লগইন করুন
১। আল্লাহ তাআলা বলেন,
الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُم بِظُلْمٍ أُولَٰئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُم مُّهْتَدُونَ
অর্থাৎ, যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে যুলম দ্বারা কলুষিত করেনি, তাদের জন্যই নিরাপত্তা এবং তারাই সৎপথপ্রাপ্ত। (সূরা আনআম ৮২ আয়াত)।
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন। এই আয়াত যখন অবতীর্ণ হল, তখন মুসলিমদের নিকট বিষয়টি কঠিন মনে হল। বলল, ‘আমাদের মধ্যে কে আছে যে নিজের উপর যুলম (অন্যায়) করে না?” তা শুনে রসূল প্রিন্ট বললেন, তোমরা যে যুম মনে করছ) তা নয়। বরং তা (সবচেয়ে বড় যুগ্ম) কেবলমাত্র শির্ক। তোমরা কি পুত্রকে সম্বোধন করে লুকমানের উক্তি শ্রবণ করনি? (তিনি তাঁর পুত্রকে বলেছিলেন),
يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ ۖ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ
অর্থাৎ, হে বৎস! আল্লাহর সহিত শির্ক করো না, নিশ্চয় শির্ক বড় যুলম। (বুখারী ও মুসলিম)
অত্র আয়াতটি সেই তওহীদবাদী মুসলিমদেরকে সুসংবাদ দেয়, যারা তাদের ঈমানকে শির্ক দ্বারা কলুষিত করেনি। সেই সুসংবাদ এই যে, তাদের জন্য রয়েছে পরকালে আল্লাহর শাস্তি হতে পূর্ণ নিরাপত্তা এবং তারাই ইহকালে সুপথ প্রাপ্ত।
২। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, “ঈমান যাঠাধিক শাখাবিশিষ্ট। এর সর্বোত্তম শাখা লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ব্যতীত কেউ সত্য উপাস্য নেই) বলা এবং সর্বনিম্ন শাখা পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করা।” (মুসলিম)।
৩। মহামান্য শায়খ আব্দুল্লাহ খাইয়াত্বের গ্রন্থ “দলীলুল মুসলিম ফিল ইতিক্বাদি অত্তাত্বহীর”-এ নিম্নরূপ বলা হয়েছেঃ
তওহীদ সুখের মূল কারণ এবং পাপ খালনকারী কোন ব্যক্তি যেহেতু সে মানুষ এবং নিষ্পাপ নয়- সেহেতু তার পদস্খলন ঘটতেই পারে ও আল্লাহর অবাধ্যাচরণে আপতিত হতেই পারে। পরন্তু সে যদি শির্কের কলুষমুক্ত বিশুদ্ধ তওহীদবাদী হয়, তাহলে তার আল্লাহর জন্য তাওহীদ এবং “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলায় তার ইখলাস (বিশুদ্ধ-চিত্ত) তার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, পাপ মোচন এবং গোনাহর প্রায়শ্চিত্তের বৃহত্তম সহায়ক হবে। যেমন হাদীস শরীফে রসূল (সা.) এক্স বলেন, “যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ (সত্য) উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোন অংশী নেই, মুহাম্মাদ তাঁর দাস ও দুত (রসূল), ঈসাও আল্লাহর দাস, দুত এবং তার বাণী যা মারয়্যামের প্রতি প্রক্ষিপ্ত হয়েছিল এবং তাঁর তরফ হতে (বিশিষ্ট) রূহ, জান্নাত সত্য এবং জাহান্নাম সত্য - সে ব্যক্তি যে আমলই করে থাকুক, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” (বুখারী ও মুসলিম)
অর্থাৎ, এই সাক্ষ্যবাণীর সমষ্টি যা মুসলিম উক্ত মৌলিক বিষয়সমূহ উল্লেখ করে উচ্চারিত করে থাকে তা তার সুখদায়ক জান্নাত প্রবেশের কারণ অবশ্যই হবে- যদিও তার কিছু কর্ম ত্রুটি ও অবহেলাপূর্ণ হয়। যেমন হাদীসে কুদসীতে এর বর্ণনা এসেছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে আদম সন্তান! তুমি যদি প্রায় পৃথিবী-পুর্ণ পাপ নিয়ে আমার নিকট উপস্থিত হও আর আমার সহিত কোন কিছুকে শরীক না করে আমার সাথে সাক্ষাৎ কর, তবে আমিও প্রায় পৃথিবীবরাবর ক্ষমা নিয়ে তোমার নিকট উপস্থিত হব।” (হাসান, তিরমিযী ও যিয়া)
অর্থাৎ, তুমি যদি প্রায় পৃথিবী-পুর্ণ পাপ ও অন্যায় করে থাক, কিন্তু তোমার মরণ তওহীদের উপর হলে আমি তোমার সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেব।
অন্য এক হাদীসে এসেছে যে, “যে ব্যক্তি কোন কিছুকে আল্লাহর শরীক না করে তার সহিত সাক্ষাৎ করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং যে ব্যক্তি কোন কিছুকে আল্লাহর শরীক করে তাঁর সহিত সাক্ষাৎ করে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (মুসলিম)
উক্ত হাদীসসমূহের প্রত্যেকটি হতে তওহীদের মাহাত্ম ও গুরুত্ব প্রতীয়মান হয় এবং এ কথা স্পষ্ট হয় যে, তওহীদ বান্দার চিরসুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য লাভের বৃহত্তম সহায়ক এবং পাপক্ষালনের শ্রেষ্ঠতম মাধ্যম।