অতঃপর শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেন,
أَمَّا بَعْدُ فَهَذَا اعْتِقَادُ الْفِرْقَةِ النَّاجِيَةِ الْمَنْصُورَةِ إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ: أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ
অতঃপর এই হচ্ছে কিয়ামত পর্যন্ত আগমণকারী মানুষদের মধ্য হতে নাজাত ও সাহায্য প্রাপ্ত দল তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের লোকদের আকীদাহ।
ব্যাখ্যা: বাক্যের এক রীতি থেকে অন্য রীতিতে স্থানান্তরিত হওয়ার সময় আরবী ভাষায় أما بعد ব্যবহার করা হয়। ভাষণ দেয়ার সময় এবং চিঠি লিখার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণ করে أما بعد ব্যবহার করা সুন্নাত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবা দেয়া এবং চিঠি লিখার সময় ‘আম্মা বা’দ’ ব্যবহার করতেন।
এই কিতাবটি সংক্ষিপ্তভাবে ইসলামী আকীদাহ্ ও ঈমানের যেসব বিষয়কে শামিল করেছে, শাইখুল ইসলাম هذا ইসমে ইশারার মাধ্যমে সে দিকেই ইংগিত করেছেন। শাইখুল ইসলামهو الإيمان بالله.....الخ দ্বারা আকীদাহর বিষয়গুলোর বর্ণনা শুরু করেছেন।
اعتقاد শব্দটি বাবে ইফতিআলের মাসদার (ক্রিয়ামূল)। বলা হয় اعتقد كذا সে এ রকম আকীদাহ গ্রহণ করেছে। ইহা ঠিক ঐ সময়ই বলা হয়, যখন কেউ কোন বিষয়কে তার নিজের আকীদাহ হিসাবে গ্রহণ করে। আর যে বিষয়ের সাথে মানুষ তার অন্তরের বন্ধন তৈরী করে উহাকে আকীদাহ বলা হয়। যেমন আপনি বলে থাকেনঃ اعتقدت عليه القلب والضمير ‘‘আমি এই বিশ্বাসের উপর অন্তর-মনকে বেধে দিয়েছি। আকীদাহ শব্দটি আরবদের কথাعقد الحبل إذا ربطه থেকে নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ সে তাকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখল। এই কথা ঠিক ঐ সময় বলা হয়, যখন সে কোন জিনিষকে রশি দিয়ে বেধে রাখে। অতঃপর এই শব্দটি অন্তরের বিশ্বাস ও সুদৃঢ় সংকল্পের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
ফির্কাহ অর্থ হচ্ছে দল ও জামাআত। নাজী ফির্কা ঐ জামাআতকে বলা হয়, যারা দুনিয়া ও আখেরাতে ধ্বংস ও অকল্যাণ থেকে রেহাই পাবে। তাদের বৈশিষ্ট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই হাদীছ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেনঃ
(وَلاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذلهُمْ حَتَّى يَأْتِيَ أَمْرُ اللَّهِ عَزَّ وَجَل)
‘‘আমার উম্মতের একটি দল সবসময় হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। যেসমস্ত লোক তাদেরকে পরিত্যাগ করবে তারা কিয়ামত পর্যন্ত সেই দলটির কোন ক্ষতি করতে পারবে না’’।[1]
المنصورة সাহায্যপ্রাপ্ত: অর্থাৎ তারা কিয়ামত পর্যন্ত তাদের বিরোধীদের উপর আল্লাহর সাহায্য ও মদদ পেয়ে শক্তিশালী থাকবে। এখানে ‘কিয়ামত পর্যন্ত’ কথাটির মর্ম হচ্ছে কিয়ামতের আগে যেই বাতাস এসে প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তির রূহ কবয করবে, সেই বাতাস আসার সময় উদ্দেশ্য। এই বাতাসই হবে সেই সময়ের মুমিনদের জন্য কিয়ামত স্বরূপ।
আর যেই কিয়ামতের দিন দুনিয়ার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে, তা কেবল নিকৃষ্টতম লোকদের উপরই কায়েম হবে। যেমন সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى لَا يُقَالَ فِي الْأَرْضِ اللَّهُ اللَّهُ
‘‘যতদিন পৃথিবীতে আল্লাহ আল্লাহ বলা হবে, ততদিন কিয়ামত হবেনা’’। ইমাম আবু আব্দুল্লাহ হাকিম আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘কিয়ামতের পূর্বে আল্লাহ তাআলা সুন্দর একটি বাতাস প্রেরণ করবেন। এই বাতাসের সুঘ্রাণ হবে কস্ত্তরীর সুঘ্রাণের মত এবং রেশমের মত নরম। সেদিন যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান থাকবে সেও এই বাতাসের কারণে মৃত্যু বরণ করবে। এরপর কেবল খারাপ লোকেরাই বেঁচে থাকবে। এই নিকৃষ্ট লোকদের উপরই কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে।[2]
[2] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান।