ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
রাহে বেলায়াত প্রথম অধ্যায় - বেলায়াত ও যিকর ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
ঙ. কুরআন-হাদীসের আলোকে যিকরের পরিচয় - (৫) ওয়ায-নসীহত আল্লাহর যিকর

আমরা ইতঃপূর্বে দেখেছি যে, যিকর শব্দের অর্থ স্মরণ করা বা করানো। কাউকে কোনোভাবে আল্লাহর নাম, গুণাবলী, বিধান বা আল্লাহর সহিত সম্পর্কিত যে কোনো বিষয় স্মরণ করানোকে বিশেষভাবে কুরআন করীম ও হাদীস শরীফে যিকর নামে অভিহিত করা হয়েছে। আল্লাহ ইরশাদ করেছেনঃ

مَا يَأْتِيهِم مِّن ذِكْرٍ مِّن رَّبِّهِم مُّحْدَثٍ إِلَّا اسْتَمَعُوهُ وَهُمْ يَلْعَبُونَ


“যখনই তাদের কাছে তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে কোনো নতুন যিকর আসে, তখনই তারা খেলাচ্ছলে তা শ্রবণ করে।”[1]


অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে :

وَمَا يَأْتِيهِم مِّن ذِكْرٍ مِّنَ الرَّحْمَٰنِ مُحْدَثٍ إِلَّا كَانُوا عَنْهُ مُعْرِضِينَ


“যখনই তাদের কাছে দয়াময়ের নিকট থেকে কোনো নতুন যিকর আসে তখনই তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।”[2]


এই দুই স্থানে এবং এরূপ আরো অনেক স্থানে যিকর বলতে ওয়ায ও উপদেশ বুঝানো হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেনঃ

إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ


“যখন শুক্রবারের দিন সালাতের জন্য আহবান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর যিকরের দিকে ধাবিত হও।”[3]


এখানে আল্লাহর যিকর বলতে জুমু’আর সালাতের খুতবা বা ওয়াযকে বুঝান হয়েছে বলে অধিকাংশ মুফাসসির ও ফকীহ মত প্রকাশ করেছেন। ইমাম আবু হানীফা (রহ) এই মতের উপরেই নির্ভর করেছেন। কোনো কোনো মুফাসসির বলেছেন যে, এখানে ‘আল্লাহর যিকর’ অর্থ জুমু’আর সালাত। ইমাম তাবারী (রহ) বলেনঃ ‘আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দাগণকে যে যিকরের দিকে দৌড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন সেই যিকর খুতবার মধ্যে ইমামের ওয়ায নসীহত ...।’ ইমাম মুজাহিদ, সাঈদ ইবনুল মুসাইইব প্রমুখ তাবেয়ী মুফাসসির এইরূপ বলেছেন।[4]


আল্লামা কুরতুবী বলেনঃ ‘আল্লাহর যিকর অর্থাৎ সালাত।’ সাঈদ ইবনু জুবাইর প্রমুখ বলেছেনঃ ‘আল্লাহর যিকর অর্থ খুতবা ও ওয়ায।’[5]


হানাফী মযহাবের অন্যতম ফকীহ ও মুফাসসির আল্লামা আবু বকর আহমদ ইবনু আলী আল-জাসসাস (৩৭০ হি) বলেনঃ ‘এই

আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহর যিকর অর্থাৎ ইমামের খুতবা ও ওয়ায শোনার জন্য গমন করা ফরয।’[6]

সাহাবী-তাবেয়ীগণের যুগে বিশেষভাবে ওয়ায নসীহতকে যিকর হিসাবে চিহ্নিত করা হতো। ওয়ায নসীহতের মাজলিসকে যিকরের মাজলিস বলা হতো।[7]

[1] সূরা আম্বিয়াঃ ২।

[2] সূরা শু’আরাঃ ৫।

[3] সূরা জুম’আহ ৯।

[4] তাবারী, তাফসীর ২৮/১০২।

[5] তাফসীরে কুরতুবী ১৮/১০৭।

[6] আবু বকর জাসসাস, আহকামুল কুরআন ৩/৪৪৬।

[7] তাফসীরে তাবারী ৯/১৬৩, তাফসীর ইবনু কাসীর ২/২৮২।