ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
রমযান মাসের ৩০ আসর সপ্তবিংশ আসর শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)
জাহান্নামে প্রবেশের আরো কিছু কারণ

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আপন ক্ষমতায় সকল সৃষ্টকে সৃষ্টি করেছেন। তাদের মধ্যে নিজ বিস্ময়কর প্রজ্ঞার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তাঁর নিদর্শনাবলি দ্বারা নিজ এককত্বের সপ্রমাণতা তুলে ধরেছেন। অপরাধীর জন্য তাঁর বিরুদ্ধাচারণের শাস্তির ফয়সালা করেছেন। অতঃপর তাওবার আহ্বান জানিয়েছেন এবং তার তাওবা কবুলের মাধ্যমে তার প্রতি বদান্যতা দেখিয়েছেন। অতএব আল্লাহর আহ্বায়কের ডাকে সাড়া দাও এবং তাঁর জান্নাতের প্রতি প্রতিযোগী হও। তিনি তোমাদের পাপসমূহ মার্জনা করবেন এবং তোমাদেরকে নিজ দয়া থেকে দ্বিগুণ অংশ দেবেন।

আমি তাঁর প্রশংসা করি তাঁর মহান গুণাবলির এবং পূর্ণতর বিশেষণসমূহের। আমি তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি তাঁর তাওফীক দান এবং তাঁর পর্যাপ্ত নেয়ামতরাজির জন্য।

আর আমি সাক্ষ্য দেই যে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই; তাঁর ইবাদত কিংবা প্রতিপালনে কোনো শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দেই যে মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা এবং রাসূল। যিনি নিখিল সৃষ্টির প্রতি প্রেরিত হয়েছেন; মুমিনদের জান্নাতের সুসংবাদদাতা হিসেবে এবং কাফেরদের তাঁর জাহান্নাম ও শাস্তি থেকে সতর্ককারী হিসেবে। আল্লাহ সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন তাঁর ওপর, তাঁর উম্মতের মধ্যে তাঁর খলীফা আবূ বকরের ওপর, কাফেরদের প্রতি দৃঢ়তা ও শক্তিমত্ততায় বিখ্যাত উমরের ওপর, নিজ দায়িত্ব পালনে মৃত্যুকে আলিঙ্গনকারী উসমানের ওপর, তাঁর চাচাতো ভাই ও জামাতা আলীর ওপর এবং রাসূলের সকল পরিবার-পরিজন, সাহাবী ও আদর্শের অনুসারীর ওপর।


মুসলিম ভাইগণ! পূর্ব আসরে প্রথম প্রকার জাহান্নামী যারা স্থায়ীভাবে জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তাদের কারণসমূহ নিয়ে আলোচনা করেছি।

এ আসরে আল্লাহর তাওফীকে আমরা দ্বিতীয় প্রকার জাহান্নামীদের কয়েকটি কারণ আলোচনা করব।

দ্বিতীয় প্রকার হচ্ছে ঐ সব কারণ, কেউ সেগুলো করলে সাময়িকভাবে জাহান্নামী হয়ে থাকে। তন্মধ্যে:

১ম কারণ: মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া।

অবাধ্য হওয়া অর্থ, তাদের সঙ্গে অপরিহার্য সদ্ব্যবহার ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেষ লঙ্ঘন করা বা কথা ও কাজের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা। যেমন,

* আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنًاۚ إِمَّا يَبۡلُغَنَّ عِندَكَ ٱلۡكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوۡ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفّٖ وَلَا تَنۡهَرۡهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوۡلٗا كَرِيمٗا ٢٣ وَٱخۡفِضۡ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحۡمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢٤﴾ [الاسراء: ٢٣، ٢٤]

‘আর আপনার রব আদেশ দিয়েছেন তিনি ছাড়া অন্য কারো ‘ইবাদাত না করতে ও পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তারা একজন বা উভয়ই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ্’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না; তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বল। আর মমতাবশে তাদের প্রতি নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত কর এবং বল, ‘হে আমার রব! তাঁদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।’ (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত: ২৩-২৪)

* অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ أَنِ ٱشۡكُرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيۡكَ إِلَيَّ ٱلۡمَصِيرُ﴾ [لقمان: ١٤]

‘আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে।’ (লুকমান: ১৪)

* রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

ثَلاَثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى عَلَيْهِمُ الْجَنَّةَ: مُدْمِنُ الْخَمْرِ ، وَالْعَاقُّ لوالديه وَالدَّيُّوثُ الَّذِي يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخُبْثَ.

