কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা দ্বাদশ অধ্যায় - সফরের আদব প্রসঙ্গে ইসলামহাউজ.কম
সফরের আদবসমূহ

১. যুলুম করে দখল করা সম্পদ ও আমানতের অর্থ তার মালিকের নিকট ফেরত দেয়া; কেননা, সফর হল মৃত্যুর আলামত।

২. হালাল দ্রব্য থেকে তার খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করা এবং স্ত্রী, সন্তান ও পিতামাতার মত যাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব তার উপর, তাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করে যাওয়া বা তাদের জন্য অর্থসম্পদ রেখে যাওয়া।

৩. তার পরিবার-পরিজন, ভাই ও বন্ধু-বান্ধবদেরকে বিদায় জানানো এবং যাদেরকে বিদায় জানানো হবে, তাদের জন্য এ দো‘য়া পাঠ করা:

« أَسْتَوْدِعُ اللهَ دِينَكُمْ ، وَأمَانَتَكُمْ ، وَخَواتِيمَ أعْمَالِكُمْ»

(আমি তোমাদের দীন, তোমাদের আমানত ও তোমাদের শেষ আমলকে আল্লাহর নিকট সোপর্দ করছি)। আর যাদেরকে বিদায় জানানো হয়, তারা তার জন্য দো‘য়া করবে এ বলে:

« زَوَّدَكَ اللَّهُ التَّقْوَى ، وَغَفَرَ ذَنْبَكَ ، وَوَجَّهَكَ إلى الْخَيْرِ حَيثُ تَوَجَّهْتَ »

(আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে ‘তাকওয়া’ দান করুন, তোমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিন এবং তুমি যখন কোনো দিকে রওয়ানা করবে, তখন তিনি যেন তোমাকে কল্যাণের দিকে পরিচালিত করেন)। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« إنَّ لُقمانَ قال : إنَّ اللهَ تعالى إذا استُودِعَ شَيْاً حَفِظَهُ » . (رواه النسائي).

“লুকমান আ. বলেন: আল্লাহ তা‘আলার কাছে যখন কোনো কিছু আমানত রাখা হয়, তখন তিনি তা হেফাজত করেন।”[1] আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অনুসারীকে বলতেন:

« أَسْتَوْدِعُ اللهَ دِينَكَ ، وَأمَانَتَكَ ، وَخَواتِيمَ عَمَلِكَ » . (رواه أَبُو داود و الترمذي).

“আমি তোমার দীন, তোমার আমানত ও তোমার শেষ আমলকে আল্লাহর নিকট সোপর্দ করছি।”[2]

৪. তার সাথে সফরের জন্য ভালো হবে এমন তিনজন বা চারজন সাথীকে বাছাই করার পর তাদের সাথে সফরের উদ্দেশ্যে বের হওয়া; কেননা, সফরের ব্যাপারে যেমন বলা হয়: " مَخْبَرُ الرجال "(ব্যক্তির পরীক্ষাগার); আর সফরকে (সফর) বলে নামকরণ করার কারণ হল, যেহেতু সফর ব্যক্তির চরিত্রকে উন্মুক্ত করে দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« الرَّاكِبُ شَيْطَانٌ ، وَالرَّاكِبَانِ شَيْطَانَانِ ، وَالثَّلاَثَةُ رَكْبٌ » . (رواه أَبُو داود و النسائي و الترمذي).

“একজন আরোহী হচ্ছে একটি শয়তান; আর দুইজন আরোহী হল দুইটি শয়তান; আর তিনজন আরোহী হচ্ছে কাফেলা।”[3] তিনি আরও বলেন:

« لَوْ أنَّ النَّاسَ يَعْلَمُونَ مِنَ الوحدَةِ مَا أعْلَمُ، مَا سَارَ رَاكبٌ بِلَيْلٍ وَحْدَهُ !» . (رواه البخاري).

“একাকী সফর করার মধ্যে কি কি ক্ষতি আছে সে সম্পর্কে আমি যা জানি, জনগণ যদি তা জানত, তাহলে কোনো ভ্রমণকারী রাতে একাকী ভ্রমণ করত না।”[4]

৫. ভ্রমণকারীগণ কর্তৃক তাদের মধ্য থেকে এমন একজনকে আমীর বা নেতা বানিয়ে নেওয়া, যিনি তাদের সাথে পরমর্শ করে তাদেরকে পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« إِذَا خَرَجَ ثَلاَثَةٌ في سَفَرٍ فَليُؤَمِّرُوا أحَدَهُمْ » . (رواه أَبُو داود).

“যখন তিনজন কোনো সফরে বের হয়, তখন তারা যেন তাদের মধ্য থেকে একজনকে আমীর নিযুক্ত করে।”[5]

৬. সফরের পূর্বে ‘সালাতুল ইস্তিখারা’ আদায় করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন, এমনকি তিনি বিষয়টি তাদেরকে এমনভাবে শিক্ষা দিতেন, যেমনিভাবে তিনি তাদেরকে আল-কুরআনুল কারীমের কোনো সূরা শিক্ষা দিতেন।[6]

৭. সফরের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে প্রস্থানের সময় বলবে:

« بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلتُ عَلَى اللهِ ، ولاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ ، اللَّهُمَّ إِنِّي أعُوذُ بِكَ أنْ أضِلَّ أَوْ أُضَلَّ ، أَوْ أَزِلَّ أَوْ أُزَلَّ ، أَوْ أظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ ، أَوْ أجْهَلَ أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ »

(আল্লাহর নামে বের হচ্ছি এবং তাঁর উপর ভরসা করছি। আর অসৎকাজ থেকে বেঁচে থাকার এবং সৎকাজ করার কারও ক্ষমতা নেই আল্লাহর সাহায্য ছাড়া। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই যেন আমি পথভ্রষ্ট না হই অথবা আমাকে পথভ্রষ্ট করা না হয়; অথবা আমি যেন দীন থেকে সরে না যাই অথবা আমাকে দীন থেকে সরিয়ে দেয়া না হয়; অথবা আমি যেন কারও উপর যুলুম না করি অথবা আমার উপর যুলুম করা না হয়)।[7] আর যখন যানবাহনে আরোহণ করবে, তখন বলবে:

« بِسْمِ اللهِ و بِاللهِ و اللهُ أكْبَرُ ، تَوَكَّلتُ عَلَى اللهِ ، ولاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ العلِيِّ العَظِيْمِ ، وَمَا شَاءَ اللَّهُ كَانَ وَمَا لَمْ يَشَأْ لَمْ يَكُنْ ، سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ ، وَإنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلبُونَ . اللّهُمَّ إنا نسألكَ في سفرنا هذا البرّ والتَّقوى ، ومنَ العملِ ما ترضى ، اللَّهُمَّ هَوِّن عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا ، وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَهُ . اللَّهُمَّ أنْتَ الصَّاحِبُ في السَّفَرِ ، والخَلِيفَةُ في الأهْلِ وَالْمَالِ . اللَّهُمَّ إنِّي أعُوذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ ، وَكَآبَةِ المَنْظَرِ ، وَسُوءِ المُنْقَلَبِ في المالِ وَالأَهْلِ وَالوَلَدِ »

