ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
তাওহীদের কালেমা: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ [এর ফযীলত, অর্থ, শর্ত ও পরিপন্থী বিষয়] বিশেষ্য বা সর্বনাম যাই হোক এক শব্দের যিকির বৈধ নয় ইসলামহাউজ.কম
বিশেষ্য বা সর্বনাম যাই হোক এক শব্দের যিকির বৈধ নয়

আমরা পূর্বে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর ফযীলত সম্পর্কে জেনেছি। আরও জেনেছি যিকিরকারীগণ যেসব শব্দ দিয়ে যিকির করে তন্মধ্যে এটাই সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ যিকির। এর শব্দ কম তবে অর্থ বেশি, মানুষ তার মুখাপেক্ষী, বরং খাবার, পানীয়, পোশাক ও অন্যান্য বস্তু থেকে তার প্রয়োজন অনেক বেশি। পুরো দুনিয়ার জন্যই তার প্রয়োজন, যার কোনো শেষ নেই, তাই কালেমার যিকির সবচেয়ে বেশি হয়। তার যিকির সবচেয়ে সহজ, অর্থের দিক থেকে মহান, মর্যাদার বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ! এদত সত্ত্বেও কতক জাহিল কালেমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বিদআতি যিকিরে প্রত্যাবর্তন করে, মানুষের তৈরি করা যিকিরে মগ্ন হয়, যার প্রমাণ কুরআন ও সুন্নাহয় নেই, পূর্বসূরি কোনো মনীষী থেকেও নেই”।[1]

একটি উদাহরণ: সূফীদের কতক তরিকায় যিকিরের সময় শুধু একটি নাম বা বিশেষ্য উচ্চারণ করা হয়। যেমন, (الله الله), আল্লাহ আল্লাহ বারবার বলা। আবার তাদের কেউ আল্লাহ নাম বা বিশেষ্যের পরিবর্তে সর্বনাম দিয়ে যিকির করে। যেমন, (هو) বারবার বলে। তাদের কেউ আরও সীমালঙ্ঘন করে বলে: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ সাধারণ লোকের যিকির, আর এক শব্দ অর্থাৎ শুধু আল্লাহ বিশেষ ব্যক্তির যিকির, আর বিশেষ থেকে বিশেষ ব্যক্তির যিকির (هو) সর্বনাম। আবার তাদের কেউ এরূপও বলে: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুমিনের যিকির, আর (الله) নাম ‘আরিফ অর্থাৎ আল্লাহর পরিচয় অর্জনকারীর যিকির, আর (هو) তাদের থেকেও উন্নতি সাধনকারী মুহাক্কিকের যিকির। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বোত্তম যে যিকিরের কথা বলেছেন, সেই তাওহীদের কালেমার ওপর তারা এক শব্দের যিকির অথবা সর্বনামের যিকিরকে প্রাধান্য দেয়, অথচ শুধু আমাদের নবী নয়, পূর্ববর্তী নবীগণও যে যিকির করেছেন তার ভেতর কালেমার যিকির সর্বোত্তম যিকির। এ সম্পর্কে কতক হাদীস আমরা পূর্বে জেনেছি। অধিকন্তু এক শব্দ বিশেষ্য হোক বা সর্বনাম কুরআন ও সুন্নাহয় তার যিকির উল্লেখ নেই, আর না পূর্বসূরি কোনো আলেম থেকে বর্ণিত আছে, তবে পরবর্তী কতক গোমরাহ লোক তার প্রচলন করেছে দলীল প্রমাণ ছাড়াই।

শাখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়াহ রহ. বিদ‘আতী যিকিরকারীদের দলীল চরমভাবে খণ্ডন করেছেন। যিকিরের এ বিদ ‘আতকে প্রচার ও প্রমাণ করার জন্য তারা যা পেশ করে তার বাতুলতা তিনি প্রমাণ করেছেন। তিনি বলেন, “তরিকতপন্থী কতক লেখক লিখেছেন ‘আল্লাহ’ শব্দের যিকির অতীব মহান। তার দলীল হিসেবে পেশ করেছে কখনো অনুভূতি, কখনো নিজস্ব মত বা কখনো মিথ্যা বর্ণনা। যেমন, তাদের কেউ বলেন, আলী ইবন আবু তালিবকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (‘আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহ’ বল। তিনি আল্লাহ তিনবার উচ্চারণ করলেন, অতঃপর আলীকে তার নির্দেশ দিলেন, আলীও তা তিনবার বলল)। এটি সকল আলেমের নিকটই বানোয়াট হাদীস, পক্ষান্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে যিকিরের নির্দেশ দিতেন, তার শীর্ষে রয়েছে: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ যিকির। চাচা আবু তালিবের মৃত্যুর সময় তিনি এ কালেমাই পেশ করেছেন, তিনি বলেছেন:

«يَا عَمِّ، قُلْ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ كَلِمَةً أَشْهَدُ لَكَ بِهَا عِنْدَ اللَّهِ»

“হে আমার চাচা, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ একটি বাক্য বলুন, এটা দিয়ে আমি আল্লাহর সামনে আপনার জন্য সুপারিশ করব”।[2]

অপর হাদীসে বলেন,

«إِنِّي لأَعْلَمُ كَلِمَةً لا يَقُولُهَا عَبْدٌ عِنْدَ مَوْتِهِ إِلا وَجَدَ رُوحًهُ لَهَا رَوْحًا»

“আমি একটি বাক্য জানি, মৃত্যুর সময় কোনো বান্দা বলবে না, তবে অবশ্যই তার অন্তর সেটার (প্রশান্তি) সুঘ্রাণ পাবে”।[3]

অপর হাদীসে তিনি বলেন,

«مَنْ كَانَ آخِرُ كَلَامِهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، دَخَلَ الْجَنَّةَ»

“যার সর্বশেষ বাক্য হবে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে”।[4]

অপর হাদীসে তিনি বলেন,

«أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، فَإِذَا فَعَلُوا ذَلِكَ، عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءَهُمْ، وَأَمْوَالَهُمْ إِلَّا بِحَقِّهَا، وَحِسَابُهُمْ عَلَى اللَّهِ»

“আমাকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে যে, আমি মানুষের সাথে যুদ্ধ করব, যতক্ষণ না তারা বলে: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ (আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব মা‘বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল) যখন এটা তারা বাস্তবায়ন করবে, আমার থেকে তাদের রক্ত ও সম্পদ নিরাপদ করে নিবে, তবে কালেমার হক ব্যতীত এবং তাদের হিসেব আল্লাহর ওপর”।[5]

এ বিষয়ে একাধিক হাদীস রয়েছে”।

ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. আরও বলেন, “এক শব্দের যিকির কোনো অবস্থাতেই বৈধ নয়, শরী‘আতে এমন কোনো দলীল নেই যার দ্বারা এক শব্দের যিকির মুস্তাহাব প্রমাণিত হয়। কতক মূর্খ আবেদের ধারণা, আল্লাহ তা‘আলার বাণী: قُلِ ٱللَّهُۖ ثُمَّ ذَرۡهُمۡ “বল, আল্লাহ, অতঃপর তাদেরকে ত্যাগ কর”[6] এতে উদ্দেশ্য আল্লাহ নাম বা বিশেষ্য। এটা তাদের স্পষ্ট ভুল, যদি তারা আয়াতের পূর্বের অংশসহ চিন্তা করে অবশ্যই তাদের নিকট ভুলটি স্পষ্ট হবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿وَمَا قَدَرُواْ ٱللَّهَ حَقَّ قَدۡرِهِۦٓ إِذۡ قَالُواْ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ عَلَىٰ بَشَرٖ مِّن شَيۡءٖۗ قُلۡ مَنۡ أَنزَلَ ٱلۡكِتَٰبَ ٱلَّذِي جَآءَ بِهِۦ مُوسَىٰ نُورٗا وَهُدٗى لِّلنَّاسِۖ تَجۡعَلُونَهُۥ قَرَاطِيسَ تُبۡدُونَهَا وَتُخۡفُونَ كَثِيرٗاۖ وَعُلِّمۡتُم مَّا لَمۡ تَعۡلَمُوٓاْ أَنتُمۡ وَلَآ ءَابَآؤُكُمۡۖ قُلِ ٱللَّهُۖ ثُمَّ ذَرۡهُمۡ فِي خَوۡضِهِمۡ يَلۡعَبُونَ ٩١﴾ [الانعام: ٩١]

“আর তারা আল্লাহকে যথার্থ সম্মান দেয় নি, যখন তারা বলছে, আল্লাহ কোনো মানুষের ওপর কিছুই নাযিল করেন নি। বল, কে নাযিল করেছে সে কিতাব, যা মুসা নিয়ে এসেছে মানুষের জন্য আলো ও পথ নির্দেশস্বরূপ, তোমরা তা বিভিন্ন কাগজে লিখে রাখতে, তোমরা তা প্রকাশ করতে আর অনেক অংশ গোপন রাখতে, আর তোমাদেরকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল যা জানতে না তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষ’? বল, আল্লাহ। তারপর তাদেরকে ছেড়ে দাও, তারা তাদের অযাচিত সমালোচনায় খেলতে থাকুক”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৯১]

