ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
রাহে বেলায়াত প্রথম অধ্যায় - বেলায়াত ও যিকর ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
জ. মাসনূন যিকরের শ্রেণীবিভাগ - ৮. রাসূল (সা.)-এর উপর সালাত-সালাম জ্ঞাপক বাক্যাদি - প্রথম ভাগ

আল্লাহর যিকর ও দু‘আর একটি বিশেষ প্রকরণ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উপর সালাত ও সালাম পাঠ করা। সালাত ও সালাম প্রার্থনা মূলক যিকরের অন্যতম। এতে মুমিন বান্দা আল্লাহর স্মরণ করেন, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন যে, তিনি যেন তাঁর মহান নবীর উপর সালাত ও সালাম প্রেরণ করেন। সালাত ও সালাম পাঠকারী উপরের বিভিন্ন হাদীসে সাধারণভাবে বর্ণিত যিকরের ফযীলত ও সাওয়াব অর্জন করবেন। কিন্তু সালাত ও সালামের বিশেষ গুরুত্ব, মর্যাদা ও রুহানী আসর রয়েছে, যে জন্য পৃথকভাবে তার আলোচনা করতে ইচ্ছা করছি। আল্লাহর কাছে তাওফীক প্রার্থনা করছি।


(ক) সালাত ও সালাম : অর্থ ও অভিব্যক্তি

বাংলা ভাষায় বিভিন্ন ইসলামী শব্দের ফার্সী অনুবাদ বা প্রতিশব্দ ব্যবহার করার ফলে তা মূল আরবী আবেদন হারিয়ে ফেলেছে এবং অনেক সময় আমরা মূল আরবী পরিভাষা যা কুরআন করীম, হাদীস শরীফ ও সকল ইসলামী গ্রন্থে ব্যবহৃত হয়েছে তা আমরা জানিও না। এ সকল পরিভাষার মধ্যে অন্যতম ‘সালাত’। ‘সালাত’ ইসলামের অন্যতম পরিভাষা। মুসলিম জীবনের অন্যতম দু’টি ইবাদত ‘সালাত’ নামে পরিচিত ; প্রথমটি ,- ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ , ইসলামের অন্যতম ইবাদত ‘সালাত’ যা আমরা বাংলায় ফার্সী প্রতিশব্দ ‘নামায’ বলে অভিহিত করি। দ্বিতীয়টি ,- মানবতার মুক্তির দূত, আল্লাহর প্রিয়তম ও শ্রেষ্ঠতম নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর জন্য ‘সালাত’ প্রেরণ করা, যাকে আমরা বাংলায় ফার্সী শব্দে দরুদ বলে থাকি।

চতুর্থ হিজরী শতকের প্রখ্যাত ভাষাবিদ ইবনে দুরাইদ: আবু বকর মুহাম্মাদ বিন হুসাইন (৩২১ হি) লিখেছেনঃ ‘সালাত’ শব্দের মূল: দু‘আ বা প্রার্থনা। (صل عليه) ﱠ “সাল্লি আলাইহি” অর্থাৎ, “তার জন্য দু‘আ কর”।[1] এ শতকের অন্যতম ভাষাতত্ত্বববিদ আহমদ ইবনে ফারিস (৩৯৫হি) লিখেছেনঃ “এই মূল ধাতুটির ২টি মূল অর্থ রয়েছে : একটি অর্থ আগুন বা আগুন জাতীয় উত্তাপ, জ্বর ইত্যাদি বোধক। দ্বিতীয় অর্থ - এক ধরনের উপাসনা। ... দ্বিতীয় অর্থে সালাত শব্দের অর্থ দু‘আ বা প্রার্থনা। ... আর আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাত অর্থ রহমত। হাদীস শরীফে এসেছেঃ (اللهم صل على أبى أوفى) “হে আল্লাহ, আপনি আবু আউফার বংশের উপর সালাত প্রদান করুন (অর্থাৎ, রহমত বা করুণা করুন)।”[2] চতুর্থ হিজরী শতকের অন্য ভাষাবিদ আল্লামা ইসমাঈল বিন হাম্মাদ আল জাওহারী (৩৯৮ হি) তাঁর প্রখ্যাত “আস সিহাহ” অভিধান গ্রন্থে লিখেছেন : “সালাত শব্দের অর্থ দু‘আ বা প্রার্থনা। আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাতের অর্থ : রহমত বা করুণা। এছাড়া আগুনে পোড়ান বা ঝলসানকেও আরবীতে সালাত বলা হয়।”[3]


