ব্যাখ্যা: (الأعياد) আল-আ‘ইয়াদ শব্দটি (عيد) ঈদ (উৎসব) এর বহুবচন।
যা পুনঃপুনঃ করা হয় ও ফিরে আসে সেটাই হলো ঈদ। তা দু‘প্রকার:
(ক) মৌসুমি উৎসব (عيد زماني): যেমন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদ্বহা।
(খ) স্থানগত উৎসব (عيد مكاني): যেখানে মানুষ বছর ব্যাপী অথবা সপ্তাহ অথবা সারা মাস ধরে ইবাদতের উদ্দেশ্যে একত্রিত হয় সেটাই হলো স্থানগত উৎসব।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لا تجعلوا قبري عيداً يعني: مكاناً للاجتماع حوله، والعكوف حوله، والتردد عليه، وصلوا عليّ حيث كنتم، فإن صلاتكم تبلغني
আমার কবরকে উৎসবে পরিণত করিও না। অর্থাৎ চতুর পার্শ্বে একত্রিত হওয়া, আঁকড়ে থাকা ও শোরগোল করার জন্য কবরস্থানকে নির্ধারণ করিও না। তোমরা যেখানেই থাক আমার উপর দরূদ পাঠ কর। তোমাদের দরূদ আমার কাছে পৌঁছে।[1]
তাই কবরের পাশে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরূদ পাঠ করার কোন রীতি নেই। বরং পূর্ব অথবা পশ্চিম দিগন্তে যেখানেই থাক রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরূদ পাঠ করবে। অর্থাৎ যে কোন জায়গা থেকে তোমরা দরূদ পাঠ কর, তার কাছে তা পৌঁছে যায়। অনর্থক বেশি বেশি কবর যিয়ারত করা ও কবরের পাশে বসা উৎসবের অন্তর্ভুক্ত। এটা শিরকের দিকে ধাবিত করে। তাই জাহিলরা নেকলোকদের কবরকে উৎসব হিসাবে গ্রহণ করে। তারা কবরের চারপাশে একত্রিত হয়ে অবস্থান করে। বর্তমানে সব জায়গা থেকে বেদুঈন ও অন্যান্যদের কবরের নিকট যিয়ারত কারীরা আসে এবং কবরের পার্শ্বে তাবু টানিয়ে বসে থাকে। সেখানে তারা পশু যবেহ করে আর অনেক দিন যাবত কবরের পার্শ্বে থেকে যায়। এটাই হলো জাহিলী দীন।
যেহেতু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবরের পার্শ্বে একত্রিত হয়ে বসা এবং সেখানে শোরগোল করা নিষেধ; তাই অন্যের কবরের পার্শ্বে এমনটি করা কিভাবে বৈধ হতে পারে? কেননা, এটি শিরকের মাধ্যম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলো যে, সে বুওয়ানা নামক স্থানে উট কুরবানী করার মানত করেছে এ ব্যাপারে তার মতামত কি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন,
هل كان فيها وثن من أوثان الجاهلية يعبد. قالوا: لا، قال: هل كان فيها عيد من أعيادهم – أي اجتماع – يجتمعون فيه؟ قالوا: لا، قال: أوف بنذرك، فإنه لا وفاء لنذر في معصية الله، ولا فيما لا يملك ابن آدم
সেখানে কি জাহিলদের কোন মূর্তি আছে যার পূজা করা হয়? তারা বলল, নেই। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, সেখানে কি তাদের কোন উৎসব পালন করা হয়? অর্থাৎ জাহিলরা কি সেখানে একত্রিত হয়? তারা বলল, হয় না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা নাহলে তোমার মানত পূর্ণ কর। কেননা, আল্লাহর অবাধ্যতায় কোন মানত পূর্ণ করার বিধান নেই। আর আদম সন্তান যে বিষয়ের মালিক নয় তা পূর্ণ করারও নিয়ম নেই।[2]
প্রমাণ: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা হলো কবরে কি জাহিলদের কোন উৎসব হয়? অর্থাৎ স্থানগত উৎসব হয় কিনা? এ কথাই প্রমাণ করে যে, ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট কোন স্থান নির্ধারণ করা বৈধ নয়। তবে আল্লাহ ও তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নির্ধারণ করেছেন তা ব্যতীত। যেমন: মাসজিদ ও হাজ্জের নিদর্শনসমূহ, এছাড়া পৃথিবীর সব জায়গা সমান। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
جعلت لي الأرض مسجداً وطهوراً
যমীনকে আমার জন্য পবিত্র ও ছ্বলাত আদায়ের উপযোগী করা হয়েছে।[3]
>[2]. ছ্বহীহ: আবূ দাউদ হা/৩৩১৩।
[3]. ছ্বহীহ বুখারী, হা/৩৩৫, ৪৩৮, ছ্বহীহ মুসলিম, হা/৫২১, ৫২২,৫২৩।