অর্থাৎ বল: (“আল্লাহ”, সেই কিতাব নাযিল করেছেন যা মুসা নিয়ে এসেছেন)। এটি উদ্দেশ্য (মুবতাদা) ও বিধেয় (খবর) দু’টি অংশ মিলে বিশেষ্যবাচক পূর্ণবাক্য। এখানে উদ্দেশ্য বা মুবতাদা হচ্ছে ‘আল্লাহ’ শব্দ আর বিধেয় বা খবর হচ্ছে ‘সেই কিতাব নাযিল করেছেন যা মুসা নিয়ে এসেছেন’ উহ্য বাক্য। উহ্য খবরটি পূর্বের প্রশ্ন থেকেই বুঝে আসে। এরূপ উহ্য বাক্য আরবি ও অন্যান্য ভাষায় সচরাচর ব্যবহার হয়, যদি বাক্যের অপর অংশ সেই অংশ বুঝাতে যথেষ্ট হয়”।

ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. এরূপ অনেক উদাহরণ পেশ করেছেন, এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “শরী‘আতের দলিল থেকে প্রমাণিত হলো যে, শুধু আল্লাহ আল্লাহ যিকির মুস্তাহাব নয়, অর্থাৎ এক শব্দের যিকির, যা পূর্ণ অর্থ প্রকাশে যথেষ্ট নয়। অনুরূপ বিবেকের নিকটও এ জাতীয় যিকির প্রশ্নবিদ্ধ, কারণ একটি নাম ঈমান ও কুফর কিছুই প্রমাণ করে না। আর না প্রমাণ করে হিদায়াত ও গোমরাহী, ইলম ও মূর্খতা...”।

ইবন তাইমিয়্যাহ আরও বলেন, “এ জন্য আরবি ও অন্যান্য ভাষার সকল পণ্ডিতগণ একমত যে, এক শব্দ বলে চুপ থাকা সুন্দর নয়, যা পূর্ণ বাক্য ও উপকারী কথা নয়। এ জন্য জনৈক আরব যখন কোনো মুয়াযযিনকে বলতে শুনলেন: أشهد أن محمدا رسولَ اللهِ তিনি বললেন: সে কী করল?

কারণ, মুয়াযযিন যখন رسولَ শব্দে ফাতাহ (জবর) দিল, তখন সেটা পূর্বের বিশেষ্যের বিশেষণ হলো, আর বিশেষণ বিশেষ্যকে পূর্ণ করে, বাক্যের দ্বিতীয় অংশ পূর্ণ করে না, যা ব্যতীত বাক্য পূর্ণ হয় না। এ জন্য তিনি পরবর্তী বাক্য (বিধেয়) অনুসন্ধান করছেন। কারণ, মুয়াযযিন মুবতাদা (উদ্দেশ্য) বলেছে, খবর (বিধেয়) বলেনি, তাই বাক্যটি পূর্ণ হয় নি। অতএব, একজন ব্যক্তি যদি আল্লাহ শব্দ হাজার বারও পড়ে তবুও সে মুমিন হবে না, কোনো সাওয়াবেরও হকদার হবে না, আর না হকদার হবে জান্নাতের। কারণ, প্রত্যেক ধর্মের লোক আল্লাহ শব্দ উচ্চারণ করে, তার তাওহীদ স্বীকার করুক বা না করুক। আল্লাহ আমাদেরকে তার নাম স্মরণ করার নির্দেশ দিয়ে বলেন,

﴿فَكُلُواْ مِمَّآ أَمۡسَكۡنَ عَلَيۡكُمۡ وَٱذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ عَلَيۡهِۖ ٤﴾ [المائ‍دة: ٤]

“সুতরাং তোমরা তা থেকে খাও, যা তোমাদের জন্য ধরে এনেছে এবং তাতে তোমরা আল্লাহর নাম স্মরণ কর”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪]

অপর আয়াতে বলেন,

﴿وَلَا تَأۡكُلُواْ مِمَّا لَمۡ يُذۡكَرِ ٱسۡمُ ٱللَّهِ عَلَيۡهِ ١٢١﴾ [الانعام: ١٢١]

“আর তোমরা তা থেকে আহার করো না, যার ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয় নি”। [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১২১]

অপর আয়াতে বলেন,

﴿سَبِّحِ ٱسۡمَ رَبِّكَ ٱلۡأَعۡلَى ١﴾ [الاعلى: ١]

“তুমি তোমার সুমহান রবের তাসবীহ পাঠ কর”। [সূরা আল-‘আলা, আয়াত: ১]

অপর আয়াতে বলেন,

﴿ فَسَبِّحۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلۡعَظِيمِ ٧٤ ﴾ [الواقعة: ٧٤]