‘তিন ব্যক্তির ওপর আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন। ১ম: মদ পানে আসক্ত ২য়: পিতা-মাতার নাফরমান সন্তান ও ৩য়: দায়্যুস যে, নিজ পরিবারের অশ্লীলতা সমর্থন করে।’[1]

২য় কারণ: আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা।

এর দ্বারা উদ্দেশ্য, কোনো লোক কর্তৃক তার আত্মীয়দের সাথে সম্পর্কচ্যুতি ঘটানো; ফলে সে তাদেরকে তাদের প্রাপ্য শারিরীক ও আর্থিক অধিকার প্রদান করা থেকে বিরত থাকে।

* সহীহ বুখারী ও মুসলিমে জুবাইর ইবন মুত‘ইম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعٌ ».

(আত্মীয়তার সম্পর্ক) ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’[2] সুফিয়ান রাহেমাহুল্লহ বলেন: ছিন্নকারী অর্থাৎ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী।

* অনুরূপভাবে বুখারী ও মুসলিমে আরও এসেছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যখন আল্লাহ তা‘আলা সকল সৃষ্টিকুলকে অস্তিত্বে আনলেন, তখন ‘রাহেম’ তথা আত্মীয়তার সম্পর্ক দাঁড়িয়ে আল্লাহকে বলল,

«هَذَا مَقَامُ الْعَائِذِ بِكَ مِنَ الْقَطِيعَةِ قَالَ نَعَمْ أَمَا تَرْضَيْنَ أَنْ أَصِلَ مَنْ وَصَلَكِ وَأَقْطَعَ مَنْ قَطَعَكِ قَالَتْ بَلَى يَا رَبِّ قَالَ فَهْوَ لَكِ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: فَاقْرَؤُوا إِنْ شِئْتُمْ (فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ)

‘আমাকে বিচ্ছিন্ন করা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনার স্থান (সময়) এটা। আল্লাহ বলেন, হ্যাঁ, তবে তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে আমি তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখব এবং তোমাকে যে ছিন্ন করবে আমি তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করব? শুনে আত্মীয় বলল, অবশ্যই। তখন আল্লাহ বললেন, তোমার জন্য এরূপই করা হবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইচ্ছা করলে তোমরা এ আয়াতটি পড়তে পারো:

﴿ فَهَلۡ عَسَيۡتُمۡ إِن تَوَلَّيۡتُمۡ أَن تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَتُقَطِّعُوٓاْ أَرۡحَامَكُمۡ ٢٢ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَعَنَهُمُ ٱللَّهُ فَأَصَمَّهُمۡ وَأَعۡمَىٰٓ أَبۡصَٰرَهُمۡ ٢٣ ﴾ [محمد: ٢٢، ٢٣]

‘ক্ষমতা লাভ করলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদের বধির ও দৃষ্টি শক্তিহীন করেন।’ (সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ২২-২৩)[3]

আফসোসের বিষয়, কোনো কোনো মুসলিম আজ পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের অধিকার সম্পর্কে একেবারেই গাফেল। তারা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে মিলনের সেতুবন্ধনকে ছিন্ন করে চলছে।

তাদের কারও কারও বক্তব্য হচ্ছে, আত্মীয়রাই সম্পর্ক বজায় রাখছেন না। কিন্তু এ বক্তব্য তাদের কোনো উপকারে আসবে না। কারণ, যে সম্পর্ক ঠিক রাখবে, শুধু তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে-এ যদি নীতি হয়, তাহলে তা আল্লাহর জন্য হলো না; বরং বদলা স্বরূপ। যেমন,

* ‘আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَيْسَ الْوَاصِلُ بِالْمُكَافِئِ وَلَكِنِ الْوَاصِلُ الَّذِي إِذَا قَطَعَتْ رَحِمُهُ وَصَلَهَا».

