লগইন করুন
কিতাবুল মোকাদ্দসের বর্ণনায় নবী-রাসূলগণ ও তাদের সন্তানগণ ছিলেন ব্যভিচারী ও ধর্ষক (আদিপুস্তক: ১৯: ৩৩-৩৮, ৩৫: ২২; ৩৮: ১৫-১৮, ২৭-৩০..), মদ্যপ (আদিপুস্তক ৯/২০), মিথ্যাবাদী (যাত্রাপুস্তক ৩/১৭-১৮, ৫/৩, ১১/২, ১২/৩৫; ১ শমূয়েল ১৬/১-৪), তাঁরা মানুষের মল ও গোবিষ্ঠা ভক্ষণ করতেন (যিহিষ্কেল ৪/৪-১৫), উলঙ্গ হয়ে চলাফেরা করতেন (যিশাইয় ২০/২-৪), মদপান করে উলঙ্গ হতেন (আদিপুস্তক ৯/২০), মূর্তিপূজা করতেন (যাত্রাপুস্তক ৩২ : ১-৩৫; ১ রাজাবলি ১১ : ১-১৩)... .... ইত্যাদি।
যে পাপের কথা চিন্তা করলেও গা শিউরে উঠে এবং যে পাপ করতে পাপীও রাজি হয় না সে পাপও নবীগণ ও তাদের সন্তানগণ করতেন বলে বাইবেলে বলা হয়েছে। যেমন নিজের কন্যাদের সাথে ব্যভিচার করা (আদিপুস্তক ১৯/৩৩-৩৮), পিতার স্ত্রীকে ধর্ষণ করা (আদিপুস্তক ৩৫/২২), নিজের বোনকে ধর্ষণ করা (২ শমূয়েল ১৩/১১-১৪), সকল মানুষের সামনে নিজের পিতার স্ত্রীগণকে গণধর্ষণ করা (২ শমুয়েল ১৬/২২), নিজের পুত্রবধুর সাথে ব্যভিচার করা (আদিপুস্তক ৩৮/১৫-১৮, ২৭-৩০) ইত্যাদি।
এত পাপাচারের পরেও ঈশ্বর তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করেন নি। বাইবেলের বর্ণনা অনুসারে জারজ সন্তানদের প্রতি ঈশ্বরের মায়া মনে হয় একটু বেশিই। ঈশ্বরের পুত্র ও মাসীহ ‘দায়ূদ’ এবং ঈশ্বরের পুত্র ও মাসীহ ঈসা: দুজনই জারজ সন্তানের বংশধর। (দ্বিতীয় বিবরণ: ২: ১৭-১৯ এবং ২০: ১৩-১৬, মথি: ১: ১-৩)।
ইয়াহূদী-খৃস্টানদের প্রাণপুরুষ দাউদ (আঃ)। দাউদের বংশধর হওয়া যীশুখৃস্টের শ্রেষ্ঠ গৌরব। বাইবেলের ভাষ্যে দায়ূদ ঈশ্বরের প্রথমপুত্র, ঔরসজাত পুত্র ও ঈশ্বরের মাসীহ বা খৃস্ট। “সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, তুমি আমার পুত্র, অদ্য আমি তোমাকে জন্ম দিয়াছি” (যাবুর ২/৭) “আমার দাস দায়ূদকেই পাইয়াছি, আমার পবিত্র তৈলে তাহাকে অভিষিক্ত করিয়াছি (with my holy oil have I anointed him)।...সে আমাকে ডাকিয়া বলিবে, তুমি আমার পিতা, আমার ঈশ্বর।আবার আমি তাহাকে প্রথমজাত (my firstborn) করিব ..।” (যাবূর ৮৯/২০-২৭)
এ দায়ূদ (আঃ)-কেও বাইবেলে ব্যভিচারী ও ধর্ষক বলে চিত্রিত করা হয়েছে। উরিয়া নামে দাউদের এক প্রতিবেশী ছিলেন। তিনি যুদ্ধের ময়দানে যুদ্ধরত ছিলেন। দায়ূদ উরিয়ার স্ত্রীকে এক নজর দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে ধর্ষণ করেন। মহিলা এ ধর্ষণে গর্ভবতী হয়ে যান। দায়ূদ সেনাপতিকে চিঠি লিখে কৌশলে উরিয়াকে হত্যা করান এবং উক্ত মহিলাকে বিবাহ করেন। (২ শমূয়েল: ১১/১৪: ১৭)
ধর্ষণ ও হত্যা একত্রে! একজন মহাপাপীও এমন করবেন না। একজন পাপী বয়স্ক মানুষ, যার অর্ধশতাধিক স্ত্রী বিদ্যমান, তিনি একজন মহিলাকে একনজর দেখেই তাকে ধর্ষণ করতে ব্যস্ত হবেন এবং তাঁর স্বামীকে হত্যা করবেন?
