ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
কবরের শাস্তি ও শান্তি সম্পর্কে কতিপয় মাসআলা বারযাখী জীবন বারযাখী জীবন সম্পর্কে কতগুলো মাসআলা ইসলামহাউজ.কম
অষ্টম মাসআলা

মৃতদের রূহসমূহ পরস্পর পরস্পরে সাক্ষাৎ, যিয়ারত এবং একে অপরকে স্মরণ করে কি না? তা একটি গায়েবী বিষয়ক মাসআলা, যা অহীর মাধ্যম ব্যতীত জানা যায় না। কুরআন হাদীসের প্রমাণপঞ্জি তা স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছে। এর বিস্তারিত বর্ণনা হলো (শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া বলেন, পৃথিবীতে মৃত ব্যক্তির পরিবার পরিজন, সঙ্গী-সাথীদের অবস্থা জানার সংবাদ ব্যাপক ভাবে প্রচারিত হয়েছে, আর তা তার ওপর পেশ করা হয়। মূল উদ্দেশ্য এখানেই শেষ।)[1]

রূহসমূহ দুই প্রকার: সাজাপ্রাপ্ত রূহ এবং শান্তিপ্রাপ্ত রূহ।

সাজাপ্রাপ্ত রূহ হলো তার ওপর অর্পিত শাস্তিতে ব্যস্ত থাকার দরুন অন্যদের সাথে যিয়ারত এবং সাক্ষাৎ করতে পারে না। কিন্তু স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেওয়া শান্তিপ্রাপ্ত রূহসমূহ পৃথিবীয় যেভাবে সাক্ষাৎ, যিয়ারত এবং একে অপরকে স্মরণ করতো এবং পৃথিবীবাসীদের দ্বারা যা হয় সেখানেও তা করে। কাজেই প্রত্যেক রূহ তার বন্ধু ও সহপাঠিদের সাথে থাকবে যারা তার মতো আমল করেছে।

আর আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রূহ থাকবে সর্বোচ্চ স্থানে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ فَأُوْلَٰٓئِكَ مَعَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِم مِّنَ ٱلنَّبِيِّ‍ۧنَ وَٱلصِّدِّيقِينَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَٱلصَّٰلِحِينَۚ وَحَسُنَ أُوْلَٰٓئِكَ رَفِيقٗا ٦٩﴾ [النساء: ٦٩]

“আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, সে তাদের সঙ্গী হবে যাদেরকে আল্লাহ নি‘আমত দান করেছেন, তারা হলেন নবী, সিদ্দিক, শহীদ এবং সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ আর তাদের সান্নিধ্যই উত্তম।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৯]

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, এ সহচার্য্য পৃথিবী, বারযাখ এবং পরকালে হওয়া সাব্যস্ত রয়েছে। প্রত্যেক ব্যক্তি এ তিন স্তরে তার পছন্দনীয় ব্যক্তির সাথে থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿يَٰٓأَيَّتُهَا ٱلنَّفۡسُ ٱلۡمُطۡمَئِنَّةُ ٢٧ ٱرۡجِعِيٓ إِلَىٰ رَبِّكِ رَاضِيَةٗ مَّرۡضِيَّةٗ ٢٨ فَٱدۡخُلِي فِي عِبَٰدِي ٢٩ وَٱدۡخُلِي جَنَّتِي ٣٠﴾ [الفجر: ٢٧، ٣٠]

“হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে তোমার রবের নিকট ফিরে যাও। অতঃপর আবার আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।” [সূরা আল-ফাজর, আয়াত: ২৭-৩০]

অর্থাৎ তাদের মধ্যে প্রবেশ করে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। আর তা মৃত্যুর সময় রূহকে লক্ষ্য করে বলা হয়।

আল্লাহ তা‘আলা শহীদদের সম্পর্কে এবং তাদের শহীদ হওয়ার পর যার সম্মুখীন হয় তা সম্বন্ধে সংবাদ দিয়ে বলেন,

﴿وَلَا تَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ بَلۡ أَحۡيَآءٌ عِندَ رَبِّهِمۡ يُرۡزَقُونَ ١٦٩ فَرِحِينَ بِمَآ ءَاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦ وَيَسۡتَبۡشِرُونَ بِٱلَّذِينَ لَمۡ يَلۡحَقُواْ بِهِم مِّنۡ خَلۡفِهِمۡ أَلَّا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ١٧٠﴾ [ال عمران: ١٦٩، ١٧٠]

“আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদেরকে তোমরা মৃত মনে করো না; বরং তারা তাদের রবের নিকট জীবিত এবং জীবিকাপ্রাপ্ত। আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে তাদেরকে যা দান করেছেন তাতে তারা আনন্দ উপভোগ করছে, আর তাদের পরে আসা এখনো যারা তাদের সাথে মিলিত হয় নি, তাদেরকে নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে, কারণ তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৯-১৭০]

এ আয়াতদ্বয় তাদের পরস্পর পরস্পরে সাক্ষাতের প্রমাণ করে তিন দিক দিয়ে।

প্রথম দিক: তারা তাদের রবের নিকট জীবিত এবং জীবিকা প্রাপ্ত, যেহেতু তারা জীবিত সেহেতু তারা পরস্পরে সাক্ষাত করে থাকে।