পরবর্তী সকল ভাষাবিদ ও অভিধান প্রণেতা উপরের কথাগুলিই বলেছেন। তাঁরা বলেছেন, সালাত শব্দের অর্থ রহমত ও বরকতের জন্য দু‘আ করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা। ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ সালাতকে (নামায) সালাত নামকরণের কারণ এই ইবাদতের মূল আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা, তাঁর করুণা ও ক্ষমা ভিক্ষা করা। আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাত প্রদানের বা সালাত পাঠানর অর্থ রহমত, করুণা ও বরকত প্রদান। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর রাসূল (সা.)-কে সালাত প্রদান বা সালাত প্রেরণের অর্থ তাঁকে রহমত প্রদান, সর্বোত্তম মর্যাদা ও প্রশংসা প্রদান। ফিরিশতারা কারো উপর সালাত প্রেরণ করেছেন অর্থ তাঁরা আল্লাহর কাছে উক্ত ব্যক্তির জন্য রহমতের, মর্যাদা ও ক্ষমা চেয়ে প্রার্থনা করেছেন। কোনো মানুষ অন্যের উপর ‘সালাত’ প্রদান করেছে বা ‘সালাত’ প্রেরণ করেছে বলতে বুঝান হয় ঐ মানুষটি তাঁকে মর্যাদা ও সম্মান প্রদান করেছে, তাঁর জন্য রহমত, ক্ষমা ও মর্যাদার দু‘আ করেছে।[4]


(খ) কুরআন করীমে সালাত

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا هُوَ الَّذِي يُصَلِّي عَلَيْكُمْ وَمَلَائِكَتُهُ لِيُخْرِجَكُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَكَانَ بِالْمُؤْمِنِينَ رَحِيمًا


“হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা বেশি বেশি করে আল্লাহ স্মরণ (যিকর) কর এবং প্রভাতে ও বিকালে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা (তাসবীহ) কর। তিনি তোমাদের উপর সালাত প্রদান করেন (তোমাদেরকে দয়া করেন, ক্ষমা করেন, তোমাদের প্রশংসা ছড়িয়ে দেন এবং তোমাদেরকে সম্মানিত করেন) এবং তাঁর ফিরেশতাগণও (তোমাদের জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করেন)[5]; যেন তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোতে বের করে নিয়ে আসেন। তিনি বিশ্বাসীদের প্রতি করুণাশীল।”[6]

এখানে আমরা দেখছি যে, আল্লাহ সকল বিশবাশ্বাসীকে সালাত প্রদান করেন, অর্থাৎ তাঁর অফুরন্ত করুণা, ক্ষমা ও বরকত তাদেরকে

দান করেন। আর তাঁর সম্মানিত ফিরিশতাগণ আল্লাহর কাছে বিশ্বাসী বান্দাদের জন্য করুণা, ক্ষমা ও বরকত চেয়ে প্রার্থনা করেন। এ ছাড়া আমরা দেখতে পাই যে আল্লাহ বিশেষভাবে কোনো কোনো বিশ্বাসীর জন্য সালাতের উল্লেখ করেছেন। বিপদে আপদে যারা ধৈর্য ধারণ করেন তাদের বিষয়ে ইরশাদ হয়েছেঃ

أُولَٰئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ


এ সকল মানুষদের জন্য রয়েছে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেক ‘সালাত’-সমূহ (অগণিত করুণা, ক্ষমা, বরকত ও সু-প্রশংসা[7]) এবং রহমত এবং তাঁরাই সুপথপ্রাপ্ত।”[8]


এখানে আমরা দেখছি বিশেষভাবে ধৈর্যধারণকারীদের জন্য আল্লাহ বিশেষ ‘সালাত’ প্রদান করেন। এছাড়া আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁর মহান রাসূল (সা.)-কেও মুমিনদের জন্য ‘সালাত’ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছেঃ

خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ


“(হে রাসূল) আপনি তাঁদের (মুমিনদের) সম্পদ থেকে দান (যাকাত) গ্রহণ করুন, যা তাঁদেরকে পবিত্রতা, বরকত ও বৃদ্ধি প্রদান করবে এবং আপনি তাঁদের উপর ‘সালাত’ দান করুন (তাঁদের কল্যাণ, বরকত ও ক্ষমাপ্রাপ্তির জন্য দু’আ করুন)। নিশ্চয় আপনার ‘সালাত’ তাঁদের জন্য রহমত, শান্তি ও তৃপ্তি ।[9] আল্লাহ সবকিছু শোনেন এবং সবকিছু জানেন।”[10]


সর্বোপরি, মহান আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতাগণ মহানবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর উপর সালাত প্রদান করেন আর বিশ্বাসীদের দায়িত্ব তাঁর (নবীর) উপর সালাত ও সালাম প্রেরণ করা। আল্লাহ ইরশাদ করেছেনঃ

إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا


“নিশ্চয় আল্লাহ এবং তাঁর ফিরিশতাগণ নবীর উপর ‘সালাত’ প্রদান করেন (আল্লাহ তাঁর মহান নবীকে রহমত করেন, সর্বোত্তম মর্যাদা প্রদান করেন, বরকত দান করেন, তাঁর সুপ্রশংসা ও মর্যাদা বিশ্বাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে দেন, আর ফিরিশতাগণ তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন)[11]। হে বিশ্বসীগণ, তোমরা তাঁর উপর ‘সালাত’ ও ‘সালাম’ প্রেরণ কর।”[12]

আল্লাহ বিশ্বাসীদের নির্দেশ দিলেন তাঁর প্রিয়তম রাসূলের উপর সালাত ও সালামের। কাউকে সালাম প্রদান করলে তাকেঁ সম্মান প্রদান করা হয়। সাহাবীগণ আগে থেকেই রাসূলে আকরাম (সা.) কে সালাম দিয়ে আসছিলেন। সালাম প্রদানের ইসলামী পদ্ধতি তাঁদের সুপরিচিত : “আস-সালামু আলাইকুম ...”। কিন্তু তাঁকে তাঁরা কিভাবে “সালাত” জানাবেন? সালাত তো দু‘আ করা। তিনিই তো তাঁদের জন্য জন্য দু’আ করবেন, তাঁরা কিভাবে সৃষ্টির সেরা নবীদের নেতা মানব জাতির মুক্তির দূতকে দু‘আ করবেন। কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে পড়লেন সাহাবায়ে কেরাম। কিভাবে তাঁরা এই আয়াতের নির্দেশ পালন করবেন। অবশেষে তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করলেন।


যিকর নং ৩১ : দরুদে ইবরাহীমী-১

কা’ব বিন আজুরা (রাঃ) বলেনঃ

لما نزلت (إن الله وملائكته يصلون على النبي) قالوا كيف نصلي عليك يا نبي الله قال قولوا


যখন উপরের আয়াতটি নাযিল হলো তখন সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর নবী, আমরা কিভাবে আপনার উপর সালাত প্রেরণ করব? তখন তিনি বললেন, তোমরা বলবেঃ

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

অর্থঃ হে আল্লাহ আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিজনের উপর সালাত প্রেরণ করুন যেমন আপনি সালাত প্রদান করেছেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিজনের উপর, নিশ্চয় আপনি মহাপ্রশংসিত মহাসম্মানিত। এবং আপনি বরকত প্রদান করুন মুহাম্মাদের উপরে এবং মুহাম্মাদরে পরিজনের উপরে যেমন আপনি বরকত প্রদান করেছেন ইবরাহীমের উপরে এবং ইবরাহীমের পরিজনের উপরে। নিশ্চয় আপনি মহাপ্রশংসিত মহা সম্মানিত ।”[13]


যিকর নং ৩২ : দরুদে ইবরাহীমী-২

বুখারী ও মুসলিম বর্ণিত অন্য হাদীসে কা’ব (রাঃ) বলেনঃ

قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَمَّا السَّلَامُ عَلَيْكَ فَقَدْ عَرَفْنَاهُ فَكَيْفَ الصَّلَاةُ عَلَيْكَ قَالَ قُولُوا


“রাসূলে আকরাম (সা.)-কে বলা হলোঃ হে আল্লাহর রাসূল, আপনাকে সালাম দেওয়া তো আমরা জানি, কিভাবে সালাম দিতে হবে, কিন্তু আপনার উপর ‘সালাত’ আমরা কিভাবে প্রদান করব? তখন তিনি বললেন, তোমরা বলবেঃ

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ . اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ


অর্থঃ “হে আল্লাহ আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিজনের উপর সালাত প্রেরণ করুন যেমন আপনি সালাত প্রদান করেছেন ইবরাহীমের পরিজনের উপর, নিশ্চয় আপনি মহা প্রশংসিত মহা সম্মানিত।”[14]

এই হাদীসে (কামা সাল্লাইতা ‘আলা- ইবরাহীমা) ও (কামা- বা-রাকতা ‘আলা ইবরাহীমা) বাক্য দুটি নেই, সরাসরি (আল ইবরাহীমা) বলা হয়েছে।

হাদীস শরীফে আমরা দেখতে পাই আরো অনেক সাহাবীই এই আয়াত নাজিল হওয়ার পরে রাসূলে আকরাম (সা.)-এর কাছে সালাত প্রদানের পদ্ধতি জিজ্ঞাসা করেছেন।[15] আর তিনি তাঁদের সকলকেই “দরুদে ইবরাহিমী” শিক্ষা দিয়েছেন। ভাষার ক্ষেত্রে এরূপ সামান্য কম-বেশি আছে।