(আল্লাহর নামে আরোহণ করছি; আর আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাচ্ছি; আল্লাহ সবচেয়ে মহান। আর আল্লাহর উপর ভরসা করছি। আর অসৎকাজ থেকে বেঁচে থাকার এবং সৎকাজ করার কারও ক্ষমতা নেই মহান আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য ছাড়া। আল্লাহ যা চান, তাই হয়; আর তিনি যা চান না, তা হয় না। পাক পবিত্র সেই সত্তা, যিনি এটাকে আমাদের অধীন করে দিয়েছেন, অথচ আমাদের পক্ষে তা করার শক্তি ছিল না। হে আল্লাহ! আমাদের এ সফরে আমরা তোমার কাছে নেকী (পুণ্য) ও তাকওয়ার প্রার্থনা করছি এবং সেই আমল চাচ্ছি, যার প্রতি তুমি সন্তুষ্ট। হে আল্লাহ! আমাদের এ সফরকে আমাদের জন্য সহজ করে দাও এবং এর দূরত্বকে আমাদের জন্য সঙ্কুচিত করে দাও। হে আল্লাহ! সফরে তুমিই আমাদের সাথী বা রক্ষণাবেক্ষণকারী এবং আমাদের পরিবার-পরিজন ও সম্পদের অভিভাবক। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই কষ্ট ও কাঠিন্য থেকে, মর্মান্তিক দৃশ্যের উদ্ভব থেকে এবং নিজেদের ধন-সম্পদ, পরিবার-পরিজন ও সন্তান-সন্তুতির মধ্যে খারাপভাবে ফিরে আসা থেকে)।[8]

৮. বৃহস্পতিবারে দিনের প্রথম প্রহরে সফরে বের হওয়া[9]; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« اللَّهُمَّ باركْ لأُمَّتِي في بُكُورِها ، وكان إذا بعث سَرِيَّة أَو جيشا بعثهم من أوَّل النهار » . (رواه أَبُو داود و الترمذي).

“হে আল্লাহ! তুমি আমার উম্মতকে তার সকাল বেলায় বরকত দান কর; আর তিনি যখন কোনো সৈন্য বাহিনী প্রেরণ করতেন, তখন তাদেরকে দিনের প্রথম প্রহরে প্রেরণ করতেন।”[10] তাছাড়া হাদিসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃহস্পতিবারে তাঁর সফরে বের হতেন।[11]

৯. প্রত্যেক উঁচু জায়গায় (উঠার সময়) ‘তাকবীর’ বলা; কেননা, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:

« إنَّ رجلاً قَالَ : يَا رسول الله ، إنّي أُريدُ أنْ أُسَافِرَ فَأوْصِني ، قَالَ : عَلَيْكَ بِتَقْوَى اللهِ ، وَالتَّكْبِيرِ عَلَى كلِّ شَرَفٍ » . (رواه الترمذي).

“এক ব্যক্তি আরজ করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমি সফর করার পরিকল্পনা করেছি, কাজেই আমাকে উপদেশ দিন; তখন তিনি বললেন: তুমি অবশ্যই তাকওয়া তথা আল্লাহকে ভয় করার নীতি অবলম্বন করবে এবং প্রত্যেক উঁচু জায়গায় (উঠার সময়) ‘তাকবীর’ বলবে।”[12]

১০. যখন কোনো মানুষকে ভয় করবে, তখন বলবে:

« اللَّهُمَّ إنَّا نَجْعَلُكَ في نُحُورِهِمْ ، وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شُرُورِهِمْ »

(অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমরা তাদেরকে তোমার মুখোমুখি করছি এবং তাদের অনিষ্টকারিতা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি); কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দো‘য়া পাঠ করতেন।[13]

১১. সফরে সে আল্লাহ তা‘আলার নিকট দো‘য়া করবে এবং তাঁর নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ চাইবে; কেননা, সফর অবস্থার দো‘য়া কবুল করা হয়। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« ثلاثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَات لاَ شَكَّ فِيهِنَّ : دَعْوَةُ المَظْلُومِ ، وَدَعْوَةُ المُسَافِرِ ، وَدَعْوَةُ الوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ » . (رواه الترمذي).

“তিনটি দো‘য়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই: মাযলুমের দো‘য়া, মুসাফিরের দো‘য়া এবং পিতামাতা কর্তৃক তার সন্তানের জন্য করা বদদো‘য়া।”[14]

১২. যখন সে কোন স্থানে অবস্থান করার জন্য অবতরণ করে, তখন বলবে:

« أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ » . (رواه مسلم).

“আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাগুলো দ্বারা সে বস্তুর অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাই, যা তিনি সৃষ্টি করেছেন।”[15] আর যখন সফর অবস্থায় রাতের আগমন ঘটবে, তখন বলবে:

« يَا أرْضُ ! رَبِّي وَرَبُّكِ اللهُ ، أعُوذُ بِاللهِ مِنْ شَرِّكِ وَشَرِّ مَا فِيكِ ، وَشَرِّ مَا خُلِقَ فِيكِ ، وَشَرِّ مَا يَدِبُّ عَلَيْكِ ، وَأعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ أسَدٍ وَأسْوَدٍ ، وَمِنَ الحَيَّةِ وَالعَقْرَبِ ، وَمِنْ سَاكِنِي البَلَدِ ، وَمِنْ وَالِدٍ وَمَا وَلَدَ » . (رواه أَبُو داود).

“হে যমীন! আমার ও তোমার রব হলেন আল্লাহ। আমি আশ্রয় চাই তোমার অনিষ্টতা থেকে ও তোমার ভিতরে যা আছে তার অনিষ্টতা থেকে; আর তোমার মধ্যে যা কিছু সৃষ্টি করা হয়েছে তার অনিষ্টতা থেকে এবং তোমার উপরে যা কিছু চরে বেড়ায় তার অনিষ্টতা থেকে। আর আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই বাঘ-সিংহ ও কাল সাপের অনিষ্টতা থেকে এবং সকল প্রকার সাপ ও বিচ্ছুর অনিষ্টতা থেকে; আরও আশ্রয় চাই শহরবাসীদের অনিষ্টতা থেকে এবং জন্মদানকারী ও যা জন্ম লাভ করেছে তার অনিষ্টতা থেকে।”[16]

১৩. যখন নির্জনতা বা বন্য জন্তুর ভয় করবে, তখন বলবে:

« سبحانَ الملكُ القدوسُ ربُّ الملائكةِ والروحِ ، جُلِّلَتِ السمواتُ والأرضُ بالعزةِ والجبروتِ » . (رواه ابن السني الخرائطي).

“আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, তুমি বাদশা, অতিশয় পবিত্র এবং সকল ফেরেশ্তা ও বিশেষ করে জিব্রাঈল আ. এর রব; তোমার শক্তি ও অসীম দাপটে আসমানসমূহ ও যমীন বিস্তৃত হয়ে আছে।”[17]

১৪. যখন সে রাতের প্রথম ভাগে ঘুমাবে, তখন তার বাহু বা হাত যমীনে বিছিয়ে দেবে; আর যদি রাতের শেষ ভাগে ঘুমায়, তাহলে তার বাহু বা হাত দাঁড় করিয়ে দিবে এবং হাতের তালুতে তার মাথা রাখবে, যাতে ভারী ঘুম না হয় এবং ফযরের সালাত কাযা হয়ে না যায়।

১৫. যখন কোনো শহরের প্রতি দৃষ্টি পড়বে, তখন বলবে:

« اللهم اجعل لنا بها قراراً ، وارْزُقنا فيهَا رزقًا حلالًا . اللَّهُمَّ إني أَسأَلُكَ مِنْ خَيرِ هذه المَدينَةِ ، وَخَيرَ مَا فيها ، وَأعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا ، وَشَرِّ ما فيها »

(হে আল্লাহ! আমাদের জন্য তাতে স্থিতি ও প্রশান্তি দান কর এবং সেখানে আমাদের জন্য হালাল রিযিকের ব্যবস্থা কর। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে এ শহরের কল্যাণ ও তার মধ্যকার কল্যাণ প্রার্থনা করছি; আর তোমার কাছে তার অকল্যাণ ও তার মধ্যকার অকল্যাণ থেকে আশ্রয় চাই)। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দো‘য়া পাঠ করতেন।[18]

১৬. যখন তার সফরের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যাবে, তখন দ্রুত নিজ শহর ও পরিবার-পরিজনের নিকট প্রত্যাবর্তন করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« السَّفَرُ قِطْعَةٌ مِنَ العَذَابِ ، يَمْنَعُ أحَدَكُمْ طَعَامَهُ وَشَرابَهُ وَنَوْمَهُ ، فَإذَا قَضَى أحَدُكُمْ نَهْمَتَهُ مِنْ سَفَرِهِ ، فَلْيُعَجِّلْ إِلَى أهْلِهِ » . (متفقٌ عَلَيْهِ).

