ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
শারহুল আক্বীদা আত্-ত্বহাবীয়া ২৯. নিশ্চয় মুহাম্মাদ (ﷺ) তার নির্বাচিত বান্দা, মনোনীত নাবী এবং পছন্দনীয় রসূল। ইমাম ইবনে আবীল ইয আল-হানাফী (রহিমাহুল্লাহ)
নাবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুজেযা সম্পর্কে কিছু কথা - ২

উহুদ যুদ্ধে মুমিনদের বিরুদ্ধে কাফেরদের জয়লাভ করার মধ্যে কী হিকমতে ইলাহী রয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা তা কুরআনুল কারীমে উল্লেখ করেছেন।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,

وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ إِنْ يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِثْلُهُ وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا وَيَتَّخِذَ مِنْكُمْ شُهَدَاءَ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ وَلِيُمَحِّصَ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا وَيَمْحَقَ الْكَافِرِينَ

‘‘আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে তোমরাই জয়ী হবে। তোমরা যদি আহত হয়ে থাকো, তবে তারাও তো তেমনি আহত হয়েছে। আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন ঘটিয়ে থাকি। এভাবে আল্লাহ্ জানতে চান, কারা ঈমানদার আর তিনি তোমাদের কিছু লোককে শহীদ হিসাবে গ্রহণ করতে চান। আর আল্লাহ্ অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেন না। আর এ কারণে আল্লাহ্ ঈমানদারদেরকে পাক-সাফ করতে চান এবং কাফেরদেরকে ধ্বংস করে দিতে চান’’। (সূরা আলে-ইমরান: ১৩৯-১৪১) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

أَحَسِبَ النَّاسُ أَن يُتْرَكُوا أَن يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ

‘‘লোকেরা কি মনে করেছে, আমরা ঈমান এনেছি কেবল এ কথা বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে, আর পরীক্ষা করা হবে না?’’ (সূরা আনকাবুত: ২) আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টি ও তার হিকমত সম্পর্কে অনুরূপ আরো অনেক আয়াত ও হাদীছ রয়েছে, যা বিবেক-বুদ্ধিকে হয়রান করে দেয়।

হিরাক্লিয়াসের প্রশ্নের মধ্যে আরো রয়েছে যে, আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, তিনি তোমাদেরকে কিসের আদেশ দেন? তুমি বলেছো যে, তিনি তোমাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদতের আদেশ দেন এবং তার সাথে কাউকে শরীক করতে নিষেধ করেন এবং মূর্তি পূজা করতে নিষেধ করেন। তোমাদেরকে ছলাতের আদেশ দেন, সত্য বলতে, পবিত্র থাকতে এবং আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার আদেশ করেন। সে সঙ্গে তিনি তোমাদের পূর্ব পুরুষগণ দ্বারা পূজিত বস্তুর পূজা করতে নিষেধ করেন। এগুলো নাবীদের গুণাবলী। আমি জানতাম যে, একজন নাবী আগমন করবেন। তবে আমি ধারণা করতাম না যে, তিনি তোমাদের মধ্য থেকেই হবেন। আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি তার কাছে যাই। আমি যদি রোমের রাজত্বের মালিক না হতাম, তাহলে আমি অবশ্যই তার কাছে চলে যেতাম। তোমার কথা যদি সত্য হয়, তাহলে অচিরেই তার রাজত্ব আমার এ দু’পা রাখার স্থান পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।

আবু সুফিয়ান বিন হারবকে উদ্দেশ্য করে হিরাক্লিয়াস উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন। আবু সুফিয়ান তখনো ছিল কাফের। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে সে তখনো কঠোর শত্রুতা ও ঘৃণা পোষণ করতো। আবু সুফিয়ান বলেন, হিরাক্লিয়াসের রাজ দরবার থেকে বের হওয়ার সময় আমি সঙ্গীদের সাথে বললাম, ইবনে আবী কাবশার (মুহাম্মাদের) ব্যাপারটি তো দেখছি অনেক বড় আকার ধারণ করেছে। রোমকদের সম্রাটও তাকে অনেক বড় করে দেখছে। আমি সবসময়ই বিশ্বাস করতাম যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দ্বীন জয়লাভ করবে। পরিশেষে আল্লাহ আমাদের মধ্যে ইসলাম ঢুকিয়ে দিলেন। আমি তখনো ইসলামকে অপছন্দ করতাম।

