লগইন করুন
যখন মুসলিমগণের মধ্য থেকে কোনো একটি দল বা গোষ্ঠী একত্রিত হবে, তখন তাদের উপর আবশ্যকীয় কর্তব্য হল— তারা আল্লাহ তা‘আলার বেঁধে দেওয়া সীমারেখার মধ্যে থেকে তাদের মাজলিস পরিচালনা করবে এবং কোনো রকম সীমালংঘন করবে না, যেমন: খেল-তামাসা, গীবত তথা তাদের ভাইয়ের মাংস দংশন, তাদের গোপনীয় বিষয় প্রকাশ এবং তাদের ভুল-ত্রুটি ও অপরাধের সমালোচনা ইত্যাদি তাদের আলোচনার বিষয় না হওয়া।
বরং তাদের জন্য ওয়াজিব হল— সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করার ব্যাপারে পরস্পরকে সহযোগিতা করা, মানুষের মাঝে সংশোধন ও সংস্কারমূলক কাজ করা এবং আল্লাহ তা‘আলার কিতাব ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ নিয়ে শিক্ষামূলক আলোচনা করা।
সুতরাং যে মুসলিমের লক্ষ্য হবে আল্লাহ ও পরকাল, এমন প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হল— তার দ্বারা অনুষ্ঠিত প্রত্যেক মাজলিসে এই বিষয়ে সতর্ক করা এবং আল্লাহর যিকির ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করার ব্যাপারে কোনো রকম অমনোযোগী না হওয়া; নতুবা কিয়ামতের দিনে তার উপর নিঃসঙ্গতা, দুঃখ-কষ্ট ও অপমানজনক অবস্থা চেপে বসবে, যদিও সে জান্নাতে প্রবেশ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« مَا مِنْ قَوْمٍ جَلَسُوا مَجْلِسًا لَمْ يَذْكُرُوا اللَّهَ فِيهِ إِلَّا رَأَوْهُ حَسْرَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ » . ( أخرجه أحمد ) .
“যে কোনো সম্প্রদায় কোনো মাজলিসে বসল, অথচ তারা সেখানে আল্লাহর যিকির করল না, কিয়ামতের দিন তারা তাকে দুঃখ-কষ্ট হিসেবে দেখবে।”[1]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন:
« مَا قَعَدَ قَوْمٌ مَقْعَدًا لَمْ يَذْكُرُوا اَللَّهَ فيهِ , وَلَمْ يُصَلُّوا عَلَى اَلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِلَّا كَانَ عَلَيْهِمْ حَسْرَةً يَوْمَ اَلْقِيَامَةِ , وَإِنْ دَخَلُوا الْجَنَّةَ » . ( أخرجه أحمد و الحاكم ) .
“কোন সম্প্রদায় কোনো আসর বা মাজলিসে বসল, অথচ তারা সেখানে আল্লাহর যিকির করল না এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দুরূদ পাঠ করল না, কিয়ামতের দিনে তাদের উপর দুঃখ-কষ্ট চেপে বসবে, যদিও তারা জান্নাতে প্রবেশ করে।”[2]
কিন্তু ভুলে যাওয়াটাই মানবজাতির জন্য বিপদজনক এবং তাদের প্রয়োজনীয় বস্তুর ঘাটতির কারণ। সুতরাং যখন মুসলিম ব্যক্তি মাজলিসে তার আবশ্যকীয় কর্তব্য পালনে ব্যর্থ বা অক্ষম হবে, তখন সেখান থেকে উঠে আসার পূর্বে সে যেন মাজলিসের কাফ্ফারা আদায় করতে ভুলে না যায়, যেমনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন, তিনি বলেন:
« من قال: سبحان الله وبحمده سبحانك اللهم وبحمدك أشهد أن لا إله إلا أنت أستغفرك وأتوب إليك ، فقالها في مجلس ذكر كانت كالطابع يطبع عليه ، ومن قالها في مجلس لغو كانت كفارة له » . ( أخرجه الحاكم و الطبراني ) .
“যে ব্যক্তি যিকিরের মাজলিসে বলে: « سبحان الله وبحمده سبحانك اللهم وبحمدك أشهد أن لا إله إلا أنت أستغفرك وأتوب إليك » (আল্লাহরই পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং তাঁর প্রশংসা করছি; হে আল্লাহ! আপনারই পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং আপনার প্রশংসা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ (মা‘বুদ) নেই, আমি আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাওবা করছি), তখন তা হবে মোহরাঙ্কিত বস্তুর মত (টিকসই); আর যে ব্যক্তি তা অর্থহীন মাজলিসে বলবে, তখন তা তার জন্য কাফ্ফারা হয়ে যাবে।”[3]
[2] আহমাদ: (২/৪৬৩); ইবনু হিব্বান: (২৩২২— মাওয়ারিদ); হাকেম: (১/৪৯২) ও অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ হাদিসটি আ‘মাশের সনদে বর্ণনা করেছেন, তিনি বর্ণনা করেন আবূ সালেহ থেকে, তিনি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ‘মারফু‘’ হিসেবে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। আমি বলি: হাদিসের সনদটি সহীহ।
[3] হাকেম: (১/৫৩৭); ত্ববারানী, আল-কাবীর ( الكبير ), হাদিস নং- ১৫৮৬ ও ১৫৮৭; তাঁরা হাদিসটি নাফে‘ ইবন জুবায়ের ইবন মুত‘য়েমের সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি তাঁর পিতা জুবায়ের ইবন মুত‘য়েম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে ‘মারফু‘’ হিসেবে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
হাকেম রহ. বলেন: হাদিসটি ইমাম মুসলিম রহ. এর শর্তে সহীহ। আর একই মত ব্যক্ত করেছেন ইমাম যাহাবী রহ. এবং আমাদের শাইখ আলবানী রহ. তাঁর ‘সিলসিলাতুল আহাদিসিস্ সাহীহা’ ( سلسلة الأحاديث الصحيحة ) নামক গ্রন্থের মধ্যে, হাদিস নং- ৮১; আর তাঁরা যা বলেছেন, বিষয়টি তাই।
আর ত্ববারানী’র দ্বিতীয় জায়গার বর্ণনায় অতিরিক্ত কথা আছে: « يقولها ثلاث مرات » (তিনি তা তিনবার বলেন)।
আমাদের শাইখ বলেন: হাইছামী রহ. তার ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি এবং তা (সনদটি) উৎকৃষ্ট নয়; কারণ, তার সনদের মধ্যে খালিদ ইবন ইয়াযিদ আল-‘আমরী নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে, যাকে আবূ হাতিম ও ইয়াহইয়া মিথ্যাবাদী বলেছেন; আর ইবনু হিব্বান বলেন: সে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের থেকে ‘মাউযু’ হাদিস বর্ণনা করত। সুতরাং এটা অতিরিক্ত, এর দিকে দৃষ্টি দেয়ার দরকার নেই।
আমি বলি: এটা শাইখের পক্ষ থেকে অনিচ্ছাকৃত ভুল (আল্লাহ তাকে হিফাজত করুন); কেননা, হাইছামী রহ. দুই জায়গায় ঐ বিষয়ে ইঙ্গিত করেছেন, যে বিষয়ে শাইখ অত্যন্ত কঠিন কথা বলেছেন (আল্লাহ তাকে হিফাজত করুন); তিনি ‘আল-মাজমা‘ ( المجمع ) এর মধ্যে বলেছেন (১০/১৪২): “ত্ববারনী রহ. তা বর্ণনা করেছেন এবং তার সনদে খালিদ ইবন ইয়াযিদ আল-‘আমরী নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন, যিনি দুর্বল।”
আর তিনি ‘আল-মাজমা‘ ( المجمع ) এর (১০/৪২৩) মধ্যে সহীহ ও দুর্বল— দু’টি বর্ণনা উল্লেখ করার পর বলেছেন: “ত্ববারানী রহ. সবগুলো বর্ণনাই বর্ণনা করেছেন এবং প্রথম বর্ণনার বর্ণনাকারীগণ হলেন সহীহ হাদিসের বর্ণনাকারী।” অতঃপর তিনি যিকির সংক্রান্ত হাদিসের সনদগুলো অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত করেছেন।
আর এর দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, হাইছামী রহ. এই বর্ণার ব্যাপারে নিরব থাকেননি, বরং আমাদের শাইখ কর্তৃক উক্ত বর্ণনাকে দুর্বল বলার পূর্বেই তিনি তাকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন— সুন্নাতে নববী’র খেদমতের কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে সাহায্য করুন।