অন্যকে দেওয়ার সময় ওজনে কম দেওয়া আর নেওয়ার সময় বেশি করে নেওয়া জঘন্য অপরাধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَيۡلٞ لِّلۡمُطَفِّفِينَ ١ ٱلَّذِينَ إِذَا ٱكۡتَالُواْ عَلَى ٱلنَّاسِ يَسۡتَوۡفُونَ ٢ وَإِذَا كَالُوهُمۡ أَو وَّزَنُوهُمۡ يُخۡسِرُونَ ٣﴾ [المطففين: ١، ٣]
“ধ্বংস যারা পরিমাপে কম দেয় তাদের জন্য। যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে। আর যখন তাদেরকে মেপে দেয় অথবা ওজন করে দেয় তখন কম দেয়”। [সূরা আল-মুতাফফিফীন, আয়াত: ১-৩]
সুতরাং তুমি যখন কাউকে দেবে তখন কম দেবে না। তুমি যে কাজটি তোমার নিজের জন্য পছন্দ করো না, তা অন্যের জন্য কীভাবে পছন্দ কর। তুমি যখন নিজের জন্য নাও তখনতো তোমাকে মাপে কম দিলে তুমি রাজি হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ، حَتَّى يُحِبَّ لِأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ».
“তুমি তোমার নিজের জন্য যা ভালোবাসো তা অন্যের জন্যও ভালোবাসার আগ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না”।[1]
শু‘আইব আলাইহিস সালাম যে নীতি বর্ণনা করেন, কুরআন তা তুলে ধরছেন এভাবে:
﴿وَإِلَىٰ مَدۡيَنَ أَخَاهُمۡ شُعَيۡبٗاۚ قَالَ يَٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُۥۖ وَلَا تَنقُصُواْ ٱلۡمِكۡيَالَ وَٱلۡمِيزَانَۖ ٨٤﴾ [هود: ٨٤]
“হে আমার কাওম! আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো মা‘বুদ নাই। আর পরিমাপে ও ওজনে কম দিও না”। [সূরা সূরা হূদ, আয়াত: ৮৪]
﴿وَيَٰقَوۡمِ أَوۡفُواْ ٱلۡمِكۡيَالَ وَٱلۡمِيزَانَ بِٱلۡقِسۡطِۖ وَلَا تَبۡخَسُواْ ٱلنَّاسَ أَشۡيَآءَهُمۡ وَلَا تَعۡثَوۡاْ فِي ٱلۡأَرۡضِ مُفۡسِدِينَ ٨٥﴾ [هود: ٨٥]
“আর হে আমার জাতি! ন্যায় নিষ্ঠার সাথে ঠিকভাবে পরিমাপ কর ও ওজন দাও এবং লোকদের জিনিসপত্রে কোনোরূপ ক্ষতি করো না”। [সূরা হূদ, আয়াত: ৮৫]
অন্য জায়গায় আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَوۡفُواْ ٱلۡكَيۡلَ إِذَا كِلۡتُمۡ وَزِنُواْ بِٱلۡقِسۡطَاسِ ٱلۡمُسۡتَقِيمِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلٗا ٣٥﴾ [الاسراء: ٣٥]
“মেপে দেওয়ার সময় পূর্ণ মাপে দেবে এবং সঠিক পাল্লায় ওজন করবে। এটি উত্তম, এর পরিণাম শুভ”। [সূরা বনী ঈসরাইল, আয়াত: ৩৫]
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “...যখন কোনো সম্প্রদায়ের লোকেরা ওজনে বা মাপে কম দেয়, তখন শাস্তিস্বরূপ তাদের খাদ্য-শস্য উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং দুর্ভিক্ষ তাদের গ্রাস করে”।[2]
অপর একটি বর্ণনায় এসেছে, “...যে জাতি মাপে ও ওজনে কম দেয়, তাদের রিযিক উঠিয়ে নেওয়া হয়...”।[3] মনে রাখতে হবে, সালাত, সাওম ইত্যাদি নেক আমলে ত্রুটি হলে আল্লাহ তা‘আলা হয়তো তা তার নিজের অনুগ্রহে ক্ষমা করে দেবেন; কিন্তু মানুষকে সামান্য অণু পরিমাণ ঠকানো হলে বা অণু পরিমাণ মানুষের হক নষ্ট করলে, এ দায়ভার কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা নিবেন না। কিয়ামতের দিন প্রতারিত ক্রেতাকে ডেকে আল্লাহ তা‘আলা ওই প্রতারকের আমলনামা থেকে সমপরিমাণ সাওয়াব তাকে দিয়ে দেবেন। প্রতারকের সাওয়াব যদি শেষ হয়ে যায় বা কোন সাওয়াব না থাকে, তবে প্রতারিতদের গোনাহ তাঁর কাঁধের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। সেদিন কাঁদতে কাঁদতে যদি শরীরের প্রতিটি লোমকূপ থেকে রক্তও প্রবাহিত হতে থাকে, তাতেও কোন কাজ হবে না। সেদিন এমন ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা কোনক্রমেই ক্ষমা করবে না, যদি প্রতারিত ব্যক্তি তাকে ক্ষমা না করেন।
[2] আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ৭৮৫
[3] মুয়াত্তা মালেক, হাদীস নং ৫৩৭০