দ্বিতীয় দিক: তাদের নিকট আগমণকারী এবং তাদের সাথে সাক্ষাতকারী ব্যক্তিদের নিয়ে তারা আনন্দ প্রকাশ করে থাকে।

তৃতীয় দিক: (ইয়াস্তাবশিরুন) শব্দটি আভিধানিক অর্থে একে অপরকে সুসংবাদ দানের উপকারিতা দেয়, যেমন (ইয়াতাবাশারুন) শব্দটি।

মৃত্যুর পর মুমিনদের রূহসমূহ পরস্পরে সাক্ষাতের আরো কিছু প্রমাণাদি হলো যা ইমাম নাসাঈ, ইবন হিব্বান ও হাকিমের নিকট সহীহ সনদে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে এসেছে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যখন মুমিন ব্যক্তির মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন তার নিকট রহমতের ফিরিশতা শুভ্র রেশমী কাপড় নিয়ে এসে বলে: হে রূহ! অতি আনন্দের সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও বিশ্রামের দিকে বের হয়ে আস, তোমার প্রতি আল্লাহ গোস্বা নন। তখন সে মিশকে আম্বরের ন্যায় সুগন্ধ নিয়ে বেরিয়ে আসে, তখন তাদের পরস্পরের সাথে সাক্ষাত লাভ হয়, এমনকি আকাশের দরজায় নিয়ে আসার পূর্ব পর্যন্ত। অতঃপর তারা বলে তোমাদের পৃথিবী থেকে আসা সুগন্ধি কতইনা ভালো! তারপর তাকে মুমিনদের রূহের নিকট নিয়ে আসলে তারা অধিক আনন্দিত হয়, যেমন তোমাদের মধ্যে কোনো অনুপস্থিত ব্যক্তির আগমনে আনন্দিত হও। অতঃপর তারা তাকে জিজ্ঞাসা করে: অমুক কি করে? অমুক কি করে? তারা বলে: আরে ছাড় তার কথা! তাকে বিশ্রাম নিতে দাও, কারণ সে পৃথিবীয় অশান্তিতে ছিল। সে যখন বলবে: অমুক কি তোমাদের নিকট আসে নি? তারা বলবে: তাকে তার মায়ের নিকট হাবিয়াতে (জাহান্নামে) নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আর কাফেরের নিকট যখন মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন তার নিকট শাস্তির ফিরিশতা পশমের এক টুকরা কাপড় নিয়ে এসে বলে: হে রূহ! অসন্তুষ্টি নিয়ে আল্লাহর শাস্তির দিকে বের হয়ে আস, তখন মৃত দুর্গন্ধযুক্ত জানোয়ারের ন্যায় দুর্গন্ধ নিয়ে বেরিয়ে আসলে তারা তাকে নিয়ে পৃথিবীর দরজা পর্যন্ত আসবে, অতঃপর তারা বলতে থাকবে: এ বাতাস কতইনা দুর্গন্ধযুক্ত, যতক্ষণ না তারা একে নিয়ে কাফিরদের রূহের নিকট আসবে।”

বারযাখী জীবন সংক্রান্ত এবং এর সাথে সম্পৃক্ত আনুসাঙ্গিক ব্যাপারে উল্লিখিত আলোচনার মাধ্যমে আমাদের নিকট একটি জিনিস পরিষ্কার হয় যে, আমরা যে দিকে ধাবিত হচ্ছি তা কত কঠিন এবং কত বড়। এর পরেও আমরা আনুগত্যে অনেক ধীরস্থির, নিষিদ্ধ কাজ হতে বিরত থাকা থেকে শিথিলতা করছি অথচ দীর্ঘ আশা আকাঙ্খা, নির্দিষ্ট সময়ের দীর্ঘ জীবনই আমাদেরকে হক থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। নিশ্চয়ই তা একটি ধ্বংস, যার পরেও রয়েছে ধ্বংস এবং একটি ক্ষতি যার পরে কোনো লাভ এবং সংশোধন নেই। কিন্তু আল্লাহ যদি আমাদেরকে তাঁর রহমত এবং অনুগ্রহ দ্বারা বেষ্টন করে রাখেন।হে আল্লাহ! তোমার শক্তি ব্যতীত আমাদের কোনো শক্তি নেই, হে আল্লাহ আমরা তোমার সমত্তষ্টি এবং জান্নাত চাই। হে আল্লাহ! তোমার অসন্তুষ্টি এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই। হে আল্লাহ আমাদেরকে, আমাদের পিতা-মাতা এবং মুসলিম ভ্রতৃবৃন্দকে রহমত করুন।

>
[1] দেখুন: আখবার ইলমিয়া মিনাল এখতেবার আল ফিকহিয়া/শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া। আল্লামা আলবানীর লেখা পৃষ্ঠা নং ১৩৫, টিকা টিপ্পনি- আহমাদ ইবন মুহাম্মদ আল খলীল। দারুল আসেমা রিয়াদ প্রকাশনী, এবং আল আজওয়ায়/শাইখ মানতেকী যা নিয়ে এসেছেন ৬/৪২১-৪৩৯।