লগইন করুন
হে ভাইসব!
নারীদের সমস্যাটি একটি ভয়াবহ সমস্যায় রূপ নিয়েছে, এ সমস্যাকে অবজ্ঞা করা অথবা তার ব্যাপারে চুপ থাকা উচিৎ হবে না। কারণ, এটাকে যদি এভাবেই চলতে দেওয়া হয়, তাহলে অচিরেই রাষ্ট্র ও রষ্ট্রের নাগরকিগণ ভয়ানকভাবে তার অশুভ পরিণতির শিকার হবে। সুতরাং রাষ্ট্রের প্রশাসনযন্ত্র ও তার নাগরিকগণের যথাযথ কর্তৃপক্ষ কি অনুধাবন করেন না যে, তাদের প্রত্যেকেরই তার পরিবার বা অধীনস্থদের ব্যাপারে দায়িত্ব রয়েছে, তিনি কি তার স্ত্রী, কন্যা, বোন ও তার নিকটাত্মীয় নারীদেরকে উপদেশ দিতে সক্ষম নন, যেমনটি করেছেন সূরা আন-নূর নাযিল হওয়ার সময় আনাসার (পুরুষ) সাহাবীগণ? তারা যা করেছেন, তার আলোচনা খুব শীঘ্রই আসছে। অতঃপর তিনি কি তার (অধীনস্থ) নারীদেরকে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করতে পারেন না এবং যখন (প্রয়োজনের কারণে) বের হবে, তখন কি তিনি তাকে সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে অথবা সুগন্ধি ব্যবহার না করে বের হওয়ার ব্যাপারে বাধ্য করতে পারেন না? অতঃপর যার অধ্যয়নরত কন্যা অথবা বোন অথবা নিকটাত্মীয় কেউ আছে, তিনি কি তাদেরকে ছাত্রীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা, তাদেরকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করা এবং তাদেরকে মন্দকাজ থেকে, হাট-বাজরে ঘুরাফেরা ও সুন্দর সাজে বের হওয়া হওয়া থেকে সতর্ক করার ব্যাপারে তাদেরকে উৎসাহিত করতে পারেন না? নিশ্চয় এ সব কিছুই সম্ভব ও সহজ হবে তখন, যখন মানুষ তার রবকে (প্রতিপালককে) বিশ্বাস করবে, তার নিয়তকে নির্ভেজাল ও একনিষ্ঠ করবে এবং সিদ্ধান্তকে দৃঢ়-মজবুত করবে।
হে ভাইসব! এগুলো হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কর্তৃক তাঁর কিতাবের মধ্যে বর্ণিত নির্দেশনা এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ’র মধ্যে বর্ণিত দৃষ্টিভঙ্গি। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٖ وَلَا مُؤۡمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمۡرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلۡخِيَرَةُ مِنۡ أَمۡرِهِمۡۗ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلٗا مُّبِينٗا ٣٦﴾ [الاحزاب: ٣٦]
“আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো বিষয়ের ফয়সালা দিলে কোনো মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য সে বিষয়ে তাদের কোনো (ভিন্ন সিদ্ধান্তের) ইখতিয়ার সংগত নয়। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল, সে স্পষ্টভাবে পথভ্রষ্ট হলো”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৬]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ فَأُوْلَٰٓئِكَ مَعَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِم مِّنَ ٱلنَّبِيِّۧنَ وَٱلصِّدِّيقِينَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَٱلصَّٰلِحِينَۚ وَحَسُنَ أُوْلَٰٓئِكَ رَفِيقٗا ٦٩﴾ [النساء: ٦٩]
“আর কেউ আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করলে সে নবী, সিদ্দীক (সত্যনিষ্ঠ), শহীদ ও সৎকর্মপরায়ণ, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন -তাদের সঙ্গী হবে এবং তারা কত উত্তম সঙ্গী”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৯]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠ وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوۡ ءَابَآئِهِنَّ أَوۡ ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآئِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ أَخَوَٰتِهِنَّ أَوۡ نِسَآئِهِنَّ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُنَّ أَوِ ٱلتَّٰبِعِينَ غَيۡرِ أُوْلِي ٱلۡإِرۡبَةِ مِنَ ٱلرِّجَالِ أَوِ ٱلطِّفۡلِ ٱلَّذِينَ لَمۡ يَظۡهَرُواْ عَلَىٰ عَوۡرَٰتِ ٱلنِّسَآءِۖ وَلَا يَضۡرِبۡنَ بِأَرۡجُلِهِنَّ لِيُعۡلَمَ مَا يُخۡفِينَ مِن زِينَتِهِنَّۚ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١﴾ [النور: ٣٠، ٣١]
“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে -এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে, আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তবে যা সাধারণত প্রকাশ থাকে। আর তারা তাদের গলা ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীরা, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা-রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অংগ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে আস, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার”। [সূরা আন-নুর, আয়াত: ৩০–৩১]
এগুলো হলো ইসলামের নির্দেশনা ও দৃষ্টিভঙ্গি। ইসলামের অনুসারীগণের নিয়ম-পদ্ধতি সম্পর্কে উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনাহা বলেন:
«لَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ :﴿يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلابِيبِهِنَّ﴾ [الاحزاب: ٥٩]، خَرَجَ نِسَاءُ الْأَنْصَارِ كَأَنَّ عَلَى رؤوسهن الْغِرْبَانَ مِنَ السكينةِ، وعليهنَّ مِنْ أَكْيِسَةٍ سُودٍ يَلْبَسْنَهَا».
“যখন يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلابِيبِهِنَّ “তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়”। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯] এ আয়াতটি নাযিল হলো, তখন আনসারদের নারীগণ বাইরে বের হওয়ার সময় তাদের মাথা এমনভাবে কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেলত, মনে হয় যেন তাদের মাথার উপর কাক স্থির হয়ে বসে আছে।”[1]
আর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
«ما رأيت أفضل من نساء الأنصار أشد تصديقا لكتاب الله ولا إيمانا بالتنزيل ، لقد أنزلت سورة النور: ﴿وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ﴾ [النور: ٣١] فانقلب الرجال يتلون عليهن ما أنزل الله إليهم ، يتلو الرجل على امرأته وابنته وأخته ، وعلى كل ذي قرابته ، فما منهن امرأة ، إلا قامت إلى مرطها المرحل فاعتجرت به تصديقا ، وإيمانا بما أنزل الله في كتابه».
“আল্লাহর কিতাবের প্রতি প্রচণ্ড সমর্থন ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আমি আনসার নারীদের চেয়ে উত্তম আর কাউকে দেখিনি। সূরা আন-নূরের আয়াত নাযিল হল: وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ “আর তারা তাদের গলা ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে”। অতঃপর পুরুষগণ আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর যা নাযিল করেছেন, তা তাদের (নারীদের) নিকট তিলাওয়াত করতে থাকে, পুরুষ ব্যক্তি তার স্ত্রী, কন্যা, বোন ও প্রত্যেক নিকটাত্মীয়কে তা তিলাওয়াত করে শুনায়। অতঃপর যে কোনো নারীই তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বের হলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে যা নাযিল করেছেন, তার প্রতি তার সমর্থন ও ঈমানের কারণে সে ওড়না পরিধান করত।”[2]
অতএব, হে ভাই সকল! আমরা কি এসব ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করব না এবং ইসলামের অনুসারীদের জবীন-পদ্ধতি থেকে শিক্ষাগ্রহণ করব না? আমরা কি মহান আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করব না?
আর আমরা কি সে সম্পর্কে উপলব্ধি করব না, ইসলামের অনুসরণকারীদের নিয়ম-নীতির বিরুদ্ধাচরণ করে অনেক নারী যেসব কর্মকাণ্ডে নিমজ্জিত হয়েছে এবং আমরা কি তাদেরকে সুস্থ নিয়ম-নীতির অনুসরণ করতে ও সরল সঠিক পথে চলতে বাধ্য করব না, যাতে আমাদের সমাজটি নারী ও পুরুষের মধ্যে ইবাদাত ও নৈতিক চরিত্রের ক্ষেত্রে একটি ইসলামী সমাজে পরিণত হতে পারে?
