লগইন করুন
এক্ষণে এসব মতানৈক্যের ব্যাপারে আমরা আমাদের ভূমিকার কথা আলোচনা করব। এখানে আমরা আলেমগণের মতানৈক্য বলতে ঐসকল আলেমকে বুঝিয়েছি, যাঁরা ইলম ও দ্বীনদারিতায় নির্ভরযোগ্য। যাঁদেরকে আলেম মনে করা হয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা আলেম নয়- এমন সব ব্যক্তির মতানৈক্য আমাদের উদ্দেশ্য নয়। কেননা তাদেরকে আমরা আলেম মনে করি না এবং প্রকৃত আলেমগণের উক্তিসমূহ যেমন সংরক্ষণ করা হয়, আমরা তাদের উক্তিসমূহকে সেই পর্যায়ের মনে করি না। সেজন্য যেসব আলেম মুসলিম উম্মাহ, ইসলাম ও ইল্ম বিষয়ে [মানুষকে] হিতোপদেশ দিয়ে প্রসিদ্ধি অর্জন করেছেন, আমরা আলেম বলতে তাঁদেরকেই বুঝি। ঐসব আলেমের ব্যাপারে আমাদের ভূমিকা দুইভাবে হতে পারেঃ-
১. [আমাদেরকে জানতে হবে] ঐ সকল আলেম আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাত মোতাবেক কোন বিষয় হওয়া সত্ত্বেও কেন তদ্বিষয়ে মতানৈক্য করেছেন? মতানৈক্যের যেসব কারণ আমরা উল্লেখ করেছি এবং যেগুলো উল্লেখ করিনি, সেগুলোর মাধ্যমে এর জবাব জানা যেতে পারে। আর সেই কারণগুলো আসলে অনেক- যা শরী‘আতের জ্ঞান পিপাসুর নিকট স্পষ্ট, যদিও তিনি গভীর জ্ঞানের অধিকারী না হন।
২. [এরপর দেখতে হবে] তাঁদের অনুসরণের ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি হবে? তাঁদের মধ্যে আমরা কার অনুসরণ করব? মানুষ কি কোন ইমামের এমন অনুসরণ করবে যে, তাঁর কথার বাইরে যাবে না- যদিও হক্ব অন্যের সাথে থাকে-যেমনটি মাযহাবসমূহের অন্ধ ভক্তদের স্বভাব, নাকি তার কাছে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দলীলের অনুসরণ করবে- যদিও তা তার অনুসারী ইমামের বিরোধী হয়? এই দ্বিতীয়টাই সঠিক জবাব। সেজন্য যিনি দলীল জানতে পারবেন তার উপর সেই দলীলের অনুসরণ করা আবশ্যক- যদিও তা ইমামের বিরোধী হয়। তবে তা যেন ইজমার বিরোধী না হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি বিশ্বাস করবে, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ব্যতীত অন্য কারো কথা সর্বাবস্থায় এবং সব সময় অবশ্য পালনীয়, সে অন্য কারো জন্য রিসালাতের বৈশিষ্ট্য প্রমাণ করল। কেননা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ব্যতীত অন্য কারো কথার বিধান এমনটা হতে পারে না এবং অন্য কারো কথা সর্বদা শিরোধার্য হতে পারে না।
তবে এ বিষয়ে আরো একটু চিন্তাভাবনার বিষয় রয়েছে। কেননা কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দলীল থেকে কে হুকুম-আহকাম বের করবেন তদ্বিষয়ে আমরা এখনও গোলকধাঁধায়? এটা মুশকিলও বটে। কেননা প্রত্যেকেই বলছেন, আমি এই ক্ষমতার অধিকারী। এটা আসলে ভাল কথা নয়। যদিও কুরআন ও সুন্নাহ একজন মানুষের গাইড হবে- সে দিক বিবেচনায় সেটা ভাল কথা। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, অর্থ জানুক বা না জানুক কোন রকম দলীল উচ্চারণ করতে পারে এমন প্রত্যেকের জন্য আমরা দরজা খুলে দেব আর বলব, তুমি মুজতাহিদ [শরী‘আত গবেষক], যা ইচ্ছা তুমি তাই বলতে পার। এমনটা হলে ইসলামী শরীআত, মানব ও মানব সমাজে পচন ধরবে।