লগইন করুন
আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
«أَخْنَعُ اسْمٍ عِنْدَ اللَّهِ رَجُلٌ تَسَمَّى بِمَلِكِ الأَمْلاَكِ لاَ مَالِكَ إِلاَّ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ»
‘‘আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ঐ ব্যক্তি, যার নামকরণ করা হয় ‘রাজাধিরাজ’। অথচ আল্লাহ ব্যতীত কোনো প্রকৃত বাদশাহ নেই।
ব্যাখ্যাঃ কেননা রাজাধিরাজ কথাটি কেবল আল্লাহর শানেই প্রযোজ্য হয়। তিনিই সকল বাদশাহর বাদশাহ। তিনিই প্রকৃত বাদশাহ। তাঁর জন্যই সকল রাজত্ব, তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা এবং তিনি সকল বিষয়েই ক্ষমতাবান। তিনি সকল বাদশাহ এবং অন্যদের মধ্যে স্বীয় ইচ্ছা ও অভিপ্রায় অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করেন। আল্লাহ তাআলা সূরা আল-ইমরানের ২৬ নং আয়াতে বলেনঃ
قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَاءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَاءُ بِيَدِكَ الْخَيْرُ إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
‘‘বলোঃ হে আল্লাহ্! তুমিই প্রকৃত বাদশাহীর মালিক। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল’’।
সুতরাং কোনো সৃষ্টিকে সেইভাবে সম্মান করা যাবেনা যেভাবে সম্মান করা হয় মহান স্রষ্টা আল্লাহ তাআলাকে। মাখলুককে এ ধরণের সকল প্রকার তা’যীম প্রদর্শন করা হতে বাধা প্রদান করা হবে। যেমন লেখক শিরোনামে উল্লেখ করেছেন। কাযীউল কুযাত বা অনুরূপ নাম রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা এই নামের অর্থটি শুধু আল্লাহর জন্যই প্রযোজ্য। সুতরাং কোনো মাখলুকের জন্য এই নাম ধারণ করা ঠিক নয়। প্রত্যেক এমন নাম, যা পরিপূর্ণ তা’যীম ও সকল দিক থেকে পূর্ণতার দাবী করে, তা কেবল আল্লাহ তাআলার জন্যই ব্যবহৃত হবে। তিনি ব্যতীত অন্য কারো জন্য এ ধরণের নাম ধারণ করা জায়েয হবেনা।
সুফিয়ান ছাওরী বলেনঃ রাজাধিরাজ কথাটি শাহানশাহ’র মতই একটি নাম।
ব্যাখ্যাঃ অনারবদের নিকট এটিই ‘মালিকুল আমলাক’ অর্থে ব্যবহৃত হয়। এই জন্যই সুফিয়ান ছাওরী উদাহরণ স্বরূপ এটি উল্লেখ করেছেন।
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
أَغْيَظُ رَجُلٍ عَلَى اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَخْبَثُهُ وَأَغْيَظُهُ عَلَيْهِ رَجُلٌ كَانَ يُسَمَّى مَلِكَ الأَمْلاَكِ لاَ مَلِكَ إِلاَّ اللَّهُ»
‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত, নিকৃষ্ট এবং খারাপ ব্যক্তি হলো যার নামকরণ করা হয় রাজাধিরাজ। প্রকৃত বাদশাহ হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ।[1] উল্লেখিত হাদীছে أخنع শব্দের অর্থ হচ্ছে সর্বাধিক নিকৃষ্ট।
ব্যাখ্যাঃ হাদীছে أغيظ শব্দটি الغيظ থেকে নির্গত। এটি ক্রোধ ও ঘৃণার অর্থে ব্যবহৃত। সে হিসাবে এর অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি উপরোক্ত নাম ধারণ করে, সে আল্লাহর কাছে ঘৃণিত। তার উপর রয়েছে আল্লাহর ক্রোধ। ক্রোধ আল্লাহর অন্যতম একটি সিফাত। পরিবর্তন, ব্যাখ্যা, তুলনা ও উপমা পেশ করা ছাড়াই একে তার বাহ্যিক অর্থে ব্যবহার করা হবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীঃ وأخبثه অর্থাৎ সর্বাধিক নিকৃষ্টঃ এই শব্দটি প্রমাণ করে যে, এমন নাম ধারণকারী ব্যক্তি তখনই আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টতম বলে গণ্য হবে, যখন সে নিজের জন্য এই নামটি পছন্দ ও নির্বাচন করে। যাতে লোকেরা তাকে এমন সম্মান করে, যা তার প্রাপ্য নয়। সেই সঙ্গে তাকে এই নামে সম্বোধন করা হলেও সে কোনো প্রতিবাদ করেনা এবং অপছন্দও করেনা।
আর أخنع শব্দের অর্থ হচ্ছে সবচেয়ে নিম্ন ও নিকৃষ্ট। কালিমাতুল ইখলাস লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পরিপূর্ণ যে তাওহীদের উপর প্রমাণ বহন করে রাজাধিরাজ বা শাহানশাহ নাম রাখা তার পরিপন্থী। রাজাধিরাজ নাম রাখা শির্কে আকবার না হলেও তাতে শির্কের সংমিশ্রন রয়েছে। এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
১) রাজাধিরাজ শাহানশাহ নাম ধারণ করা হতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
২) রাজাধিরাজের অর্থে যত নাম ও শব্দ আছে, সবগুলোর হুকুম একই। যেমন সুফিয়ান ছাওরী হতে বর্ণিত হয়েছে যে, শাহানশাহ রাজাধিরাজের মতই।
৩) রাজাধিরাজ বা অনুরূপ নাম ও উপাধি রাখা হতে কঠোরভাবে নিষেধ করার বিষয়টি ভালোভাবে বুঝা উচিত। সেই সঙ্গে এটিও সর্বদা মনে রাখা দরকার যে, অন্তর উক্ত শব্দের প্রকৃত অর্থ উদ্দেশ্য করেনা। মূলতঃ এ ক্ষেত্রে অন্তরে কি নিয়ত আছে তা বিবেচ্য নয়।
৪) এ কথা ভালো করে বুঝা উচিত যে আল্লাহ তাআলার সম্মান ও বড়ত্ব প্রদর্শনের জন্যই উক্ত নামে নামকরণ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।