ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় পরিবারই হচ্ছে সমাজের মূল ভিত্তি। মানুষকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য পরিবারই তার প্রয়োজনীয় সবকিছুর ব্যবস্থা করে দেয়। ইসলামী শরী‘আত পরিবারের সকল সদস্যের দিক ও প্রয়োজন বিবেচনা করে পরিবারের জন্য কিছু বিধি বিধান ও নিয়ম নীতি দিয়েছে। যার ওপর ভিত্তি করে দয়া-অনুগ্রহ-সহমর্মিতার ভিত্তিতে একটি আদর্শ পরিবার গড়ে উঠে।
মানুষ যেমন পরিবারের সদস্য তেমনি সমাজেরও সদস্য। মানুষের রয়েছে পারিবারিক দায়িত্ব এবং সামাজিক দায়িত্ব। এ পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্বের মিশ্রণ এবং বৈপরীত্যও রয়েছে, যা অনেক সময় ভুল বুঝাবুঝি ও সীমালঙ্ঘনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং পরিবারে পিতার যেমন একটি অবস্থান রয়েছে তেমনি রয়েছে মায়ের ও ছেলে-মেয়েদের, তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে পারিবারিক আলাদা ও ভিন্ন ধরনের দায়িত্ব ও ভূমিকা, যা তাদের সামাজিক দায়িত্ব ও ভূমিকার সাথে মিলে না।
অতএব, পরিবারের ছেলেমেয়েদের সাথে বাবার সম্পর্ক হচ্ছে আত্মিক সম্পর্ক, সম্মান মর্যাদা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ক, তেমনিভাবে পরিবারে, মা-মেয়ে, ভাই-বোন ইত্যাদির সম্পর্ক যা সামাজিক সম্পর্কের সাথে মিলবে না। কারণ, সামাজিকভাবে অনেক সময় বাবার চেয়ে ছেলের অবস্থান মায়ের চেয়ে মেয়ের অবস্থান স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর অবস্থান অনেক উন্নত ও ঊর্ধ্বে হতে পারে তাদের প্রত্যেকের বিবেক বুদ্ধি সামর্থ্য ইত্যাদি অনুযায়ী। তাদের এ সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্ব ও ভূমিকার মিশ্রণ ও বৈপরীত্য কোনোও কোনোও সময় পরিবারের সদস্যদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি, মনোমালিন্য, অনধিকার চর্চা, সীমালঙ্ঘন ও পারিবারিক দুর্বলতা ইত্যাদি সৃষ্টি হতে পারে।
পুরুষ হচ্ছে পরিবারের কেন্দ্রবিন্দু। পরিবারের ছেলে-মেয়ের বংশ পরিচয় তার সঙ্গে সম্পর্কিত সন্তান সন্ততি ও স্ত্রীকে পরিচালনা করা, তাদের যথাযথ শান্তি নিরাপত্তা, উন্নতি অগ্রগতি ইত্যাদি নিশ্চিত করা, এমনকি পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্যান্যদের সাথে সম্পর্কের মাধ্যম হচ্ছে স্বামী। কারণ, স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি তাদের নিরাপত্তা, শান্তি, উন্নতি, অগ্রগতি ইত্যাদি নির্ভর করে পরিবারের পুরুষ বা স্বামীর ওপর। আর এসব কিছুর ওপর নির্ভর করে পরিবারের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। তাই ব্যক্তি ও সমাজকে গঠন করতে হলে পরিবারকে গঠন করতে হবে।
এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদেরকে অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে যে, সাধারণত পুরুষ এবং মহিলা হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন স্বভাবের লোক। পুরুষ হচ্ছে একক স্বভাবের লোক আর নারী হচ্ছে দ্বৈত স্বভাবের লোক। পুরুষের রয়েছে শুধুমাত্র কাজের ক্ষমতা। আর নারীর রয়েছে কাজ ও সন্তান প্রসবের ক্ষমতা। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী সন্তান প্রসব এবং তার লালন পালনের অর্থাৎ মাতৃত্বের যোগ্যতা নিয়েই জীবন-যাপন করে। সন্তান প্রসবে এবং আদর-যত্ন, লালন-পালনে নারী ও মাতৃত্বের বিকল্প নেই। এজন্যই একটি সন্তানকে যথাযথভাবে লালন-পালন করতে হলে, নারী ও মাতৃত্বকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। তাই একজন মা বা নারীকেও তার আত্মিক, মানসিক, বৈষয়িক সবকিছু উজাড় করে সন্তান লালন-পালন করতে হবে। এজন্যই নারীকে পুরুষের থেকে আলাদা করা যাবে না। নারীকে পুরুষ থেকে আলাদা করা বা দূরে রাখার মানেই হচ্ছে নারীর ওপর এবং সন্তান সন্ততির ওপর মানসিক ও বৈষয়িক-ভাবে যুলুম করা। সুতরাং নারীকে পুরুষেরই কর্তৃত্বাধীন ও ছত্র-ছায়ায় রাখতে হবে।
অপর দিকে পুরুষ হচ্ছে শুধুমাত্র কাজের যোগ্যতা সম্পন্ন একক স্বভাবের অধিকারী। পুরুষের মধ্যে সন্তান গর্ভধারণের ক্ষমতা নেই। এজন্য পুরুষকে মানসিক এবং শারীরিকভাবে যোগ্যতা-সম্পন্ন ও শক্তিশালী করে সৃষ্টি করা হয়েছে। নারী তার যথাযথ চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম করে তা‘লীম-তরবিয়তের আদর যত্ন ও লালন পালনের মাধ্যমে একটি সন্তানকে তার প্রাপ্ত বয়স্ক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। তারই মধ্য দিয়ে যথাসম্ভব তাদের প্রয়োজন পূরণের জন্য স্বামীকে বা পুরুষকে সহযোগিতা করতে হবে। এটিই হচ্ছে একটি পরিবারের আসল ও মূল কথা এবং স্বামী-স্ত্রী প্রত্যেকের মৌলিক দায়িত্ব।