ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
শারহু মাসাইলিল জাহিলিয়্যাহ ১৩. বিদ্বান (আলিম) ও নেক লোকদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা শাইখ ড. ছলিহ ইবনে ফাওযান আল ফাওযান
বিদ্বান (আলিম) ও নেক লোকদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা

আলিম ও নেকলোকদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা জাহিলিয়্যাত। আল্লাহর বাণী:

(يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لا تَغْلُوا فِي دِينِكُمْ وَلا تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ إِلَّا الْحَقَّ) [النساء: 171]

হে কিতাবীগণ, তোমরা তোমাদের দীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহর উপর সত্য ছাড়া বলো না (সূরা আন নিসা ৪:১৭১)।

.......................................

ব্যাখ্যা: এটি একটি মারাত্নক বিষয়। (الغلو) এর আভিধানিক অর্থ: সীমা অতিক্রম করা (الزيادة عن الحد)। যেমন উদাহরণ স্বরূপ: যখন হাড়িতে পানিপূর্ণ হয়ে উথলিয়ে যায় তখন বলা হয় (غلا القدر) হাড়ি উথলিয়ে গেছে। (غلا السعر) অর্থাৎ ভালো কাজের সীমা অতিক্রম করা।

সুতরাং বাড়াবাড়ি (الغلو) হচ্ছে কোন জিনিসের অতিরিক্ততা ও ভাল বিষয়েরও সীমাতিক্রম করা। الزيادة والارتفاع عن الحد المعروف

শরীয়তের পরিভাষায় তা হচ্ছে কোন ব্যক্তিকে তার যথোপযুক্ত অবস্থান থেকে উপরের অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। যেমন নাবীগণ অথবা নেকলোকদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা, তাদের ক্ষমতাকে রব অথবা উপাস্যের পর্যায়ে তুলে ধরা। জাহিলরা বিভিন্ন ব্যক্তিকে বাড়াবাড়ি মূলক ক্ষমতাবান মনে করে তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার সাথে রব হিসাবে গ্রহণ করে। যেমন ইয়াহুদীরা উযাইর আলাইহিস সালাম এর ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করে তাকে আল্লাহর পুত্র সাব্যস্ত করেছে। আর মানুষের মধ্যে থেকে মারইয়ামের পুত্র ও তার রিসালাতের ব্যাপারে খ্রিষ্টানরা সীমালঙ্ঘন করে আল্লাহর পুত্র হিসাবে রবের পর্যায়ে নির্ধারণ করেছে।

অনুরূপভাবে নূহ আলাইহিস সালাম এর জাতি নেক লোকদের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করেছে। তারা নেক লোকদের মূর্তি তৈরি করার পর আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে রবের মর্যাদা স্বরূপ তাদের ইবাদত করতো।

(وَقَالُوا لا تَذَرُنَّ آلِهَتَكُمْ وَلا تَذَرُنَّ وَدّاً وَلا سُوَاعاً وَلا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسْراً) [نوح:23]

আর তারা বলে, ‘তোমরা তোমাদের উপাস্যদের বর্জন করো না; বর্জন করো না ওয়াদ, সুওয়া‘, ইয়াগূছ, ইয়া‘উক ও নাসরকে’ (সূরা নূহ ৭১:২৩)।

অর্থাৎ তাদেরকে তারা উপাস্য নির্ধারণ করতো। অনুরূপভাবে নূহ আলাইহিস সালাম এর জাতি ছাড়াও বর্তমানে মুশরিকদের বিভিন্ন সম্প্রদায় নেক লোকদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে। আর তারা নেক লোকদের কবর তাওয়াফ করে তাদের জন্য পশু উৎসর্গ করে, মানত করে, মৃতদের নিকট সাহায্য কামনা করে, সাহায্যের আবেদন তুলে ধরে ও তাদের নিকট অভাব অভিযোগের জন্য সমাধান তালাশ করে। তাই যারা ধৃষ্টতা দেখায় তারা এরূপ শিরকের দিকে ধাবিত হয়।

এ জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

لا تُطْرُوني كما أطرت النصارى ابن مريم" والإطراء هو: الغلو في المدح "إنما أنالا عبد، فقولوا: عبد الله ورسوله

