عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، وَأَبِيْ ذَرٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالاَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ اللهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَنَّهُ قَالَ يَا ابْنَ آدَمَ ارْكَعْ لِيْ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ مِنْ أَوَّلِ النَّهَارِ أَكْفِكَ آخِرَهُ-
আবু দারদা ও আবু যার গিফারী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি আমার জন্য দিনের প্রথমাংশে চার রাক‘আত ছালাত আদায় কর। আমি দিনের শেষাংশে তোমার জন্য যথেষ্ট হব’। অর্থাৎ আমি দিনের শেষাংশেই তোমার উদ্দেশ্য পূর্ণ করব (তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, আলবানী, তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/১৩১৩; বাংলা মিশকাত হা/১২৩৮)।
এ হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, মানুষ যে আশা নিয়ে দিনের প্রথমাংশে চাশতের ছালাত আদায় করবে, দিনের শেষাংশে আল্লাহ তার সে আশা পূর্ণ করবেন।
عَنْ عُثْمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَوَضَّأَ وُضُوْئِيْ هَذَا ثُمَّ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ لَا يُحَدِّثُ نَفْسَهُ فِيْهِمَا بِشَيْءٍ إِلَّا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ-
ওছমান (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) ওযূর বিস্তারিত নিয়ম পেশ করার পর বললেন, যে ব্যক্তি আমার এই ওযূর ন্যায় ওযূ করবে অতঃপর দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, যাতে সে আপন মনে আল্লাহর ভয়-ভীতি ছাড়া অন্য কিছু ভাববে না, তার পূর্বেকার সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’ (বুখারী, মিশকাত হা/২৮৭, বাংলা মিশকাত হা/২৬৭)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মানুষ ওযূ করার পর খালিছ অন্তরে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করলে বড় সফলতা অর্জন করবে। তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ وُضُوْءَهُ ثُمَّ يَقُوْمُ فَيُصَلِّيْ رَكْعَتَيْنِ مُقْبِلٌ عَلَيْهِمَا بِقَلْبِهِ وَوَجْهِهِ إِلَّا وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ-
ওকবা ইবনু আমের (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে কোন মুসলমান উত্তমরূপে ওযূ করে অন্তর ও স্বীয় মুখমণ্ডলকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে, তার জন্য জান্নাত যরূরী হয়ে যায়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৮৬, বাংলা মিশকাত হা/২৬৮)।
অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যে কোন মুসলমান সুন্দর করে ওযূ করার পর মনে প্রাণে ভয়-ভীতি নিয়ে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করলে, তার জন্য জান্নাত যরূরী হয়ে যাবে।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِبِلاَلٍ عِنْدَ صَلاَةِ الْفَجْرِ يَا بِلاَلُ، حَدِّثْنِيْ بِأَرْجَى عَمَلٍ عَمِلْتَهُ فِي الإِسْلاَمِ، فَإنِّيْ سَمِعْتُ دَفَّ نَعْلَيْكَ بَيْنَ يَدَيَّ في الجَنَّةِ، قَالَ : مَا عَمِلْتُ عَمَلاً أرْجَى عِنْديْ مِنْ أَنِّيْ لَمْ أَتَطَهَّرْ طُهُوْرًا فِيْ سَاعَةٍ مِنْ لَيْلٍ أَوْ نَهَارٍ إِلاَّ صَلَّيْتُ بِذَلِكَ الطُّهُوْرِ مَا كُتِبَ لِيْ أنْ أُصَلِّيَ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) ফজরের ছালাতের পর বেলাল (রাঃ)কে বললেন, বেলাল! বল দেখি তুমি মুসলমান হওয়ার পর এমন কি আমল কর, যার নেকীর আশা তুমি অধিক পরিমাণে কর? কেননা আমি জান্নাতে তোমার জুতার শব্দ আমার সম্মুখে শুনতে পাচ্ছি। তখন বেলাল (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এছাড়া কোন আমল করি না যা আমার নিকট অধিক নেকীর কারণ হতে পারে। আমি রাতে বা দিনে যখনই ওযূ করি তখনই সে ওযূ দ্বারা (দু’রাক‘আত) ছালাত আদায় করি যা আদায় করার তাওফীক আমাকে দিয়েছেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৩২২, বাংলা মিশকাত হা/১২৪৬)।
