লগইন করুন
মানুষের দুর্গতি ও দুর্দশা আসার কারণ এবং আল্লাহ তার বান্দাদের উপর থেকে কিভাবে তা দূর করেন সে কথা কুরআন কারীম উল্লেখ করেছে। যেমন তিনি বলেন,
১।
ذَٰلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ لَمْ يَكُ مُغَيِّرًا نِّعْمَةً أَنْعَمَهَا عَلَىٰ قَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ
অর্থাৎ, তা এ জন্য যে, আল্লাহ যে সম্পদ কোন সম্প্রদায়কে দান করেন । তিনি পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন। করেছে। (সূরা আনফাল ৫৩ আয়াত)
২।
وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ
অর্থাৎ, তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে থাকে তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে থাকেন। (সূরা শুরা ৩০ আয়াত)
৩।
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
অর্থাৎ, মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে; যাতে তিনি ওদের কোন কোন কর্মের প্রতিফল ওদেরকে আস্বাদন করান, যাতে ওরা। (সৎপথে) ফিরে আসে। (সূরা রূম ৪১ আয়াত)
৪।
وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا قَرْيَةً كَانَتْ آمِنَةً مُّطْمَئِنَّةً يَأْتِيهَا رِزْقُهَا رَغَدًا مِّن كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِأَنْعُمِ اللَّهِ فَأَذَاقَهَا اللَّهُ لِبَاسَ الْجُوعِ وَالْخَوْفِ بِمَا كَانُوا يَصْنَعُونَ
অর্থাৎ, আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এমন এক জনপদের যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, যেখানে সর্বদিক হতে অনায়াসে জীবিকা আসত, অতঃপর তারা। আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করল, ফলে তারা যা করত তার কারণে আল্লাহ। তাদেরকে ক্ষুধা ও ভীতির আস্বাদ গ্রহণ করালেন। (সূরা নাহল ১১২ আয়াত)
৫৷ উক্ত আয়াতে কারীমাগুলি বর্ণনা করে যে, আল্লাহ তাআলা ন্যায়পরায়ণ এবং হিকমত ও প্রজ্ঞাময়। আল্লাহ কোন জাতির উপর যে বিপদ অবতীর্ণ করেন তা একমাত্র তাদের আল্লাহর অবাধ্যাচরণ এবং তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণের কারণেই, বিশেষ করে তওহীদ হতে দূর হওয়া এবং শির্কের ঘটা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে, যা অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রগুলিতে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে এবং যার ফলে তার অধিবাসীরা ভয়ানক ফিতনা ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। আর যে ফিতনা কোনদিন দূরও হবে না; যদি না তারা তওহীদের প্রতি এবং তাদের জীবনে, সমাজে ও রাষ্ট্রে তার শরীয়তের চিরন্তন সংবিধান প্রতিষ্ঠাকরণের প্রতি প্রত্যাবর্তন করে।
৬। কুরআন মুশরিকদের অবস্থা উল্লেখ করে বলে যে, তারা বিপদ ও সঙ্কটমুহূর্তে একমাত্র আল্লাহকে ডাকত, অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে তা হতে উদ্ধার করলে তারা পুনরায় শির্কে ফিরে যেত আর সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের সময় গায়রুল্লাহকে ডাকত। আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَإِذَا رَكِبُوا فِي الْفُلْكِ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ فَلَمَّا نَجَّاهُمْ إِلَى الْبَرِّ إِذَا هُمْ يُشْرِكُونَ
অর্থাৎ, ওরা যখন জলযানে আরোহণ করে তখন বিশুদ্ধ-চিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে; অতঃপর তিনি যখন ওদেরকে উদ্ধার করে স্থলে পৌছে দেন, তখন ওরা শির্ক করে। (সূরা আনকাবুত ৬৫ আয়াত)
৭। বর্তমান যুগের বহু মুসলমানই কোন বিপদে পড়লে গায়রুল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনার সাথে আর্তনাদ করে ডাকে, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইয়া জীলানী! ইয়া রিফায়ী! ইয়া মারগানী! ইয়া বাদবী! ইয়া শায়খুল আরব! (অনুরূপ ইয়া দাতা, ইয়া খাজা, ইয়া বাবা অমুক! ইয়া মুরশিদ! ইত্যাদি) সুতরাং এরা বিপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে উভয় অবস্থাতেই আল্লাহর সহিত শির্ক করে এবং নিজেদের প্রতিপালক ও তাঁর রসূলের কথা ও নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে।
৮ উহুদ-যুদ্ধে কিছু তিরন্দাজ সেনাপতির নির্দেশের অন্যথাচরণ করলে মুসলিমগণ পরাজিত হন। এতে সকলে আশ্চর্যান্বিত হলে আল্লাহর নিকট থেকে জওয়াব এল, (قُلْ هُوَ مِنْ عِندِ أَنفُسِكُمْ)। অর্থাৎ বল, এ তোমাদের নিজেদের তরফ হতে। (তোমাদের নিজেদের কর্মদোষে।) (সূরা আলে ইমরান ১৬৫ আয়াত)
হুনাইন-অভিযানে কিছু মুসলিম বলেছিলেন যে, ‘সংখ্যালঘুদের নিকট আমরা কখনোই পরাজিত হব না!” কিন্তু এরই ফলে পরাজয় তাদেরই ছিল। আল্লাহর নিকট হতে ভর্ৎসনা এল,
وَيَوْمَ حُنَيْنٍ ۙ إِذْ أَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنكُمْ شَيْئًا
অর্থাৎ, এবং হুনাইনের দিন যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদেরকে চমৎকৃত করেছিল। কিন্তু তা তোমাদের কোন উপকারে আসে নি। (সূরা তাওবাহ ২৫ আয়াত)
৯। উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) তার ইরাকের সেনাপতি সা’দকে লিখেছিলেন, '--- এবং তোমরা বলো না যে, আমাদের শত্রুরা আমাদের অপেক্ষা নিকৃষ্ট; তাই তাদেরকে আমাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে (আল্লাহর তরফ হতে) কখনোই দেওয়া হবে না। যেহেতু কত জাতির উপর তাদের চেয়ে নিকৃষ্টতর। শাসকদেরকে আধিপত্য দেওয়া হয়েছে। যেমন বানী ইসরাঈলের উপর তাদের পাপকর্মের ফলে অগ্নিপূজক কাফেরদলকে আধিপত্য দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং তোমরা তোমাদের আত্মার বিরুদ্ধে আল্লাহর নিকট সাহায্য চাও, যেমন তোমরা তোমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে তার সাহায্য প্রার্থনা করে থাক।