অধিকাংশ মানুষ বা প্রায় সবারই ঈমান হলো দাবীমাত্র। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَمَآ أَكۡثَرُ ٱلنَّاسِ وَلَوۡ حَرَصۡتَ بِمُؤۡمِنِينَ١٠٣﴾ [يوسف: ١٠٢]
“আর তুমি আকাঙ্খা করলেও অধিকাংশ মানুষ মুমিন হবার নয়।” [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ১০২] অধিকাংশ মুমিনের রয়েছে সংক্ষিপ্ত ঈমান। আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনিত জ্ঞান, ইলম, স্বীকৃতি, এগুলোকে ভালোবাসা, এর বিপরীতগুলো জানা ও সেগুলোকে অপছন্দ ও ঘৃণা করা ইত্যাদি বিস্তারিত পরিসরে ঈমান হলো উম্মতের বিশেষ বিশেষ লোক ও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশেষ সহচরের ঈমান। এটিই হলো সিদ্দিক ও তার মত লোকদের ঈমান।
অধিকাংশ মানুষের ঈমানের অংশ হলো সৃষ্টিকারীর অস্তিত্ব সম্পর্কে বিশ্বাস স্থাপন।
আবার অন্যদের ঈমান বলতে শুধু শাহাদাতাইন (আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাক্ষ্য) মুখে উচ্চারণ করা।
আবার আরেক দলের ঈমান হলো, আসমান ও জমিনের স্রষ্টা মহান আল্লাহ ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, শুধু এ বিশ্বাস করা, যদিও তার যবান একথা স্বীকৃতি দেয় না এবং সে তার ঈমানের চাহিদা অনুযায়ী কোনো আমলই করে না।
আরেকদলের কাছে ঈমান হলো, রবের সিফাতসমূহকে অস্বীকার করা।
অন্য দলের কাছে ঈমান হলো, তাদের স্বাদ, ইচ্ছা ও পছন্দ মতো আল্লাহর ইবাদত করা।
আরেকদলের কাছে ঈমান হলো, তারা তাদের বাপ-দাদাকে যে দীনের ওপর পেয়েছে সে দীনের ওপর ঈমান আনা; বরং তাদের ঈমান দু’টি জিনিসের ওপর ভিত্তি করে গঠিত:
প্রথমত: এ কথা আমাদের পূর্ববর্তীদের ও আমাদের বাপ-দাদাদের।
দ্বিতীয়ত: তারা যা বলেছে তা-ই সত্য।
আবার আরেক দলের কাছে ঈমান হলো, সচ্চরিত্র ও সুন্দর ব্যবহার।
কিছু লোকের কাছে ঈমান বলতে বুঝায়, দুনিয়া ও এর সম্পর্কিত সব কিছু ত্যাগ করা।
উপরোক্ত সব দলই ঈমানের হাকীকত বুঝতে পারে নি, তারা ঈমানের ওপর স্থির নয় এবং অন্যদেরকেও স্থির করতে পারে নি। তারা কয়েক প্রকারের:
একদল ঈমানকে ঈমানেরই বিপরীত কাজ বানিয়েছে।
আরেকদল এমন সব কাজ ঈমানের অংশ বানিয়েছে যা ঈমান হিসেবে ধর্তব্য নয়।
আবার আরেকদল ঈমানের শর্তকে ঈমান বানিয়েছে অথচ এ শর্তগুলো পূরণই ঈমানের জন্য যথেষ্ট নয়।
আরেকদল ঈমান সাব্যস্ত করতে এমনসব শর্তারোপ করেছেন যা ঈমানেরই পরিপন্থী ও বিপরীত।
আবার আরেকদল ঈমানের মধ্যে এমনসব শর্ত আরোপ করেছেন যা কোনোভাবেই ঈমানের শর্ত নয়।
সবকিছু বাদ দিয়ে প্রকৃতপক্ষে ঈমান হলো, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনিত সমস্ত জ্ঞানের সমন্বয়ে গঠিত এমন এক বাস্তবতা, যা চুক্তি হিসেবে এর প্রতি সত্যায়ন করা, মুখে স্বীকৃতি দেওয়া, ভালোবাসা ও বিনয়ের সাথে আত্মসমর্পণ করা, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সর্বাবস্থায় এ অনুযায়ী আমল করা, জীবনে তা বাস্তবায়ন করা ও সাধ্যানুযায়ী এর দিকে মানুষকে দাওয়াত দেওয়া।
ঈমানের পূর্ণতা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই কাউকে ভালোবাসা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে অপছন্দ করা, তাঁর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে কিছু দান করা এবং তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই কাউকে কিছু দেওয়া থেকে বিরত থাকা। আল্লাহকে একক ইলাহ ও মা‘বুদ হিসেবে মানা। ঈমানের পথ হলো প্রকাশ্য ও গোপনে সর্বাবস্থায় তাঁর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করা, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পথ ব্যতীত অন্য কোনো কিছুর দিকে না তাকিয়ে চক্ষু বন্ধ রাখা। আল্লাহই তাওফীকদাতা।