লগইন করুন
তসলিমা নাসরিন। বাংলাদেশের এক বিপথগামী লেখিকার প্রতিচ্ছবি। নামটা শুনলে যে কারো চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক অশ্লীল রিপুতাড়িত উগ্র নারীর অবয়ব। শুধু নিজের শরীর ও জীবন-যৌবনকেই তিনি পানির দরে পুরুষজাতির সামনে উপস্থাপন করেননি, বরং অন্য নারীদেরকেও তিনি এই পথে আহ্বান করেছেন। নগ্নতার ইন্ধন যুগিয়ে তিনি শুধু নিজেকেই ধ্বংস করেননি, বরং ধ্বংস করেছেন একটি সমাজকে, নিজের পরিবারকে এবং দেশের বৃহৎ লেখক গোষ্ঠীকে। বাংলাদেশের বহু নামকরা লেখককে তিনি যৌবনের বড়শি দিয়ে শিকার করেছেন খুব সহজেই। আবার তাদের এসব ‘কীর্তি’র কথা প্রকাশও করেছেন নির্দ্বিধায়। ফলে তসলিমা এখন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে তাওহীদপ্রেমী জনতার আন্দোলনের প্রয়োজন হবে না, তার এই অভিসারসঙ্গী এলিট শ্রেণীরাই আন্দোলন করে তাকে প্রতিহত করবে!
তসলিমার কোনো বই সাহিত্যের মানে উত্তীর্ণ নয়। কেউ তা সাহিত্যের বিচারে মূল্যায়নও করে না। তিনি নিজেও নিজেকে সাহিত্যসম্পন্ন বলে মনে করেন না। বাবা তাকে একজন ডাক্তার বানিয়েছিলেন। তার কাজ ছিল অসুস্থ মানুষের দেহে ইনজেকশনের সূঁই ফুটিয়ে সুস্থ করে তোলা। কিন্তু তিনি সেই পথ ছেড়ে আনাড়ি হাতে কলম নিয়ে তা দিয়ে সুস্থ মানুষের দেহে সম্ভ্রমহানীর হুল ফোটাচ্ছেন। সাহিত্যমানের জন্য নয়; মানুষ তার বই পড়ে অসুস্থ সুখ লাভের উদ্দেশ্যে। এরা হলো গ্রামগঞ্জের বাজারী হকারদের মতো; যারা রোগের চটকদার বিবরণে শ্রোতা সংগ্রহ করে মুহূর্তেই বিরাট মজমা জমিয়ে তোলে। কিন্তু কিছু বোকা শ্রোতা ছাড়া অধিকাংশ লোক তাদের কথা ও দাওয়া কোনোটাই গ্রহণ করে না।
সুতরাং তসলিমার লেখা এধরনের অশ্লীলতা সম্বলিত কোনো বই পড়ার গরজবোধ করিনি কখনও। তবে ঢাকার ফুটপাত থেকে পুরান বই কেনার অভ্যাস আছে আমার। এসব দোকান থেকে জীবনে অনেক মূল্যবান বই দেখা ও কেনার সুযোগ হয়েছে। তাই ওদিকে গেলে পুরান বইয়ের বাজারে একটু উঁকি না দিলে স্বস্তি পাই না। একবার বাংলাবাজার থেকে আসতে এভাবে উঁকি দিলাম ফুটপাতের একটি পুরান বইয়ের দোকানে। সাদা মলাটে বাঁধানো একটি বইয়ে দৃষ্টি আটকে গেল। ‘আমি তসলিমার মামা বলছি’ শিরোনামের বইটি কিনতে বিলম্ব করলাম না। একটা মেয়ে কেন এত বেপরোয়া, উচ্ছৃখল এবং অস্বাভাবিক পথে হাঁটা শুরু করল তা জানার কৌতূহল বইটি কিনতে আমাকে উৎসাহিত করল। বইয়ের লেখক তসলিমার মামা লেখক নন এমনকি উচ্চ শিক্ষিতও নন বলে ভূমিকা পাঠ করে বুঝা গেলো। নিতান্তই ভাগ্নির কলমের খোঁচায় জর্জরিত হয়ে অপারগ হয়ে কলম ধরেছেন তিনি। তসলিমা তার গোটা পরিবারকে দেশবাসীর সামনে কত নির্মম ব্যভিচারী পরিবার হিসেবে উপস্থাপন করেছেন তা ফুটে উঠেছে তসলিমার মামার কাঁচা হাতের লেখা এই বইয়ে।
