লগইন করুন
উত্তরঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'তের আকীদাহ এই যে, কিয়ামতের দিন মু’মিনগণ আল্লাহকে সেরকমই দেখতে পাবে, যেমন পরিস্কার আকাশে দিনের বেলায় সূর্য এবং রাতের বেলায় পূর্ণিমার চন্দ্রকে দেখতে পাওয়া যায়। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ
‘‘সেদিন অনেক মুখ-মন্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে’’। (সূরা কিয়ামাহঃ ২২-২৩) আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেনঃ
لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَى وَزِيَادَةٌ
‘‘যারা সৎকর্ম সম্পাদন করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে উত্তম বস্ত্ত (জান্নাত) এবং আরও অতিরিক্ত জিনিষ (আল্লাহর দীদার)’’। (সূরা ইউনুসঃ ২৬) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
كَلاَّ إِنَّهُمْ عَنْ رَبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَمَحْجُوبُونَ
‘‘কখনও নয়, অবশ্যই সেদিন তারা তাদের প্রতিপালকের দর্শন লাভ হতে বঞ্চিত হবে’’। (সূরা মুতাফফিফীনঃ ১৫) সুতরাং যেহেতু আল্লাহর শত্রুরা তাঁর দীদার হতে মাহরুম হবে, তাই তাঁর প্রিয় বান্দাগণ তা হতে বাধাগ্রস্ত হবে না। জারির বিন আব্দুল্লাহ্ বলেনঃ
(كُنَّا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَظَرَ إِلَى الْقَمَرِ لَيْلَةً يَعْنِي الْبَدْرَ فَقَالَ إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا الْقَمَرَ لاَ تُضَامُّونَ فِي رُؤْيَتِهِ فَإِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لاَ تُغْلَبُوا عَلَى صَلاَةٍ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا فَافْعَلُوا)
‘‘একদা পূর্ণিমার রাত্রিতে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর পাশে বসা ছিলাম। তিনি চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ কোন রকম অসুবিধা ছাড়াই তোমরা যেভাবে এই চন্দ্রটিকে দেখতে পাচ্ছ অচিরেই সেভাবে তোমরা তোমাদের প্রভুকে দেখতে পাবে। তোমরা যদি সামর্থ রাখ যে, সূর্যোদয়ের পূর্বের ও সূর্যাস্তের পূর্বের তথা ফজর ও আসরের নামায হতে পিছিয়ে থাকবে না, তাহলে তোমরা অবশ্যই তা করবে’’।[1] এখানে আল্লাহর দেখাকে চাঁদ দেখার সাথে তুলনা করা হয়েছে। এমন নয় আল্লাহকে চাঁদের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যেমন অহীর মাধ্যমে আল্লাহ্ তাআ’লার কথা বলার হাদীছে এসেছেঃ
ضربت الملائكة بأجنحتها خضعانًا لقوله كأنه سلسلة على صفوان
‘‘যখন আল্লাহ্ তাআলা অহীর মাধ্যমে কথা বলেন তখন ফেরেশতাগণ আল্লাহর কথার প্রতি অনুগত হয়ে পাখা দ্বারা আঘাত করে। তাতে শক্ত পাথরের উপর লোহার শিকল পতিত হওয়ার শব্দের ন্যায় শব্দ হতে থাকে’’।[2] এখানে ফেরেশতাদের পাখার আঘাতের শব্দকে শক্ত পাথরের উপর লোহার শিকল পতিত হওয়ার আওয়াজের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এখানে আওয়াজকে আওয়াজের সাথে তুলনা করা হয়েছে। শ্রবণকৃত বস্ত্তকে তথা অহীকে শ্রবণকৃত বস্ত্তর সাথে সাদৃশ্য করা হয়নি। কেননা আল্লাহর সত্বা ও গুণ তাঁর কোন সৃষ্টির সদৃশ হওয়ার অনেক উর্ধে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর কথা এধরণের কোন উপমা পেশের সম্ভাবনা হতে অনেক পবিত্র। কারণ সমস্ত সৃষ্টিজীবের মধ্যে তিনিই আল্লাহ্ সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞানী। সহীহ মুসলিম শরীফে সুহাইব (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীছে আছেঃ
