লগইন করুন
উত্তরঃ কবীরা গুনাহ্ এর পরিচয় বর্ণনায় সাহাবী, তাবেয়ী এবং অন্যান্য আলেম থেকে বিভিন্ন মত বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে তাদের উক্তিসমূহ থেকে কয়েকটি উক্তি বর্ণিত হলঃ
(১) কবীরা হচ্ছে এমন গুনাহ্, যার জন্য নির্দিষ্ট শাস্তি রয়েছে। যেমন চুরি করা, ব্যভিচার করা, খুন করা ইত্যাদি।
(২) এমন গুনাহকে কবীরা গুনাহ্ বলা হয়, যাতে লিপ্ত ব্যক্তির উপর আল্লাহর লানত, ক্রোধ, জাহান্নামের শাস্তি কিংবা অন্যান্য আযাবের ভয় দেখানো হয়েছে।
(৩) কবীরা এমন প্রত্যেক গুনাহ্কে বলা হয়, যাতে লিপ্ত ব্যক্তির মধ্যে দ্বীনের কোন লক্ষণ পাওয়া যায় না এবং সে দ্বীনের কোন পরওয়া করে না এবং তার মধ্যে আল্লাহ্ তাআলার ভয়ের পরিমান একেবারেই নগণ্য। কবীরার সংজ্ঞায় আরো মতামত বর্ণিত হয়েছে।
সহীহ হাদীছে নির্দিষ্টভাবে অনেক গুনাহ্কে কবীরা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও সেগুলোর একটি অন্যটি থেকে অধিক ভয়াবহ। তার মধ্যে কিছু হচ্ছে كفر أكبر তথা বড় কুফরী। যেমন আল্লাহ্র সাথে শরীক করা এবং যাদু করা। কিছু আছে كفر أكبر তথা বড় কুফরীর অন্তর্ভূক্ত না হলেও তা অত্যন্ত ভয়াবহ ও অশ্লীল। যেমন আল্লাহ্ তা’আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন তাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, যুদ্ধের ময়দান হতে পলায়ন করা, সতী-সাধ্বী মু’মিন মহিলার প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয়া, মদ পান করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া ইত্যাদি। উপরোক্ত গুনাহ্গুলো কবীরা হওয়ার দলীল হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
اجْتَنِبُوْاالسَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللَّهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلَاتِ
‘‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় হতে বিরত থাকবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন সেগুলো কি কি? রাসূল সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বললেনঃ তা হলো (১) আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করা (২) যাদু করা (৩) আল্লাহ তা’আলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন তাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা। (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা (৬) যুদ্ধের ময়দান হতে পলায়ন করা (৭) সতী-সাধ্বী মু’মিন মহিলার প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয়া’’।[1] অন্য হাদীছে তিনি বলেনঃ
أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِأَكْبَرِ الْكَبَائِرِ ثَلَاثًا الْإِشْرَاكُ بِاللَّهِ وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ وَشَهَادَةُ الزُّورِ أَوْ قَوْلُ الزُّورِ
‘‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ্ সম্পর্কে সংবাদ দিব না? এ কথাটি তিনবার বলার পর তিনি বললেনঃ তা হচ্ছে আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া মিথ্যা কথা বলা’’।[2] আব্দুল্লাহ্ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেনঃ কবীরা গুনাহ্এর সংখ্যা সাতটির স্থলে সত্তরটি হওয়াই অধিক যুক্তিসঙ্গত।[3] তবে যে সমস্ত গুনাহ্কে কবীরা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, সেগুলোর অনুসন্ধান করলে দেখা যায় তার সংখ্যা সত্তরের চেয়ে অধিক। যেগুলোকে সরাসরি কবীরা বলা হয়েছে, তার সংখ্যাই যদি সত্তরের অধিক হয়, তাহলে কুরআন ও হাদীছে যেগুলোর উপর লা’নত, ক্রোধ, আযাব, যুদ্ধ ঘোষণা ইত্যাদি কঠিন শব্দের মাধ্যমে ধমকি এসেছে, সেগুলোর সংখ্যা কত হতে পারে? অবশ্যই সত্তরের অনেক বেশী হবে। ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী কিতাবুল কাবায়ের নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাতে তিনি সত্তরটি কবীরা গুনাহ্ দলীলসহ উল্লেখ করেছেন। কবীরা গুনাহ্ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্যে সম্মানিত পাঠকদেরকে তা সংগ্রহ করার অনুরোধ করা হল।[4]
[2] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।
[3] - দেখুনঃ তাফসীরে তাবারী, (৮/২৪৫), ইমাম জাহাবী কর্তৃক রচিত ‘কিতাবুল কাবায়ের’ পৃষ্ঠা নং-৭।
[4] - বইটি বাংলায় অনুবাদ হয়েছে।