প্রশ্ন ১: জনৈকা মহিলার তাওয়াফে ইফাযা (ফরয তাওয়াফ) সম্পাদন করার পূর্বেই মাসিক ঋতু আরম্ভ হয়েছে। সে সৌদী আরবের বাইরে বসবাস করে এবং তার সফরের সময় হয়েছে, বিলম্ব করাও সম্ভব নয়। আবার সৌদী আরবে পুনঃরায় ফিরে আসাও অসম্ভব। এমন অবস্থায় কি করতে হবে?
উত্তর ১: অবস্থা যদি এমন হয় যা প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোন মহিলার তাওয়াফে ইফাযা সম্পাদন করার পূর্বেই মাসিক ঋতু আরম্ভ হয়েছে এবং তার মক্কায় পবিত্রতার অপেক্ষায় বসে থাকাও সম্ভব নয় এবং তাওয়াফ না করে দেশে চলে গেলে পুনঃরায় ফিরে আসাও সম্ভব নয়। এমন অবস্থায় দু’টি ব্যবস্থার যে কোন একটি গ্রহণ করতে পারবে: হয় সে এমন ঔষধ ব্যবহার করবে যা মাসিক রক্ত বন্ধ করতে পারে। অতঃপর বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করে নিবে। আর না হয় রক্তের স্থানকে শক্ত করে এমনভাবে বেঁধে নিবে যাতে মসজিদে হারামে রক্ত প্রবাহিত না হতে পারে। অতঃপর নিরুপায় অবস্থায় তাওয়াফ করে নিবে। আর এ শেষ উক্তিটিই প্রাধান্য যোগ্য যা আমি উল্লেখ করলাম। আর এ মতটি শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহঃ) পছন্দ করেছেন।
আর এর বিপরীত মত দুইয়ের এক হতে পারে: হয় সে মহিলা (প্রাথমিক হালাল হওয়ার পর) অবশিষ্ট সময় ইহরাম অবস্থায় থেকে যাবে, যাতে নিজ স্বামীর জন্য হালাল হতে পারবে না। আর না হয় তাকে বাধাপ্রাপ্ত গণ্য করে হাদী (কুরবানী) যবহ করতে বলা হবে এবং সে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবে। আর এটা করলে তার এ হাজ্জ গণ্য হবে না। আর দুটো বিষয়ই বড় জটিল। প্রথম বিষয় হচ্ছে, তার অবশিষ্ট সময় ইহরামে থেকে যাওয়া। আর দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, তার হাজ্জ বিনষ্ট হওয়া। অতএব এমত নিরুপায় অবস্থায় অগ্রাধিকারযোগ্য, যা ইমাম ইবনু তায়মিয়্যাহ্ (রহঃ)-এর মত। আর মহান আল্লাহ বলেন:
وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ
আর দ্বীনের ভিতর তিনি তোমাদের উপর কোন কঠোরতা চাপিয়ে দেননি।[1]
তিনি আরো বলেন:
يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ
আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, কঠিন করতে চান না।[2]
তবে যদি উক্ত মহিলার নিজ বাড়িতে ফিরে আসার পরে, পবিত্র হয়ে পুনঃরায় ফিরে আসা সম্ভব হয়, তাহলে মক্কা থেকে বাড়ি চলে যাওয়ায় কোন দোষ নেই। কিন্তু হায়য থেকে পবিত্র হওয়ার পর মক্কা ফিরে এসে হাজ্জের ফরয তাওয়াফ সম্পূর্ণ করবে। আর যতদিন পর্যন্ত এ ফরয তাওয়াফ সম্পাদন না করবে ততদিন ধরে তার স্বামীর জন হালাল হতে পারবে না। কারণ, সে ইহরাম থেকে (দ্বিতীয় পর্যায়ের হালাল হয়ে) সম্পূর্ণরূপে হালাল হতে পারেনি।
