ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলা নিজেকে হেকমত-তাৎপর্যের সাথে গুনান্বিত করেছেন যে, তিনি প্রজ্ঞাময়। আর (الحكمة) হেকমত-প্রজ্ঞা হলো কোন জিনিসকে তার স্ব স্থানে রাখা। তাই যিনি কোন বিষয়-বস্তুকে যথাস্থানে রাখেন তিনিই প্রজ্ঞাময়। আল্লাহ তা‘আলা নিজেকে হেকমতের সাথে হাকীম বা প্রজ্ঞাময় গুনান্বিত করেছেন। কারণ হাকীম অর্থ পূর্ণ প্রজ্ঞার অধিকারী। তাই সৃষ্টিকুল হেকমতের উপর নির্মিত। আল্লাহ তা‘আলা হেকমত ছাড়া অনর্থক কোন জিনিস সৃষ্টি করেন না। তিনি আকাশ-জমিন, পাহাড়-পর্বত, জীন-মানব, পশু-পক্ষি সবকিছুই হেকমতের সাথেই সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি জগতের পূর্ণাঙ্গতা ও ফলাফল নিয়ে গভিরভাবে চিন্তা করলে আল্লাহ তা‘আলার হেকমত বুঝা যায়। আর এ সৃষ্টি জগতের স্রষ্টা প্রজ্ঞাময়, যিনি পূর্ণ প্রজ্ঞার অধিকারী তাকে চেনা যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(أَعْطَى كُلَّ شَيْءٍ خَلْقَهُ ثُمَّ هَدَى) [طه: 50]
যিনি সকল বস্তুকে তার আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর সঠিক পথ নির্দেশ করেছেন (সূরা ত্বা-হা ২০:৫০)। তিনি আরোও বলেন,
(وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاءَ وَالْأَرض وَمَا بَيْنَهُمَا بَاطِلاً ذَلِكَ ظَنُّ الَّذِينَ كَفَرُوا فَوَيْلٌ لِلَّذِينَ كَفَرُوا مِنَ النَّارِ) [ص: 27]
আর আসমান, যমীন এবং এ দু’য়ের মধ্যে যা আছে তা আমি অনর্থক সৃষ্টি করিনি। এটা কাফিরদের ধারণা, সুতরাং কাফিরদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের দুর্ভোগ (সূরা ছোয়াদ ৩৮:২৭)।
আল্লাহ তা‘আলার সকল সৃষ্টি, তার আদেশ, নিষেধ ও শরী‘আতের ব্যাপারে তিনি প্রজ্ঞাময়। আর যে বিষয়ে নিশ্চিত ক্ষতি রয়েছে অথবা ক্ষতির সম্ভাবনা আছে সে ব্যাপারেই তিনি নিষেধ করেন। পক্ষান্তরে, যে বিষয়ে নিশ্চিত ও সম্ভাব্য কল্যাণ রয়েছে সে ব্যাপারে তিনি আদেশ করেন। আল্লাহ তা‘আলার আরোও হেকমত হলো তিনি সৃষ্টি জগতের হিসাব সংরক্ষণ করেন, অতঃপর ইহসানকারীর ইহসান এবং পাপীর পাপ অনুযায়ী তিনি প্রতিদান দেন। তিনি মানুষের প্রত্যেক কর্মের বিনিময় নির্ধারণ করে ছেড়ে দিয়েছেন। অতঃপর তিনি কর্মের প্রতিফল না দিলে তা হবে তার হেকমত বিরোধী। এ কারণে তিনি বলেন,
(وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاءَ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا لاعِبِينَ) [الأنبياء:16]
আসমান-যমীন ও তাদের মাঝখানে যা কিছু আছে তার কোন কিছুই আমি খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি (সূরা আম্বিয়া ২১:১৬)। তিনি আরোও বলেন,
(وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاءَ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَاطِلاً ذَلِكَ ظَنُّ الَّذِينَ كَفَرُوا فَوَيْلٌ لِلَّذِينَ كَفَرُوا مِنَ النَّارِ) [ص:27]
আর আসমান, যমীন এবং এ দু’য়ের মধ্যে যা আছে তা আমি অনর্থক সৃষ্টি করিনি। এটা কাফিরদের ধারণা, সুতরাং কাফিরদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের দুর্ভোগ (সূরা সা‘দ ৩৮:২৭)।
যারা পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে তাদেরকে তিনি প্রত্যাখ্যান করে বলেন,
(أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثاً وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لا تُرْجَعُونَ) [المؤمنون:115]
তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে কেবল অনর্থক সৃষ্টি করেছিলাম এবং তোমরা আমার দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে না?’ (সূরা মু‘মিনিন ২৩:১১৫)।
(أَيَحْسَبُ الْأِنْسَانُ أَنْ يُتْرَكَ سُدىً) [القيامة : 36]
মানুষ কি মনে করে যে, তাকে এমনি ছেড়ে দেয়া হবে? (সূরা কিয়ামাহ ৭৫:৩৬)।
অর্থাৎ আদেশও দেয়া হবে না, নিষেধও করা হবে না, আবার প্রতিদান ও দিবেন না?! জাহিলরা আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টি ও কর্মের হেকমত অস্বীকার করে। আশা‘ইরা ও মু‘তাযিলারাও আল্লাহ তা‘আলার কর্মের হেকমত অস্বীকার করে। আশা‘ইরা আল্লাহ তা‘আলার কর্মের হেকমত অস্বীকার করে বলে, আল্লাহ তা‘আলা প্রজ্ঞার সাথে কোন কিছু করেন না। বরং তার ইচ্ছা প্রকাশের জন্যই কোন কিছু সৃষ্টি করেন, হেকমতের জন্য নয়। কেননা, হেকমত অর্থ হলো কোন উদ্দেশ্যে কর্ম সম্পাদন করা। আর আল্লাহ তা‘আলা সকল উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত। আর হেকমত তার উপর প্রভাবিত হলে এ কারণেই তখন সবকিছু সৃষ্টি বলে গণ্য হবে। তাই আল্লাহ তা‘আলা কেবল ইচ্ছা ও কল্পনার মাধ্যমেই সব কিছু সৃষ্টি করেন, হেকমতের জন্য নয়।
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলাকে বিভিন্ন উদ্দেশ্য হতে তার পবিত্রতা বজায় রাখার জন্য ধারণা বশতঃ তার কর্ম ও শরী‘আতে নিহীত হেকমতকে তারা অস্বীকার করে। আর এ কারণেই তারা বলে, কুফরী, ফাসেকী ও অবাধ্যতার নির্দেশ দেয়াও আল্লাহর জন্য বৈধ। আর আনুগত্য, ছ্বলাত প্রতিষ্ঠা, আত্মীয় স্বজনের প্রতি দয়া প্রদর্শন এবং ভাল কাজের আদেশ করা হতেও তিনি নিষেধ করতে পারেন। কেননা, তিনি যা চান তাই করতে পারেন। এ ব্যাপারে আমরা তাদেরকে বলবো, আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন তবে তিনি হেকমত ছাড়া কোন কিছু করেন না। তারা আরোও বলে, কাফিরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহ তা‘আলার জন্য বৈধ। আর মু‘মিন-মুত্তাক্বিকে জাহান্নামে প্রবেশ করানোও তার জন্য বৈধ।
কেননা এ বিষয় কেবল তার দিকেই ফিরে আসে। কোন কিছুই তাকে আদেশ করতে পারে না। আমরা বলবো, এ ধরণের কথা-বার্তা বাতিল যা আল্লাহ তা‘আলার হেক্বমতের সাথে মানানসই নয়। মহান আল্লাহ বলেন,
(أَمْ نَجْعَلُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَالْمُفْسِدِينَ فِي الْأَرْضِ أَمْ نَجْعَلُ الْمُتَّقِينَ كَالْفُجَّارِ) [ص : 28]
যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে আমি কি তাদেরকে যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের সমতুল্য গণ্য করব? নাকি আমি মুত্তাকীদেরকে পাপাচারীদের সমতুল্য গণ্য কর? (সূরা ছ্বদ ৩৮:২৮)। তিনি আরো বলেন,
(أَمْ حَسِبَ الَّذِينَ اجْتَرَحُوا السَّيِّئَاتِ أَنْ نَجْعَلَهُمْ كَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَوَاءً مَحْيَاهُمْ وَمَمَاتُهُمْ سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ) [الجاثية: 21]
না কি যারা দুস্কর্ম করেছে তারা মনে করে যে, জীবন ও মৃত্যুর ক্ষেত্রে আমি তাদের এ সব লোকদের সমান গণ্য করব যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে? তাদের বিচার কতই না মন্দ! (সূরা জাছিয়া ৪৫:২১)।
সুতরাং যারা এ সব কথা রচনা করে এবং আল্লাহ তা‘আলাকে মন্দ ও পাপ সংক্রান্ত ব্যাপারে গুণান্বিত করে তাদের রীতিই হচ্ছে জাহিলী রীতি। আর আশা’ইরা ও অন্যান্য দল কর্তৃক আল্লাহ তা‘আলার হেকমতকে অস্বীকার করা থেকে আমরা আল্লাহ তা‘আলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।