“অতএব, তোমার মহান রবের নামে তাসবীহ পাঠ কর”। [সূরা আল-ওয়াকি‘য়াহ, আয়াত: ৭৪] ইত্যাদি আয়াতে আল্লাহর নাম পূর্ণ বাক্য দ্বারা স্মরণ করার কথা বলা হয়েছে। যেমন, বলবে بسم الله অথবা বলবে سبحان ربي الأعلى অথবা বলবে سبحان ربي العظيم ইত্যাদি বাক্য। কখনো এক শব্দ উচ্চারণ করার বৈধতা প্রদান করা হয় নি, এভাবে কোনো নির্দেশ পালন করা হয় না। আল্লাহ শব্দ দ্বারা শিকার করলে শিকার হালাল হয় না, আর না হালাল হয় জবেহকৃত প্রাণী, আর না কোনো বস্তু”।

অতঃপর ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, “এ থেকে প্রমাণ হলো যে, এক শব্দ উচ্চারণ করা মুস্তাহাব নয়, কীভাবে সেটা বিশেষ ব্যক্তির যিকির হয়? তার থেকেও বহু দূরে সর্বনাম (هو هو) যিকির করার বৈধতা। কারণ, শুধু সর্বনাম নিজস্ব কোনো অর্থই প্রকাশ করে না, বরং সর্বনাম যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয় সেটা তার অর্থই প্রকাশ করে। অতএব, বক্তার ইচ্ছা ও নিয়তের ওপর সর্বনাম নির্ভরশীল”।[7]

ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. আরও বলেন, “এক শব্দের যিকির সুন্নাহ মোতাবিক নয়, বরং বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত এবং শয়তানী গোমরাহীর কাছাকাছি...”।

অতঃপর ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন, “আল্লাহর যিকিরের ক্ষেত্রে বৈধ হচ্ছে পূর্ণ বাক্য বলা, যার নাম কালাম বা বাক্য, কালামের একবচন কালেমা বা শব্দ। পূর্ণ বাক্য দ্বারা অন্তর উপকৃত হয়, তার দ্বারাই সাওয়াব, বিনিময় ও আল্লাহর নৈকট্য হাসিল হয়, হাসিল হয় তার মহব্বত, ভয় ও পরিচয়সহ ইত্যাদি মহান সাফল্য ও সুউচ্চ মর্যাদা। পক্ষান্তরে (বাক্যের একাংশ) এক শব্দ বলে বাক্য শেষ করার কোনো ভিত্তি নেই, কবে সেটা বিশেষ কিংবা বিশেষ থেকে বিশেষ যিকির হল? বরং তা বিদ‘আত ও গোমরাহী এবং যিন্দিক ও নাস্তিকদের বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। দীনের প্রধান দু’টি মূলনীতি: ১. আল্লাহ ব্যতীত কারো ইবাদাত করব না এবং ২. তিনি যেভাবে ইবাদাত করতে বলেছেন ঠিক সেভাবে তার ইবাদত করব, বিদ‘আতী পন্থায় তাঁর ইবাদাত করব না”।[8] ইবন তাইমিয়্যার কথা শেষ হলো। এখানে রয়েছে গবেষণামূলক স্পষ্ট বর্ণনা, যাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই, হক সর্বদাই এভাবেই স্পষ্ট হয়।

এসব বিদ‘আতীদের নতুন যিকিরে হুমড়ি খাওয়ার ফলে মুসলিমদের মাঝে কতক প্রশ্ন ও ভাবনার জন্ম দিয়েছে: আল্লাহর দীনে যার কোনো ভিত্তি নেই, শরী‘আতের পক্ষ থেকে যার পক্ষে কোনো দলীল নেই, তাতে হুমড়ি খাওয়ার অর্থ কী? বরং তার মোকাবিলায় বিশুদ্ধ সুন্নাহ ও যিকির ত্যাগ করার রহস্য কী? কিসের জন্য তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিদায়াত থেকে দূরে সরছে এবং তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে? আর মনোনিবেশ করছে এমন কতিপয় যিকিরে, যার সম্পর্কে আল্লাহ কোনো দলীল নাযিল করেন নি! অধিকন্তু বিদ‘আতী যিকিরকে মহান জানা, তাকে চূড়ান্ত পর্যায়ের সম্মান দেওয়া, তার বিপরীত সুন্নাহ ও শরঈ‘ যিকিরের সম্মান নষ্ট করার কারণ কী, যে যিকির সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ?! আল্লাহ তার ওপর ও তার বংশের ওপর এবং তার সকল সাথীদের ওপর সালাত ও সালাম প্রেরণ করুন।

>
[1] দেখুন: ফাতহুল মাজিদ: লি শাইখ আব্দুর রহমান: (পৃ. ৪৫)

[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৮৮৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪

[3] আহমদ: (১/২৮); ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৭৯৫)

[4] আহমদ: (৫/২৪৭); আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১১৬; ইরওয়াউল গালিল (হাদীস নং ৬৮৭) গ্রন্থে আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।

[5] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২

[6] সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৯১

[7] মাজমুউল ফাতাওয়া: (১০/৫৫৬-৫৬৫)

[8] মাজমুউল ফাতাওয়া: (১০/১৩৪-২২৭)