আর যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে না, তারা যেন আপনাদেরকে প্রতারিত করতে না পারে। কারণ, এ ধরনের রূপসজ্জা এবং ছোট ও সংকীর্ণ পোশাকগুলো তৈরি করা হয় তাদের অনুকরণ করার জন্য। কেননা, আপনাদের শত্রুগণ জানে যে, তারা যদি আপনাদেরকে কুফরীর দিকে আহ্বান করে, তাহলে আপনারা কুফরী করবেন না; আর তারা যদি আপনাদেরকে শির্কের দিকে আহ্বান করে, তাহলে আপনারা শির্ক করবেন না; কিন্তু তারা আপনাদের ব্যাপারে আশাবাদি যে, তারা অন্যভাবে আপনাদের নৈতিক চরিত্র ও দীনকে ধ্বংস করতে সক্ষম হবে। যেমন, ছোট ও তুচ্ছ গুনাহগুলোকে তারা আপনাদের চোখে তুচ্ছ করে উপস্থাপন করবে, তারপর আপনারাও সেগুলোকে তুচ্ছ মনে করবেন এবং সেসব অপরাধে জড়িয়ে যাবেন, শেষ পর্যন্ত তা আপনাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«إن الشيطان قد يئس أن تعبدوا الأصنام فى أرض العرب, ولكنه سيرضى منكم بدون ذلك بالمحقرات وهى الموبقات يوم القيامة».
“তোমরা আরব ভূ-খণ্ডে মূর্তিপূজা করবে -শয়তান অন্তত এ ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেছে; কিন্তু সে এটা ছাড়া অচিরেই তোমাদের নিকট থেকে তুচ্ছ বা ছোট ছোট পাপকর্মের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠবে, আর এ তুচ্ছ অপরাধগুলো কিয়ামতের দিনে ধ্বংসের কারণ হয়ে দেখা দিবে।”[3]
অতএব, হে ভাইসব! আপনাদের শত্রুগণ আপনাদের জন্য যা পেশ করবে, তার দ্বারা আপনারা প্রতারিত হবেন না। সুতরাং হয় আপনাদের দীনের মধ্যে এমন দৃঢ়তা ও কঠোরতা থাকতে হবে, যার ওপর ভিত্তি করে শত্রুদের সকল ষড়যন্ত্র চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে, আর আপনাদের মধ্যে ইসলামী ব্যক্তিত্বের শক্তি রয়েছে, সুতরাং আপনারা তাদের অনুসরণ করবেন না এবং তাদের দ্বারা প্রতারিত হবেন না; বরং আপনারা আপনাদের পূর্ববর্তী সৎ ব্যক্তিগণ যে নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন তা আঁকড়ে ধরুন, ফলে আপনারা দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভ করতে পারবেন। আর যদি বিষয়টি তার বিপরীত হয় (আমরা আল্লাহর নিকট শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করছি) অর্থাৎ দীনের মধ্যে নমনীয়তা আসে, ব্যক্তিত্বের মধ্যে দুর্বলতা আসে এবং উত্থানের সামনে পতন আসে, তাহলে আপনারা অলাভজনক ব্যবসাতেই ফিরে আসলেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿قُلۡ إِنَّ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٱلَّذِينَ خَسِرُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ وَأَهۡلِيهِمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۗ أَلَا ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡخُسۡرَانُ ٱلۡمُبِينُ ١٥﴾ [الزمر: ١٥]
“বলুন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত তারাই যারা কিয়ামতের দিন নিজেদের ও নিজেদের পরিজনবর্গের ক্ষতিসাধন করে। জেনে রাখ, এটাই সুস্পষ্ট ক্ষতি”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ১৫]
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«من تشبه بقوم فهو منهم».
