ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
নবী-রাসূলগণের দা‘ওয়াতী মূলনীতি ৩। মানব জীবনে ইসলামের প্রয়োজনীয়তা (حاجة البشرية إلى الإسلام) মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আত-তুওয়াইজিরী
খ. আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার মূল্য (قيمة الدنيا بالنسبة للآخرة)

পাহাড়ের সাথে ক্ষুদ্র বস্ত্ত এবং সমুদ্রের সাথে এক বিন্দু পানির সম্পর্ক যেমন, আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার সম্পর্ক তেমনই। দুনিয়া ধ্বংসশীল আর আখেরাত চিরস্থায়ী। আল্লাহ তা‘আলা ও তার রাসূল দুনিয়ার তুলনায় আখেরাতের মূল্য স্পষ্ট ও পরিপূর্ণভাবে বর্ণনা করেছেন। নিম্নে এ সম্পর্কে বর্ণনা করা হলোঃ

১. সত্তাগতভাবে দুনিয়ার মূল্য (قيمة الدنيا الذاتية): আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

وَمَا هَذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَهْوٌ وَلَعِبٌ وَإِنَّ الدَّارَ الْآخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ

‘আর এ দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং নিশ্চয় আখেরাতের নিবাসই হলো প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত’ (সূরা আল-‘আনকাবূত: ৬৪)।

২. সময়ের দিক থেকে দুনিয়ার মূল্য (قيمة الدنيا الزمنية:):

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَا لَكُمْ إِذَا قِيلَ لَكُمُ انْفِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ اثَّاقَلْتُمْ إِلَى الْأَرْضِ أَرَضِيتُمْ بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الْآخِرَةِ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا قَلِيلٌ

‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কি হল, যখন তোমাদের বলা হয়, আল্লাহর রাস্তায় (যুদ্ধে) বের হও, তখন তোমরা মাটি জড়িয়ে ধর? তবে কি তোমরা আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে সন্তুষ্ট হলে? অথচ দুনিয়ার জীবনের ভোগ-সামগ্রী আখেরাতের তুলনায় একেবারেই নগণ্য’ (সূরা আত-তাওবা: ৩৮)।

৩. পরিমাপ গত দিক থেকে দুনিয়ার মূল্য (قيمة الدنيا بالكيل:):

عَنِ المُسْتَوْرِد أَخَا بَنِي فِهْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -: وَاللهِ مَا الدُّنْيَا فِي الآخِرَةِ إِلاَّ مِثْلُ مَا يَجْعَلُ أَحَدُكُمْ إِصْبَعَهُ هَذِهِ -وَأَشَارَ يَحْيَى بِالسَّبَّابَةِ- فِي اليَمِّ، فَلْيَنْظُرْ بِمَ تَرْجِعُ؟. أخرجه مسلم برقم (2858)

বানূ ফিহরের ভাই মুসতাওরিদ হতে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: আল্লাহর শপথ! ইহকাল-পরকালেন তুলনা অতটুকুই, যেমন তোমাদের কেউ তার এ আঙ্গুলটি সমুদ্রে পানিতে ভিজিয়ে দেখল যে, কতটুকু পরিমাণ এতে পানি লেগেছে। বর্ণনাকারী ইয়াহইয়া এ সময় শাহাদাত আঙ্গুলের দ্বারা ইঙ্গিত করেছেন’(ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৫৮)।

৪. অর্থ সম্পদের দিক থেকে দুনিয়ার মূল্য (قيمة الدنيا بالدراهم):