‘সে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপনকারী বলে গণ্য হবে না যে শুধু বদলাস্বরূপ সম্পর্ক বজায় রাখে; বরং সেই সম্পর্ক স্থাপনকারী যে তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেও জুড়ে দেয়।’[4]

* অনুরূপভাবে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল:

يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ لِى قَرَابَةً أَصِلُهُمْ وَيَقْطَعُونِى وَأُحْسِنُ إِلَيْهِمْ وَيُسِيئُونَ إِلَىَّ وَأَحْلُمُ عَنْهُمْ وَيَجْهَلُونَ عَلَىَّ. فَقَالَ « لَئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ فَكَأَنَّمَا تُسِفُّهُمُ الْمَلَّ وَلاَ يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللَّهِ ظَهِيرٌ عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ عَلَى ذَلِكَ ».

‘আমার কিছু আত্মীয় এমন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক যতই জুড়ি, ততই তারা ছিন্ন করে, যতই সৎ ব্যবহার করি, তারা দুর্ব্যবহার করে, সহনশীলতা অবলম্বন করলেও তারা বুঝতে চায় না; তারা আমার সাথে মূর্খের আচরণ করে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি ব্যাপার এমনই হয়, যেমন তুমি বললে, তাহলে তুমি যেন তাদের প্রতি গরম বালু নিক্ষেপ করলে, (যেন তুমি তাদেরকে তা-ই খাইয়েছ) আর তুমি যেভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবহার করে চলছ, তা যদি অব্যাহত রাখতে পার, তাহলে আল্লাহ সর্বদা তোমার সাহায্যকারী থাকবেন।’[5]

বান্দা যখন সম্পর্ক ছিন্ন করা সত্ত্বেও তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে, তখন তার পরিণাম প্রশংসনীয় হবে এবং শীঘ্রই এমন ফল হবে যে, তারা নিজেরাই এসে সম্পর্ক স্থাপন করবে; যেমনটি সে সম্পর্ক তৈরী করেছে; যদি আল্লাহ তাদের কল্যাণ চান।

৩য় কারণ: সুদ খাওয়া।

* আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَأۡكُلُواْ ٱلرِّبَوٰٓاْ أَضۡعَٰفٗا مُّضَٰعَفَةٗۖ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ١٣٠ وَٱتَّقُواْ ٱلنَّارَ ٱلَّتِيٓ أُعِدَّتۡ لِلۡكَٰفِرِينَ ١٣١ وَأَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ١٣٢ ﴾ [ال عمران: ١٣٠، ١٣٢]

‘হে মুমিনগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেও না আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পার। তোমরা সে আগুনকে ভয় কর, যা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও রাসূলের, যাতে তোমাদের ওপর রহম করা হয়।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩০-১৩২)

আল্লাহর পক্ষ হতে উপদেশ ও সতর্কপাণী পৌঁছার পরও যে সুদে লিপ্ত, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য স্থায়ী জাহান্নামের ধমক দিচ্ছেন।

* আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

﴿ ٱلَّذِينَ يَأۡكُلُونَ ٱلرِّبَوٰاْ لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ ٱلَّذِي يَتَخَبَّطُهُ ٱلشَّيۡطَٰنُ مِنَ ٱلۡمَسِّۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ قَالُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡبَيۡعُ مِثۡلُ ٱلرِّبَوٰاْۗ وَأَحَلَّ ٱللَّهُ ٱلۡبَيۡعَ وَحَرَّمَ ٱلرِّبَوٰاْۚ فَمَن جَآءَهُۥ مَوۡعِظَةٞ مِّن رَّبِّهِۦ فَٱنتَهَىٰ فَلَهُۥ مَا سَلَفَ وَأَمۡرُهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِۖ وَمَنۡ عَادَ فَأُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلنَّارِۖ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٢٧٥ ﴾ [البقرة: ٢٧٥]

