মানুষের দু’ধরণের শক্তি রয়েছে। চিন্তা ও তত্ত্বগত জ্ঞান সম্বলিত শক্তি (قوَّةٌ علميَّةٌ نظريَّةٌ) এবং ইচ্ছা ও কর্মগত শক্তি (قوَّةٌ عَمليَّةٌ إراديَّةٌ)। মানুষের জ্ঞানগত ও ইচ্ছাগত শক্তির পূর্ণতার ওপরই তার পরিপূর্ণ সৌভাগ্য নির্ভর করে।
* আর মানুষ কর্তৃক তার সৃষ্টিকর্তাকে জানা, তাঁর নাম ও গুণাগুণসমূহ সর্ম্পকে অবগত হওয়া, যে পথে তাঁকে পাওয়া যায় সে পথ জানা, তার নিজের পরিচয় জানা ও নিজের দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে অবগত হওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে ইলমী শক্তি পরিপূর্ণ হয়। সুতরাং সর্বাধিক বিজ্ঞ ও জ্ঞানী লোক সে ব্যক্তি যে এগুলোর পরিচয় লাভ করে এবং এ গুলো সম্পর্কে অধিক জ্ঞান রাখে।
* আর মানুষ কর্তৃক তার ইচ্ছা ও কর্মগত শক্তি তখনই অর্জিন করবে, যখন সে তার রবের হকসমূহ যথার্থভাবে রক্ষা করবে, এ হকসমূহ ইখলাস, সততা, একনিষ্ঠতা, ইহসান ও অনুসরণের সাথে পালন করবে, তার ওপর তার রবেব অনুগ্রহসমূহের সাক্ষ্য দিবে, তাঁর হকসমূহ আদায়ে নিজের দুর্বলতা ও অক্ষমতা প্রকাশ করবে, তার দায়িত্ব পালনে অক্ষমতার জন্য সে অত্যন্ত লজ্জিত হবে। কেননা সে জানে যে, তার যতটুকু ইবাদত-বন্দেগী করা উচিৎ সে ততটুকু পালনে অক্ষম, নিতান্ত কম হকই সে আদায় করছে, অনেক অনেক কমই সে আদায় করছে।
বস্তুত তাঁর সাহায্য ব্যতীত এ দু’শক্তি পরিপূর্ণ করা অসম্ভব, সে সিরাতুল মুস্তাকিম তথা সরল সঠিক পথের হিদায়াত প্রাপ্ত হতে একান্তভাবে নিরুপায় হয়ে তার সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল, যে পথ তিনি তাঁর অলী ও বিশেষ প্রিয়জনকে পরিচালিত করেছেন। অনুরূপভাবে সে সরল সঠিক পথ থেকে বেরিয়ে আসতে হয় এমন কাজ থেকে তাকে যেন বাঁচতে পারে (এতেও তার সাহায্যের উপর নির্ভরশীল)। হয় তার ইলমী বা জ্ঞানগত শক্তি নষ্ট হয়ে যাবে, ফলে সে পথভ্রষ্ট হবে অথবা তার আমলী বা কর্মগত শক্তি বিনষ্ট হবে, ফলে তার ওপর আল্লাহর রাগ অত্যাবশ্যকীয় হয়ে যাবে।
বস্তুত উপরোক্ত জিনিসগুলো অর্জিত না হলে মানুষের পূর্ণতা ও তার সৌভাগ্য কখনও পরিপূর্ণ হবে না। সূরা ফাতিহায় এ সব কিছু খুব সুন্দরভাবে ও পরিপূর্ণ সুশৃঙ্খল-রূপে একত্রিত হয়েছে।
সূরা ফাতিহার শুরুতে আল্লাহর রহমত, মধ্যভাগে তাঁর হিদায়াত ও শেষভাগে তাঁর নি‘আমতের কথা আলোচিত হয়েছে। আল্লাহর হিদায়াত লাভের অংশ অনুযায়ী বান্দা তাঁর নি‘আমত লাভ করবে, আবার তাঁর রহমত লাভের অংশ অনুযায়ী সে তাঁর হিদায়াত লাভ করবে। সুতরাং সব কিছুই তাঁর নি‘আমত ও রহমতের মধ্যেই ঘূর্ণায়মান। আর রহমত ও নি‘আমত আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের আবশ্যকীয় গুণ। অতএব, যিনি রব হবেন তিনি রহমতদানকারী ও নি‘আমতদানকারী না হয়ে পারেন না। আর এ গুণগুলো আল্লাহর উলুহিয়্যাত বা তাঁর ইলাহ হওয়াকে বাধ্য করে। সুতরাং তিনিই সত্য ইলাহ, যদিও অস্বীকারকারীরা অস্বীকার করে এবং মুশরিকরা তাঁর সাথে শির্ক করে।
অতএব, যার মধ্যে সূরা ফাতিহার সম্পূর্ণ অর্থ জ্ঞানগত, পরিচিতিগত, কর্মগত ও অবস্থাগতভাবে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে সে-ই পরিপূর্ণ সফলতা লাভ করবে, তার উবুদিয়্যাত বা দাসত্ব হবে আল্লাহর নি‘আমতপ্রাপ্ত বিশেষ লোকদের দাসত্বের মতো, যাদের মর্যাদা সাধারণ ইবাদতকারীদের চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বে। আল্লাহই সাহায্যকারী।