লগইন করুন
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«مَنِ اسْتَعَاذَ بِاللَّهِ فَأَعِيذُوهُ وَمَنْ سَأَلَ بِاللَّهِ فَأَعْطُوهُ وَمَنْ دَعَاكُمْ فَأَجِيبُوهُ وَمَنْ صَنَعَ إِلَيْكُمْ مَعْرُوفًا فَكَافِئُوهُ فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا مَا تُكَافِئُونَهُ فَادْعُوا لَهُ حَتَّى تَرَوْا أَنَّكُمْ قَدْ كَافَأْتُمُوهُ»
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর নাম নিয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তাকে তোমরা আশ্রয় দাও। যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে সাহায্য চায় তাকে দান করো। যে তোমাদেরকে ডাকে তার দাওয়াত কবুল করো। যে ব্যক্তি তোমাদের জন্য ভালো কাজ করে, তার প্রতিদান দাও। তার প্রতিদানের জন্য যদি তোমরা কিছুই না পাও, তাহলে তার জন্য দুআ করো, যাতে তোমরা বুঝতে পার যে, তোমরা তার প্রতিদান দিতে পেরেছো’’। ইমাম আবু দাউদ ও নাসায়ী হাদীছটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন’’।[1]
ব্যাখ্যাঃ হাদীছের বাহ্যিক অর্থ হচ্ছে, ভিক্ষুককে কিছু না দিয়ে ফেরত দিতে নিষেধ করা হয়েছে। বিশেষ করে সে যখন আল্লাহর নাম নিয়ে কিছু চাইবে। উক্ত হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর উদ্দেশ্য এও হতে পারে যে, ভিক্ষুক যদি এমন জিনিষ চায়, যা দিতে কোন কষ্ট হয়না কিংবা এমন বস্ত্তর আবেদন করে, যা দিতে গেলে কোন ক্ষতি হয়না । আল্লাহর নাম নিয়ে এমন বস্ত্ত চাইলে তার আবেদন মঞ্জুর করা উত্তম চরিত্র ও সুমহান স্বভাবের দাবী। আর যখন প্রমাণিত হবে যে, সায়েল খুব অভাবী কিংবা অপারগ, তখন তার সওয়াল অনুযায়ী তাকে দান করা ওয়াজিব। এমতাবস্থায় সায়েলকে দিতে অস্বীকার করলে গুনাহ হবে। এমন অবস্থায় প্রার্থিত পরিমাণ জিনিষ দিতে অস্বীকার করলে বল প্রয়োগ করে হলেও তার মাল থেকে তার অপছন্দ সত্ত্বেও প্রার্থিত পরিমাণের কয়েকগুণ বেশী আদায় করা হবে।
উপরোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রেখে সম্পদশালীদের উচিত, আল্লাহ যেহেতু তাদেরকে স্বীয় নেয়ামত দান করেছেন, তাই তারা তাদের মালের মধ্যে আল্লাহ তাআলার হক আদায় করবে এবং তার উপর আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত থেকে সায়েলকে কিছু দান করবে। বিশেষ করে সায়েলরা যখন আল্লাহ তাআলার নাম নিয়ে চাইবে। এতে করে তার দানের মাধ্যমে যার নাম নিয়ে ভিক্ষুক কিছু চাইলে তাঁর নামের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হবে।
مَنِ اسْتَعَاذَ بِاللَّهِ فَأَعِيذُوهُ যে ব্যক্তি আল্লাহর নাম নিয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তাকে তোমরা আশ্রয় দাওঃ অর্থাৎ আল্লাহর সত্তার এবং আল্লাহর নামের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য ও আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করার জন্য তাকে দান করো।
