যাদের হাতে আছে বিভিন্ন উপায়-উপকরণ। যাদের ক্ষমতায় আছে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে বিজ্ঞান-মন্দির, গবেষণাগার প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা করে লুক্কায়িত শত শত প্রতিভার প্রতিভাত ঘটানোর কাজ। সুতরাং কবির জন্য শোভনীয় ছিল। এই বলা,
বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে তখনো আমরা বসে,
ভোগ-বিলাসের সিংহাসনে মত্ত থেকেছি রসে।
যাই হোক, পার্থিব জগতের চাকচিক্য নিয়ে ওরা বডড় খোশ। আর তারা মনে করে যে, ধর্মের বাঁধনে তারা আবদ্ধ নয় বলেই তাদের এই উন্নতি। নৈতিক বাধ্য-বাধকতা মানে না বলেই তারা জ্ঞান-বিজ্ঞানে এত উন্নত। কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তা বলেন, “যারা অবিশ্বাস করেছে তারা যেন এ ধারণা না করে যে, আমি তাদেরকে যে সুযোগ দিয়েছি, তা তাদের জন্য কল্যাণকর। তারা স্বীয় পাপ বর্ধিত করবে এই উদ্দেশ্যেই আমি তাদেরকে ঢিল দিয়ে রেখেছি। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাপ্রদ শাস্তি।” (সূরা আ-লি ইমরান ১৭৮)
যদিও তারা আজ ধর্মভীরুদেরকে ব্যঙ্গ করে ও নিজেদেরকেই চির উন্নত মনে করে তবুও প্রকৃতপ্রস্তাবে চির উন্নত হল মুসলিমরাই। চির’ শব্দের অর্থ মরণ পর্যন্তই বিস্তৃত নয়। চির’ হল অনন্তকালের জন্য মরণের পরপারেও যে জীবন, সে জীবনকেও পরিব্যাপ্ত।
আল্লাহ তাআলা বলেন, “যারা অবিশ্বাস করছে, তাদের পার্থিব জীবন সুশোভিত করা হয়েছে, আর তারা বিশ্বাসী (মুসলিমদের)কে ঠাট্টা করে থাকে। অথচ যারা ধর্মভীরু তাদেরকে কিয়ামতে সমুন্নত করা হবে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবিকা দান করেন।” (সূরা বাকারাহ ২ ১২) সুতরাং অধোগতি মাকা’ সে সব প্রগতিশীল মানুষদের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ার কোন অর্থ থাকতে পারে কি? এমন সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে মুমিনদেরকে নিষেধ করা হয়েছে।
একদা দুই জাহানের বাদশাহ, নবীকুল-শিরোমণি হযরত মুহাম্মাদ (সা.) চাটাই-এর উপর হেলান দিয়ে শুয়ে ছিলেন। তার পার্শ্বদেশে চাটাই-এর স্পষ্ট দাগ পড়ে গিয়েছিল। তার বগলে ছিল খেজুর গাছের চোকার বালিশ! তা দেখে হযরত উমার কেঁদে ফেললেন। আল্লাহর রসূল
# জিজ্ঞাসা করলেন, “হঠাৎ কেঁদে উঠলে কেন, হে উমার?” উমার বললেন, হে আল্লাহর রসুল! পারস্য ও রোম-সম্রাট কত সুখ-বিলাসে বাস করছে। আর আপনি আল্লাহর রসুল হয়েও এ অবস্থায় কালাতিপাত করছেন? আপনি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন, যেন তিনি আপনার উম্মতকে পার্থিব সুখ-সম্পদে সমৃদ্ধ করেন। পারস্য ও রোমবাসীদেরকে আল্লাহ দুনিয়ার সুখ-সামগ্রী দান করেছেন, অথচ তারা তাঁর ইবাদত করে না!