জেনে রাখা আবশ্যক যে, মানুষের অন্তরে অনেকগুলো বিষয়ের সমন্বয়ে যে বিশ্বাস অর্জিত হয়, তা থেকে কতিপয় বিষয় দ্বারা সেই পরিমাণ বিশ্বাস অর্জিত হয় না। বরং মানুষ যে পরিতৃপ্তি, কৃতজ্ঞতা, খুশী ও দুঃখ কষ্ট অনুভব করে, তা অনেকগুলো জিনিস একসাথে একত্রিত হওয়ার কারণেই অর্জিত হয়। তা থেকে কোনো কিছু বাদ পড়লে ঐ জিনিসগুলোর কতিপয়ের দ্বারা তা অর্জিত হয় না। বরং কতিপয়ের দ্বারা কেবল অপূর্ণ তৃপ্তি কিংবা আংশিক আনন্দ অথবা সামান্য দুঃখ কষ্ট অনুভব হয়।

কোনো খবরের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান ও বিশ্বাসের কথাটিও অনুরূপ। খবরে ওয়াহেদ বা একক ব্যক্তির সংবাদ দ্বারা এক প্রকার ধারণা অর্জিত হয়। অন্যজনের খবরের দ্বারা তা শক্তি অর্জন করে। পরিশেষে তা দ্বারা অকাট্য ইলম হাসিল হয়। এভাবে কোনো বিষয়ের প্রতি মানুষের ইলম বৃদ্ধি পায় এবং শক্তিশালী হয়। এমনি সত্যবাদী কিংবা মিথ্যাবাদী হওয়ার দলীলগুলো শক্তিশালী ও মজবুত হয়।

এভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা পৃথিবীতে তার নাবী-রসূল ও মুমিন বান্দাদেরকে যে কারামত ও সম্মান প্রদান করেছেন, তার প্রভাব ও প্রমাণ চিরস্থায়ী করে রেখেছেন। সে সঙ্গে কাফেরদের উপর যে আযাব ও শাস্তি নাযিল করেছেন, তাও চিরস্থায়ী হয়ে আছে। যেমন নূহ আলাইহিস সালামের জাতিকে মহাপস্নাবন দ্বারা পস্নাবিত করা, ফেরাউন ও তার বাহিনীকে ডুবিয়ে মারা ইত্যাদি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কুরআনের সূরা শুআরায় পরপর একাধিক নাবীর ঘটনা বর্ণনা করেছেন। যেমন মুসা আলাইহিস সালামের ঘটনা, ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ঘটনা, নূহ আলাইহিস সালামের ঘটনা এবং অন্যান্য নাবীদের ঘটনা। প্রত্যেক ঘটনার শেষে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُم مُّؤْمِنِينَ وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ

‘‘এ ঘটনার মধ্যে একটি বিরাট নিদর্শন রয়েছে। কিন্তু এদের অধিকাংশ মুমিন নয়৷ নিশ্চয় তোমার রব পরাক্রমশালী ও দয়াময়?’’ (সূরা শুআরা: ৬৭-৬৮)

মোট কথা, পৃথিবীতে এমন লোক রয়েছে, যারা বলে থাকে মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল! আরেক দল লোক তাদের অনুসরণ করেছে। আরেক দল লোক তাদের বিরোধীতা করেছে। আর আল্লাহ তা‘আলা তার রসূল ও মুমিনদেরকে সাহায্য করেছেন এবং তাদের পরিণাম ভালো করেছেন। তাদের শত্রুদেরকে শাস্তি দিয়েছেন। এ কথাগুলো সুস্পষ্টভাবে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। নাবী-রসূলদের অনুসারীদেরকে পুরস্কৃত করা এবং তাদের বিরোধীদের শাস্তি প্রদানের খবরগুলো অতীতের পারস্য সম্রাট এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের খবরাদির চেয়ে অধিক সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্যভাবেই বর্ণনা করা হয়। যেমন বুকরাত, জালিনুস, বাতলাইমুস, সুকরাত, আফলাতুন, এরিষ্টেটোল এবং তাদের অনুসারীদের খবরাদির চেয়ে নাবী-রসূল ও তাদের অনুসারীদের খবরাদি অধিক সুস্পষ্ট।