প্রশ্ন ২: সৌদী আরবের বহিরাগত একজন হাজী সফরের পরিস্থিতি এবং উড়োজাহাজ ও তার টিকিট সম্পর্কীত বিষয় সম্বন্ধে তেমন অবগত নন। সে নিজ দেশে লোকজনকে জিজ্ঞেস করেছে যে, ১৩ই যিলহাজ্জ বৈকাল চার ঘটিকার সময় কি উড়োজাহাজের বুকিং করে ফিরে আসা সম্ভব হবে? লোকেরা তাকে বলল যে, হ্যাঁ, সম্ভব হবে। তখন সে এসময়ে বুকিং করে ফেলে। তারপর ১৩ই যিলহাজ্জ রাত তাকে মিনায় কাটাতে হয়। এখন কি তার জন্য সকাল বেলা পাথর মেরে মিনা হতে প্রস্থান করা জায়েয হবে? উল্লেখ্য যে, সে যদি বিলম্ব করে সূর্য মাথার উপর থেকে ঢলে যাওয়ার পর পাথর মারে তাহলে তার সফর বাতিল হয়ে যাবে এবং সে বড়ই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে যাবে। এছাড়া তাতে সরকারের আইনের বিরোধিতা করতে বাধ্য হবে।
উত্তর ২: সূর্য মাথার উপর থেকে ঢলে যাওয়ার পূর্বে পাথর মারা জায়েয নয়। তবে এমতাবস্থায় নিরুপায় হওয়ার কারণে তার পাথর মারা মাফ হয়ে যেতে পারে। আর তাকে বলব যে, তার উপর একটি কুরবানী মিনায় কিংবা মক্কায় যবহ করা আবশ্যক। যা নিজে করবে অথবা কোন ব্যক্তিকে তার পক্ষ থেকে যবহ করার জন্য উকীল নিযুক্ত করে তাকে এ দায়িত্ব প্রদান করবে এবং সে মাংস সম্পূর্ণ দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করবে। আর সে ব্যক্তি বিদায় তাওয়াফ করে রওনা হয়ে যাবে।
আর আপনি যে বলেছেন যে, যদি উত্তর এই হয় যে, "সূর্য মাথার উপর থেকে ঢলার পূর্বে পাথর মারা জায়েয নয়" তাহলে প্রশ্ন হল যে, এমন কোন আলিমের মত কি নেই যে, সূর্য মাথার উপর থেকে ঢলার পূর্বে পাথর মারা জায়েয?
এর জবাব হল যে, হ্যাঁ, একটি দল এমন আছে যারা বলে যে, সূর্য মাথার উপর থেকে ঢলার পূর্বে পাথর মারা জায়েয। কিন্তু সে মতটি মোটেই সহীহ নয়। বরং সঠিক মত হচ্ছে যে, সূর্য মাথার উপর থেকে ঢলার পূর্বে পাথর মারা জায়েয নয়। কারণ, নাবী (সা.) বলেছেন:
خُذُوا عَنِّيْ مَنَاسِكَكُم
তোমরা আমার নিকট হতে তোমাদের হাজ্জ ও উমরার বিধি-বিধান গ্রহণ কর।[3]
আর নাবী (সা.) সূর্য মাথার উপর থেকে ঢলার পরেই পাথর মেরেছেন। তবে কেউ যদি একথা বলে যে, নাবী (সা.)-এর সূর্য ঢলার পরে পাথর মারাটি তাঁর একটি কর্ম মাত্র। আর নাবী (সা.)