লগইন করুন
বিদআত প্রসারের এটি অন্যতম প্রধান কারণ। আকীদা ও আহকামে আল্লাহ ও রসুলের উক্তি এবং মীমাংসার উপর বিদআতীরা নিজেদের বুযুর্গদের কথা ও ফায়সালাকে অগ্রাধিকার দেয়। অন্ধভাবে তাই বিশ্বাস করে যা তাদের মাননীয় বুযুর্গ বলে। অতিরঞ্জনে অনেকে তাদের বুযুর্গকে ত্রুটিহীন নিস্পাপ মনে করে। মনের আসনে মান্যবর বুযুর্গ বা আলেমকে এমন স্থান দেয় যে, সে যা বলে বা যা করে, তাই। তাদের ধর্ম, কর্তব্য ও বিশ্বাস্য হয়। আর এর বিপরীত সবকিছু অধর্ম ও অমান্য হয়; যদিও বা এই বিপরীত কর্ম ও বিশ্বাস কুরআন ও সহীহ সুন্নায় বর্তমান থাকে। ব্যক্তি পূজার এই অতিরিক্ততায় অনেকে মনে করে যে, তাদের বুযুর্গ যা জানে তা আর অন্য কেউ জানে না বা জানতে পারে না।
ঠিক অনুরূপ অবস্থা বহু মযহাবের মুকাল্লেগণেরও হয়ে থাকে, তাদের ইমাম বা ফকীহ যা বলেন, অন্ধভাবে তাই তারা মান্য করে এবং প্রতিকুল সমস্ত কথা ও অভিমতকে অনায়াসে রদ করে দেয়; যদিও বা তা কুরআন ও সহীহ সুন্নায় থাকে। কেবলমাত্র ইমামের কথায় সম্পূর্ণ আস্থা ও ভরসা রাখে। বরং এখানেই শেষ নয়। ওদের অনেকে বলে থাকে যে, প্রতি সেই আয়াত ও হাদীস যা আমাদের মযহাবের বিপরীত ও বিরোধী হয়, তা ব্যাখ্যেয় অথবা রহিত (মনসুখ)!' (রেসালা কারখী) এই তাকলীদ মুসলিমদের মাঝে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। কঠিন অন্ধ পক্ষপাতিত্বের ফলে বিদআত বেড়ে চলেছে। যার কারণে কেউ আর কুরআন-হাদীস। শুনতে চায় না। ইজতিহাদের দরজা বন্ধ করে অনেকে বলে, “ওসব আমাদের বুঝার ক্ষমতা নেই, তাঁরা সব বুঝে প্রকাশ করে গেছেন।
অথচ একথা বিদিত যে, ইমামগণের নিকট সকল সহীহ হাদীস পৌছেনি। পৌঁছলে নিশ্চয়ই তার বিপরীত কোন রায় তাঁরা দিতেন না। কারণ তাঁরা সকলেই কুরআন ও হাদীসেরই অনুসারী ছিলেন -এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে তাঁরা মুজতাহেদীন মানুষ ছিলেন। তাঁদেরও ভুল হতে পারে। যেমন তাঁরা সকলেই তাঁদের কারো অন্ধানুকরণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করে গেছেন এবং তাঁদের কোন কথা কোন সহীহ হাদীসের প্রতিকূল বা খেলাফ হলে হাদীসের মতকেই গ্রহণ করতে আদেশ করে গেছেন। সুতরাং মানুষ কিয়ামতে জিজ্ঞাসিত হবে যে, তারা কুরআন ও সুন্নাহর উপর আমল করেছিলেন কিনা? কোন ইমাম বা বুযুর্গের অনুসরণ করেছিল অথবা না করেছিল সে সম্পর্কে তাদেরকে কৈফিয়ত করা হবে না।
পক্ষান্তরে স্রষ্টার বিরুদ্ধাচরণ করে কোন সৃষ্টির আনুগত্য বৈধ নয়। আল্লাহ তাআলা। ভ্রষ্ট জননেতা ও তাদের অনুসারীদের প্রসঙ্গে বলেন,
يَوْمَ تُقَلَّبُ وُجُوهُهُمْ فِي النَّارِ يَقُولُونَ يَا لَيْتَنَا أَطَعْنَا اللَّهَ وَأَطَعْنَا الرَّسُولَا * وَقَالُوا رَبَّنَا إِنَّا أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءَنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلَا * رَبَّنَا آتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيرًا
অর্থাৎ, যেদিন অগ্নিতে ওদের মুখমণ্ডল উল্টে-পাল্টে দগ্ধ করা হবে সেদিন ওরা বলবে, 'হায় আমরা যদি আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য করতাম। ওরা আরো বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের নেতা ও গুরুদের আনুগত্য করেছিলাম এবং ওরা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল; হে আমাদের প্রভু! ওদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং মহা অভিসম্পাত করুন।” (সূরা আহযাব ৬৬-৬৮, আয়াত)
ইবনে আব্বাস (রাঃ) সকলকে তামাত্তু' হজ করতে আদেশ করতেন। (যেহেতু রসূল প্লঃ সকলকে সেই আদেশই করেছিলেন।) কিন্তু এক প্রতিবাদী। বলল, 'না, তামা’ করা জরুরী না। কারণ, আবু বাকর ও উমার ও তা করতে নিষেধ করেন। (আর তারা আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী ও আনুগত্যের অধিক হকদার।) তা শুনে ইবনে আব্বাস ৩৬ বললেন, অবিলম্বে তোমাদের উপর। আকাশ থেকে প্রস্তর বর্ষণ হবে। আমি তোমাদেরকে বলছি, আল্লাহর রসুল ! বলেছেন আর তোমরা বলছ, আবু বকর ও উমার বলেছেন?’ (যাদুল মাআদ ২/১৯৫, ২০৬নং)
সুতরাং উদার ও অকুণ্ঠ মনে যে এই নীতিকে বুঝে নেবে তার নিকট সকল পাঁচ ও সমস্যা বন্ধন হারিয়ে সহজ হয়ে যাবে। ইসলাম ও আনুগত্যের ব্যাপারে তার মনে কোন জটিলতা জট পাকাবে না। আর মুসলিমদের মাঝেও কোন দ্বন্দ্ব অবশিষ্ট থাকবে না। বিদআত আখড়া ছেড়ে পলায়ন করবে এবং উক্ত স্থানে সুন্নাহ। শোভমান হবে।।