তসলিমা নিজেও তার এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন, তিনি তার পরিবারকে অত্যন্ত নির্মমভাবে ‘জবাই’ করেছেন। তার জবাইয়ের নির্মমতা কত ভয়াবহ হতে পারে তা ওই বইটি পড়েও কিছু আঁচ-অনুমান করা যায়।
তিনি অত্যন্ত নোংরা ভাষায় মা, বাবা, চাচা, মামা, ভাইবোন এবং নিকট ও দূর সম্পর্কের প্রায় সব আত্মীয়-স্বজনকে অত্যন্ত কামুক পশুসম চরিত্রের মানুষ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এসব কথা লেখার সময় তসলিমার মস্তিষ্ক সুস্থ ছিল কিনা, কখনও কখনও সন্দেহ হয়। যিনি নিজের জীবনকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বহুপুরুষের ভোগের সামগ্রী ভাবতে পছন্দ করেন, একে একে স্বামী ছেড়ে বহুগামিতায় বিকৃত সুখ ও অর্থবিত্ত খোঁজেন, আল্লাহ-রাসূলের বিরুদ্ধে অকপটে কুৎসা রটনা করেন, কুরআন-হাদীস ও ইসলাম-মুসলমানের বিরুদ্ধে চরম বিষোদগার করেন, জীবনের পড়ন্তবেলায় সেই তসলিমা কেমন আছেন তা মাঝে মাঝে জানার কৌতূহল হয়। বাংলাদেশের বিশিষ্ট লেখক ফরহাদ মজহার তার এক লেখায় ইউরোপিয়ান এক জরিপের ফলাফল উল্লেখ করেছেন। জরিপটা ছিল নাস্তিকদের বিষয়ে। জরিপে উল্লেখ করা হয়, অধিকাংশ নাস্তিক জীবনের পড়ন্ত কিংবা মাঝবেলায় আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকার এবং আড়ালে-আবডালে তাঁকে মান্য করতে তৎপর হয়ে ওঠে।’
জরিপের এই ফলাফল পরম বাস্তব তথ্য। একজন মানুষ কতকাল আর প্রবৃত্তির পূজা করে বাঁচতে পারে? এক আল্লাহয়, এক স্রষ্টায়, এক মালিকের বিশ্বাস ও ইবাদতে যে তৃপ্তি, নির্ভরতা ও দায়মুক্তির নিশ্চয়তা বহু আল্লাহয় তার কল্পনাই করা যায় না। স্বয়ং আল্লাহ কুরআনে একথার প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করেছেন। তাই সঙ্গত কারণেই জীবনের পড়ন্ত কিংবা মাঝবেলায় এসে অনেক নাস্তিক বেকারার হয়ে যায়, খোঁজে ফেরে প্রকৃত আল্লাহকে। ভ্রষ্টবিহঙ্গের মতো। যে উদগ্রীব হয়ে খোঁজে তার নীড়। আসলে খেঁড়পাতের সবুজাভ স্পন্দন কতদিনই বা থাকে? একসময় স্পন্দন শেষ হয় এবং বৃক্ষ থেকেই তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। তাই জীবনের এই উন্মাদনা থাকে না চিরদিন। আল্লাহর গোলামীতে নিজেকে সঁপে দিতেই হয় কোনো না কোনো সময়ে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰٓ إِلَى ٱلسَّمَآءِ وَهِيَ دُخَانٞ فَقَالَ لَهَا وَلِلۡأَرۡضِ ٱئۡتِيَا طَوۡعًا أَوۡ كَرۡهٗا قَالَتَآ أَتَيۡنَا طَآئِعِينَ ١١ ﴾ [فصلت: ١١]
‘অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করলেন, যা ছিল ধুম্রপুঞ্জবিশেষ। অনন্তর তিনি তাকে এবং পৃথিবীকে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে আসো ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা আসলাম অনুগত হয়ে।’ (সূরা ফুসসিলাত, আয়াত : ১১)