عَنْ بُرَيْدَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ أَصْبَحَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَدَعَا بِلاَلاً فَقَالَ بِمَا سَبَقْتَنِي إلَى الْجَنَّةِ، مَا دَخَلْتُ الْجَنَّةَ قَطُّ إِلَّا سَمِعْتُ خَشْخَشَتَكَ أَمَامِيْ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا أَذَّنْتُ قَطُّ إِلَّا صَلَّيْتُ رَكْعَتَيْنِ وَمَا أَصَابَنِيْ حَدَثٌ قَطُّ إِلَّا تَوَضَّأْتُ عِنْدَهَا وَرَأَيْتُ أَنَّ لِلَّهِ عَلَيَّ رَكْعَتَيْنِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِهِمَا-
বুরায়দা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) সকালে উঠে বেলাল (রাঃ) কে ডাকলেন এবং বললেন, বেলাল! কি কাজের বিনিময়ে তুমি আমার পূর্বে জান্নাতে পৌঁছলে? আমি যখনই জান্নাতে প্রবেশ করি, তখনই আমার সম্মুখে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পাই। বেলাল (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি যখনই আযান দিয়েছি তখনই দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করেছি। আর যখনই আমার ওযূ ভেঙ্গেছে তখনই আমি ওযূ করেছি এবং মনে করেছি আল্লাহর উদ্দেশ্যে আমাকে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বললেন, এই দুই কাজের দরুণই তুমি জান্নাতে আমার আগে আগে জুতা পায়ে দিয়ে চল’ (তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/১৩২৬, বাংলা মিশকাত হা/১২৫০)। উল্লিখিত হাদীছ দু’টি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ওযূর পরে সর্বদা দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতে পারলে বড় সাফল্য অর্জন করা যাবে।
আমর ইবনু আবু সুফিয়ান (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) দশ ব্যক্তিকে গোয়েন্দা হিসাবে সংবাদ সংগ্রহের জন্য পাঠালেন এবং আছিম ইবনু ছাবিত আনছারীকে তাঁদের দলপতি নিয়োগ করেন। যিনি আছিম ইবনু ওমর ইবনিল খাত্ত্বাবের নানা ছিলেন। তাঁরা রওয়ানা করলেন, যখন তাঁরা উসফান ও মক্কার মাঝে হাদাআত নামক স্থানে পৌঁছেন, তখন হুযায়েল গোত্রের একটি শাখা যাদেরকে লেহইয়ান বলা হয় তাদের নিকট তাঁদের ব্যাপারে আলোচনা করা হয়। তারা প্রায় দু’শত তীরন্দাজকে তাঁদের পিছু ধাওয়া করার জন্য পাঠান। এরা তাঁদের চিহ্ন দেখে চলতে থাকে। ছাহাবীগণ মদীনা হতে সঙ্গে নিয়ে আসা খেজুর যেখানে বসে খেয়েছিলেন, অবশেষে এরা সে স্থানের সন্ধান পেয়ে গেল, তখন এরা বলল, ইয়াছরিবের খেজুর। অতঃপর এরা তাঁদের পদচিহ্ন দেখে চলতে লাগল। যখন আছিম ও তাঁর সাথীগণ এদের দেখলেন, তখন তাঁরা একটি উঁচু স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করলেন। আর কাফিররা তাঁদের ঘিরে ফেলল এবং তাঁদেরকে বলতে লাগল, তোমরা অবতরণ কর ও স্বেচ্ছায় বন্দীত্ব বরণ কর। আমরা তোমাদের অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, তোমাদের মধ্য হতে কাউকে আমরা হত্যা করব না। তখন গোয়েন্দা দলের নেতা আছিম ইবনু ছাবিত (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তো আজ কাফিরদের নিরাপত্তায় অবতরণ করব না। হে আল্লাহ! আমাদের পক্ষ থেকে আপনার নবীকে সংবাদ পৌঁছে দিন। অবশেষে