“যে ব্যক্তি কোনো জাতি বা গোষ্ঠী’র অনুসরণ করে, তবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।”[4] কারণ, আমরা যখন প্রতিটি নতুন বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট হব এবং আমরা ভিন্ন অন্যদের প্রথা ও রীতিনীতি থেকে আমাদের নিকট উপস্থাপিত প্রতিটি বিষয়কে যখন আমরা অনুসরণ করে চলব, তখন আমাদের জন্য আবশ্যক হয়ে যাবে তাদের অনুকরণে সম্পৃক্ত হয়ে যাওয়া, এমনকি শেষ পর্যন্ত আমরা প্রায়শ তাদের ভ্রষ্টতা, চরিত্র, আকীদা-বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনার অনুসরণ করে বসব। সুতরাং ব্যক্তি মাত্রই উচিৎ হলো তার পরিবার-পরিজন যে নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত আছে তা সুরক্ষার ব্যবস্থা করা, তবে তা যখন শরী‘আত পরিপন্থী হবে তখন ভিন্ন কথা। আর মুসলিম ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক) হলো তার দীনকে নিয়ে গর্ববোধ ও গৌরব করা এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সরল-সঠিক দীনের যে সীমারেখা এঁকে দিয়েছেন তার মাঝে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখা, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দার জন্য যা অনুমোদন করেছেন, সে তার মধ্যে বৃদ্ধি করবে না এবং তার থেকে কমতিও করবে না; তার জন্য আরও আবশ্যক হলো, সে তার কাজের ভিত রচনা করবে আনুগত্য ও অনুসরণের ওপর, বিদ‘আতের ওপর নয়, ইখলাস বা নির্ভেজাল একনিষ্ঠতার ওপর, শির্কের ওপর নয় এবং দয়াময় আল্লাহ যা পছন্দ করেন তার ওপর, শয়তান যা পছন্দ করে তার ওপর নয়। আর মুসলিম ব্যক্তির জন্য আরও উচিৎ হলো চরিত্রহীন বা নির্বোধ না হওয়া; বরং তার উচিত হলো, সে তার ব্যক্তিত্বকে আল্লাহ তা‘আলার শরী‘আতের দাবির আলোক গড়ে তুলবে, ফলে তা দুনিয়ার জীবনে ও পরকালে তার জন্য সম্মান ও মর্যাদা বয়ে আনবে।
আর এ জন্যই তো আমরা আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাঁর সুন্দর সুন্দর নাম ও গুণাবলীর মাধ্যমে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমাদেরকে সত্যকে সত্য বলে দেখিয়ে দেন এবং আমাদেরকে তার অনুসরণ করার তাওফীক দান করেন, আর বাতিলকে বাতিল বলে দেখিয়ে দেন এবং আমাদেরকে তার থেকে দূরে থাকার তাওফীক দান করেন। আর তিনি যেন আমাদেরকে সঠিক পথ প্রাপ্তদের পথপ্রদর্শক এবং সৎকর্মশীলদের পরিচালক বানিয়ে দেন, আর তিনি যেন আমাদের অন্তরসমূহকে ইলম (শিক্ষা) ও ঈমান দ্বারা আলোকিত করে দেন এবং আমরা যা শিখেছি তিনি যেন তাকে আমাদের জন্য খারাপ পরিণতির কারণ বানিয়ে না দেন। আর তিনি যেন আন্তরিকভাবে তাঁর উদ্দেশ্য তাঁর সন্তুষ্টি অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করেন, আর তাঁর নিকট আরও নিবেদন করছি, তিনি যেন এ উম্মাত থেকে এমন একটি প্রজন্ম তৈরি করে দেন, যারা আল্লাহর বিধিবিধান সম্পর্কে জ্ঞানী হবেন, আল্লাহর নির্ধারিত সীমানার রক্ষণাবেক্ষকারী হবেন, আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নকারী হবেন এবং আল্লাহর বান্দাগণের পথপ্রদর্শক হবেন, আর তিনি তো হলেন উদার হস্তে দানশীল, মহানুভব।
و الحمد لله رب العالمين، و صلى و سلّم على نبينا محمد و على آله و صحبه أجمعين.
“আর সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য নিবেদিত, যিনি জগতসমূহের রব। সালাতা ও সালাম বর্ষণ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সকল সাহাবীগণের ওপর”।
[2] তাফসীরু ইবন কাসীর।
[3] মুসনাদে আবি ইয়া‘লা, হাদীস নং- ৫১২২
[4] ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২/৫০; আবু দাউদ, হাদীস নং- ৪০৩১