(فَيَكْشِفُ الْحِجَابَ فَمَا أُعْطُوا شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إِلَى رَبِّهِمْ عَزَّ وَجَلَّ ثُمَّ تَلاَ هَذِهِ الآيَةَ ( لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَى وَزِيَادَةٌ)
‘‘অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা পর্দা উঠাবেন। জান্নাতীদেরকে মহান আল্লাহর দীদারের চেয়ে অধিক প্রিয় আর কোন বস্ত্তই প্রদান করা হবে না। তারপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ
(لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَى وَزِيَادَةٌ)
‘‘যারা সৎকর্ম সম্পাদন করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে উত্তম বস্ত্ত (জান্নাত) এবং আরো অতিরিক্ত জিনিষ (আল্লাহর দীদার)’’। (সূরা ইউনুসঃ ২৬)[3]
অন্য একটি সহীহ হাদীছে রয়েছেঃ
أَنَّ النَّاسَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ نَرَى رَبَّنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَلْ تُضَارُّونَ فِي الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ قَالُوا لَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ فَهَلْ تُضَارُّونَ فِي الشَّمْسِ لَيْسَ دُونَهَا سَحَابٌ قَالُوا لَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ فَإِنَّكُمْ تَرَوْنَهُ كَذَلِكَ
‘‘একদল লোক বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি কিয়ামতের দিন আমাদের প্রভুকে দেখতে পাব? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ পূর্ণিমার রাত্রিতে চন্দ্রকে দেখতে কি তোমাদের কোন অসুবিধা হয়? তারা বললঃ না কোন অসুবিধা হয়না। তিনি আবার বললেনঃ আকাশে মেঘ না থাকলে সূর্য দেখতে তোমাদের কোন অসুবিধা হয় কি? তারা বললঃ না কোন অসুবিধা হয়না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা কিয়ামতের দিন এরকম পরিস্কারভাবেই আল্লাহকে দেখতে পাবে’’।[4]
এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে মুতাওয়াতির (ধারাবাহিক) সূত্রে অসংখ্য সহীহ ও সুস্পষ্ট হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যারীর, সুহাইব, আনাস, আবু হুরায়রা, আবু মুসা, আবু সাঈদ ও অন্যান্য সাহাবী (রাঃ) হতে সহীহ এবং সুনানের কিতাবগুলোতে এসমস্ত হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। গ্রন্থকার বলেনঃ আমার রচিত সুল্লামুল উসূলের ব্যাখ্যা ‘মাআরিজুল কুবুল’ গ্রন্থে ত্রিশের অধিক সাহাবী থেকে পয়ঁতাল্লিশটি হাদীছ বর্ণনা করেছি। যে ব্যক্তি আল্লাহর দীদারকে অস্বীকার করল, সে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। শুধু তাই নয় সে ঐসমস্ত লোকদের অন্তর্ভূক্ত হবে, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
كَلاَّ إِنَّهُمْ عَنْ رَبِّهِمْ يَوْمَئِذٍ لَمَحْجُوبُونَ
‘‘কখনও নয়, অবশ্যই সেদিন তারা তাদের প্রতিপালকের দর্শন লাভ হতে বঞ্চিত হবে’’। (সূরা মুতাফফিফীনঃ ১৫)
প্রকাশ্যভাবেই মু’মিনগণ কিয়ামতের দিন আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখতে পাবে। এটিই হবে বেহেশতের ভিতরে মু’মিনদের জন্য সবচেয়ে বড় নেয়া’মত। আমরা আল্লাহর কাছে কল্যাণ ও মুক্তি প্রার্থনা করছি। তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকার স্বাদ প্রদান করে ধন্য করেন।
[2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর।
[3] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।
[4] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ।