বহুকাল থেকে তারা তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অনেক সম্মেলন করেছে। এমন কি বর্তমানেও তাদের মিশনে উক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মীগণ দূত হিসেবে তাদের নিকট কৌশলসমূহের কার্যকারিতা, তাদের প্রভাব, তাদের সফলতা এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মত-বিনিময় ও প্রস্তাব নিয়ে একত্রিত হয়। আর এজন্য তারা সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা ও কর্মসূচী প্রণয়ন করে সামনে অগ্রসর হচ্ছে।
তাদের অপকৌশলসমূহ নিম্নরূপ:
- মুসলিম বিশ্বে খ্রিস্টান মিশনারী গোষ্ঠী প্রেরণ এবং খ্রিস্টবাদের দিকে আহ্বান জানানো: এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য তারা নিম্নোক্ত কর্মসূচীসমূহ গ্রহণ করেছে:
- খ্রিস্টান ধর্মের পরিচিতিমূলক বিভিন্ন বই, বিজ্ঞাপন ও লিফলেট বিতরণ।
- বিকৃত ইঞ্জিলের অনুবাদ প্রচার ও প্রসার।
- ইসলামের প্রতি সন্দেহ সৃষ্টিকারী ও আক্রমণাত্মক প্রচারপত্র বিলি করা।
- এবং বিশ্বের দরবারে ইসলামের বিকৃতিমূলক নানা দিক তুলে ধরা।
- অতঃপর তারা কতিপয় মোড়ক আবৃত ও বক্র-কুটিল পদ্ধতির আশ্রয় নিয়ে অতিসূক্ষ্ম পন্থায় লোকদেরকে তাদের ধর্মে দীক্ষিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের এসব মারাত্মক কিছু পদ্ধতি নিম্নরূপ:
- চিকিৎসা সেবা ও জনসাধারণকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান: মুসলিম সমাজে ব্যাপকহারে রোগ-ব্যাধি বিস্তার সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় মুসলিম ডাক্তারের স্বল্পতা এমনকি কোনো কোনো স্থানে না থাকার সুবাদে চিকিৎসার চাহিদা তাদের এই পদ্ধতি প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক হয়েছে।
- সাধারণ শিক্ষার অন্তরালে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার: কোথাও কোথোও সরাসরি খ্রিস্টান স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার মাধ্যমে তাদের এই অপতৎপরতা চলছে। আবার কোথাও কোথাও বাহ্যিক দৃষ্টিতে সবার জন্য সাধারণ শিক্ষা নাম দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছে, যার অন্তরালে রয়েছে তাদেরকে খ্রিস্টান বানানোর গোপণ ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করা। আর তাদের পাতানো উক্ত জালে বড় অংকের মুসলিম জনগোষ্ঠী পতিত হয়েছে, বিদেশী ভাষা বা বিশেষ শিক্ষা গ্রহণের লোভে ছেলে-মেয়েদেরকে তাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করছে। এর পরিণতিতে দেখা যায় এ মুসলিম জাতি, তাদের তাজা মস্তিষ্কসম্পন্ন, যাদের মগজ বর্তমানে সব ধরনের জ্ঞানার্জনের জন্য উন্মুক্ত, সে সব কলিজার টুকরা শিশু কিশোরদেরকে খ্রিস্টানদের হাতে হাদিয়া হিসেবে প্রদান করেছে চলেছে!! আর খ্রিস্টানরা যা-ই তাদেরকে প্রদান করছে এ বাচ্ছারা তা-ই নির্দ্বিধায় গ্রহণ করছে!!
- তথ্য ও প্রচার মাধ্যমে খ্রিস্টান ধর্মপ্রচার: খ্রিস্টান মিশনারীদের খ্রিস্টান বানানোর অন্যতম কৌশল হচ্ছে, তথ্য ও প্রচার মাধ্যমের ব্যবহার। মুসলিম বিশ্বের দিকে তাক করা রয়েছে তাদের বহু রেডিও চ্যানেল। তাছাড়া পরবর্তী কয়েক বছরে তারা শত শত টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে তুলে ধরছে তাদের বিকৃত ধর্ম ও তার প্রোগ্রামসমূহ।
- এছাড়া সংবাদ পত্র, পত্র-পত্রিকা এবং তাদের অসংখ্য প্রকাশনা, প্রচারণাও এই পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত। তাদের উক্ত দর্শনীয়, শ্রুত ও পঠিতব্য সম্প্রচার মাধ্যমগুলো খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের চাকাকে বিভিন্ন ভাবে সামনে এগিয়ে দিয়েছে, যেমন:
(ক) তারা ঐসব সম্প্রচার মাধ্যমগুলোর দ্বারা খ্রিস্টান ধর্মের তথাকথিত বানানো বৈশিষ্ট্যের প্রচার করছে। তারা বিশ্বের সকলের জন্য খ্রিস্টান ধর্মে দয়া, ভালোবাসা ইত্যাদি রয়েছে বলে মিথ্যা তথ্য প্রচার-প্রসার করে তাদের ধর্মের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
(খ) মুসলিমদের আকীদা-বিশ্বাস, তাদের ধর্মীয় নিদর্শন এবং তাদের পরস্পরের দীনী সম্পর্কে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করার মাধ্যমে তাদের বিকৃত খ্রিস্টান ধর্মের প্রতি আহ্বান করছে।
(গ) নগ্নতা, যৌনতা, প্রবৃত্তি উত্তেজক বিবিধ অশ্লীলতা সম্প্রচার করে দর্শকদের নৈতিক চরিত্র ও পবিত্রতা বিনষ্ট করা, লজ্জাহীন বানানো। তাদেরকে প্রবৃত্তি পূজারী ও ক্ষণস্থায়ী আনন্দের মোহে নিপতিত করে ভোগের দাসে পরিণত করা। কেননা তারা এ ধরনের হয়ে গেলে তাদের যে কোনো দাওয়াত বা মিশন তাদের মাঝে সফল হবে। এমনকি মুরতাদ-কাফির হওয়ার ব্যাপারেও তাদের কোনো দ্বিধা থাকবে না। (আল্লাহ আমাদের এ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করুন) তাদের উক্ত মিশন সফল হওয়ার ভিত্তিতে মুসলিমের অন্তর থেকে যখন ঈমানের মূলোৎপাটন হবে এবং আত্মা থেকে ধর্মীয় চেতনার বাঁধ ধ্বংস হয়ে যাবে তখন সহজেই উক্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
- উল্লিখিত খ্রিস্টান তৈরির অপকৌশল ব্যতীত তাদের আরো বহু অপকৌশল রয়েছে, অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি মাত্রই মুসলিম বিশ্বের বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তা যথার্থভাবে অনুভব করতে পারবেন। আলোচনা সংক্ষেপ করার জন্য সেগুলো বাদ রাখা হয়েছে। কেননা এই অল্প পরিসরে তাদের সবগুলো অপকৌশল বর্ণনা উদ্দেশ্য নয়, বরং তাদের থেকে সতর্ক করাই মূল উদ্দেশ্য। বস্তুত তাদের প্রকৃত অবস্থা তো তা-ই যা মহান আল্লাহ তাঁর কিতাবে বিধৃত করেছেন এ বলে যে,
﴿وَيَمۡكُرُونَ وَيَمۡكُرُ ٱللَّهُۖ وَٱللَّهُ خَيۡرُ ٱلۡمَٰكِرِينَ ٣٠﴾ [الانفال: ٣٠]
“আর তারা ষড়যন্ত্র করে, আল্লাহও (তাদের ষড়যন্ত্রের বিপরীতে) কৌশল করেন। বস্তুতঃ আল্লাহর কৌশল অতি উত্তম।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৩০]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿يُرِيدُونَ أَن يُطۡفُِٔواْ نُورَ ٱللَّهِ بِأَفۡوَٰهِهِمۡ وَيَأۡبَى ٱللَّهُ إِلَّآ أَن يُتِمَّ نُورَهُۥ وَلَوۡ كَرِهَ ٱلۡكَٰفِرُونَ ٣٢﴾ [التوبة: ٣٢]
“তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর জ্যোতি নির্বাপিত করতে চায়। কাফিরগণ অপ্রীতিকর মনে করলেও আল্লাহ তাঁর জ্যোতির পূর্ণতা বিধান করা ব্যতীত অন্য কিছু চান না।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩২]