লগইন করুন
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
يَعْرِفُونَ نِعْمَةَ اللَّهِ ثُمَّ يُنْكِرُونَهَا وَأَكْثَرُهُمُ الْكَافِرُونَ
‘‘তারা আল্লাহর নেয়ামত চিনে, অতঃপর তা অস্বীকার করে তাদের অধিকাংশই অকৃতজ্ঞ’’। (সূরা নাহলঃ ৮৩)
ব্যাখ্যাঃ ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেনঃ মুফাস্সিরগণ এখানে নেয়ামতের অর্থ বর্ণনায় মতভেদ করেছেন। সুফিয়ান সুদ্দী থেকে বর্ণনা করেন যে, এখানে নেয়ামত দ্বারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্দেশ্য। অর্থাৎ তারা তাঁকে চেনার পরও অস্বীকার করছে।
অন্যরা বলেনঃ বরং এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে, তারা আল্লাহ তাআলার ঐ সমস্ত নেয়ামতকে ভাল করেই জানে, যা তিনি এই সূরায় উল্লেখ করেছেন। একমাত্র আল্লাহ তাআলাই স্বীয় বান্দাদেরকে এই নেয়ামত দান করেন। কিন্তু লোকেরা জেনেও তা অস্বীকার করে এবং ধারণা করে যে, তারা তাদের বাপ-দাদাদের পক্ষ হতেই এটি পেয়েছে।
মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করা হয় যে, এখানে নেয়ামত দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, ঘরবাড়ি, চতুষ্পদ জন্তু ও এগুলোর মাধ্যমে অর্জিত রিযিকসমূহ এবং লোহা, পোষাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি। মক্কার কুরাইশ কাফেররা এটি জেনেও তা অস্বীকার করত। তারা বলতঃ এগুলো আমাদের বাপ-দাদাদের মালিকানায় ছিল। আমরা তা ওয়ারিছী সূত্রে পেয়েছি।
মুজাহিদ বলেন, এর মর্মার্থ হচ্ছে, কোন মানুষের এ কথা বলা এ সম্পদ আমার, যা আমার পূর্ব পুরুষ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি।
আউন বলেনঃ এর অর্থ হচ্ছে, কোনো ব্যক্তির এ কথা বলা যে, অমুক ব্যক্তি না হলে এমনটি হতনা। ইবনে কুতায়বা (রঃ) বলেনঃ তারা বলতঃ আমরা আমাদের মাবুদদের সুপারিশের বদৌলতে এটি অর্জন করেছি।
ব্যাখ্যাঃ আওনের পূর্ণ নাম হচ্ছে, আওন বিন আব্দুল্লাহ বিন উতবা বিন মাসউদ আল-হুযালী আবু আব্দুল্লাহ আল-কুফী। তিনি এবাদত-বন্দেগীতে অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি তাঁর পিতা, আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা, আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তার থেকে বর্ণনা করেছেন, কাতাদাহ, আবুয্ যুবাইর এবং ইমাম ইবনে শিহাব যুহরী। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল, ইবনে মাঈন তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। ইমাম বুখারী (রঃ) বলেনঃ তিনি ১২০ হিজরী সালের পর মৃত্যু বরণ করেন।
ইবনে জারীর প্রথম কথাটিকেই অর্থাৎ এখানে নেয়ামত দ্বারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্দেশ্য হওয়াকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। অন্যরা বলেনঃ উল্লেখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় আলেমগণ যে সমস্ত নেয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন, তার সবগুলোই নেয়ামতের অন্তর্ভূক্ত। আর এটিই সঠিক।
যায়েদ বিন খালেদ হতে বর্ণিত হাদীছটি ইতিপূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে। তাতে এ কথা আছে, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ أَصْبَحَ مِنْ عِبَادِى مُؤْمِنٌ بِى وَكَافِرٌ ‘‘আজ আমার কোনো কোনো বান্দার ভোরে নিদ্রা ভঙ্গ হয়েছে মুমিন অবস্থায়, আবার কারো ভোর হয়েছে কাফির অবস্থায়’’। হাদীছের এই অংশের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে শাইখুল ইসলাম আবুল আববাস ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেন, এ ধরনের অনেক বক্তব্য কুরআন ও সুন্নায় উল্লেখ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি আল্লাহর নেয়ামতকে অন্যের সাথে সম্পৃক্ত করে এবং আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে, আল্লাহ তাআলা এখানে তার নিন্দা করেছেন।
উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় কোনো কোনো সালাফে সালেহীন বলেনঃ বিষয়টি মুশরিকদের এ কথার মতোই, তারা বলে থাকে নৌযানটি অঘটন থেকে বাঁচার কারণ হচ্ছে অনুকুল বাতাস এবং মাঝি-মাল্লারা ছিল বিচক্ষণ। এ ধরনের আরো অনেক কথা রয়েছে যা সাধারণ মানুষের মুখে অহরহই শুনা যায়।
ব্যাখ্যাঃ শাইখুল ইসলামের বক্তব্য থেকে বুঝা যায়, আয়াতের হুকুম ঐ সমস্ত লোকদেরকেও শামিল করে, যারা আল্লাহর নেয়ামত এবং তার উপকরণগুলোকে আল্লাহ ছাড়া অন্যের প্রতি সম্বন্ধ করে। মুফাস্সিরে কেরামদের বক্তব্যে তার বিশদ বিবরণ এসেছে। এখানেও কিছু কিছু বিষয় উল্লেখিত হয়েছে। আল্লাহর নেয়ামতকে অন্যের প্রতি সম্বন্ধ করা শির্কের অন্যতম প্রকার, যে সম্পর্কে সকলেই অবগত আছেন। এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
১) আল্লাহর নেয়ামতগুলো চেনা এবং তা অস্বীকার করার ব্যাখ্যা জানা গেল।
২) জেনে-বুঝে আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকারের বিষয়টি মানুষের মুখে বহুল প্রচলিত।
৩) মানুষের মুখে বহুল প্রচলিত এসব কথা আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকার করারই শামিল।
৪) এ ধরণের কথা প্রমাণ করে যে, অন্তরে দু’টি বিপরীতমুখী বিষয় তথা ঈমান ও কুফুরী একত্রিত হতে পারে।