লগইন করুন
আল্লাহ তাআলা বলেন, (وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِينَ) অর্থাৎ, মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব। (সূরা রুম ৪৭ আয়াত) উক্ত আয়াতে কারীমায় এ কথাই ব্যক্ত হয়েছে যে, আল্লাহ মুমেনদেরকে সাহায্য ও বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তা এমন এক প্রতিশ্রুতি যার অন্যথা হবে না। সুতরাং তিনি তার রসূল (সা.)-কে বদর, খন্দক প্রভৃতি যুদ্ধে বিজয়ী করেছেন এবং তাঁর পর তাঁর সাহাবার্গকে তিনি তাদের শত্রুদের উপর বিজয়ী করেছেন। যার ফলে ইসলাম প্রসার লাভ করেছে, বহু দেশ জয় হয়েছে এবং বিভিন্নমুখী অঘটন ও বিপদ সত্ত্বেও মুসলিমগণ জয়ী হয়েছেন।
শেষে শুভপরিণাম হয়েছে সেই মুমিনদের যারা তাদের আল্লাহর প্রতি ঈমান, তার তওহীদ, ইবাদত এবং বিপদে ও সুখে তাদের প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনাতে সত্যবাদিতার পরিচয় দিয়েছেন। কুরআন মাজীদ বদর যুদ্ধে মুমিনদের অবস্থা বর্ণনা করেছে, যখন তাঁদের সংখ্যা ও যুদ্ধ-সরঞ্জাম নিতান্ত নগণ্য ছিল। তাই তারা তাদের প্রভুর নিকট প্রার্থনা জানিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন,
إِذْ تَسْتَغِيثُونَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ أَنِّي مُمِدُّكُم بِأَلْفٍ مِّنَ الْمَلَائِكَةِ مُرْدِفِينَ
অর্থাৎ, (স্মরণ কর) যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সকাতর সাহায্য প্রার্থনা করেছিলে তখন তিনি তা মঞ্জুর করেছিলেন এবং বলেছিলেন) আমি তোমাদেরকে একের পর এক আগমনরত একসহস্র ফিরিশ্যা দ্বারা সাহায্য করব। (সূরা আনফাল ৯ আয়াত)
আল্লাহ তাঁদের সেই করুণ নিবেদন শ্রবণ করেছিলেন। তাই তাদের পক্ষে যুদ্ধ করার জন্য ফিরিশ্মাদল দ্বারা তাদেরকে সাহায্য করলেন এবং তিনি ফিরিশ্তাগণকে এই প্রত্যাদেশ করলেন,
فَاضْرِبُوا فَوْقَ الْأَعْنَاقِ وَاضْرِبُوا مِنْهُمْ كُلَّ بَنَانٍ
অর্থাৎ, তোমরা (কাফেরদের) গ্রীবাদেশে এবং প্রত্যেক অঙ্গুলাগ্রে (সর্বাঙ্গে) আঘাত কর।” (সূরা আনফাল ১২ আয়াত)
তখন তারা কাফেরদের গর্দান এবং প্রত্যেক অঙ্গাগ্রে ও গ্রন্থিতে আঘাত হেনেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তওহীদবাদী মুমিনগণ বিজয়ের মর্যাদায় ভূষিত হলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللَّهُ بِبَدْرٍ وَأَنتُمْ أَذِلَّةٌ ۖ فَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
অর্থাৎ, এবং নিশ্চয় বদর যুদ্ধে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেছিলেন। অথচ তোমরা তখন হীনবল ছিলে। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা আলে ইমরান ১২৩ আয়াত)
বদর যুদ্ধের দিন আল্লাহর রসূল (সা.) এর এক দুআ ছিল, “আল্লাহ! তুমি আমাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে তা পূরণ কর। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে যার। অঙ্গীকার দিয়েছিলে তা প্রদান কর। আল্লাহ গো! আহলে ইসলামের এই জামাআতকে যদি তুমি ধ্বংস করে দাও তাহলে পৃথিবীতে আর তোমার ইবাদত হবে না।” (মুসলিম)
বর্তমানে আমরা দেখি যে, মুসলিমগণ অধিকাংশ দেশেই তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত হচ্ছে বটে, কিন্তু বিজয়লাভ তারা করতে পারছে না। তাহলে। এর কারণ কি? মুমিনদেরকে দেওয়া আল্লাহর ওয়াদা কি অন্যথা হয়ে যাচ্ছে? না, তা কক্ষনই নয়। আল্লাহর ওয়াদা কখনই ব্যতিক্রম হয় না। কিন্তু আজ কোথায় সে মুসলিমদল যাদের জন্য আয়াতে উল্লেখিত বিজয় আগত হবে? আমরা মুজাহেদীনদেরকে জিজ্ঞাসা করি যেঃ
১। তারা সেই ইমান ও তওহীদ-সহ জিহাদের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে কি , যে। দুই কর্ম দ্বারা রসূল মক্কায় অবস্থান কালে যুদ্ধের পূর্বকালে নিজের দাওয়াত শুরু করেছিলেন?