এ কথা শুনে মহানবী ঃ হেলান ছেড়ে উঠে বসলেন এবং বললেন, “হে উমার। এ ব্যাপারে তুমি এমন কথা বল? ওরা হল এমন জাতি, যাদের সুখ-সম্পদকে এ জগতেই ত্বরান্বিত করা হয়েছে। তুমি কি চাও না যে, ওদের সুখ ইহকালে আর আমাদের সুখ পরকালে হোক?” (বুখারী ৫১৯১, মুসলিম, ইবনে মাজাহ, সহীহুল জামে ১৩২৭ নং)। মহান আল্লাহ বলেন, “যেদিন অবিশ্বাসীদেরকে দোযখের নিকট উপস্থিত করা হবে, সেদিন ওদেরকে বলা হবে, 'তোমরা তো পার্থিব জীবনে তোমাদের সুখ-সভার ভোগ করে শেষ করেছ। সুতরাং আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর শাস্তি দেওয়া হবে। কারণ, তোমরা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিলে এবং তোমরা ছিলে সত্যদ্রোহী।” (সূরা আহক্বাফ ২০)
প্রগতিশীল যুবক বন্ধু আমার! জাগতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে তুমি বিরাট বড় হয়ে বিরাট কিছু হতে পার, কিন্তু পরলোকে তুমি মিসকীন৷ এ জগতে তোমার ৫০০/৭০০ বিঘা জমি থাকতে পারে, হতে পার জমিদার। কিন্তু জান্নাতের মাটিতে তোমার এক-আধ কাঠা জায়গা কেনা না থাকলে নিশ্চয় তুমি নিঃস্ব। মানুষের দাসত্ব (চাকরী) করে তুমি মোটা অঙ্কের টাকা কামিয়ে বড় সুখী হতে পার। কিন্তু আল্লাহর দাসত্ব না করলে তুমি প্রকৃত ও চিরসুখী কখনোই হতে পার না। তুমি বহু কিছু হতে পার, কিন্তু প্রকৃত মুসলিম না হলে কিছুই নও। নৌকাচালক মাঝি বীজগণিতের ফরমুলা মুখস্থ না করলে, ভৌতবিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রক্রিয়া না জানলে, ভূগোলের গোল্লা না বুঝলে, ইতিহাসের ইতিবৃত্ত না জানলে তার জীবনের ১২ আনাই মিছে সত্যই, কিন্তু নৌকায় চড়ে কুলকুল-তান নদীর বুকে ঝড়ের তালে তালে যখন পানি ফুলে। ফুলে উঠে নৌকাডুবি হবে, তখন সে সময়ে নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য যদি মাঝির মত সঁতার না শিখে থেকো তাহলে তুমি যত বড়ই পন্ডিত হও -তোমার জীবনের ১৬ আনাই মিছে। তোমার প্রগতির গাড়ির গতিবেগ যত বেশীই হোক না কেন, তবুও সে গাড়ি ঐ কবরডাঙ্গা পর্যন্ত চলমান। অতঃপর সে গাড়ি বদলি করতে হবে এবং তোমার গাড়ি যে অচল হয়ে থেকে যাবে, আর সেখানে যে তোমার প্রগতি অধোগতিতে পড়ে কি দুর্গতি হবে তা কি ভেবেছ?
গর্বিত বন্ধু আমার অহংকার প্রদর্শন করো না। দুনিয়া পেয়েছ বলে ধর্মপ্রাণ মানুষদেরকে দেখে নাক সিটকায়ো না। যে সুখ আছে, সে সুখ তোমার ক’দিনকার?
শত কামনা, শত বাসনা, শত আশার ফুলের মুকুল,
মরণ-তুফান আসিয়া নিমেষে ভাসাবে ভোগের স্নিগ্ধ দু’কুল।
মনের আশা রহিবে মনেই, ছিন্ন হইবে সকল বাঁধন,
হাটের মৎস্য হাটেই রহিবে মসলা বেঁটেও হবে না রাঁধন।
এসে গেলে সে
গাড়িপ্রস্তুত হওয়ার সময় দেবে না যেতে হবে তাড়াতাড়ি।
‘হে ভাই যুবক! ভেবে দেখ তুচ্ছ এই দুনিয়া নিয়ে, দুনিয়ার বিশ্বাসঘাতকতা ও জুলুমবাজি নিয়ে, তার ধোকাবাজি ও ক্ষণস্থায়িত্ব নিয়ে। চিন্তা কর দুনিয়াদার ও সংসার-প্রেমী মানুষদের কথা; যাদেরকে দুনিয়া বিভিন্ন কষ্টে ক্লিষ্ট করেছে, পান করিয়েছে নানান তিক্ত ও বিষময় শারাব। যাদেরকে সামান্য আনন্দ দান করলেও কাদিয়েছে ও দুঃখ দিয়েছে বেশী।
ভেবে দেখ দোযখ নিয়ে, দোযখের জ্বলন্ত অগ্নিশিখা ও লেলিহান দাহিকাশক্তি নিয়ে। মনের গহীন কোণে একবার কল্পনা করে দেখ জাহান্নামের গভীরতা, তার কঠিন তাপ ও ভীষণ উষ্ণতা এবং আরো বিভিন্ন আযাব নিয়ে।
ভেবে দেখ, দোযখবাসীদের কথা; যাদেরকে সেখানে উপস্থিত করা হবে এবং তাদের চেহারা হবে বিকট কালো, চক্ষু হবে গাঢ় নীল, তাদের ঘাড়ে থাকবে বেড়ি ও শিকল। অতঃপর যখন তাদের সম্মুখে দোযখের দরজা খুলে দেওয়া হবে তখন সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে তাদের হৃদয় বিদগ্ধ হবে, হুঁশ হারিয়ে যাবে এবং শত আক্ষেপ ঘিরে ধরবে তাদের মন ও মগজে। ভাই যুবক! তুমি কত বছর বাচবে এ দুনিয়াতে? ৬০ বছর? ৮০, ১০০ অথবা ১০০০ বছর? তারপর কি? তারপর নিশ্চয়ই মুত্যু। তারপর হয় বেহেস্তের সুখময় বাসস্থান। নচেৎ দোযখের জ্বালাময় ঠিকানা। ভাইজান! তুমি কি দুনিয়ার এ ক'টা দিন, এ ক্ষণস্থায়ী জীবনের ক’টা বছর আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্য রাখতে পারবে না? তোমার মন কি চায় না যে, কাল মরণের পর তুমি লাভ করবে চিরস্থায়ী জীবনের ইচ্ছাসুখের অনন্তকালের চির আনন্দ? (আখিল হাবীব দ্রঃ) পরিশেষে এস দুআ করি,
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