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِاللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - مَرَّ بِالسُّوقِ دَاخِلاً مِنْ بَعْضِ العَالِيَةِ، وَالنَّاسُ كَنَفَتَهُ فَمَرَّ بِجَدْيٍ أَسَكَّ مَيِّتٍ فَتَنَاوَلَهُ فَأَخَذَ بِأُذُنِهِ، ثُمَّ قَالَ: «أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنَّ هَذَا لَهُ بِدِرْهَمٍ؟» فَقَالُوا: مَا نُحِبُّ أَنَّهُ لَنَا بِشَيْءٍ وَمَا نَصْنَعُ بِهِ قَالَ: «أَتُحِبُّونَ أَنَّهُ لَكُمْ؟» قَالُوا: وَاللهِ لَوْ كَانَ حَيّاً كَانَ عَيْباً فِيهِ لأَنَّهُ أَسَكُّ، فَكَيْفَ وَهُوَ مَيِّتٌ فَقَالَ: «فَوَاللهِ لَلدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللهِ مِنْ هَذَا عَلَيْكُمْ». أخرجه مسلم برقم (2957)

জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। একদিন রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আলিয়া অঞ্চল থেকে মদীনায় আসার পথে এক বাজার দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এ সময় রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উভয় পাশে বেশ লোকজন ছিল। অতঃপর তিনি ক্ষুদ্র কান বিশিষ্ট একটি মৃত বকরীর বাচ্চার পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে তার কাছে গিয়ে এর কান ধরে বললেন, ‘তোমাদের কেউ কি এক দিরহাম দিয়ে এটা ক্রয় করতে আগ্রহী’। তখন উপস্থিত লোকেরা বললেন, কোন কিছুর বদৌলতে আমরা এটা নিকে আগ্রহী নই এবং এটি নিয়ে আমরা কি করব? তখন রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: ‘বিনা পয়সায় তোমরা কি সেটা নিতে আগ্রহী?’ তারা বললেন, এ যদি জীবিত হত, তবুও তো এটা ত্রুটিযুক্ত। কেননা এর কান ছোট। আর এখন সেটা তো মৃত, আমরা কিভাবে তা গ্রহণ করব? অতঃপর তিনি বললেন, ‘আল্লাহর শপথ! এটা তোমাদের কাছে যতটা নগণ্য, আল্লাহর কাছে দুনিয়া এর তুলনায় আরও বেশী নগণ্য’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৫৭)।


৫. আয়তনের দিক থেকে দুনিয়ার মূল্য (قيمة الدنيا بالمساحة):

عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قالَ: قالَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -: «مَوْضِعُسَوْطٍ فِي الجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا». متفق عليه، أخرجه البخاري برقم (3250) , واللفظ له، ومسلم برقم (1881)

সাহল ইবনু সা‘দ আস্-সা‘ঈদী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘জান্নাতে চাবুক পরিমাণ সামান্য জায়গাও দুনিয়া এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে, তার থেকে উত্তম’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩২৫০, ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৮১, হাদীছের শব্দ ইমাম বুখারী কর্তৃক চয়নকৃত)।

৬. উপভোগের দিক থেকে দুনিয়ার মূল্য:(قيمة الدنيا المتعية)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

قُلْ مَتَاعُ الدُّنْيَا قَلِيلٌ وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ لِمَنِ اتَّقَى وَلَا تُظْلَمُونَ فَتِيلًا

‘তুমি বল, দুনিয়ার সুখ সামান্য। আর যে তাকওয়া অবলম্বন করে, তার জন্য আখেরাত উত্তম এবং তোমাদের প্রতি সূতা পরিমাণ যুলমও করা হবে না’ (সূরা আন-নিসা: ৭৭)।

৭. ব্যবসায়িকভাবে দুনিয়ার মূল্য: (قيمة الدنيا التجارية):

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

لَا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي الْبِلَادِ * مَتَاعٌ قَلِيلٌ ثُمَّ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمِهَادُ

‘যারা কুফরী করেছে, নগরসমূহে তাদের বিচরণ তোমাকে যেন ধোঁকায় না ফেলে। (এগুলি) অল্প ভোগ্যসামগ্রী। এরপর তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম আর তা কতইনা মন্দ বিছানা’(সূরা আলে ইমরান: ১৯৬-১৯৭)।