লগইন করুন
“জীবনের দীপ নিভে আসে যবে ঢেউ জাগে দেহ তীরে,
ওপারে দাঁড়ায়ে ডাকে ‘মহাকাল’ আয় মোর কোলে ফিরে।”
মরণােন্মুখ ব্যক্তি মালাকুল মাওত (মওতের ফিরিশ্তা) দেখতে পায়। লোক ভালো হলে তাকে সুশ্রী চেহারায় দেখে থাকে। আর তার সাথে দেখে রহমতের আরো কয়েকজন শুভ্র চেহারা বিশিষ্ট ফিরিশ্তাকে যাদের সঙ্গে থাকে জান্নাতের কাফন এবং সুগন্ধি। পক্ষান্তরে লোক মন্দ হলে মালাকুল মউতকে কুশ্রী চেহারায় দেখতে পায়। আর তার সাথে কালো চেহারা বিশিষ্ট কয়েকজন আযাবের ফিরিশ্তাও দেখে থাকে, যাদের সাথে থাকে জাহান্নামের কাফন ও দুর্গন্ধ। এই সময় মুমূর্ষূর সমস্ত শক্তি চূর্ণ হয়ে যায়। বিকল হয়ে যায় সকল প্রকার প্রতিরোধক্ষমতা। অনায়াসে নিজেকে সঁপে দিতে চায় মরণের হাতে। আর শুরু হয় তার বিভিন্ন প্রকার মৃত্যু যন্ত্রণা।
মৃত্যুর স্বাদ এত তিক্ত ও জ্বালাময়; যার উদাহরণ একাধিকঃ
ক- উত্তপ্ত সিককাবাবের সিককে সিক্ত তুলোর মধ্যে ভরে পুনরায় টেনে। নিলে তুলোর ভিতরে যে ছিন্ন-বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয়, তাই হয় মরণ-পারের পথিকের ভিতরে।
খ- জীবন্ত একটি পাখি উত্তপ্ত তাওয়ায় নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর যখন সে মারাও যায় না যাতে আরাম পেয়ে যায় এবং নিস্তারও পায় না যাতে সে উড়ে পালায়। ঠিক এমনি ভীষণ পরিস্থিতি হয় কণ্ঠাগত-প্রাণ মানুষের।
গ- একটি জীবন্ত ছাগের দেহ হতে একজন কসাই যখন তার ভোঁতা ছুরিকা দ্বারা চর্ম পৃথক করে, তখন ছাগের যে বিভীষিকাময় পরিণতি হয়, ঠিক তেমনি হবে মরণাপন্ন ব্যক্তির। তরবারির আঘাত, করাত দ্বারা ফাড়ার ব্যথা, কাইচি দ্বারা মাংস কাটার যন্ত্রণা অপেক্ষাও মৃত্যু যন্ত্রণা অনেক বেশী কঠিন ও মর্মান্তিক। (আল-বিজাযাহ)
মা আয়েশা (রাঃ) নবী (ﷺ) এর মৃত্যু সময়কালীন কষ্ট বর্ণনা করে বলেন, তার হাতের কাছে একটি পানির পাত্র রাখা ছিল। তাতে হাত ডুবিয়ে তিনি বারবার মুখ মুছতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, “লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ অবশ্যই মৃত্যুর রয়েছে কঠিন যন্ত্রণা।” অতঃপর তিনি তাঁর হাত উপর দিকে তুলে বললেন, “হে আল্লাহ! আমাকে পরম বন্ধুর সাথে (মিলিত কর।” অতঃপর তাঁর রূহ কবয হলে তাঁর হাত লুটিয়ে পড়ল। (বুখারী ৬৫১০নং)।
সুতরাং যদি এই অবস্থা সৃষ্টির সেরা মানুষ মহানবী (ﷺ) এর হয়, তাহলে আরো অন্যান্যের যে কী হাল হতে পারে, তা বলাই বাহুল্য।
যে সকল লক্ষণ দেখে জান কবজ হওয়া বুঝা যায় তা নিম্নরূপঃ
১। দম গেলে মৃতের চক্ষু ঘূর্ণায়মান হয়ে পরে স্থির হয়ে যাবে। উম্মে সালামাহ (রাঃ) বলেন, নবী (ﷺ) আবু সালামার নিকট এলেন; তখন তার চক্ষু স্থির হয়ে গিয়েছিল। তিনি তার চক্ষু বন্ধ করে বললেন, “রূহ কবয হয়ে গেলে চক্ষু তার দিকে চেয়ে থাকে।” (মুসলিম ১৫২৮, ইবনে মাজাহ ১৪৪৪ক)
২। বাম অথবা ডান দিকে নাক বেঁকে যাবে।
৩। -নিম্নের চিবুক ঢিলে হয়ে যাবে।
৪। হৃৎস্পন্দন থেমে যাবে।
৫। সারা শরীর শীতল হয়ে যাবে।
৬। ঠ্যাং-এ ঠ্যাং জরিয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, “কখনও না যখন প্রাণ কণ্ঠাগত হবে এবং বলা হবে, কে ঝাড়বে? আর সে মনে করবে যে, বিদায়ের সময় এসে গেছে। এবং ঠ্যাং ঠ্যাং-এর সাথে জড়িত হয়ে যাবে---।” (সুরা কিয়ামাহ ২৬-২৯ আয়াত)।
এই তো সেই শেষ নির্ধারিত সময় যার কোন প্রকার অন্যথা হবে না।
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ ۖ فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً ۖ وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ
অর্থাৎ, আর প্রত্যেক জাতির এক নির্দিষ্ট সময় আছে। যখন তাদের সে সময় এসে উপস্থিত হবে তখন তারা মুহূর্তকাল ও বিলম্ব অথবা ত্বরা করতে পারতে। (সুরা আ'রাফ ৩৪ আয়াত)
“আমার গর্ব-গৌরব যত সব হল অবসান,
হে চির সত্য! তোমারেই আজি করি যে আত্মদান।
লৌহ কঠোর এই বাহু মোর তরবারি ক্ষুরধার,
বন্ধু আজিকে শক্তি যোগাতে কেহ নাই হেথা আর!”