বিরাট এক ভূমিকা পেশ করে ফেললাম। কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য তসলিমার একটি সাক্ষাৎকার। জীবনে কতবার, কতভাবে আল্লাহ-রাসূলের বিরুদ্ধে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। কিন্তু কিছুদিন আগে ‘পার্বত্য নিউজ’ নামে একটা পত্রিকায় তার দেয়া সাক্ষাৎকারে আছে নীড়ে ফেরার আকুলতা, অতীত জীবনের পাপমোচনের দায়বদ্ধতা। সাক্ষাৎকারটির শিরোনাম এমন-
‘মাঝেমধ্যে মনে হয় সব ছেড়ে নামাজ-রোজা করি, তওবা করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করি।’
বিভিন্ন সময়ে ইসলামের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে যাযাবরি জীবনযাপন করা তসলিমার এখন বিশাল পৃথিবীর কোথাও জায়গা হচ্ছে না। হবেই বা কী করে? জমিন যে আল্লাহ তা‘আলার!
﴿ يُولِجُ ٱلَّيۡلَ فِي ٱلنَّهَارِ وَيُولِجُ ٱلنَّهَارَ فِي ٱلَّيۡلِ وَسَخَّرَ ٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَۖ كُلّٞ يَجۡرِي لِأَجَلٖ مُّسَمّٗىۚ ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمۡ لَهُ ٱلۡمُلۡكُۚ وَٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ مَا يَمۡلِكُونَ مِن قِطۡمِيرٍ ١٣ ﴾ [فاطر: ١٣]
‘তিনি রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন। তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকটি আবর্তন করে এক নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত। ইনি আল্লাহ; তোমাদের পালনকর্তা, সাম্রাজ্য তাঁরই। তাঁর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা তুচ্ছ খেজুর আঁটিরও অধিকারী নয়।’ (সূরা ফাতির, আয়াত : ১৩)
তাই পৃথিবীর কোনো জমিনই নাস্তিক ও আল্লাহদ্রোহীর ভার বহন পছন্দ করে না। ফলে জীবনের পড়ন্ত বেলায় এখন তিনি হতাশ। কমে গেছে সেই তারুণ্যময় উচ্ছৃঙ্খল লেখালেখি। ‘সবকিছুর একটা শেষ আছে’ সেই সত্য এখন তার অনুভবে স্পষ্ট। ভুল, হতাশা ও হতাশা থেকে নতুন উপলব্ধি, শঙ্কা-দোদুল্যমানতার মধ্যে দিন কাটছে তার। নিজেই ভাবছেন, ‘মাঝেমধ্যে মনে হয় সব ছেড়ে নামাজ-রোজা করি, তওবা করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করি।’ কম্যুনিস্টরাও তো এক সময় বদলে যায়। পার্বত্য নিউজে দেওয়া তার ওই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে এধরনের অকল্পনীয় কিছু তথ্য। একজন স্বঘোষিত নাস্তিকের এ বাস্তবজীবনের অনুভূতি প্রকাশ করতে সাক্ষাৎকারটির কিছু অংশ তুলে ধরা যাক। তবে পাঠকের পূর্ণ অনুমানের জন্য কাটছাঁট না করে সাক্ষাৎকারের ওই পূর্ণ অংশ উপস্থাপন করা হলো।
