লগইন করুন
একবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারের মধ্যে এক খাদ্যস্তূপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি স্তূপের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিলে আঙ্গুলে আর্দ্রতা ধরা পড়ল। তিনি বিক্রেতাকে বললেন, ‘হে খাদ্য বিক্রেতা! ব্যাপার কি? সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এতে বৃষ্টির পানি লেগেছে’। তিনি বললেন,
«أَفَلَا جَعَلْتَهُ فَوْقَ الطَّعَامِ كَيْ يَرَاهُ النَّاسُ، مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّي»
“তুমি এগুলো স্তূপের উপরিভাগে রাখলে না কেন? তাহলে লোকে দেখতে পেত। মনে রেখো যে প্রতারণা করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়”।[1]
আজকাল আল্লাহর প্রতি ভয়ভীতি শূণ্য অনেক বিক্রেতাই ভালো পণ্যের সঙ্গে ত্রুটিযুক্ত কিংবা নিম্নমানের পণ্য মিশিয়ে বিক্রয় করে থাকে। কেউ কেউ ত্রুটিযুক্ত পণ্যগুলোতে আঠা লাগিয়ে ঢেকে দেয়, কেউ কেউ গাইট কিংবা কন্টেইনারের নিচে রাখে। অনেকে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে নিম্নমানের দ্রব্যকে বাহ্যদৃষ্টিতে উন্নতমানের ও আকর্ষণীয় করে তোলে। কেউ কেউ গাড়ীর ইঞ্জীনের শব্দ গোপন করে বিক্রি করে পরে যখন সেটা নিয়ে যায় তখন তা তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ পণ্য ব্যবহারের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর তা পরিবর্তন করে নতুন মেয়াদকালের ছাপ মেরে দেয়। কোনো কোনো বিক্রেতা ক্রেতাকে পণ্য নিরীক্ষণ ও যাচাই-বাছাই করতে দেয় না। মোটরগাড়ী, মেশিনারী যন্ত্রপাতি বিক্রেতাদেরও অনেকে রয়েছে, যারা ক্রেতাদের সামনে সেগুলোর ত্রুটি ও অসুবিধা তুলে ধরে না।
উল্লিখিত পদ্ধতির সকল কেনা-বেচাই হারাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ، وَلَا يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ بَاعَ مِنْ أَخِيهِ بَيْعًا فِيهِ عَيْبٌ إِلَّا بَيَّنَهُ لَهُ»
“এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই। একজন মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের নিকট কোনো ত্রুটিপূর্ণ পণ্য বিক্রয়ের সময় পণ্যের ত্রুটি বর্ণনা না করা পর্যন্ত তা বিক্রয় করা বৈধ নয়”।[2]
অনেকে প্রকাশ্য নিলামে দ্রব্য বিক্রয়কালে ‘এটা অমুক জিনিস’ এটা অমুক জিনিস’ এতটুকু বলেই অব্যাহতি পেতে চায়! দৃষ্টান্তস্বরূপ লোহার রড বিক্রেতা বলে ‘এটা লোহার গাদা’....‘এটা লোহার গাদা’ ইত্যাদি। কিন্তু গাদার মধ্যে যে ত্রুটি আছে তা বলে না। তার এ বিক্রয় বরকতশূণ্য হয়ে পড়বে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«البَيِّعَانِ بِالخِيَارِ مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا، - أَوْ قَالَ: حَتَّى يَتَفَرَّقَا فَإِنْ صَدَقَا وَبَيَّنَا بُورِكَ لَهُمَا فِي بَيْعِهِمَا، وَإِنْ كَتَمَا وَكَذَبَا مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِمَا»
“দৈহিকভাবে পৃথক হওয়া কিংবা বিক্রয় প্রস্তাবও গ্রহণে মতান্তর না হওয়া পর্যন্ত ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই বিক্রয় কর্যকর করার কিংবা বাতিল করার অধিকার থাকে। যদি তারা সত্য বলে ও দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করে, তবে তাদের কেনা-বেচায় বরকত হয়। আর যদি দু’জনে মিথ্যা বলে ও পণ্য বা মুদ্রার দোষ গোপন করে, তবে তাদের কেনা-বেচার বরকত নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়”।[3]
>[2] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২২৪৬, সনদ সহীহ।
[3] সহীহ বুখারী; সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ২৮০২।