‘যারা সুদ খায় তারা কিয়ামতের দিন দণ্ডায়মান হবে ওই ব্যক্তির ন্যায় যাকে শয়তান আছর করে মোহাবিষ্ট করেছে। তাদের এ অবস্থার কারণ হলো: তারা বলেছে, ক্রয়-বিক্রয় তো সুদের মতই। অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত রয়েছে, তাহলে পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা (মূলধন) তারই থাকবে, আর তার ব্যাপারটি আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ গ্রহণ করে, তারাই জাহান্নামে যাবে। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৫)

৪র্থ কারণ: ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ করা।

* আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ يَأۡكُلُونَ أَمۡوَٰلَ ٱلۡيَتَٰمَىٰ ظُلۡمًا إِنَّمَا يَأۡكُلُونَ فِي بُطُونِهِمۡ نَارٗاۖ وَسَيَصۡلَوۡنَ سَعِيرٗا ١٠ ﴾ [النساء: ١٠]

‘নিশ্চয় যারা ইয়াতীমের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ (গ্রাস) করে তারা নিজেদের পেট আগুন দিয়ে ভর্তি করে, অচিরেই তারা প্রজ্জলিত আগুনে প্রবেশ করবে।’ (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০)

ইয়াতীম: প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্বে যার পিতা মৃত্যুবরণ করেছে তাকে শরীয়তের পরিভাষায় ইয়াতীম বলা হয়।

৫ম কারণ: মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা।

* আব্দুল্লাহ ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لَنْ تَزُولَ قَدَمُ شَاهِدِ الزُّورِ حَتَّى يُوجِبَ اللَّهُ لَهُ النَّارَ».

‘মিথ্যা সাক্ষ্যদাতার পা স্বস্থান হতে ততক্ষণ পর্যন্ত নড়বে না যতক্ষণ না আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামের আগুন অবধারিত করবেন।’[6]

মিথ্যা সাক্ষ্য বলা হয়, অজানা বা বাস্তবের বিপরীত সাক্ষ্য প্রদান করাকে। কারণ সাক্ষ্যদাতার জন্য জানা বিষয় ছাড়া অন্য কিছুর সাক্ষ্য প্রদান বৈধ নয়।

* হাদীসে রয়েছে:

‘জনৈক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তুমি কি সূর্য দেখেছ? সে বলল হ্যাঁ, তখন তিনি তাকে বললেন, এ ধরনের বিষয়ে সাক্ষ্য দেবে; নতুবা বিরত থাকবে।’[7]

৬ষ্ঠ কারণ: বিচার-ফয়সালায় ঘুষ।

* ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

الرَّاشِي وَالْمُرْتَشِي فِي النَّارِ.

‘ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতা উভয়ে জাহান্নামে যাবে।’[8]

হাদীসটি তাবারানী বর্ণনা করছেন। তার বর্ণনাকারীরা সবাই গ্রহণযোগ্য ও প্রসিদ্ধ। যেমটি তারগীব ওয়াত তারহীবে এসেছে।

নিহায়া গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘হাদীসে বর্ণিত ‘রা-শী’ অর্থ ঘুষদাতা আর ‘মুরতাশী’ অর্থ ঘুষগ্রহীতা।

তবে ন্যায্য অধিকার প্রাপ্তি বা জুলুম থেকে রক্ষার জন্য বাধ্য হয়ে কিছু প্রদান করতে হলে, তা এর অন্তর্ভুক্ত হবে না।’[9]

৭ম কারণ: মিথ্যা শপথ করা।

* হারেস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হজে (মিনার পাথর মারার স্থান) দু’জামরার মধ্যবর্তী স্থানে বলতে শুনেছি,

«مَنِ اقْتَطَعَ مَالَ أَخِيهِ الْمُسْلِمِ بِيَمِينٍ فَاجِرَةٍ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ ، لِيُبَلِّغْ شَاهِدُكُمْ غَائِبَكُمْ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا».

‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্পদ মিথ্যা শপথের দ্বারা ছিনিয়ে নেয়, সে যেন জাহান্নামে তার স্থান করে নেয়। কথাটি উপস্থিত সকলেই তোমাদের অনুপস্থিতদের বলে দেবে। এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওই বাণীটি দু’বার অথবা তিনবার বলেছেন।’[10]

আর শপথকে ‘গামূস’ বলার কারণ হচ্ছে, যে ব্যক্তি এ ধরনের শপথ করবে তাকে তা গুনাহে ডুবিয়ে দেয়, তারপর তাকে জাহান্নামে ডুবায়।

মিথ্যা শপথ করে কোনো দাবীকৃত বস্তুর ফয়সালা নিজের পক্ষে নিয়ে আসা, অথবা মিথ্যা শপথ করে অস্বীকারকৃত বস্তু থেকে তার দায়মুক্তির ঘোষণা আদায় করা উভয়টিই গুনাহের দিক থেকে কোনো পার্থক্য নেই।

৮ম কারণ: মানুষের মধ্যে না জেনে বিচার করা অথবা যুলুম ও পক্ষপাতিত্ব করে বিচার করা।

* বুরাইদা ইবনুল হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« الْقُضَاةُ ثَلاَثَةٌ وَاحِدٌ فِى الْجَنَّةِ وَاثْنَانِ فِى النَّارِ فَأَمَّا الَّذِى فِى الْجَنَّةِ فَرَجُلٌ عَرَفَ الْحَقَّ فَقَضَى بِهِ وَرَجُلٌ عَرَفَ الْحَقَّ فَجَارَ فِى الْحُكْمِ فَهُوَ فِى النَّارِ وَرَجُلٌ قَضَى لِلنَّاسِ عَلَى جَهْلٍ فَهُوَ فِى النَّارِ ».

‘বিচারক তিন প্রকার। এক প্রকার জান্নাতে যাবে এবং দুই প্রকার যাবে জাহান্নামে। যে জান্নাতে যাবে সে হলো, যে বিচারক সত্য উদ্ঘাটন করে এবং তদনুযায়ী ন্যায়বিচার করে। আর যে ব্যক্তি সত্য জেনেও অন্যায় বিচার করে সে জাহান্নামী। আরেকজন মানুষের বিচার করে না জেনেই, সেও আগুনে যাবে।’[11]

৯ম কারণ: প্রজাদের ধোঁকা দেয়া এবং তাদের কল্যাণ কামনা না করা।

অর্থাৎ এমনভাবে রাষ্ট্র বা বিচারকার্য পরিচালনা করা, যাতে জনসাধারণের কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয় না এবং কাজটিও অনুপকারী হয়। কারণ,

* মা‘কাল ইবন ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

«مَا مِنْ عَبْدٍ يَسْتَرْعِيهِ اللَّهُ رَعِيَّةً يَمُوتُ يَوْمَ يَمُوتُ وَهُوَ غَاشٌّ لِرَعِيَّتِهِ إِلاَّ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ ».

‘যাকে আল্লাহ জনগণের শাসক হিসেবে নিযুক্ত করেছেন, যদি প্রজাদের ধোঁকা দেয়া অবস্থায় তার মৃত্যু হয়, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।’[12]

এ হাদীসটি ব্যাপক অর্থবোধক। এটা গৃহকর্তা কর্তৃক তার পরিবার পরিচালনা এবং শাসক কর্তৃক তার রাষ্ট্র পরিচালনাকেও অন্তর্ভুক্ত করে। কারণ,

* ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

«أَلاَ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، فَالإِمَامُ الَّذِي عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ، وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى أَهْلِ بَيْتِ زَوْجِهَا، وَوَلَدِهِ وَهِيَ مَسْئُولَةٌ عَنْهُمْ، وَعَبْدُ الرَّجُلِ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُ، أَلاَ فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ»

‘মনে রেখো তোমরা প্রত্যেকেই অভিভাবক, তোমাদের প্রত্যেককে আপন আপন দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে, শাসক রক্ষক, অতএব তাকে তার প্রজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, গৃহকর্তা তার পরিবারের অভিভাবক, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে, স্ত্রী তার স্বামীর সংসারের দায়িত্বশীল, অতএব তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে যথাযথ হিসাব দিতে হবে, খাদেম তার মনিবের সম্পদের হিফাযতকারী, কাজেই সেও তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে, অতএব তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, সকলকে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে।’[13]

১০ম কারণ: প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা।

অর্থাৎ যে সকল সৃষ্টির প্রাণ তথা রূহ আছে, যেমন-মানুষ, জীব-জন্তু উত্যাদি। এ সকল প্রাণীর মূর্তি তৈরি বা চিত্রাঙ্কন করা। কারণ,

* ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:

«كُلُّ مُصَوِّرٍ فِي النَّارِ، يَجْعَلُ لَهُ، بِكُلِّ صُورَةٍ صَوَّرَهَا، نَفْسًا فَتُعَذِّبُهُ فِي جَهَنَّمَ»

‘প্রত্যেক অঙ্কনকারী জাহান্নামী, তার তৈরিকৃত বা অঙ্কিত প্রত্যেকটির আত্মা তার দেহে প্রবিষ্ট করে তাকে জাহান্নামে শাস্তি দেয়া হবে।’[14]

* বুখারীর অন্য বর্ণনায় এসেছে:

«مَنْ صَوَّرَ صُورَةً، فَإِنَّ اللَّهَ مُعَذِّبُهُ حَتَّى يَنْفُخَ فِيهَا الرُّوحَ، وَلَيْسَ بِنَافِخٍ فِيهَا أَبَدًا»

‘যে ব্যক্তি কোনো চিত্রাঙ্কন বা মূর্তি তৈরি করবে, অবশ্যই আল্লাহ তাকে ততক্ষণ শাস্তি প্রদান করতে থাকবেন, যতক্ষণ সে মুর্তি বা চিত্রে আত্মা সঞ্চার না করবে। অথচ সে কখনও তাতে আত্মা সঞ্চারে সক্ষম হবে না।’[15]

তবে ফল, বৃক্ষ, লতা-পাতা উদ্ভিদ ইত্যাদি যার বাড়ন্ত শরীর আছে কিন্তু প্রাণ নেই, এ ধরনের সৃষ্টির চিত্র আঁকতে কোনো অসুবিধা নেই। অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম এ মত পোষণ করেন।

* অবশ্য কিছু সংখ্যক আলেম সহীহ বুখারীর হাদীসের ব্যাপকতার কারণে তাও নিষেধ করেছেন। হাদীসটি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

«وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ كَخَلْقِي، فَلْيَخْلُقُوا ذَرَّةً أَوْ لِيَخْلُقُوا حَبَّةً أَوْ شَعِيرَةً»

‘তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে যে আমার সৃষ্টির অনুরূপ কিছু সৃষ্টি করতে চায়। সে একটি যব বা শষ্যদানা বা বিন্দু পরিমাণ একটা কিছু সৃষ্টি করে দেখায় না কেন?’[16]

১১তম কারণ: কঠোরত, কৃপণতা ও অহঙ্কার।

* হারেস ইবন ওয়াহাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ؟ كُلُّ عُتُلٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ»

‘আমি কি তোমাদের জাহান্নামীদের সম্পর্কে সংবাদ দেব না? তারা হচ্ছে প্রত্যেক কঠোরতাকারী, সম্পদ সঞ্চয়কারী কৃপণ ও অহংকারী।’[17]

(উতুল্ল) বলা হয় অত্যধিক কঠিন ব্যক্তি, যার হৃদয় সত্য গ্রহণ বা মানুষের জন্য বিগলিত হয় না।

(জাওয়ায) বলা, হয়, লোভী ও কৃপণকে। অর্থাৎ সে সম্পদ গচ্ছিত ও সঞ্চয়কারী এবং সম্পদ বিতরণে বাধা প্রদানকারী।

(মুস্তাকবির) যে অহঙ্কারবশত সত্যকে উপেক্ষা করে এবং মানুষের জন্য বিনম্র হয় না, যে নিজেকে মানুষ থেকে উঁচু ও বড় মনে করে এবং তার মতকে বাস্তবের বিপরীত হলেও সঠিক মনে করে।

১২ তম কারণ: পানাহারের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে স্বর্ণ-রৌপ্যে পাত্র ব্যবহার করা।

* বুখারী ও মুসলিমে উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সূত্রে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

«الَّذِي يَشْرَبُ فِي إِنَاءِ الفِضَّةِ إِنَّمَا يُجَرْجِرُ فِي بَطْنِهِ نَارَ جَهَنَّمَ»

‘যে ব্যক্তি রূপার পাত্রে পান করে, মূলত সে নিজ পেটে আগুন ভর্তি করে।’[18]

মুসলিমের অপর বর্ণনায় এসেছে:

«إِنَّ الَّذِي يَأْكُلُ أَوْ يَشْرَبُ فِي آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، فَإِنَّمَا يُجَرْجِرُ فِي بَطْنِهِ نَارَ جَهَنَّمَ» .