-এর শুধুমাত্র কর্ম দ্বারা কোন বিধান ওয়াজিব হয় না। এর জবাবে আমি বলব, হ্যাঁ, ইহা শুধুমাত্র তাঁর কর্ম। আর শুধুমাত্র কর্ম দ্বারা কোন বিধান ওয়াজিব হয় না। কারণ, নাবী (সা.) ইহা করেছেন কিন্তু এর নির্দেশ দেননি এবং সূর্য ঢলার পূর্বে পাথর মারতে নিষেধও করেননি। আর শুধুমাত্র কর্ম দ্বারা কোন বিধান ওয়াজিব হয় না, এটাও ঠিক। কেননা কোন কাজের আদেশ করলে কিংবা কোন কাজ পরিত্যাগ করতে নিষেধ করলে তা পালন করা ওয়াজিব হয়। তবে আমি এখানে বলব যে, নাবী (সা.)-এর এই কর্মে ইংগিত রয়েছে যে, তা ওয়াজিব। তার কারণ হচ্ছে যে, রসূল (সা.)-এর কংকর মারাতে সূর্য ঢলা পর্যন্ত বিলম্ব করায় ইহা ওয়জিব প্রমাণ করার জন্য যথেষ্টে। কারণ, সূর্য ঢলার পূর্বে যদি কংকর মারা জায়েয হত, তাহলে নাবী (সা.) তা অবশ্যই করতেন; কেননা ইহা হাজীদের জন্য সহজ সরল। আর নাবী (সা.)-কে কখনো দু’টি বিষয়ের মাঝে স্বাধীনতা দেয়া হলে এবং তা গোনাহের কাজ না হলে তিনি সহজটি পছন্দ করতেন। আর সহজ কাজ হচ্ছে, সূর্য ঢলার পূর্বে কংকর নিক্ষেপ করা। আর নাবী (সা.)-এর সহজ বিষয়টি (সূর্য ঢলার পূর্বে কংকর মারা) গ্রহণ না করা প্রমাণ করে যে, ইহা গুনাহের কাজ।
আর দ্বিতীয় যুক্তি যা প্রমাণ করে যে, সূর্য ঢলার পরে কংকর মারা ওয়াজিব, তা হল যে, রসূল (সা.) সূর্য ঢলার সাথে সাথেই যুহর সলাত আদায় না করে প্রথম পাথর মারতেন। তাতে প্রমাণিত হয় যে, নাবী (সা.) যেন তাড়াতাড়ি কংকর মারার জন্য বড়ই ধৈর্য্যের সাথে প্রতিক্ষায় থাকতেন। এজন্যই সলাত প্রথম ওয়াক্তে আদায় করা উত্তম হলেও তিনি যুহর সলাতে বিলম্ব করতেন। আর এসব একমাত্র সূর্য মাথার উপর থেকে ঢলার সঙ্গে সঙ্গে কংকর মারার উদ্দেশ্যেই তিনি করেছেন।
প্রশ্ন ৩: জনৈক ব্যক্তি লোকমুখে শুনেছে যে, তাওয়াফের পূর্বে সাঈ করা জায়েয, তাই সে সাঈ করার পরে ১২ কিংবা ১৩ যিলহাজ্জ তাওয়াফ করেছে। পরে তাকে কিছু লোক বলে যে, এই আগে-পরে করার বৈধতাটি শুধুমাত্র ঈদের দিনের সাথে সীমিত। তাহলে এর সাঈর বিধান কি হবে?
উত্তর ৩: সঠিক মত হচ্ছে যে, তাওয়াফের পূর্বে সাঈ সম্পাদন করার বৈধতার ব্যাপারে ঈদের দিন এবং অন্য দিনের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। বরং এসম্পর্কে ব্যাপক অর্থপূর্ণ হাদীস থাকার কারণে তাওয়াফের পূর্বে সাঈ করা ঈদের দিনের পরেও জায়েয। কারণ, জনৈক ব্যক্তি নাবী (সা.)-কে বলে, "আমি তওয়াফ করার পূর্বেই সাঈ করে ফেলেছি? তখন নাবী (সা.) বলেন: কোন অসুবিধা নেই। তাই হাদীস যখন ‘আ-ম’ (ব্যাপক অর্থপূর্ণ) তখন সাঈ ও তাওয়াফ ঈদের দিনে হোক কিংবা তারপরে হোক, তাতে কোন পার্থক্য নেই।
প্রশ্ন ৪: এমন হাজী যার সাঈ করা বাকি আছে, কিন্তু সে সাঈ না করে মক্কা থেকে বের হয়ে চলে গিয়েছে। অতঃপর তাকে পাঁচ দিন পরে জানানো হয় যে, তার সাঈ বাকি থেকে গিয়েছে। তাহলে কি তাওয়াফ না করে তার শুধু সাঈ করা যথেষ্ট?