[আলোচিত এই সাক্ষাৎকারের কথায় পরিষ্কার, এখন তিনি হতাশ, চোখের নিচে কালি পড়েছে, চামড়ায় বয়সের ছাপ, শরীরের মধ্যে নানারকম ব্যথা-বেদনা তো আছেই। একাকিত্ব তাকে আরও পঙ্গু করে দিচ্ছে। এমন অবস্থায় বিদেশের কোথাও থিতু হতেও পারছেন না। দেশে ফেরাও তার জন্য দিন দিন কঠিন হয়ে গেছে। যে প্রতিবাদী ঈমানদার জনতার ভয়ে দেশ ছেড়েছিলেন, সে ভয় এখনও তাকে তাড়িয়ে ফিরছে। তিনি বলেছেন, লন্ডন থেকে দিন কয়েকের জন্য গিয়েছিলাম ভারতে। আর কাকতালীয়ভাবেই দেখা গেলো এই বিতর্কিতা লেখিকা ডা. তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে। তিন দিনের নানা বিষয়ে তার সঙ্গে কথা হলো। এ বিষয়গুলো তুলে ধরতেই আজকের এই প্রয়াস। সাক্ষাৎগ্রহীতার ভাষ্য]
‘প্রশ্ন : আপনার কাছে একটা প্রশ্ন। এই যে লেখালেখি করলেন, এর মূল উদ্দেশ্য কী ছিল, দেহের স্বাধীনতা না চিন্তার স্বাধীনতা?
তসলিমা নাসরীন : প্রশ্নটি আপেক্ষিক। আসলে আমিতো পেশায় ছিলাম চিকিৎসক। আমার বাবা চেয়েছিলেন তার মতো মানে অধ্যাপক ডা. রজব আলীর মতো আমিও একজন খ্যাতিমান চিকিৎসক হই। শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনে আমি অনুভব করি, নারীরা আমাদের সমাজে ক্রীতদাসীর মতো। পুরুষরা তাদের ভোগ্যপণ্যের মতো ব্যবহার করে। এ কারণেই বিষয়গুলো নিয়ে প্রথমে লেখালেখির কথা ভাবি।
প্রশ্ন : আমার প্রশ্নের জবাব হলো না। কী স্বাধীনতার দাবিতে আপনার এ লড়াই?
তসলিমা : আমি প্রথমত নারীর জরায়ুর স্বাধীনতার দাবি তুলি। একজন পুরুষ যখন চাইবে, তখনই তার মনোস্কামনা পূর্ণ করতে ছুটে যেতে হবে। এটা তো হতে পারে না। অথচ তখন ছুটে না গেলে জীবনের সব পুণ্য নাকি শেষ হয়ে যাবে। চিন্তার স্বাধীনতা না থাকলে ভালো লেখক হওয়া যায় না। দেহের স্বাধীনতার বিষয়টা গৌণ। তবে একেবারে ফেলনা নয়। পুরুষই একচেটিয়া মজা লুটবে, নারী শুধু ভোগবাদীদের কাছে পুতুলের মতো হয়ে থাকবে, এটা মেনে নিতে পারিনি।
প্রশ্ন : আপনি পরিকল্পিতভাবে নিজেকে আলোচিত ও অপরিহার্য করে তোলেন। আজ বাংলা সাহিত্যে বা বাংলাদেশের সাহিত্য জগতে আপনি তো চরমভাবে অবহেলিত।
তসলিমা : আমি একটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছি। সত্য কথা সাহিত্যে এলে তা অনেকের জন্য কষ্টদায়ক হয়। আমি আমার বহু স্বামী ও ভোগ্য পুরুষদের নামধাম প্রকাশ করে দেওয়ায় অনেক বন্ধু আমাকে এড়িয়ে চলেন। বাংলা সাহিত্যের অনেক দামি দামি পুরুষও চান না যে আমি দেশে ফিরি। এক সময় আমার বিপক্ষে ছিল কট্টর মৌলবাদীরা। এখন প্রগতিশীল অনেক সাহিত্যিকও বিপক্ষে। কারণ এদের নষ্ট মুখোশ আমি খুলে দিয়েছি।
প্রশ্ন : আপনি চিকিৎসক থাকলেই ভালো করতেন। মিডিয়াতে কেন এলেন? সাহিত্যেই বা কেন ঢুকলেন?
