লগইন করুন
খৃস্টান প্রচারকগণ বলেন: আমরা মুসলিম, ঈসায়ী মুসলিম। আমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং ঈসা (আঃ) সকলকে মান্য করি। আমরা কুরআনও মানি ইঞ্জিল বা কিতাবুল মোকাদ্দসও মানি। আমরা সকল নবীকেই ভক্তি করি। তবে আমরা তরীকাটা শুধু ঈসা মাসীহ থেকে গ্রহণ করি। যারা বিকৃত কিতাবুল মোকাদ্দাসের বর্ণনামত সকল নবীকে পাপী, ব্যভিচারী, ধর্ষক, মদ্যপ বা খুনি বলে বিশ্বাস করেন, যারা কুরআন টয়লেটে ফেলেন, আগুনে পুড়ান, গণতান্ত্রিক দেশে কুরআন নিষিদ্ধ করার জন্য রাজনীতি করেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিরুদ্ধে ঘৃণ্য মিথ্যা কার্টুন ও সিনেমা তৈরি করে প্রচার করেন, তাঁরাই বলেন যে, আমরা সকল নবীকে ভক্তি করি অথবা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও কুরআন মানি! তাঁরা মুসলিমদের বলেন, যারা কুরআন পোড়ায়, নবীকে নিয়ে সিনেমা বানায় আমরা সে খৃস্টান নই; আমরা ঈসায়ী মুসলিম! একজন মানুষ এত ভয়ঙ্কর মিথ্যাবাদী-প্রতারক হতে পারে! আপনি বলুন: ‘ঐ সব খৃস্টান এবং আপনাদের মধ্যে পার্থক্য কী? আকীদার পাথক্য? কর্মের পার্থক্য? ধর্মগ্রন্থের পার্থক্য? ইংরেজিতে আপনাদের পরিচয় কি লিখেন: (Jesuit Muslim) না (Christian)?
দীর্ঘ গবেষণা করে তাঁরা দেখেছেন যে, বাংলাদেশের মুসলিম ধর্ম পরিবর্তন করেন না; তবে সহজেই “তরীকা” পরিবর্তন করেন। এজন্য প্রতারণামূলকভাবে তাঁরা খৃস্টধর্মকে ধর্ম না বলে তরীকা বলতে এবং ধর্মগ্রহণকে “তরীকাবন্দী’ বলতে শুরু করেছেন। তাঁরা বলেন, মুসলিম এত প্রকারের তরীকা গ্রহণ করতে পারে, তাতে মুসলিমরা আপত্তি করে না, তাহলে ঈসায়ী তরীকা নিলে সমস্যা কী?
তাদের কথাগুলি যে মহামিথ্যা তা যে কোনো সচেতন মুসলিম জানেন। কিন্তু গ্রামগঞ্জের সরল মুসলিমগণ প্রতারিত হন। এজন্য নিম্নের বিষয়গুলি বুঝতে হবে:
(ক) আমরা দেখলাম, ‘ঈসায়ীগণ’ ঈসা মাসীহের আকীদা বা আমল কিছুই মানেন না। আমরা দেখব যে, তাঁরা কিতাবুল মোকাদ্দসের একটি বিধানও মানেন না।
(খ) যিনি একাধিক নবী মানার দাবি করেন তিনি মিথ্যাবাদী অথবা পাগল এবং তার ধর্ম জারজ ধর্ম। সকল নবীকে সম্মান করতে হয়; কিন্তু দুজনকে একত্রে মান্য করা যায় না। একসাথে দুজন নবীর উম্মাত হওয়া সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। একাধিক নবী মানার দাবি করার অর্থ কাউকে না মানা। কারণ প্রত্যেক নবীরই কিছু না কিছু নিয়ম রয়েছে যা অন্য নবীর নিকট নেই বা অন্য নবীর কাছে তার বিপরীত কিছু শরীয়ত রয়েছে। কারণ প্রতি যুগের জন্য সে যুগের উপযোগী কিছু বিশেষত্ব সহকারে শরীয়ত দেওয়া হয়।
(গ) আমরা দেখেছি, ঈসা মাসীহ বলেছেন, আল্লাহ ছাড়া কাউকে পিতা এবং ঈসা ছাড়া কাউকে আচার্য মানা যাবে না। কাজেই যে ব্যক্তি বলেন, তিনি ঈসা এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়কেই আচার্য মানেন তিনি মাসীহের এ কথা অবিশ্বাস করলেন।
(ঘ) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ অর্থও একই: আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবূদ নেই এবং তাঁর ইবাদতের তরীকা একমাত্র মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে গ্রহণ করতে হবে। মুসলিমরা আলেমদের কাছে গিয়ে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরীকা শিখেন।
(ঙ) আল্লাহ বলেন: “বল, ’তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ্ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ্ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (আল-ইমরান: ৩১)। অর্থাৎ আল্লাহর ভালবাসা ও নাজাত পেতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরীকায় চলতে হবে। তাঁর তরীকার বাইরে অন্য কোনো নবীর তরীকায় নাজাত থাকতে পারে বলে মনে করাও কুফরী।
(চ) আল্লাহ বলেন: “কিন্তু না, আপনার রবের শপথ! তারা মুমিন হবে না, যতক্ষন পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের মধ্যকার সকল বিতর্ক-সমস্যার বিচার-সিদ্ধান্তের ভার আপনার উপর অর্পণ না করে; তারপর আপনার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং আন্তরিকভাবে তা মেনে নেয়।” (সূরা আন-নিসা ৬৫)। কাজেই তাঁর নির্দেশ মানার পরেও যদি অন্য কোনো আচার্যের শিক্ষা গ্রহণ করা প্রয়োজন, উচিত বা সম্ভব বলে বিশ্বাস থাকে তাহলেও সে মুসলিম বলে গণ্য হবে না।
(ছ) একই সাথে দুজনকে মানার একমাত্র পথ পরবর্তীকে মানা। পূর্ববর্তী সকল প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী বা এমপিকে সম্মান করতে হয়, কিন্তু দুজনকে একত্রে মানা যায় না। কেবল সর্বশেষকেই মান্য করতে হয়। এজন্য দুজনকে মানতে চাইলে অবশ্যই ঈসা মাসীহের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা সহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই মানতে হবে।
(জ) আপনি যদি যীশু-সহ সকল নবী-রাসূলকে ভালবাসতে চান তাহলে কিতাবুল মুকাদ্দাসকে পরিত্যাগ করতে হবে। কারণ ‘কিতাবুল মুকাদ্দাস’ নবীগণকে মহাপাপী বলে চিত্রিত করেছে এবং চোর-ডাকাত বলে ঘৃণা করতে শিক্ষা দেয়। কিতাবুল মুকাদ্দাসের ভাষায় ঈসা মাসীহ পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণকে চোর-ডাকাত এবং নিজেকে দরজা বলে আখ্যায়িত করে বলেন: “আমিই মেষদের দ্বার। যাহারা আমার পূর্বে আসিয়াছিল তাহার সকলে চোর ও দস্যু; কিন্তু মেষেরা তাহাদের রব শুনে নাই।” (যোহন ১০/৭-৮) একমাত্র কুরআনেই সকল নবীকে সম্মান করা হয়েছে এবং তাঁদের সঠিক পবিত্র জীবন তুলে ধরা হয়েছে। আর এজন্যই খৃস্টানগণ নবীদের নামে অশালীন সিনেমা কার্টুন প্রকাশ করেন; কখনোই মুসলিমগণ তা করেন না।