তাওরাতে বিধান ব্যভিচারীকে প্রস্তর নিক্ষেপ করে হত্যা করতে হবে। কিন্তু তাওরাতের ঈশ্বর অপরাধীর চেহারা দেখে বিচার করেন বলে মনে হয়। সম্ভবত দায়ূদ যেহেতু ঈশ্বরের পুত্র ও মাসীহ, সেহেতু ঈশ্বর দাউদের অপরাধের জন্য শাস্তি দিলেন দায়ূদের বৈধ স্ত্রীদেরকে। তিনি দায়ূদকে বলেন, তুমি যেহেতু ব্যভিচার ও হত্যায় লিপ্ত হলে, সেহেতু তোমার সামনে তোমার স্ত্রীদের গণধর্ষণের ব্যবস্থা করব। কী অদ্ভুত বিচার ব্যবস্থা!! একটি পাপের শাস্তি হিসেবে আরেকটি পাপের ব্যবস্থা ও ধর্ষকের শাস্তি হিসেবে নিরপরাধকে ধর্ষণের ব্যবস্থা করা!! (২ শমূয়েল ১২: ১১-১২)। ইঞ্জিলের বর্ণনা অনুসারে ঈসা মাসীহও ভয়ঙ্কর সব পাপ ও অশোভন কর্মে লিপ্ত হতেন। আমরা “নবীগণের পাপ ও পাপীর শাফা‘আত” প্রসঙ্গে তা আলোচনা করব।
এরূপ অগণিত স্ববিরোধী এবং অপবিত্র বক্তব্য সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে, কিতাবুল মোকাদ্দস পুরোটাই জাল অথবা এর মধ্যে অনেক জালিয়াতি বিদ্যমান। কুরআন দ্বিতীয় বিষয়টিই নিশ্চিত করে। কুরআন বলে যে, ইয়াহূদী-খৃস্টানগণ তিনভাবে তাওরাত-ইঞ্জিল নষ্ট করে: (ক) ভুলে যাওয়া (খ) বিকৃত করা (মায়িদা: ১৩, ১৪ ও ৪১), ও (গ) জাল কথা ও বই সংযোজন করা (বাকারা ৭৯ আল-ইমরান ৭৮)। এ সকল বিকৃতি ও জালিয়াতির পাশাপাশি এগুলির মধ্যে কিছু কিছু ভালোকথা বিদ্যমান। তবে সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের কোনো পথ নেই। এজন্য আল্লাহ কুরআনকে যাচাইয়ের মানদণ্ড করেছেন এবং এগুলির মূল শিক্ষা কুরআনের মধ্যে উদ্ধৃত ও সংরক্ষিত করেছেন। (সূরা ৫-মায়িদা: ৪৮)। আর গত ২০০ বৎসর যাবৎ ইউরোপ-আমেরিকার ইয়াহূদী-খৃস্টান গবেষকগণ এ কথারই সত্যতা প্রমাণ করেছেন।