‘যে স্বর্ণ-রূপার পাত্রে খায় বা পান করে, সে মূলত স্বীয় পেটে জাহান্নামের আগুনই ভরে।’[19]

* ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তির হাতে স্বর্ণের আংটি দেখে তা খুলে নিক্ষেপ করে বললেন:

«يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ إِلَى جَمْرَةٍ مِنْ نَارٍ فَيَجْعَلُهَا فِي يَدِهِ»

‘তোমাদের কেউ কি করে আগুনের অঙ্গারের ইচ্ছা করে সেটাকে হাতে রেখে দেয়? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেলে তাকে বলা হলো, তোমার আংটিটি গ্রহণ কর এবং এর দ্বারা উপকৃত হও। তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! কখনো নয়, আমি সেটা নেবো না, কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ফেলে দিয়েছেন।’[20]

সুতরাং ভাইয়েরা আমার! আপনারা জাহান্নামে প্রবেশের কারণসমূহ থেকে সাবধান হোন এবং এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করুন যা আপনাদেরকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। এর ফলে স্থায়ী জান্নাত পেয়ে ধন্য হবেন। আর জেনে রাখুন! দুনিয়া তুচ্ছ বস্তু মাত্র, যা দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত।

কাজেই স্বীয় রবের দরবারে আজীবন সত্যের ওপর অটল থাকার প্রার্থনা করুন। আরও প্রার্থনা করুন তিনি যেন আপনাদেরকে এমন মুমিন পুরুষ ও নারীদের সাথে হাশর করান যাদের উপর আল্লাহ তার নেয়ামত প্রদান করেছেন।

হে আল্লাহ! নিজ দয়ায় আমাদেরকে হকের ওপর অটল রাখুন এবং তার ওপর মৃত্যু দান করুন। আর আমাদেরকে, আমাদের পিতা-মাতা ও সকল মুসলিমকে ক্ষমা করুন। হে শ্রেষ্ঠ দয়ালু!আর আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার-পরিজন এবং তাঁর সকল সাহাবীর প্রতি সালাত পেশ করুন।

[1] আহমাদ ২/৬৯; নাসাঈ ৫/৮০।

[2] বুখারী: ৫৯৮৪; মুসলিম: ২৫৫৫।

[3] বুখারী: ৪৮৩০; মুসলিম: ২৫৫৪।

[4] বুখারী: ৫৯৯১।

[5] মুসলিম: ২৫৫৮।

[6] ইবন মাজাহ: ২২৭৩; মুস্তাদরাকে হাকেম: ৪/৯৮। হাদিসটি বানোয়াট।

[7] কাশফুল খাফা: ২/৭১। তবে এর সনদ দুর্বল।

[8] তাবারানী ফিস সাগীর, ১/২৮। দুর্বল সনদে।

[9] আন-নিহায়া ফী গারীবিল আসার, ইবনুল আসীর কৃত ২/২২৬।

[10] আহমাদ ৫/৭৯; মুস্তাদরাকে হাকিম ৪/২৯৪, ২৯৫ নং ৫১৬৫।

[11] আবু দাউদ: ৩৫৭৩; তিরমিযী: ১৩২২; ইবন মাজাহ: ২৩১৫।

[12] বুখারী: ৭১৫০; মুসলিম: ১৪২।

[13] বুখারী: ৭১৩৮; মুসলিম: ১৮২৯।

[14] মুসলিম: ২১১০।

[15] বুখারী: ২২২৫।

[16] বুখারী: ৫৯৫৩; মুসলিম: ২১১১।

[17] বুখারী: ৪৯১৮; মুসলিম: ২৮৫৩।

[18] বুখারী: ৫৬৩৪; মুসলিম: ২০৬৫।

[19] মুসলিম: ২০৬৫।

[20] মুসলিম: ২০৯০।