ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
শারহু মাসাইলিল জাহিলিয়্যাহ ১৫. মিথ্যা অজুহাত পেশ করে হক্ব গ্রহণ না করা শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
মিথ্যা অজুহাত পেশ করে হক্ব গ্রহণ না করা

আল্লাহ তা‘আলা যা দিয়েছেন তা না বুঝেই তার অনুসরণ থেকে বিরত থাকার অজুহাত পেশ করা। আল্লাহর বাণী:

(وَقَالُوا قُلُوبُنَا غُلْفٌ) (يَا شُعَيْبُ مَا نَفْقَهُ كَثِيراً مِمَّا تَقُولُ

আর তারা বলল, আমাদের অন্তরসমূহ আচ্ছাদিত (সূরা বাক্বারাহ ২:৮৮)। তারা বলল, হে শু‘আইব, তুমি যা বল, তার অনেক কিছুই আমরা বুঝি না (সূরা হুদ ১১:৯১)।

আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করেছেন। আর আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন যে, তাদের কুফরীর কারণেই তারা বিমুখ হয়েছে।

.........................................

ব্যাখ্যা: অর্থাৎ তারা হক্ব না বুঝার কারণে তা কবুল করতে অজুহাত পেশ করে। যেমন মহান আল্লাহ ইয়াহুদীদের ব্যাপারে উল্লেখ করেন, যখন তাদেরকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন তখন তারা বলেছিল,

(قُلُوبُنَا غُلْفٌ بَلْ لَعَنَهُمُ اللَّهُ بِكُفْرِهِمْ فَقَلِيلاً مَا يُؤْمِنُونَ) [البقرة: 88]

আর তারা বলল, আমাদের অন্তরসমূহ আচ্ছাদিত। বরং তাদের কুফরীর কারণে আল্লাহ তাদেরকে লা‘নত করেছেন। অতঃপর তারা খুব কমই ঈমান আনে (সূরা বাক্বারাহ ২:৮৮)।

(غُلْفٌ) অর্থাৎ অন্তরে আবরণ রয়েছে, তাতে রসূলের কথা পৌছবে না এবং তার কথায় তাদের অন্তর শান্তিও পাবে না। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার ব্যাপারে এ অজুহাতকে দলীল হিসাবে তারা গ্রহণ করেছে। এটিই আয়াতের প্রসিদ্ধ অর্থ।

আর দ্বিতীয় অর্থ হলো (وَقَالُوا قُلُوبُنَا غُلْفٌ) অর্থাৎ অন্তর জ্ঞানে পূর্ণ তাই কারো কথার প্রয়োজন নেই। তাদের ধারণায় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন প্রয়োজন নেই। আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যে, তারা যা বলে তা নিষ্প্রয়োজন। বরং প্রয়োজনীয়তা হলো আল্লাহ তা‘আলা তাদের কুফরীর কারণে তাদেরকে ভৎর্সনা করেন। অর্থাৎ কুফরীর কারণে তাদেরকে তার রহমত থেকে বিতাড়িত করে দূরে সরিয়ে দেন। কুফরীর কারণে তারা হক্ব গ্রহণ করতে পারে না। এখানে ‘ب’ পদটি সাবাব তথা ‘কারণ’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা তারা বুঝবে না কেননা তাকে তারা ভ্রূক্ষেপ করে না এবং তার কথায় মনোনিবেশও করে না। বিমুখতার কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য শাস্তি নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(فَلَمَّا زَاغُوا أَزَاغَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ) [الصف: 5]

অতঃপর তারা যখন বক্রপথ অবলম্বন করল, তখন আল্লাহ তাদের হৃদয়গুলোকে বক্র করে দিলেন। আর আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না (সূরা ছবাফ ৬১:৫)।

তাই যে হক্ব গ্রহণ করবে না আল্লাহ তা‘আলা তাকে বাতিলে নিমোজ্জিত করে পরীক্ষা করেন। এরপর অন্তর বিকৃত হওয়ার কারণে সে আর হক্ব গ্রহণ করে না। আমরা এ থেকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(بَلْ لَعَنَهُمُ اللَّهُ بِكُفْرِهِمْ فَقَلِيلاً مَا يُؤْمِنُونَ) [البقرة: 88]

বরং তাদের কুফরীর কারণে আল্লাহ তাদেরকে লা‘নত করেছেন। অতঃপর তারা খুব কমই ঈমান আনে (সূরা আল বাক্বারাহ ২:৮৮)।

(فَبِظُلْمٍ مِنَ الَّذِينَ هَادُوا حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ طَيِّبَاتٍ أُحِلَّتْ لَهُمْ وَبِصَدِّهِمْ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ كَثِيراً وَأَخْذِهِمُ الرِّبا وَقَدْ نُهُوا عَنْهُ وَأَكْلِهِمْ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ) [النساء: 160، 161]

