সংজ্ঞা : ‘গোসল’ (الغُسْلُ) অর্থ ধৌত করা। শারঈ পরিভাষায় গোসল অর্থ : পবিত্রতা অর্জনের নিয়তে ওযূ করে সর্বাঙ্গ ধৌত করা। গোসল দু’প্রকার : ফরয ও মুস্তাহাব।
(১) ফরয : ঐ গোসলকে বলা হয়, যা করা অপরিহার্য। বালেগ বয়সে নাপাক হ’লে গোসল ফরয হয়। যেমন- আল্লাহ বলেন, وَ إِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْا ‘যদি তোমরা নাপাক হয়ে থাক, তবে গোসল কর’ (মায়েদাহ ৬)।
(২) মুস্তাহাব : ঐ গোসলকে বলা হয়, যা অপরিহার্য নয়। কিন্তু করলে নেকী আছে। যেমন- জুম‘আর দিনে বা দুই ঈদের দিনে গোসল করা। সাধারণ গোসলের পূর্বে ওযূ করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সাইয়িদ সাবিক্ব একে ‘মানদূব’ (পসন্দনীয়) বলেছেন।[62]
গোসলের পদ্ধতি : ফরয গোসলের জন্য প্রথমে দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুবে ও পরে নাপাকী ছাফ করবে। অতঃপর ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ছালাতের ওযূর ন্যায় ওযূ করবে। অতঃপর প্রথমে মাথায় তিনবার পানি ঢেলে চুলের গোড়ায় খিলাল করে ভালভাবে পানি পৌঁছাবে। তারপর সারা দেহে পানি ঢালবে ও গোসল সম্পন্ন করবে। [63]
জ্ঞাতব্য : (১) গোসলের সময় মেয়েদের মাথার খোপা খোলার দরকার নেই। কেবল চুলের গোড়ায় তিনবার তিন চুল্লু পানি পৌঁছাতে হবে। অতঃপর সারা দেহে পানি ঢালবে। [64]
(২) রাসূল (ছাঃ) এক মুদ্দ (৬২৫ গ্রাম) পানি দিয়ে ওযূ এবং অনধিক পাঁচ মুদ্দ (৩১২৫ গ্রাম) বা প্রায় সোয়া তিন কেজি পানি দিয়ে গোসল করতেন। [65] প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি অপচয় করা ঠিক নয়।
(৩) নারী হৌক পুরুষ হৌক সকলকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পর্দার মধ্যে গোসল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।[66]
(৪) বাথরুমে বা পর্দার মধ্যে বা দূরে লোকচক্ষুর অন্তরালে নগ্নাবস্থায় গোসল করায় কোন দোষ নেই।[67]
(৫) ওযূ সহ গোসল করার পর ওযূ ভঙ্গ না হ’লে পুনরায় ওযূর প্রয়োজন নেই।[68]
(৬) ফরয গোসলের পূর্বে নাপাক অবস্থায় পবিত্র কুরআন স্পর্শ করা যাবে না। তবে মুখে কুরআন পাঠ করা এবং মসজিদে প্রবেশ করা জায়েয আছে।[69] সাধারণ অপবিত্রতায় কুরআন স্পর্শ করা বা বহন করা জায়েয আছে। [70]
মুস্তাহাব গোসল সমূহ :
(১) জুম‘আর ছালাতের পূর্বে গোসল করা।[71]
(২) মোর্দা গোসল দানকারীর জন্য গোসল করা।[72]
(৩) ইসলাম গ্রহণের সময় গোসল করা।[73]
(৪) হজ্জ বা ওমরাহর জন্য ইহরাম বাঁধার পূর্বে গোসল করা।[74]
(৫) আরাফার দিন গোসল করা।[75]
(৬) দুই ঈদের দিন সকালে গোসল করা।[76]
[63] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৩৫।
[64] . মুসলিম, মিশকাত হা/৪৩৮।
[65] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, ইরওয়াউল গালীল হা/১৩৯; চার মুদ্দে এক ছা‘ হয়। ইরওয়া, উক্ত হাদীছের টীকা ১/১৭০ পৃঃ; আবুদাঊদ হা/৯৬।
[66] . আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৪৭।
[67] . মুসলিম হা/৩৩৯; বুখারী হা/২৭৮; ঐ, মিশকাত হা/৫৭০৬-০৭; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫৮।
[68] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৪৫।
[69] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫১-৫২।
[70] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪৩।
[71] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৩৭-৩৯, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘মাসনূন গোসল’ অনুচ্ছেদ-১১।
[72] . ইবনু মাজাহ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৫৪১।
[73] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৫৪৩।
[74] . দারাকুৎনী, হাকেম, ইরওয়াউল গালীল হা/১৪৯, ১/১৭৯ পৃঃ।
[75] . বায়হাক্বী, ইরওয়া হা/১৪৬, ‘ফায়েদা’ দ্রষ্টব্য; নায়ল ১/৩৫৭।
[76] . বায়হাক্বী, ইরওয়া হা/১৪৬, ‘ফায়েদা’ দ্রষ্টব্য; নায়ল ১/৩৫৭।