কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা একাদশ অধ্যায় - যিয়াফত তথা আপ্যায়নের আদবসমূহ ইসলামহাউজ.কম
(ক) যিয়াফতের জন্য আমন্ত্রণের আদবসমূহ:

যিয়াফত (الضيافة ) শব্দটি আরবি; এর অর্থ আপ্যায়ন করানো, আতিথিয়তা, মেহমানদারি, ভোজ অনুষ্ঠান ইত্যাতি।[1] আর মুসলিম ব্যক্তি মেহমানকে সম্মান করার আবশ্যকতায় বিশ্বাস করে এবং তার সাধ্যানুযায়ী তাকে আদর আপ্যায়ন করবে; আর এটা এ জন্য যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ » . (متفقٌ عَلَيْهِ).

“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে।”[2] তিনি আরও বলেন:

« مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ جَائِزَتَهُ ، قالوا : وَمَا جَائِزَتُهُ ؟ قَالَ : يَوْمُهُ وَلَيْلَتُهُ ، وَالضِّيَافَةُ ثَلاَثَةُ أيَّامٍ ، فَمَا كَانَ وَرَاءَ ذَلِكَ فَهُوَ صَدَقَةٌ عَلَيْهِ » . (متفقٌ عَلَيْهِ).

“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান রাখে, সে যেন তার মেহমানকে তার হক আদায় সহকারে সম্মান তথা আদর আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে। সহাবীগণ বললেন: তার হক বলতে কী বুঝায়? তিনি বললেন: তাকে একদিন ও একরাত আদর-আপ্যায়ন করা। আর মেহমানদারীর সীমা হল তিনদিন। এর বাইরে অতিরিক্ত কিছু করা সাদকা স্বরূপ।”[3] আর এ জন্য মুসলিম ব্যক্তি যিয়াফত তথা আপ্যায়নের ব্যাপারে নিম্নোক্ত আদবসমূহ মেনে চলবে:

(ক) যিয়াফতের জন্য আমন্ত্রণের আদবসমূহ:

১. যিয়াফতে ফাসিক ও পাপিষ্ঠদেরকে বাদ দিয়ে আল্লাহভীরু লোকদেরকে দাওয়াতের ব্যবস্থা করা; কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« لا تُصَاحِبْ إلاَّ مُؤْمِناً ، وَلاَ يَأْكُلْ طَعَامَكَ إلاَّ تَقِيٌّ » . (رواه أحمد و أبو داود و الترمذي و ابن حبان و الحاكم).

“মুমিন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারও সঙ্গী হয়ো না এবং তোমার খাবার মুত্তাকী ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ যেন না খায়।”[4]

২. গরীবদেরকে বাদ দিয়ে শুধু ধনীদের জন্য যিয়াফতকে নির্দিষ্ট না করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« شَرُّ الطَّعَامِ طَعَامُ الْوَلِيمَةِ ، يُدْعَى إِلَيْهَا الأَغْنِيَاءُ وَيُتْرَكُ الْفُقَرَاءُ » . (متفقٌ عَلَيْهِ).

“সবচেয়ে নিকৃষ্ট খাবার হল ঐ ওলীমা’র (অনুষ্ঠানের) খাবার, যাতে ধনীদের দাওয়াত করা হয় এবং গরীবদের বাদ দেয়া হয়।”[5]

৩. গর্ব ও অহঙ্কার প্রকাশের উদ্দেশ্যে যিয়াফতের আয়োজন না করা, বরং উদ্দেশ্য হবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পূর্ববর্তী নবীগণের সুন্নাহ পালন করা, যেমন— ইবরাহীম ‘আলাইহিস্ সালাম, যাঁর উপাধি ছিল "أبو الضِّيْفان" বা ‘মেহমানদের পিতা’। অনুরূপভাবে যিয়াফতের আয়োজনের দ্বারা নিয়ত থাকবে মুমিনদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা এবং ভাই ও বন্ধু-বান্ধবের হৃদয়ে আনন্দ ও খুশি ছড়িয়ে দেয়া।৪. মুমিন ব্যক্তিকে অবৈধভাবে কষ্ট দেওয়া থেকে দূরে থাকার জন্য এমন কাউকে দাওয়াত না দেওয়া, যার ব্যাপারে সে জানে যে, তার জন্য যিয়াফতে উপস্থিত হওয়া কষ্টকর হবে, অথবা সে উপস্থিত ভাইগণের কারও দ্বারা কষ্টের শিকার হবে।

>
[1] ড. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, আল মুনীর আরবী-বাংলা অভিধান, পৃ. ৫৬১

[2] বুখারী ও মুসলিম।

[3] বুখারী ও মুসলিম।

[4] আহমাদ, আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনু হিব্বান ও হাকেম এবং হাদিসটি ‘সহীহ’।

[5] বুখারী ও মুসলিম।