বর্তমানে আমরা যখন মুতাওয়াতির সূত্রে নাবী-রসূলদের অনুসারী এবং তাদের শত্রুদের খবরসমূহ জানতে পেরেছি, তখন আমরা নিশ্চিতভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছি যে, নাবী-রসূলগণই সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং সত্যবাদী ছিলেন। একাধিক মাধ্যম ও পদ্ধতিতেই আমরা এটি অবগত হতে পেরেছি।

(১) তারা তাদের জাতিকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তাদের অনুসারীগণ বিজয়ী হবে, তাদের শত্রুরা লাঞ্ছিত হবে এবং তাদের পরিণাম ভালো ও দীর্ঘস্থায়ী হবে।

(২) আল্লাহ তা‘আলা নাবী-রসূল ও তার অনুসারীদেরকে সাহায্য করেছেন এবং তাদের শত্রুদেরকে ধ্বংস করেছেন। যে অবস্থা ও পরিপ্রেক্ষিতে তা সংঘটিত হয়েছে যেমন ফেরাউনের ডুবে মরা, বন্যার মাধ্যমে নূহ আলাইহিস সালামের জাতি ধ্বংস হওয়া এবং তাদের অন্যান্য অবস্থা যে ব্যক্তি সঠিকভাবে তা বুঝতে পারবে, সে রসূলদের সত্যতা সম্পর্কে অবশ্যই জানতে পারবে।

(৩) নাবী-রসূলদের শরীয়াত এবং তার বিস্তারিত অবস্থা সম্পর্কে যারা জানতে পারবে, তাদের কাছে পরিষ্কার হবে যে, নাবী-রসূলগণই ছিলেন আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞানী। কোনো মিথ্যুক ও মূর্খদের দ্বারা এটি বুঝা সম্ভব নয়। নাবী-রসূলগণ যে মঙ্গল, রহমত, হেদায়াত, কল্যাণ এবং সৃষ্টির জন্য যেসব উপকারী উপদেশ নিয়ে এসেছেন ও তাদেরকে ক্ষতিকর পথ থেকে বিরত রাখার জন্য যেসব নির্দেশনা প্রদান করেছেন, সে সম্পর্কে যারা জানতে পারবে তারা জানতে সক্ষম হবে যে, তা এমন একজন দয়াবান, সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি দ্বারাই সম্ভব, যিনি সৃষ্টির জন্য কল্যাণ ও উপকার ছাড়া অন্য কিছু কামনা করেন না।

নাবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়াতের যেসব মুজেযা ও প্রমাণ রয়েছে, তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার স্থান এটি নয়। অন্যস্থানে তা আলোচনা করা হয়েছে। অনেক আলেম এ বিষয়ে স্বতন্ত্র কিতাব রচনা করেছেন। যেমন ইমাম বায়হাকী এবং অন্যান্য আলেমগণ এ বিষয়ে একটি মূল্যবান কিতাব লিখেছেন।

নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়াতকে অস্বীকার করা আল্লাহ তা‘আলার রুবুবীয়াতের মধ্যে আপত্তির শামিল। সে সঙ্গে তার প্রতি যুলুম ও অজ্ঞতার সম্বন্ধ করার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা তাদের কথার সম্পূর্ণ উর্ধ্বে। শুধু তাই নয়; বরং আল্লাহ তা‘আলাকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করা ছাড়া অন্য কিছু নয়। এ কথার বিস্তারিত ব্বিরণ এ যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি এক শ্রেণীর মানুষের নিকট সত্য নাবী না হয়ে থাকেন; বরং তারা যদি তাকে একজন যালেম শাসক মনে করে থাকে, তার অর্থ এ দাঁড়ায় যে, তার জন্য আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে এমন সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল, যার কারণে তিনি আল্লাহর নামে মিথ্যা রচনা করেছেন, কোনো কোনো জিনিসকে হালাল ও কোনো কোনো জিনিসকে হারাম করেছেন, ফরযসমূহ নির্ধারণ করেছেন, শরীয়তের বিধি-বিধান চালু করেছেন, পূর্বের শরীয়তসমূহ বাতিল করেছেন, বিরোধীদের গর্দান দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছেন, হত্যা করেছেন, তাদের নারীদেরকে দাসীতে পরিণত করেছেন, তাদের ধন-সম্পদকে গণীমত হিসাবে ব্যবহার করেছেন, শিশুদের গোলাম বানিয়েছেন এবং বাড়িঘর দখল করেছেন। এভাবেই তার জন্য পৃথিবীর বিজয় সম্পন্ন হয়েছে।

উপরোক্ত বিষয়ের সবগুলোই তিনি আল্লাহর হুকুম ও পছন্দ অনুযায়ী করেছেন বলে চালিয়ে দিয়েছেন, আল্লাহ তা‘আলা একটানা ২৩ বছর পর্যন্ত হকপন্থীদের উপর তার এরূপ অপকর্ম দেখেছেন, তার সমস্ত কাজ-কর্ম সমর্থন করেছেন, তাকে সাহায্য করেছেন, তার কাজকর্মকে সমুন্নত করেছেন এবং অলৌকিক ক্ষমতার মাধ্যমে তার জন্য বিজয়ের পথ সহজ করে দিয়েছেন। এমনটি হতেই পারে না। শুধু তাই নয়; আল্লাহ তা‘আলা তার অন্যায় দু‘আ কবুল করেছেন, তার শত্রুদেরকে ধ্বংস করেছেন এবং তার মর্যাদা উন্নীত করেছেন। এ রকম ধারণা তাদের পক্ষ হতে চরম মিথ্যাচার, আল্লাহর নামে অপবাদ ও যুলুম ছাড়া অন্য কিছু নয়। ঐ ব্যক্তির চেয়ে অধিক জালেম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহর নামে মিথ্যা রচনা করে, নাবীদের শরীয়াতকে বাতিল ও পরিবর্তন করে এবং আল্লাহর বন্ধুদেরকে হত্যা করে।

নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সত্য নাবী হিসাবে বিশ্বাস না করার অর্থ এও দাড়ায় যে, দীর্ঘদিন পর্যন্ত সত্যের পথিকদের বিরুদ্ধে তার জন্য আল্লাহর সাহায্য অব্যাহত ছিল, আল্লাহ তা‘আলা তার কাজের সমর্থন করেছেন, ডান হাত দিয়ে তাকে কঠোরভাবে পাকড়াও করেননি এবং তার ঘাড়ের রগ কেটে দেননি। এমন ধারণার ফলাফল এ দাড়ায় যে, এ সৃষ্টিজগতের কোনো স্রষ্টা, পরিচালক ও ব্যবস্থাপক নেই। নাউযুবিল্লাহ।

যদি এর কোনো প্রজ্ঞাবান ও ক্ষমতাবান ব্যবস্থাপক থাকতেন, তাহলে তাকে প্রতিহত করতেন, তাকে উপযুক্ত শাস্তি দিতেন এবং সৎকর্মশীলদের জন্য তাকে দৃষ্টান্ত স্বরূপ বানাতেন। যালেম রাজা-বাদশাহদের জন্য এ ছাড়া অন্য কিছু শোভনীয় নয়। সুতরাং যিনি রাজাধিরাজ এবং যিনি সর্বাধিক ন্যায় বিচারক, তিনি তাকে শাস্তি না দিয়ে ছাড়তে পারেন না।