উত্তর ৪: কোন ব্যক্তি যদি এ বিশ্বাস নিয়ে তাওয়াফ করে যে, তার সাঈ করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু পরে তাকে জানানো হল যে, তার প্রতি সাঈ ফরয হয়ে আছে, তাহলে সে শুধুমাত্র সাঈ করবে, তাকে পুনরায় তাওয়াফ করতে হবে না। কারণ, তাওয়াফ এবং সাঈর মধ্যে পরস্পরতা বজায় রাখা আবশ্যক শর্ত নয়। এমনকি যদি কোন ব্যক্তি তাওয়াফের পর সাঈ করা ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করে তাতেও কোন অসুবিধা নেই। তবে উত্তম হচ্ছে যে, সাঈ যেন তাওয়াফের পরে পরেই সম্পূর্ণ করা হয়।
প্রশ্ন ৫: জনৈক হাজী হাজ্জে তামাত্তুর উদ্দেশ্যে মক্কায় আগমন করে। কিন্তু তাওয়াফ এবং সাঈ সম্পূর্ণ করার পরে সাধারণ কাপড় পরিধান করে নেয়, তবে সে মাথা মুণ্ডন বা চুল কাটেনি। হাজ্জের পরে সে কোন আলিমকে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারে যে, সে ভুল করেছে। এখন সে উমরার সময় পার করে হাজ্জে চলে গিয়েছে, এমত অবস্থায় সে কি করতে পারে?
উত্তর ৫: এ ব্যক্তি হচ্ছে উমরার ওয়াজিব পরিত্যাগকারী; আর তা হল, চুল খাটো করা বা মুণ্ডন করা। তাই আলিমগণের মতে তাকে মক্কাতেই একটি কুরবানী করে সেখানকার দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করে দিতে হবে। আর সে তার হাজ্জে তামাত্তুর নিয়তের উপর অটল থাকবে।
প্রশ্ন ৬: উমরায় মাথামুণ্ডন বা চুল খাটো করার বিধান কি?
উত্তর ৬: উমরায় মাথামুণ্ডন কিংবা চুল খাটো করা ওয়াজিব। কারণ, নাবী (সা.) বিদায় হাজ্জে মক্কা আগমন করে তাওয়াফ এবং সাঈ করেন। আর যে সকল হাজী হাদী (কুরবানীর পশু) সঙ্গে নিয়ে আসেননি তাদেরকে চুল খাটো করার পরে হালাল হবার নির্দেশ দেন। আর নাবী (সা.)-এর নির্দেশ ওয়াজিব হওয়াই প্রমাণ করে। ঠিক তেমনি হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় যখন সাহাবীগণ মক্কা প্রবেশে বাধা প্রাপ্ত হন, তখন তাঁদেরকে নাবী (সা.) মাথামুণ্ডনের নির্দেশ দেন। এমন কি যখন তাঁরা মাথামুণ্ডনে বিলম্ব করেন তখন নাবী (সা.) তাদের প্রতি রাগান্বিত হন। আর উমরায় মাথামুণ্ডন উত্তম না কি চুল খাটো করা? এর জবাব হচ্ছে যে, মাথামুণ্ডনই উত্তম। তবে তামাত্তু হাজ্জ সম্পাদনকারী যদি বিলম্বে মক্কা আসে তাহলে তার জন্য চুল খাটো করাই উত্তম; যাতে করে হাজ্জের পর মাথামুণ্ডন করা যায়।
প্রশ্ন ৭: জনৈক হাজী পূর্ব দিক থেকে জামরা আকাবায় (বড় জামরা) পাথর মেরেছে, কিন্তু তার পাথর হাওযে গিয়ে পড়েনি। আজকে ১৩ যিলহাজ্জ, তাহলে এখন সে কি করবে? তাকে কি তাশরীকের দিনে পুনরায় সবগুলি পাথর মারতে হবে?
উত্তর ৭: তাকে সবগুলি পাথর মারতে হবে না। বরং তাকে শুধুমাত্র ঐ দিনের পাথর পুনরায় মারতে হবে যে দিন সে ভুল করেছে। তাই সঠিক মতের উপর ভিত্তি করে এই ব্যক্তি জামরা আকাবার সাতটি পাথর পুনরায় মেরে নিবে। কারণ, তার পূর্ব দিক থেকে মারা যথেষ্ট হয়নি, কেননা এদিক থেকে পাথর মারলে তা হাওযে গিয়ে পড়বে না, যা হচ্ছে কংকর নিক্ষেপের স্থান। এজন্য কোন ব্যক্তি পুলের উপরে হয়ে পূর্ব দিক থেকে মারলে তা যথেষ্ট হবে, কারণ, উপর থেকে পাথর মারলে তা যে কোন দিক থেকে হাওযে এসে পড়বে।
প্রশ্ন ৮: জামরা আকাবার পাথর মারার আসল সময় কখন শেষ হয়? আর কখন তার কাযা করার সময় শেষ হয়?
