লগইন করুন
ইসলামের দাওয়াতের ভিত্তিমূলই হলো আল্লাহ তাআলার একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন করা, গোটা সৃষ্টি জগতের একমাত্র স্রষ্টা হিসেবে তাঁকে স্বীকৃতি দেওয়া। আরও আগে বেড়ে বলা যায়, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সকল রাসূলের রিসালতের শুরু ও শেষ কথাই ছিল আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِي كُلِّ أُمَّةٖ رَّسُولًا أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَٱجۡتَنِبُواْ ٱلطَّٰغُوتَۖ﴾ [النحل: ٣٦]
“আর আমরা প্রত্যেক উম্মতের কাছে একজন করে রাসূল প্রেরণ করেছি এই বলে যে, আল্লাহর ইবাদত করো, আর তাগুতকে বর্জন করো।” [সূরা আন-নাহল: ৩৬] অন্যত্র আরও বলেন,
﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ ٥ ﴾ [البينة: ٥]
“আর তারা এ ভিন্ন আদিষ্ট হয়নি যে, তারা আল্লাহর ইবাদত করবে দীনে তার প্রতি বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে, একনিষ্ঠভাবে, আর সালাত কায়েম করবে ও যাকাত আদায় করবে। আর এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্ম।” [সূরা আল-বাইয়্যিনাহ: ৫]
পৃথিবীতে আল্লাহ তা‘আলা মানুষ সৃষ্টির প্রধান উদ্দেশ্যের কথা ব্যক্ত করেছেন এভাবে,
﴿ وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ ﴾ [الذاريات: ٥٦]
“আর আমি মানুষ ও জিনকে- আমার ইবাদত করবে- এজন্য ছাড়া সৃষ্টি করি নি।” [সূরা আয-যারিয়াত: ৫৬]
আর এভাবেই ইসলামী শরীয়তে মানুষের পৃথিবীতে অস্তিত্বের একমাত্র কারণ সাব্যস্ত করা হয়েছে এক আল্লাহর ইবাদত করা আর তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক না করা। এবিষয়টি নিয়ে ইসলামে কোনো অস্পষ্টতা রাখা হয় নি। ফলে আল্লাহ তা‘আলা বিভিন্নভাবে মানুষের সামনে আপন অস্তিত্বের বিষয়টি তুলে ধরেছেন যাতে করে মানুষের মনে এতটুকু সন্দেহ না থাকে। আল্লাহ তাআলা বিশাল আসমান-যমীন, পাহাড়-পর্বত সৃষ্টি করেছেন, যেন মানুষ এগুলোর মাধ্যমে তার রবের স্তিঅস্তিত্বের সন্ধান লাভ করে। এজন্য তিনি মানুষকে নভোমন্ডল-ভূমন্ডল ও মানব সৃষ্টি সম্পর্কে ভেবে দেখতে বলেছেন। আর তিনি মানুষকে এমন সব নির্দশন দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যা তাকে ঈমান ও সত্যের দিকে পথপ্রদর্শন করবে,
﴿سَنُرِيهِمۡ ءَايَٰتِنَا فِي ٱلۡأٓفَاقِ وَفِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَهُمۡ أَنَّهُ ٱلۡحَقُّۗ ﴾ [فصلت: ٥٣]
“আমি অচিরেই তাদের দেখাবো আমার নিদর্শনাবলী দিগদিগন্তে এবং তাদের নিজেদের মাঝেও, যাতে করে তাদের সামনে স্পষ্ট যায় যে এটা ধ্রুবসত্য।” [সূরা ফুস্সিলাত: ৫৩]
আল্লাহ তা‘আলা মানুষের সামনে নিজের পরিচয় তুলে ধরার জন্য কেবল সৃষ্টির মাঝে নিহিত তাঁর অস্তিত্বের নিদর্শনাবলীর মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকেন নি; বরং নিজ একত্ববাদের সুস্পষ্ট আহ্বান নিয়ে যুগে যুগে মানুষের কাছে প্রেরণ করেছেন পুণ্যাত্মা নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালামদের। তারা এসে মানুষকে বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা একমাত্র প্রতিপালক ও ইবাদতের উপযুক্ত। তিনি গোটা বিশ্ব জগতের সৃষ্টিকর্তা। ইবাদতের উপযুক্ত একমাত্র রবও তিনিই। নবী-রাসূলগণ মানুষকে আল্লাহ তা‘আলার পবিত্র নামসমূহ ও তাঁর গুণাবলী শিক্ষা দিয়েছেন, যাতে করে মানুষ তাঁর প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান-কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করতে পারে। সর্বোত্তম পন্থায় তার ইবাদত ও আরাধনা করে। আর এভাবেই আল্লাহ তা‘আলা মানুষের প্রতি নিজ অস্তিত্বের সকল ‘প্রমাণ’ পূর্ণ করে দেন। অতঃপর সেগুলোর বাস্তবায়নের জন্য মানুষের জীবন-বিধান স্বরূপ নির্বাচিত করেন ইসলামকে। যাতে করে সালাত, সিয়াম ও হজ্জ ইত্যাদি ইবাদতের মধ্য দিয়ে সদা-সর্বদা মানুষের মনে আল্লাহর স্তিঅস্তিত্বের বাস্তবতা চির জাগরূগ থাকে। মানুষ সবসময়ই নিজ রবকে একান্তই কাছে অনুভব করে। মূলত একারণেই ইসলামের সকল ইবাদতে একনিষ্ঠতা ও আল্লাহর প্রতি পূর্ণ নিবেদনকে সাফল্যের মৌলিক শর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। কারণ সন্দেহ নেই, একজন মানুষ যখন দিন-রাতের চব্বিশ ঘন্টায় আল্লাহর সামনে পাঁচবার সালাতের মাধ্যমে মাথা নত করবে, তখন বাকি সময়টাও তার মন ও মস্তিষ্ক আল্লাহর সমীপে অবনত থাকবে।
এভাবেই স্বীয় রবের সঙ্গে সান্নি্ধ্যের সুনিবিড় বন্ধন গড়ে দেওয়ার মাধ্যমে ইসলাম একজন মানুষকে নাস্তিক্যবাদ থেকে মুক্ত রাখতে পারে। পারে মানুষ ও তাঁর রবের মাঝে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এমন সবকিছু থেকে তাকে দূরে রাখতে।