লগইন করুন
উত্তরঃ শাসকদের আনুগত্য করা অপরিহার্য। এ ব্যাপারে অনেক দলীল বিদ্যমান। আল্লাহ তা’লা বলেনঃ
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُوْلِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা তোমাদের দায়িত্বশীল তাদের’’। (সূরা নিসাঃ ৫৯) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
(يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا اللَّهَ وَاسْمَعُوا وَأَطِيعُوا وَإِنْ أُمِّرَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ حَبَشِيٌّ)
‘‘হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা শুন ও আনুগত্য কর। যদিও তোমাদের উপর একজন হাবশী ক্রীতদাসকে আমীর বানানো হয়’’।[1] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
مَنْ رَأَى مِنْ أَمِيرِهِ شَيْئًا يَكْرَهُهُ فَلْيَصْبِرْ عَلَيْهِ فَإِنَّهُ مَنْ فَارَقَ الْجَمَاعَةَ شِبْرًا فَمَاتَ إِلَّا مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّة
‘‘যে ব্যক্তি তার আমীরের ভিতরে অপছন্দনীয় কিছু দেখে সে যেন ধৈর্য ধারণ করে এবং জামাআত বদ্ধ থাকে। কেননা যে ব্যক্তি জামাআত থেকে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সড়ে গিয়ে মৃত্যু বরণ করবে তার মৃত্যু হবে জাহেলী যুগের মৃত্যু বরণ করার মত’’।[2] উবাদা বিন সামেত (রাঃ) বলেনঃ
(دَعَانَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَبَايَعْنَاهُ فَكَانَ فِيمَا أَخَذَ عَلَيْنَا أَنْ بَايَعَنَا عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِي مَنْشَطِنَا وَمَكْرَهِنَا وَعُسْرِنَا وَيُسْرِنَا وَأَثَرَةٍ عَلَيْنَا وَأَنْ لاَ نُنَازِعَ الأَمْرَ أَهْلَهُ قَالَ إِلاَّ أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِنَ اللَّهِ فِيهِ بُرْهَانٌ)
‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। আমরা তাঁর কাছে বায়আত করলাম। তিনি যেসব বিষয়ের বায়আত নিলেন তার মধ্যে এও ছিল যে, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, সুখে-দুঃখে সকল অবস্থায় শ্রবণ করব এবং আনুগত্য করব। অন্যদেরকে নিজেদের উপর প্রাধান্য দিব। আরও বায়আত নিলেন যে, আমরা যেন দায়িত্বশীল ও শাসকদের আনুগত্য বর্জন না করি। শাসক শ্রেণীর মধ্যে সুস্পষ্ট কুফরী দেখা দিলে এবং সেব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ হতে তোমাদের নিকট কোন দলীল থাকলে তোমরা তাদের আনুগত্য বর্জন করতে পার’’।[3] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
(إِنْ أُمِّرَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ مُجَدَّعٌ أَسْوَدُ يَقُودُكُمْ بِكِتَابِ اللَّهِ فَاسْمَعُوا لَهُ وَأَطِيعُوا)
‘‘তোমাদের উপর একজন কালো নাক-কান কাটা ক্রীতদাসকে আমীর বানানো হলেও সে যদি তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী পরিচালনা করে তাহলে তোমরা তার কথা শুন ও তার আনুগত্য কর’’।[4] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ
(السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ عَلَى الْمَرْءِ الْمُسْلِمِ فِيمَا أَحَبَّ وَكَرِهَ مَا لَمْ يُؤْمَرْ بِمَعْصِيَةٍ فَإِذَا أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ فَلاَ سَمْعَ وَلاَ طَاعَةَ)
‘‘মুসলিম ব্যক্তির করণীয় হচ্ছে আমীরের কথা শ্রবণ করা ও তা মান্য করা, চাই তার সেই কথা পছন্দ হোক বা অপছন্দ হোক। তবে আমীর পাপ কাজের আদেশ দিলে সেই আদেশ শ্রবণ করা এবং তা মানা যাবে না’’।[5] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ
(إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوفِ)
‘‘আনুগত্য কেবল ভাল কাজের ক্ষেত্রেই করতে হবে’’।[6] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ
(وَإِنْ ضُرِبَ ظَهْرُكَ وَأُخِذَ مَالُكَ فَاسْمَعْ وَأَطِعْ)
‘‘শাসক যদি তোমার পিঠে আঘাত করে এবং তোমার মাল ছিনিয়ে নেয়, তবেও তুমি শাসকের কথা শুন ও মান’’।[7]