“সফর হচ্ছে এক প্রকার আযাব; যা তোমাদের যে কারো পানাহার ও নিদ্রায় বাধা দেয়। সুতরাং যখন তোমাদের কারোর সফরের উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যায়, তখন সে যেন দ্রুত তার পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে আসে।”[19]

১৭. যখন (সফর থেকে) ফিরে আসবে, তখন তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবীর দিবে এবং বলবে:

« آيِبُونَ ، تَائِبُونَ ، عَابِدُونَ ، لِرَبِّنَا حَامِدُونَ » .

(আমরা সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাকারী, ইবাদতকারী এবং আমারা আমাদের প্রভুর প্রশংসাকারী) এবং এই দো‘য়াটি বারবার পাঠ করবে; কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজটি করতেন।”[20]

১৮. সফর থেকে রাতের বেলায় পরিবারবর্গের নিকট ফিরে না আসা; বরং তার পূর্বে কাউকে পাঠিয়ে তাদেরকে সুসংবাদ দেয়া, যাতে তার আগমন হঠাৎ করে তাদেরকে হতভম্ব করে না দেয়; কেননা, এটা ছিল নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত।[21]

১৯. নারী তার স্বীয় মাহরাম পুরুষ সাথী ছাড়া একদিন ও একরাতের দূরত্বের পথ সফর করবে না; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« لاَ يَحِلُّ لامْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَومِ الآخِرِ تُسَافِرُ مَسِيرَةَ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ إِلاَّ مَعَ ذِي مَحْرَمٍ عَلَيْهَا » . (متفقٌ عَلَيْهِ).

“যে নারী আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান এনেছে, তার জন্য মাহরাম পুরুষ সাথী ছাড়া একদিন ও একরাতের দূরত্বের পথ সফর করা বৈধ নয়।”[22]

>
[1] নাসায়ী রহ. উৎকৃষ্ট সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।

[2] আবূ দাউদ, নাসায়ী ও তিরমিযী (সহীহ)।

[3] আবূ দাউদ, নসায়ী ও তিরমিযী এবং হাদিসটি ‘সহীহ’।

[4] বুখারী, হাদিস নং- ২৮৩৬

[5] আবূ দাউদ।

[6] বুখারী।

[7] আবূ দাউদ ও তিরমিযী।

[8] মুসলিম ও আবূ দাউদ।

[9] বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত।

[10] আবূ দাউদ ও তিরমিযী।

[11] উদ্ধৃত, আবূ বকর আল-জাযায়েরী, মিনহাজুল মুসলিম, পৃ. ১৭৭

[12] তিরমিযী রহ. হাদিসটি হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন।

[13] আবূ দাউদ ও নাসায়ী রহ. হাদিসটি সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।

[14] তিরমিযী রহ. হাদিসটি হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন।

[15] মুসলিম।

[16] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ২৬০৫

[17] ইবনুস সিন্নী আল-খারতায়ী।

[18] উদ্ধৃত, আবূ বকর আল-জাযায়েরী, মিনহাজুল মুসলিম, পৃ. ১৭৮

[19] বুখারী ও মুসলিম।

[20] বুখারী ও মুসলিম।

[21] উদ্ধৃত, আবূ বকর আল-জাযায়েরী, মিনহাজুল মুসলিম, পৃ. ১৭৯

[22] বুখারী, হাদিস নং- ১০৩৮; মুসলিম, হাদিস নং- ৩৩৩১