উত্তর ৮: ঈদের দিনের জামরা আকাবার পাথর মারার আসল সময় শেষ হয় ১১ যিলহাজ্জের ফজর হলে এবং এমন দুর্বলদের জন্য যারা মানুষের ভীড়ে চলতে অপারগ, তাদের সময় শুরু হয় কুরবানীর রাতের শেষভাগ থেকে। আর তাশরীকের দিনগুলিতে জামরা আকাবায় পথর মারার সময় অপর দুটি জামরার মতই এবং তার সাথেই; যার সময় শুরু হয় সূর্য মাথার উপর থেকে ঢলা থেকে এবং শেষ হয় পরের দিনের ফজর হওয়া পর্যন্ত। তবে তাশরীকের শেষ দিনের পরের রাতে (অর্থাৎ ১৪ই যিলহাজ্জের রাতে) কোন পাথর মারা নেই। কারণ, ১৩ই যিলহাজ্জের সূর্য অস্ত হওয়ার সাথেই তাশরীকের দিন শেষ হয়ে যায়। তবে দিনে কংকর নিক্ষেপ করা উত্তম। কিন্তু যদি বর্তমানকালে হাজীদের সংখ্যা বৃদ্ধি হওয়া এবং তাদের অনেকের পরস্পর দুর্ব্যবহার ও অন্যের প্রতি বেপরোয়া হওয়ার কারণে যদি প্রাণনাশের কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অথবা অধিক কষ্ট হওয়ার আশঙ্কা হয় তাহলে রাত্রেও কংকর মারতে কোন আপত্তি নেই। এমন কি কোন ব্যক্তির যদি এই আশঙ্কা না থাকা সত্ত্বেও রাত্রে কংকর মারে তাতেও কোন শারঈ বাধা নেই। তবে এ মাস‘আলাটিতে সতর্কতা অবলম্বন করতঃ বিনা প্রয়োজনে রাত্রে কংকর না মারাই হচ্ছে উত্তম। আর পরদিন ফজর হওয়া পর্যন্ত কংকর না মারলে তা কাযা বলে গণ্য হবে।
প্রশ্ন ৯: যদি কোন ব্যক্তির সাতটি পাথরের কোন একটি বা দু’টি জামরার হাওযে গিয়ে না পড়ে এবং এর পর এক বা দু‘দিন অতিবাহত হয়ে যায়, তাহলে কি তাকে পুনরায় এই একটি বা দু’টি পাথর মারতে হবে? আর তা যদি করতে হয় তাহলে কি তাকে তার পরের কংকরগুলি পুনরায় মারতে হবে?
উত্তর ৯: যদি কোন ব্যক্তির সাতটি পাথরের কোন একটি বা দুটি জামরার হাওযে গিয়ে না পড়ে তাহলে আলিমগণ বলেন যে, এই ভুলটি যদি শেষ জামরায় হয় তাহলে তা পূরণ করে নিবে। তার পূর্বের কংকরগুলি পুনরায় মারার প্রয়োজন নেই। আর যদি এই ভুল (একটি বা দুটি পাথর হাওযে না পড়া) প্রথম বা দ্বিতীয় জামরায় হয়ে থাকে তাহলে ঘাটতি পূরণ করার পরবর্তী পাথরগুলি মেরে নিবে। তবে আমার নিকট সঠিক মত হচ্ছে যে, শুধুমাত্র ঘাটতি পূরণ করবে। ঘাটতির পরের পাথরগুলি পুনরায় মারা আবশ্যক নয়। কারণ, অজ্ঞতা বা ভুলে যাওয়ার কারণে পর্যায়ক্রমের আবশ্যকতা থাকে না। আর এই ব্যক্তি দ্বিতীয় জামরার সময় জানত না যে, তার পূর্বের পাথর মারা বাকী আছে। তাই সে যেন অজ্ঞতা কিংবা ভুলে যাওয়ার অবস্থায় আছে। তাই আমরা তাকে বলব যে, কংকর মারায় যতটা ঘাটতি হয়েছে তা মেরে নাও। আর তার পরের কংকরগুলি পুনরায় মারা তোমার প্রতি আবশ্যক নয়।
এখানে আর একটি কথা বলা আবশ্যক যে, কংকরসমূহ একত্রি হওয়ার স্থানই হচ্ছে তা মারার স্থান, কংকর স্তম্ভেই মারতে হবে এমন ধারণা ঠিক নয়। তাই কোন ব্যক্তি স্তম্ভে পাথর না মেরে হাওযে পাথর নিক্ষেপ করলেই যথেষ্ট। আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।
প্রশ্ন ১০: কোন হাজী যদি জলদী করার নিয়তে মিনা থেকে ১২ যিলহাজ্জ সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বেই বের হয়ে পড়ে, কিন্তু তার মিনায় কিছু কাজ থাকার কারণে সূর্য অস্ত হওয়ার পরে ফিরে আসতে চায় তাহলে কি সে এভাবে হাজ্জ করে যেতে পারবে?