মূলকথা হলো, আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মর্যাদাকে সমুন্নত করেছেন, তার দাওয়াতকে বিজয়ী করেছেন এবং সত্য নাবী হিসাবে সকল দেশের সকল মানুষের নিকট তার সাক্ষ্যকে প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে আমরা অস্বীকার করিনা যে, পৃথিবীতে অনেকেই নবুওয়াতের মিথ্যা দাবি করেছিল। এমনকি অনেকের শক্তিও অর্জিত হয়েছিল। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি এবং তারা দীর্ঘকাল নবুওয়াতের দাবির উপর টিকেও থাকতে পারেনি। বরং আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর তার রসূল এবং রাসূলের অনুসারীদেরকে শক্তিশালী করেছেন। তারা তাদেরকে সমূলে বিনাশ করে দিয়েছেন। নবুওয়াতের মিথ্যুক দাবিদারদের ব্যাপারে পূর্ব থেকে চলে আসা আল্লাহ তা‘আলার নীতি এটিই। কাফেররাও এ নীতি সম্পর্কে অবগত রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

أَمْ يَقُولُونَ شَاعِرٌ نَّتَرَبَّصُ بِهِ رَيْبَ الْمَنُونِ قُلْ تَرَبَّصُوا فَإِنِّي مَعَكُم مِّنَ الْمُتَرَبِّصِينَ

‘‘এসব লোক কি বলে যে, এ ব্যক্তি কবি, যার ব্যাপারে আমরা কালের আবর্তনের অপেক্ষা করছি। তাদেরকে বলো, ঠিক আছে অপেক্ষা করতে থাকো, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি’’। (সূরা তূর: ৩০-৩১)

আপনি অবশ্যই অবগত আছেন যে, আল্লাহ তা‘আলার পূর্ণতা, হিকমত ও কুদরতের দাবি হলো, যারা আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলবে, তিনি তাদেরকে দীর্ঘ দিন অবকাশ দিবেন না। তাদেরকে ধ্বংস করে তিনি তার মুমিন বান্দাদের জন্য উপদেশ হিসাবে রেখে দিবেন। আল্লাহর উপর মিথ্যা রচনাকারীদের ব্যাপারে এ নীতি বহু আগে থেকেই চলে হয়ে আসছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا فَإِن يَشَإِ اللَّهُ يَخْتِمْ عَلَىٰ قَلْبِكَ وَيَمْحُ اللَّهُ الْبَاطِلَ وَيُحِقُّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ

‘‘এ লোকেরা কি বলে, এ ব্যক্তি আল্লাহর বিরুদ্ধে অপবাদ তৈরী করেছে? আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমার দিলের উপর মোহর মেরে দিতেন। তিনি বাতিলকে নিশ্চিহ্ন করে দেন এবং নিজের আদেশে সত্যকে প্রমাণ করে দেখান। তিনি অন্তরের গোপন বিষয়ও জানেন’’। (সূরা শুরা: ২৪)

‘‘তোমার দিলের উপর মোহর মেরে দিতেন’’ এ বাক্যের মর্মার্থ বাস্তবায়ন হওয়া আল্লাহর ইচ্ছার সাথে শর্তযুক্ত। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা এমন সুদৃঢ় সংবাদ প্রদান করেছেন, যার সাথে কোনো শর্ত জড়িয়ে দেননি। তা হলো তিনি বাতিলকে নিশ্চিহ্ন করে দেন এবং সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ إِذْ قَالُوا مَا أَنزَلَ اللَّهُ عَلَىٰ بَشَرٍ مِّن شَيْءٍ

‘‘তারা আল্লাহর যথাযথ বড়ত্ব ও মর্যাদা উপলব্ধি করতে পারেনি, যখন তারা বলল, আল্লাহ কোনো মানুষের উপর কিছুই নাযিল করেননি’’। (সূরা আনআম: ৯১)

এখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সংবাদ দিয়েছেন, যে ব্যক্তি বলবে আল্লাহ তা‘আলা কাউকে রসূল হিসাবে পাঠাননি এবং কারো সাথে কথা বলেননি, তারা আল্লাহ তা‘আলার যথাযথা বড়ত্ব ও মর্যাদা উপলব্ধি করতে পারেনি।