তসলিমা : আমি নারীর অধিকার নিয়ে ভেবেছি। কিন্তু এখন মনে হয় আমি মানবিকভাবে আশ্রয়হীন। আর এ কারণেই আমি অন্য স্রোতে সুখ খুঁজেছি। পরিবার হারালাম, স্বামী সন্তান হলো না, ঘর-সংসার হলো না। তখন দৈহিক সম্পর্কে নেশাগ্রস্ত না থেকে আর কোনো পথ খোলা ছিলো না।
প্রশ্ন : এখন আপনি কী চান?
তসলিমা : অনেক কিছু। আমার হারিয়ে যাওয়া জীবন, যৌবন, ভোগ-উপভোগ, স্বামী-সন্তান, পরিবার-পরিজন। কিন্তু দিতে পারবেন কি? আজ আমি নিজ দেশের কাউকে দেখলে কুণ্ঠিত ও লজ্জিত হই। খ্যাতি, অর্থ, পুরস্কার সবই আছে, তবুও মনে হয় আমি ভীষণ পরাজিত। দিনে হইচই করে কাটাই, রাত হলে একাকিত্ব পেয়ে বসে। আগের মতো পুরুষদের নিয়ে রাতকে উপভোগ করার মতো দেহ-মন কোনোটাই নেই।
প্রশ্ন : পুরনো বন্ধুরা যোগাযোগ রাখেনি? এখন কেমন পুরুষ বন্ধু আছে?
তসলিমা : এক সময় অনেক ব্যক্তিত্ববানদের পেছনে আমি ঘুরেছি। ব্যক্তিত্বহীনরা আমার পেছনে পেছনে ঘুরেছে। আজকাল আর সুখের পায়রাদের দেখি না। মনে হয় নিজেই নিজেকে নষ্ট করেছি। পরিচিত হয়েছি নষ্ট নারী, নষ্টা চরিত্রের মেয়ে হিসেবে। লেখালেখি করে তাই এসব পুরুষদের ওপর আমার রাগ, ঘৃণা ও অবহেলা প্রকাশ করেছি। চরিত্রহীনতার রাণী হিসেবে প্রকাশিত হলাম, অথচ এই রাণীর কোনো রাজাও নেই, প্রজাও নেই। এ জন্য আজ হতাশায় নিমজ্জিত আমি।
প্রশ্ন : ধর্ম-কর্ম করেন?
তসলিমা : মাঝেমধ্যে মনে হয় সব ছেড়ে নামাজ-রোজা করি, তওবা করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করি। কম্যুনিস্টরাও তো এক সময় বদলে যায়। আমার জন্ম ১২ই রবিউল আউয়াল, মহানবীর জন্মদিনে। নানী বলেছিলেন, আমার নাতনী হবে পরহেজগার। সেই আমি হলাম বহু পুরুষভোগ্যা একজন ধর্মকর্মহীন নারী। বলা তো যায় না, মানুষ আর কতদিন বাঁচে। আমার মা ছিলেন পীরের মুরীদ। আমিও হয়ত একদিন বদলে যাবো।
প্রশ্ন : বিয়ে-টিয়ে করবার ইচ্ছে আছে কি?
তসলিমা : এখন বিয়ে করে কী করবো? পুরুষটিই বা আমার মধ্যে কী পাবে? সবই পড়ন্ত বেলায়। যে বিয়ে করবে, সে যদি আমার মধ্যে কিছু না চায়, সন্তান না চায়, এমন মানব পেলে একজন সঙ্গী করার কথা ভাবতেও পারি।
প্রশ্ন : আপনি কি একেবারে ফুরিয়ে গেছেন?
তসলিমা : না, তা ঠিক নয়। তবে পুরুষতো শত বছরেও নারীকে সন্তান দেয়। মেয়েরা তা পারে না। আমি এখনও ফুরিয়ে যায়নি। তবে নতুন বা আনকোরাতো নয়। পুরুষদেরও বয়স বাড়লে আগ্রহ বেড়ে যায়। এতটা মেটানো তো আর এই বয়সে সম্ভব হবে না।
প্রশ্ন : বয়স বাড়লে পুরুষের চাহিদা বাড়ে এটা কীভাবে বুঝলেন?
তসলিমা : কত বুড়ো, মাঝবয়সী ও প্রবীণ বন্ধুদের নিয়ে মেতেছি, এটা আমার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।
প্রশ্ন : রাত যখন বিশ্বকে গ্রাস করে, আপনার ঘুম আসছে না তখন আপনার বেশি করে কী মনে পড়ে?
তসলিমা : খুব বেশি মনে পড়ে আমার প্রথম প্রেম, প্রথম স্বামী, প্রয়াত কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহকে। অনেক কাঁদি তার জন্য। পেয়েও হারালাম তাকে। রাগ হয়েছিল বিয়ের রাতেই। (অশ্লীল হওয়ায় পরের অংশ বাদ)
প্রশ্ন : অন্য স্বামীদের কথা মনে পড়ে না?
তসলিমা : তারা এমন উল্লেখযোগ্য কেউ নন। তাদের মুরোদ আমি দেখেছি। তার চেয়ে বহু বন্ধুর মধ্যে আমি দেখেছি কেমন উন্মত্ত তেজ। ওদের স্মৃতি মনে পড়ে মাঝে মধ্যে।
প্রশ্ন : দেশে ফিরবেন না?
তসলিমা : দেশই আমাকে ফিরতে দেবে না। আর কোথায় যাবো? বাবা-মা-ভাই-বোন সবাইকে আমি লেখাতে জবাই করে দিয়েছি। আসলে নেশাগ্রস্তই ছিলাম, অনেক কিছু বুঝিনি। আজ আত্মীয়-স্বজনও আমাকে ঘৃণা করে। মরার পর লাশ নিয়ে চিন্তা থাকে, আমার নেই। যে কোনো পরীক্ষাগারে দেহটা ঝুলবে। ছাত্রদের কাজে লাগবে।’
এই হলো ধর্ম, সমাজ ও নির্মল সংস্কৃতির বিপরীত মেরুর প্রবক্তা রুচিহীন নাস্তিক মহিলা। যৌন স্বাধীনতা দাবি করে বিতাড়িত হয়েছে দেশ থেকে, মাতৃভূমি থেকে এবং নারীত্বের কাতার থেকে। পেয়েছে কেবল বিধর্মীদের এঁটে কয়েক মুঠো ভাত। কিন্তু এখন তাও বাসি হয়ে গেছে। তাই আকুলতা বাড়ছে ফিরে আসার, আপন নীড়ে ঠিকানা করে নেওয়ার। সব বিহঙ্গই সন্ধ্যাবেলায় ঘরে ফেরে। মানুষের জীবনেও সন্ধ্যাবেলা আছে। জীবন সূর্য অস্ত যাওয়ার আগ পর্যন্ত সময় থাকে মানববিহঙ্গের ঘরে ফেরার। জানি না তসলিমার সেই সুযোগ হবে কিনা? আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি ঘরে ফিরুন। ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিত হয়েই কবরের পথ ধরুন। তাকে দেখে শিখুক তার ভাবগুরু ও ভাবশিষ্য অসংখ্য ধর্মদ্রোহী ও ইসলামবিদ্বেষী নারী-পুরুষ।