আল্লামা ইবনুল আসীর মুবারাক বিন মুহাম্মাদ (৬০৬ হি) বলেছেন : “আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে তাঁর প্রিয়তম নবীর (সা.) উপর সালাত প্রদানের নির্দেশ দেন। কিন্তু আমরা তো তাঁর মর্যাদা অনুধাবন করতে পারব না, তাঁর প্রতি আমাদের কর্তব্যও পুরো বুঝতে পারব না। তাই আমরা এ দায়িত্ব আবার মহান আল্লাহকেই দিলাম, আমরা বললামঃ হে আল্লাহ আপনি তাঁর উপর সালাত প্রদান করুন, কারণ তাঁর মর্যাদা সম্পর্কে আপনিই ভালো অবগত আছেন।” তিনি আরো বলেন, “আমরা যখন বলি : ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ’, হে আল্লাহ মুহাম্মাদের উপর সালাত প্রেরণ করুন, তার অর্থঃ হে আল্লাহ, দুনিয়াতে তাঁর সম্মান প্রতিষ্ঠা করে, তাঁর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করে, তাঁর শরীয়তকে হেফাজত করে তাঁকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় ভূষিত করুন এবং আখেরাতে তাঁর শাফা’আত কবুল করে, তাঁকে সর্বোত্তম পুরস্কার প্রদান করে তাঁকে মর্যাদাময় করুন।”[16]


(গ) হাদীস শরীফে সালাত ও সালাম

হাদীসের আলোকে আমরা জানতে পারি যে, রাসূলে আকরাম (সা.)এর উপর সালাত পাঠ করা ও সালাম পাঠ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও অত্যন্ত বড় নেক কর্ম। বস্তুত সৃষ্টির সেরা, সকল যুগের সকল মানুষের শ্রেষ্ঠ মানুষ, আল্লাহর প্রিয়তম বন্ধু, হাবীব ও খলীল রাসূলে আকরাম (সা.) আজীবন কষ্ট করে আমাদের জন্য আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত পার্থিব ও পারলৌকিক জীবনের শান্তি, মুক্তি ও সফলতার একমাত্র পথ ইসলামকে মানব জাতির জন্য পৌঁছে দিয়ে গিয়েছেন। তাঁর জন্য যে মানব সন্তান আল্লাহর কাছে মর্যাদা ও রহমতের প্রার্থনা না করবে, তাঁর উপর যে মানুষ সালাম না পাঠাবে সে মানুষ মানব জাতির কলঙ্ক। একজন মানুষের নূন্যতম প্রেরণা হওয়া উচিত যে, সে তার ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মুক্তি ও শান্তির বার্তাবাহক মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর উপর হৃদয়ের সবটুকু দরদ দিয়ে সালাত ও সালাম পাঠ করবে, তাঁর শান্তি, মর্যাদা ও রহমতের জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবে। আল্লাহ তাঁকে সর্বোত্তম মর্যাদা দান করেছেন। কিন্তু মানব সন্তানের দায়িত্ব তাঁর জন্য প্রার্থনা করা।

[1] ইবনে দুরাইদ, জামহারাতুল লুগাত ৩/২৬০।

[2] ইবনে ফারিস, মু’জাম মাকায়ীসুল লুগাত ৩/৩০০-৩০১।

[3] জাওহারী, সিহাহ ৬/২৪০২।

[4] ইবনে মানযুর, লিসানুল আরব ১৪/৪৬৪-৪৬৯, আল-ফাইরোয আবাদী, আল-কামূসুল মুহীত ১৬৮১, পৃ. আল-ফাইউমী, আল-মিসবাহুল মুনীর, ৩৪৬ পৃ.।

[5] তাবারী, তাফসীর ২/৪২।

[6] সূরা আহযাবঃ ৪১-৪৩।

[7] তাবারী, তাফসীর ২/৪২।

[8] সূরা বাকারাঃ ১৫৭।

[9] আল-ফাররা, আবু যাকারিয়া ইয়াহ বিন যিয়াদ, মায়ানীল কুরআন ১/৪৫১, তাবারী, তাফসীর ১১/১৬-১৮, ইবনে কাসীর, ইসমাঈল তাফসীর ২/৩৬৯।

[10] সূরা তাওবাঃ ১০৩।

[11] তাবারী, তাফসীর ২২/৪৩, ইবনে কাসীর, তাফসীর ৩/৪৮৬-৪৮৭।

[12] সূরা আহযাবঃ ৫৬।

[13] আহমাদ, নং ১৭৬৬৭।

[14] বুখারী, তাফসীরুল কুরআন, নং ৪৭৯৭, মুসলিম, কিতাবুস সালাত, নং ৪০৬।

[15] তাবারী, তাফসীর ২২/৪৩-৪৪, ইবনে কাসীর, তাফসীর ৩/৪৮৬-৪৯৫।

[16] ইবনুল আসীর, আন-নিহায়া ফী গরীবিল হাদীস ৩/৫০।