সকল প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য যিনি দান করলে আটকানোর কেউ নেই এবং যিনি নিয়ে নিলে দান করার মতো কেউ নেই, শ্রমদাতাদের জন্য তাঁর আনুগত্য শ্রেষ্ঠ কামাই, তাকওয়া অর্জনকারীদের জন্য তাঁর তাকওয়া সর্বোচ্চ বংশপদবী। তিনি নিজ বন্ধুদের অন্তরসমূহকে ঈমানের জন্য প্রস্তুত ও তাতে তা লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন, তাদের জন্য তাঁর আনুগত্যের পথে যাবতীয় ক্লান্তিকে সহজ করে দিয়েছেন; ফলে তাঁর সেবার পথে তারা ন্যূনতম শ্রান্তিবোধ করে না। হতভাগারা যখন বক্রপথ অনুসরণ করেছে তখন তিনি তাদের জন্য দুর্ভাগ্য নির্ধারণ করেছেন, ফলে তারা নিপতিত হয়েছে নিশ্চিত ধ্বংসের চোরাবালিতে। তারা তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তার সাথে কুফরী করেছে ফলে তিনি তাদের দগ্ধ করেছেন লেলিহান আগুনে। আমি প্রশংসা করি তাঁর, তিনি যা আমাদের দান করেছেন এবং অনুগ্রহ করেছেন তার জন্য।
আমি সাক্ষ্য প্রদান করি যে একমাত্র তিনি ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই; তাঁর কোনো অংশীদার নেই, বাহিনীসমূহকে পরাজিত করেছেন এবং বিজয়ী হয়েছেন। আমি আরও সাক্ষ্য প্রদান করি যে মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল, যাকে আল্লাহ মনোনীত করেছেন এবং নির্বাচিত করেছেন।
দরূদ বর্ষিত হোক তাঁর ওপর, তাঁর সঙ্গী আবূ বকর সিদ্দীকের ওপর যিনি মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন, উমরের ওপর যাকে দেখে শয়তান ভেগে যায় এবং পলায়ন করে, উসমানের ওপর যিনি দুই নূরের অধিকারী (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একেরপর এক দুই মেয়ের জামাতা) শ্রেষ্ঠ আল্লাহভীরু ও উৎকৃষ্ট বংশীয় ব্যক্তি, আলীর ওপর যিনি তাঁর জামাই এবং বংশগত দিক থেকে চাচাতো ভাই এবং তাঁর অবশিষ্ট সব সাহাবীর ওপর যারা দীনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গর্ব ও অর্জন কামাই করেছেন আর সকল তাবেঈ-অনুসারীর ওপর যারা তাঁদের সর্বোত্তম অনুসরণ করে পূর্ব-পশ্চিমকে আলোকিত করেছেন। অনুরূপ যথাযথ সালামও বর্ষণ করুন।
আমার ভাইয়েরা! নিশ্চয় রমযানের সিয়াম ইসলামের অন্যতম রুকন ও গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।
* আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣ أَيَّامٗا مَّعۡدُودَٰتٖۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۚ وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُۥ فِدۡيَةٞ طَعَامُ مِسۡكِينٖۖ فَمَن تَطَوَّعَ خَيۡرٗا فَهُوَ خَيۡرٞ لَّهُۥۚ وَأَن تَصُومُواْ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ١٨٤ شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ هُدٗى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٖ مِّنَ ٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡفُرۡقَانِۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ وَلِتُكۡمِلُواْ ٱلۡعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمۡ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ١٨٥ ﴾ [البقرة: ١٨٣، ١٨٥]
‘হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর। নির্দিষ্ট কয়েক দিন। তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হবে, কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে অন্যান্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদয়া- একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা। অতএব যে স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত সৎকাজ করবে, তা তার জন্য কল্যাণকর হবে। আর সিয়াম পালন তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জান। রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।’ (সূরা আল-বাক্বারা, আয়াত: ১৮৩-১৮৫)
* হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
«بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ، شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، وَإِقَامِ الصَّلَاةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَحَجِّ الْبَيْتِ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ»
‘ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি, এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সত্যিকারের কোনো মা‘বুদ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, সালাত প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত প্রদান করা, বাইতুল্লাহর হজ করা এবং রমযানের সিয়াম পালন করা।’[1] বুখারী ও মুসলিম।
মুসলিমে ‘রমযানের রোযা রাখা’ এরপর ‘বাইতুল্লায় হজ করা’ এভাবে এসেছে।
রমযানের সিয়ামের ব্যাপারে সকল মুসলিম ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, এটা ফরয। এটা ইসলামে স্পষ্টত অকাট্য ইজমা।
সুতরাং যে ব্যক্তি সিয়াম ফরয হওয়াকে অস্বীকার করবে সে কাফের হয়ে যাবে। তখন তাকে তাওবা করতে বলা হবে। যদি তাওবা করে, সিয়ামের ফরযিয়্যাত স্বীকার করে তবে ভালো কথা অন্যথায় কাফির ও মুরতাদ হওয়ার কারণে তাকে হত্যা করা হবে। তাকে মৃত্যুর পর গোসল দেয়া হবে না এবং কাফন পরানো হবে না, তার নামাযে জানাযা পড়া হবে না এবং তার জন্য রহমতের দো‘আ করা হবে না। তাকে মুসলিমদের করবস্থানে দাফন করা হবে না। কেবল দূরবর্তী কোনো স্থানে তার জন্য কবর খনন করা হবে এবং দাফন করা হবে, যাতে মানুষ তার গলিত লাশের দুর্গন্ধে কষ্ট না পায় এবং তাকে দেখে তার পরিবার পরিজনও যেন দুঃখ না পায়।রমযানের সিয়াম দ্বিতীয় হিজরীতে ফরয হয়েছে। ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয় বছর রমযানের সিয়াম পালন করেছেন।