সুতরাং ইয়াহূদীদের যুলমের কারণে আমি তাদের উপর উত্তম খাবারগুলো হারাম করেছিলাম, যা তাদের জন্য হালাল করা হয়েছিল এবং আল্লাহর রাস্তা থেকে অনেককে তাদের বাধা প্রদানের কারণে। আর তাদের সুদ গ্রহণের কারণে, অথচ তা থেকে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল এবং অবৈধভাবে মানুষের সম্পদ খাওয়ার কারণে (সূরা আন নিসা ৪:১৬০,১৬১)।

ইয়াহুদীদের ব্যাপারে অন্তর বিমুখতার কথা এসেছে। তাদের কথা (قُلُوبُنَاغُلْفٌ) অর্থাৎ আমাদের অন্তর আচ্ছাদিত, কথাটি শুদ্ধ নয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলাই তাদের জন্য শাস্তিস্বরূপ অন্তরকে পরিবর্তন করেন। আর অন্তরের মৌলিকত্ব হলো তা পরিবর্তনের স্বভাব বজায় থাকা। স্বভাব অনুযায়ী তা হক্ব গ্রহণের ক্ষমতা রাখে। আর ফিতরাত (স্বভাব) বিকৃত হলে অন্তর হক্ব গ্রহণ করে না। অন্তর যেন জমিনের মতই, জমিন অকেজো হলে তা বিলে পরিণত হয়। তাতে ফসল উৎপন্ন হয় না। অনুরূপ অন্তরও অকেজো হলে তা হক্ব গ্রহণ করে না।

অনুরূপভাবে শুয়াইব (আলাইহিস সালাম) এর জাতিও বিকৃত। শুয়াইব (আলাইহিস সালাম) নাবীগণের মধ্যে বাগ্মীতায় পারদর্শি ও স্পষ্টভাষী ছিলেন। তার স্পষ্টভাষণ ও অলংকারপূর্ণ বক্তব্যে ও প্রভাবসম্পন্ন কথার জন্য তাকে নাবীগণের খতিব উপাধি দেয়া হয়। এ সত্ত্বেও তার জাতি বলতো, আল্লাহর বাণী:

(قَالُوا يَا شُعَيْبُ مَا نَفْقَهُ كَثِيراً مِمَّا تَقُولُ وَإِنَّا لَنَرَاكَ فِينَا ضَعِيفاً وَلَوْلا رَهْطُكَ لَرَجَمْنَاكَ وَمَا أَنْتَ عَلَيْنَا بِعَزِيزٍ) [هود: 91]

তারা বলল, হে শু‘আইব, তুমি যা বল, তার অনেক কিছুই আমরা বুঝি না। আর তোমাকে তো আমরা আমাদের মধ্যে দুর্বলই দেখতে পাচ্ছি। যদি তোমার আত্মীয়-স্বজন না থাকত, তবে আমরা তোমাকে অবশ্যই পাথর মেরে হত্যা করতাম। আর আমাদের উপর তুমি শক্তিশালী নও (সূরা হূদ ১১:৯১)।

তারা শুয়াইব আলাইহিস সালাম এর কথা বুঝতো না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বনী ইসরাঈলের মত তাদের অন্তর মহরাঙ্কিত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলার রীতি হলো যারা হক্ব থেকে অহংকার বশতঃ মুখ ফিরিয়ে নিবে, হক্ব পৌছার পরও তা গ্রহণ করবে না, আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তর বিকৃত করার মাধ্যমে শাস্তি স্বরূপ তাদেরকে পরীক্ষায় ফেলবেন।

অনুরূপভাবে কুরাইশ কাফিররা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কি বলেছিল?

(وَقَالُوا قُلُوبُنَا فِي أَكِنَّةٍ مِمَّا تَدْعُونَا إِلَيْهِ وَفِي آذَانِنَا وَقْرٌ وَمِنْ بَيْنِنَا وَبَيْنِكَ حِجَابٌ فَاعْمَلْ إِنَّنَا عَامِلُونَ) [فصلت: 5]

আর তারা বলে, তুমি আমাদেরকে যার প্রতি আহবান করছ সে বিষয়ে আমাদের অন্তরসমূহ আচ্ছাদিত, আমাদের কানের মধ্যে রয়েছে বধিরতা আর তোমার ও আমাদের মাঝে রয়েছে অন্তরায়, অতএব তুমি তোমার কাজ কর, নিশ্চয় আমরা (আমাদের) কাজ করব (সূরা ফুসসিলাত ৪১:৫)।

কাফিরদের পন্থা একই। রসূলগণের কথা না বুঝার কারণে তারা তাদের দাওয়াতের বিরোধিতা করে। এটা কি রসূলগণের দাওয়াত পৌঁছানোর ব্যর্থতা? না বরং কাফিরদের কুফরীর প্রবণতা, হক্ব থেকে বিমুখতা, হক্বের প্রতি মনোনিবেশ না করা ও কল্যাণ মূলক কাজে আগ্রহ না থাকারই ব্যর্থতা।