২। তারা সেই কারণ ও হেতু (উপায় ও উপকরণ) অবলম্বন করেছে কি? যার আদেশ তাদের প্রতিপালক এই বলে দিয়েছেন,
وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ
অর্থাৎ, তোমরা (কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য) যথাসাধ্য শক্তি প্রস্তুত কর। আর যে শক্তির ব্যাখ্যায় রসূল ধ্রু বলেন, “তা হল ক্ষেপণই (তীর বা অন্য কোন অস্ত্র নিক্ষেপ)।
৩। যুদ্ধের সময় তারা কি আল্লাহর নিকট সকাতর প্রার্থনা করেছে এবং কেবল তারই নিকট সাহায্য-ভিক্ষা করেছে? নাকি দুআতে তার সহিত অপরকেও শরীক করেছে এবং তাদের নিকট বিজয় প্রার্থনা করেছে; যাদেরকে তারা আওলিয়া মনে করে থাকে? অথচ তারাও আল্লাহর দাস। যারা নিজেদের ব্যাপারেও ইষ্ট-অনিষ্টের মালিক নয়। একমাত্র আল্লাহরই নিকট প্রার্থনা করার বিষয়ে তারা রসূলের অনুসরণ করে না কেন? (أَلَيْسَ اللَّهُ بِكَافٍ عَبْدَهُ) “আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন?” (সূরা যুমার ৩৬ আয়াত)
৪। অবশেষে, তারা কি পরস্পর ঐক্যবদ্ধ ও সম্প্রীতিশীল এবং তাদের আদর্শবাণী কি আল্লাহর এই বাণী?
وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ
অর্থাৎ, তোমরা আপোসে বিবাদ করো না; নচেৎ তোমরা সাহস হারাবে এবং তোমাদের চিত্তের দৃঢ়তা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। (সূরা আনফাল ৪৬ আয়াত)
৫। পরিশেষে এ কথা বলাই বাহুল্য যে, মুসলিমরা যখন তাদের ধর্মবিশ্বাস এবং দ্বীনের সেই শিক্ষা ও সংস্কৃতিমূলক প্রগতির প্রতি ধাবমান হতে আদেশকারী নির্দেশাবলী উপেক্ষা করে বসল, তখন তারা সকল জাতি হতে পশ্চাতে পড়ে গেল। পুনরায় যখন তারা আপন দ্বীনের প্রতি প্রত্যাবর্তন করবে, তখনই তাদের উন্নতি ও মান-মর্যাদা আবারও ফিরে আসবে।
৬। অভীষ্ট ঈমান বাস্তবায়িত হলে প্রতিশ্রুত বিজয় সুনিশ্চিত হয়ে আসবে।
وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِينَ
যেহেতু, “মুমিনদেরকে সাহায্য ও বিজয়ী করার দায়িত্ব আল্লাহ স্বয়ং নিয়েছেন।”*
খোদায় পাইয়া বিশ্ববিজয়ী হল একদিন যারা।
খোদায় ভুলিয়া ভীত পরাজিত আজ দুনিয়ায় তারা।
খোদার নামের আশ্রয় ছেড়ে
ভিখারীর বেশে দেশে দেশে ফেরে
ভোগ-বিলাসের মোহে ভুলে হায় নিল বন্ধন কারা।
খোদার সঙ্গে যুক্ত সদাই ছিল যাহাদের মন,
দুখে-রোগে-শোকে অটল যাহারা রহিত সর্বক্ষণ
এসে শয়তান ভোগ-বিলাসের
কাড়িয়া লয়েছে ঈমান তাদের
খোদায় হারায়ে মুসলিম আজ হয়েছে সর্বহারা। (অনুবাদক)