উত্তর ১০: হ্যাঁ, সে জলদী করে যেতে পারবে; কারণ, সে তার হাজ্জের কার্যাবলী সম্পূর্ণ করে ফেলেছে। আর কাজের জন্য তার মিনায় ফিরে আসায় কোন অসুবিধা নেই। কেননা সে তার নিজ কাজের উদ্দেশ্যে মিনায় ফিরে এসেছে, হাজ্জের কাজের জন্য ফিরে আসেনি।
প্রশ্ন ১১: কোন ব্যক্তি যদি মীক্বাত থেকে হাজ্জের ইহরাম করার পর মক্কার নিকটবর্তী হলে চেক পয়েন্টে বাধাগ্রস্ত হয়; কারণ, তার নিকট হাজ্জের অনুমতিপত্র ছিল না। এমতাবস্থায় তার বিধান কি?
উত্তর ১১: এমতাবস্থায় তার বিধান হচ্ছে যে, সে মক্কায় প্রবেশ অসম্ভব হওয়ার কারণে বাধাপ্রপ্ত। অতএব সে যে স্থানে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে সেখানেই একটি হাদী (কুরবানী) যবহ করবে। অতঃপর ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবে। তারপর যদি তার এই হাজ্জ ফরয হাজ্জ হয়ে থাকে তাহলে পরবর্তীতে তা আদায় করবে। তা কাযা বলে গণ্য হবে না। আর যদি তা ফরয হাজ্জ না হয়, তাহলে প্রাধান্যযোগ্য মতে তার কোন গোনাহ হবে না। কারণ, যে সব সাহাবীগণ হুদায়বিয়া নামক স্থানে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তাদেরকে নাবী (সা.) সেই উমরাহ্ কাযা করার নির্দেশ দেননি। আর আল্লাহর কিতার কুরআনুল কারীমে এবং তাঁর রসূলের কোন হাদীসে এমন দলীল-প্রমাণ নেই যে, হাজ্জ বা উমরায় বাধাপ্রাপ্ত ব্যক্তির প্রতি তা কাযা করা ওয়াজিব। মহান আল্লাহ শুধু এতটুকু বলেছেন:
﴿وَأَتِمُّواْ الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلّهِ فَإِنْ أُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ﴾
আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে হজ্জ ও উমরা পূর্ণ কর, কিন্তু যদি তোমরা বাধাগ্রস্ত হও, তবে যা সম্ভব কুরবানী দিবে।[4]
এছাড়া আর কোন কিছু উল্লেখ করেননি। তবে উমরাতুল কাযাকে এজন্য উমরাতুল কাযা বলা হয় যে, নাবী (সা.) কুরায়শ কাফিরদের সঙ্গে পরের বছর উমরা করার চুক্তি করেছিলেন। আরবী ভাষায় কাযা চুক্তিও অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এখানে কাযার অর্থ ছুটে যাওয়া বিষয় সম্পূর্ণ করা নয়।
[2]. সূরা আল-বাক্বারা ২:১৮৫
[3]. সহীহ: সুনানুল কুবরা বাইহাকী ৯৫২৪।
[4]. সূরা আল-বাকারা ২ঃ১৯৬