তোমরা আমার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করিও না যেমন খ্রিষ্টানরা মারইয়ামের পুত্রকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছে। আর এখানে ধৃষ্টতা বলতে প্রশংসায় অতিরঞ্জন করা। আমি কেবল বান্দা নই বরং তোমরা বলো আল্লাহর বান্দা ও রসূল।[1]

নাবী ও নেকলোকদের বাড়াবাড়ি কিতাবধারী ও উম্মি (নিরক্ষর) লোকদেরকে শিরকে আকবারে (বড় শিরকে) লিপ্ত করে। মানুষদের জানা আবশ্যক নাবী ও নেকলোকদের ক্ষমতা কতটুকুন। তাহলে রসূলগণের রিসালাত সম্পর্কে জানা যাবে, নেকলোকদের সঠিক পন্থা ও আলেমদের ইলম সম্পর্কেও জানা যাবে যে তারা অন্যদের থেকে উত্তম। তারকারাজীর উপর চন্দ্রের যেমন মর্যাদা আবেদের উপর আলেমের মর্যাদা তেমনই। ফলে মানুষ তাদের উপযুক্ত মর্যাদা দিবে, তাদের মর্যাদার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করবে না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لا تَغْلُوا فِي دِينِكُمْ وَلا تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ إِلَّا الْحَقَّ إِنَّمَا الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُولُ اللَّهِ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَلا تَقُولُوا ثَلاثَةٌ) [النساء: 171]

হে কিতাবীগণ, তোমরা তোমাদের দীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহর উপর সত্য ছাড়া বলো না। মারইয়ামের পুত্র মাসীহ ঈসা কেবলমাত্র আল্লাহর রসূল এবং তাঁর কালিমা, যা তিনি প্রেরণ করেছিলেন মারইয়ামের প্রতি ও তাঁর পক্ষ হতে রূহ। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলগণের প্রতি ঈমান আন এবং বল না, তিন (সূরা নিসা ৪:১৭১)।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لا تَغْلُوا فِي دِينِكُمْ غَيْرَ الْحَقِّ وَلا تَتَّبِعُوا أَهْوَاءَ قَوْمٍ قَدْ ضَلُّوا مِنْ قَبْلُ وَأَضَلُّوا كَثِيراً وَضَلُّوا عَنْ سَوَاءِ السَّبِيلِ

বল, হে কিতাবীরা, সত্য ছাড়া তোমরা তোমাদের ধর্মের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করো না এবং এমন সম্প্রদায়ের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, যারা পূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে এবং সোজা পথ বিচ্যুত হয়েছে (সূরা আল-মায়েদা ৫:৭৭)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إياكم والغلو في الدين، فإنما أهلك من كان قبلكم الغلو في الدين

তোমরা দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা থেকে বিরত থাকো। কেননা দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ির কারণে তোমাদের পূর্ববর্তী জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে।[2]

তাই সৃষ্টির ব্যাপারে বাড়াবাড়ি বৈধ নয়। আর আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে যে অবস্থানে রেখেছেন তার উপর অতিরঞ্জন করাও বৈধ নয়। কেননা এটা আল্লাহ তা‘আলার সাথে শিরকের দিকে ধাবিত করে। অনুরূপভাবে আলেম এবং আবেদের ব্যাপারেও ধৃষ্টতা বৈধ নয়। ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَاباً مِنْ دُونِ اللَّهِ) [التوبة: 31]

তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পন্ডিতগণ ও সংসার-বিরাগীদেরকে রব হিসাবে গ্রহণ করেছে (সূরা আত-তাওবা ৯:৩১)।তাদের আলেম ও ইবাদতকারীদের নিয়ে তারা বাড়াবাড়ি করে। আর হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম করার ব্যাপারে ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানরা তাদেরকে সঠিক বলে বিশ্বাস করে। আর পবিত্র শরী‘আত বিকৃত করে।

>
[1]. ছ্বহীহ বুখারী হা/৩৪৪৫।

[2]. ছহীহ: নাসাঈ ৩০৫৭, ইবনে মাজাহ ৩০২৯, মুসনাদে আহমাদ ৪৩৭, ছহীহ জা২২৬৮০।