(مَنْ خَلَعَ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ لَقِيَ اللَّهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لاَ حُجَّةَ لَهُ وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِي عُنُقِهِ بَيْعَةٌ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً)
‘‘যে ব্যক্তি আনুগত্য প্রত্যাখ্যান করবে, কিয়ামতের দিন সে আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাত করবে যে, তার নাজাতের কোন দলীল থাকবে না। আর যে ব্যক্তি বায়আতহীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে তার মৃত্যু হবে জাহেলী যুগের মৃত্যু বরণ করার মত’’।[8]
(مَنْ أَرَادَ أَنْ يُفَرِّقَ أَمْرَ هَذِهِ الْأُمَّةِ وَهِيَ جَمِيعٌ فَاضْرِبُوهُ بِالسَّيْفِ كَائِنًا مَنْ كَانَ)
‘‘এই উম্মাত ঐক্যবদ্ধ থাকাবস্থায় যে ব্যক্তি তাদের ঐক্যে ফাটল ধরাতে চেষ্টা করবে, তলোয়ার দিয়ে তার গর্দান উড়িয়ে দাও। সে যে কেউ হোক না কেন’’।[9] *
(سَتَكُونُ أُمَرَاءُ فَتَعْرِفُونَ وَتُنْكِرُونَ فَمَنْ عَرَفَ بَرِئَ وَمَنْ أَنْكَرَ سَلِمَ وَلَكِنْ مَنْ رَضِيَ وَتَابَعَ قَالُوا أَفَلاَ نُقَاتِلُهُمْ قَالَ لاَ مَا صَلَّوْا)
‘‘অচিরেই কিছু শাসক এমন হবে, তাদের কিছু কাজ তোমরা ভাল মনে করবে আর কিছু কাজ তোমরা মন্দ মনে করবে। সুতরাং যে ব্যক্তি অন্যায়কে জানতে পারবে সে মুক্ত থাকতে পারবে। আর যে ব্যক্তি অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে, সে বেঁচে যাবে। তবে যে ব্যক্তি সেই অন্যায়কে সমর্থন করবে এবং তাতে শাসকের অনুসরণ করবে (সে ধ্বংস হবে) সাহাবীগণ বললেনঃ আমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করব না? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ না। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নামায আদায় করতে থাকবে’’।[10] এছাড়া আরো সহীহ হাদীছ রয়েছে।
[2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
[3] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।
[4] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইমারাত।
[5] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আহকাম।
[6] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইমারাত।
[7] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইমারাত।
[8] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইমারাত।
[9] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইমারাত। * বর্তমানে পীরেরা তাদের মুরীদদের থেকে বাইআত নিয়ে থাকে। অনুরূপভাবে বিভিন্ন ইসলামের দলের আমীরগণ দলের কর্মীদের নিকট থেকে বাইআত গ্রহণ করে এবং সে ক্ষেত্রে তারা বাইআত সংক্রান্ত কুরআনের আয়াত ও উপরোক্ত হাদীছগুলো দলীল হিসেবে পেশ করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাদের এ কার্যক্রম ইসলামী শরীয়তের সম্পূর্ণ বিপরীত। কেননা উপরোক্ত হাদীছগুলোর উদ্দেশ্য হল মুসলিম শাসক কর্তৃক জনগণের প্রতিনিধি ও বিশেষ ব্যক্তি নিকট বাইআত বা আনুগত্যের শপথ নেয়া। এ অর্থেই ইসলামের প্রথম যুগ থেকে মুসলিম খলীফাগণ শাসন ক্ষমতায় সমাসীন হওয়ার পর বাইআত নিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর ইন্তেকালের পর আবু বকর (রাঃ) খলীফা হওয়ার পর বাইআত নিয়েছেন, তার পরে উমার (রাঃ) খলীফা বাইআত নিয়েছেন, তারপর উছমান ও আলী (রাঃ)। এভাবেই পরবর্তী যুগের মুসলিম শাসকগণ বাইআত নিয়েছেন। কিন্তু ইসলামের প্রথম যুগের ইতিহাসে এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়না যে, বিশেষ কোন আলেম সাধারণ মুসলমানদের নিকট থেকে বাইআত গ্রহণ করেছেন। যদি কোন দেশে ইসলামী আদর্শ ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা না থাকায় বাইআত গ্রহণের প্রচলন না থাকে, সে ক্ষেত্রে কোন পীর বা আলেম কর্তৃক মুরীদ বানানোর জন্য বাইআতের উপরোক্ত হাদীছগুলো মানুষের কাছে পেশ করা চরম অন্যায়।
[10] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইমরাত।