যাকাত বিধানের সারসংক্ষেপ সদকা সংশ্লিষ্ট মাসআলা ও বিধি-বিধান ইসলামহাউজ.কম
কতিপয় লোকের জন্য নফল ও ফরয সদকা হারাম:

১. সম্পদশালী: ধনী ও বিত্তবানদের জন্য সদকা হারাম। ধনী দ্বারা উদ্দেশ্য, যার নিজের ও পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনীয় বাসস্থান, পোশাক-পরিচ্ছদ ও খাবার ইত্যাদি রয়েছে। সম্পদশালী হওয়ার জন্য নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া জরুরি নয়, প্রয়োজন মোতাবেক সম্পদ থাকাই যথেষ্ট।

২. উপার্জন সক্ষম: উপার্জন সক্ষম ব্যক্তির জন্য সদকা হারাম, তবে সে যদি অপারগ হয়, যেমন তার মানানসই পেশা দিয়ে তার নিজের ও পরিবারের প্রয়োজন পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তারা ফকীর ও মিসকীনদের খাত থেকে যাকাত পাবে, কয়েকটি শর্তে, যার আলোচনা পূর্বে করেছি।

৩. মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবার ও তাদের খিদমাত আঞ্জামদানকারী দাস-দাসী ও স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য সদকা হারাম: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবার, যেমন বনু হাশিম, বনু আব্দুল মুত্তালিব, তারা গণিমত থেকে এক পঞ্চমাংশ পাবে।

৪. কাফির অথবা মুশরিককে যাকাত দেওয়া হারাম: যাদের অন্তর ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করা জরুরি, তারা এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে, তবে তাদেরকে নফল সদকা দেওয়া বৈধ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«تصدقوا على أهل الأديان».

“তোমরা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ওপর সদকা কর”।[1]

আসমা বিনতে উমাইসের হাদীসে রয়েছে, মুশরিক অবস্থায় তার মা তাকে দেখতে এসেছিল: তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যত্ন-আত্তির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন, তিনি বলেন: صِلِي أمك “তোমার মায়ের আত্মীয়তার হক রক্ষা কর”।[2]

কয়েকটি জরুরি বিষয়:

১. গরীব স্ত্রী প্রসঙ্গ: স্বামী যদি ধনী হয়, গরীব স্ত্রীকে যাকাত দেওয়া বৈধ নয়, যদি স্বামী স্ত্রী ও স্ত্রীর সন্তানদের ব্যাপারে কৃপণতা না করে। কারণ স্বামীর জন্য স্ত্রী ধনী, তার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব স্বামীর ওপর। অনুরূপ স্বামীর নিজের সন্তানরাও তার কারণে ধনী, যাবত তার অধীন থাকবে। হ্যাঁ, যদি স্বামী কৃপণ হয়, তবে শাইখ উসাইমীন রহ. বলেছেন: “যদি কোনো স্ত্রীর স্বামী ধনী হয়, কিন্তু সে চরম কৃপণ, এই অবস্থায় স্ত্রীকে যাকাত দেওয়া বৈধ, কারণ সে ফকীর”।[3]

২. পাঁচ প্রকার সম্পদশালীর জন্য যাকাত বৈধ, যদিও তারা ধনী:

ক. যাকাতের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ: যদিও তারা নিজের ও পরিবারের প্রয়োজনীয় সম্পদের মালিক, তবুও তাদেরকে যাকাত দিবে, কারণ যাকাত বণ্টনের আয়াত তাদেরকে হকদার ঘোষণা করেছে।

খ. ঋণগ্রস্ত ধনী: যদিও তার নিজের ও পরিবারের প্রয়োজনীয় সম্পদ রয়েছে, তবে ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ্য তার নেই, তাকে যাকাত দেওয়া বৈধ, যেমন পূর্বে আলোচনা করেছি।

গ. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী, যদিও সে ধনী, তার জিহাদের খরচ যাকাত থেকে বহন করা বৈধ।

ঘ. কোনও মিসকীন যাকাত গ্রহণ করে যদি কোনও ধনীকে হাদিয়া দেয়, তাহলে ধনীর জন্য যাকাতের হাদিয়া গ্রহণ করা বৈধ।ঙ. ফকীর থেকে যদি ধনী ব্যক্তি নিজের অর্থ দিয়ে যাকাত খরিদ করে সেই যাকাত তার জন্য বৈধ। উদাহরণত কোনও ফকীর ফল বা চতুষ্পদ জন্তু যাকাত পেয়েছে, সে তার যাকাত কোনও ধনীর নিকট বিক্রি করে দিল, ধনীর জন্য এই যাকাত হালাল। এ থেকে আরেকটি জিনিস প্রমাণ হয় যে, যাকাতের হকদার যাকাত দিয়ে ব্যবসা করতে পারবে এবং তার থেকে ধনী-গরিব সবার জন্যই ক্রয়-বিক্রয় করা বৈধ, তবে ফকীরকে সদকা করে সেই সদকা দানকারীর ক্রয় করা পছন্দনীয় নয়, মাকরুহ।

>
[1] সিলসিলাহ সহীহাহ: (৬/৬২৮)।

[2] সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম।

[3] আশ-শারহুল মুমতি‘: (৬/২৪২)।