وَمَنْ دَعَاكُمْ فَأَجِيبُوهُ যে তোমাদের ডাকে, তার দাওয়াত কবুল করোঃ এটি এক মুসলিমের উপর অন্য মুসলিমের হকসমূহের অন্তর্ভূক্ত। এটি মুসলিমদের পারস্পরিক ভালবাসা ও সম্প্রীতি তৈরী, তাদের অন্তর পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র হওয়ার এবং দাওয়াত দাতার প্রতি সম্মানের অন্যতম মাধ্যম।
وَمَنْ صَنَعَ إِلَيْكُمْ مَعْرُوفًا فَكَافِئُوهُ যে ব্যক্তি তোমাদের জন্য ভালো কাজ করে, তার প্রতিদান দাওঃ ভাল কাজ ও উত্তম ব্যবহারের বদলা দেয়া উচিত। এটি সৎ ও উত্তম চরিত্রের আলামত। এর মাধ্যমে কৃপণতা এবং নিন্দনীয় স্বভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا مَا تُكَافِئُونَهُ فَادْعُوا لَهُ প্রতিদানের জন্য কিছু না পেলে তার জন্য দুআ করোঃ এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, সৎ কাজ ও ভাল ব্যবহারের জন্য বিনিময় স্বরূপ কিছু দেয়ার মত না পেলে সৎকাজ ও উত্তম আচরণকারীর জন্য দুআ করাই বদলা দেয়ার স্থলাভিষিক্ত হবে।[2]
حَتَّى تُرَوْا أَنَّكُمْ قَدْ كَافَأْتُمُوهُ যাতে তোমরা বুঝতে পার যে, তোমরা তার প্রতিদান দিতে সক্ষম হয়েছঃ تروا এর তা বর্ণে পেশ দিয়ে পড়তে হবে। এর অর্থ হচ্ছে تظنوا অর্থাৎ যাতে তোমরা অনুমাণ করতে পারো। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহু অন্য বর্ণনায় এসেছে, وَمَنْ سَأَلَكُمْ بِوَجْهِ اللَّهِ فَأَعْطُوهُ আল্লাহর চেহারার উসীলা (দোহাই) দিয়ে তোমাদের কাছে কেউ কিছু চাইলে তোমরা তাকে দান করো। এ অধ্যায় থেকে নিম্ন বর্ণিত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
১) আল্লাহর নামের উসীলায় কেউ আশ্রয় প্রার্থনা করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশ্রয় প্রার্থনাকারীকে আশ্রয় দান করার হুকুম করেছেন।
২) আল্লাহর নামে (ওয়াস্তে) সাহায্য প্রার্থনাকারীকে সাহায্য প্রদান করা উচিত।
৩) দাওয়াত কবুল করা কিংবা ভাল কাজের আহবানে সাড়া দেয়া ওয়াজিব।
৪) ভাল কাজের প্রতিদান দেয়া উচিত।
৫) ভাল কাজের প্রতিদানে অক্ষম হলে উপকার সাধনকারীর জন্য দুআ করা।
৬) উপকার সাধনকারীর জন্য এই পরিমাণ দুআ করা, যাতে মনে হয়, যথোপযুক্ত প্রতিদান দেয়া হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণীঃ حتى تروا أنكم قد كافأتموه দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে।
[2] - বান্দার তাওহীদ তখনই পরিপূর্ণ হবে, যখন তার অন্তর আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো প্রতি ঝুকে থাকবেনা। মানুষের অন্তরের অবস্থা এ রকম যে, কেউ তার প্রতি অনুগ্রহ করলে তার অন্তর অনুগ্রহকারীর প্রতি ঝুকে পড়ে এবং দানকারীর প্রতি বান্দা সবসময় দুর্বল থাকে। তাই এই অবস্থা থেকে বান্দাকে মুক্ত করার জন্য এবং বান্দার তাওহীদ যাতে পরিপূর্ণ হয়, তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভালকাজের বিনিময় দেয়ার আদেশ দিয়েছেন। যাতে করে উভয়েই বরাবর হয়ে যায় এবং বান্দার অন্তর কেবল আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের প্রতিই কৃতজ্ঞ থাকে। এতে করেই বান্দা পরিপূর্ণ তাওহীদের অধিকারী হতে পারে। আল্লাহই ভাল জানেন।