কাফিররা তীর নিক্ষেপ করতে শুরু করল। আর তারা আছিম (রাঃ) সহ সাত জনকে শহীদ করল। অতঃপর অবশিষ্ট তিনজন খুবাইব আনছারী, যায়েদ ইবনু দাসিনা (রাঃ) ও অপর একজন তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের উপর নির্ভর করে তাদের নিকট অবতরণ করলেন। যখন কাফিররা তাদেরকে আয়ত্তে নিয়ে নিল, তখন তারা তাদের ধনুকের রশি খুলে ফেলে তাঁদের বেঁধে ফেলল। তখন তৃতীয় জন বলে উঠলেন, গোড়াতেই বিশ্বাসঘাতকতা! আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের সঙ্গে যাব না, যারা শহীদ হয়েছেন আমি তাঁদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করব। কাফিররা তাঁকে শহীদ করে ফেলে এবং তারা খুবাইব ও ইবনু দাসিনাকে নিয়ে চলে যায়। অবশেষে তাঁদের উভয়কে মক্কায় বিক্রয় করে দেয়। এটা বদর যুদ্ধের পরের কথা। তখন খুবাইবকে হারিছ ইবনু আমিরের পুত্ররা ক্রয় করে নেয়। আর বদর যুদ্ধের দিন খুবাইব (রাঃ) হারিছ ইবনু আমিরকে হত্যা করেছিলেন। খুবাইব (রাঃ) কিছু দিন তাদের নিকট বন্দী থাকেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, আমাকে ওবায়দুল্লাহ ইবনু আয়ায অবহিত করেছেন, তাঁকে হারিছের কন্যা জানিয়েছে যে, যখন হারিছের পুত্রগণ খুবাইব (রাঃ)-কে শহীদ করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিল, তখন তিনি তার কাছ থেকে ক্ষৌর কাজ সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে একটা ক্ষুর ধার চাইলেন। তখন হারিছের কন্যা তাকে একখানা ক্ষুর ধার দিল। সে সময় ঘটনাক্রমে আমার ছেলে আমার অজ্ঞাতে খুবাইবের নিকট চলে যায় এবং আমি দেখলাম যে, আমার ছেলে খুবাইবের উরুর উপর বসে আছে এবং খুবাইবের হাতে রয়েছে ক্ষুর। আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। খুবাইব আমার চেহারা দেখে বুঝতে পারলেন যে, আমি ভয় পাচ্ছি। তখন তিনি বললেন, তুমি কি এ ভয় কর যে, আমি শিশুটিকে হত্যা করে ফেলব? কখনও আমি তা করব না। আল্লাহর কসম! আমি খুবাইবের মত উত্তম বন্দী কখনো দেখিনি। আল্লাহর শপথ! আমি একদা দেখলাম, তিনি লোহার শিকলে আবদ্ধ অবস্থায় ছড়া হতে আঙ্গুর খাচ্ছেন, যা তাঁর হাতেই ছিল। অথচ এ সময় মক্কায় কোন ফলই পাওয়া যাচ্ছিল না। হারিছের কন্যা বলতো, এ তো ছিল আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে প্রদত্ত জীবিকা, যা তিনি খুবাইবকে দান করেছেন। অতঃপর তারা খুবাইবকে শহীদ করার উদ্দেশ্যে হারাম-এর নিকট হতে হিলের দিকে নিয়ে বের হয়ে পড়ল, তখন খুবাইব (রাঃ) তাদের বললেন, আমাকে দু’রাকা‘আত ছালাত আদায় করতে দাও। তারা তাঁকে সে অনুমতি দিল। তিনি দু’রাকা‘আত ছালাত আদায় করে নিলেন। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা যদি ধারণা না করতে যে, আমি মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছি, তবে আমি ছালাতকে দীর্ঘ করতাম। হে আল্লাহ! তাদেরকে এক এক করে ধ্বংস করুন। (অতঃপর তিনি এ কবিতা দু’টি আবৃত্তি করলেন)।
‘যখন আমি মুসলিম হিসাবে শহীদ হচ্ছি তখন আমি কোনরূপ ভয় করি না।
আল্লাহর উদ্দেশ্যে আমাকে যেখানেই মাটিতে লুটিয়ে ফেলা হোক না কেন।
আমার এ মৃত্যু আল্লাহ তা‘আলার জন্যই হচ্ছে। তিনি যদি ইচ্ছা করেন,
তবে আমার দেহের প্রতিটি খন্ডিত জোড়াসমূহে বরকত সৃষ্টি করে দিবেন।’
অবশেষে হারিছের পুত্র তাঁকে শহীদ করে ফেলে। বস্ত্তত যে মুসলিম ব্যক্তিকে বন্দী অবস্থায় শহীদ করা হয়, তার জন্য দু’রাকা‘আত ছালাত আদায়ের এ রীতি খুবাইব (রাঃ)ই প্রবর্তন করে গেছেন। যে দিন আছিম (রাঃ) শাহাদত বরণ করেছিলেন, সেদিন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দো‘আ কবুল করেছিলেন। সেদিনই আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাঁর ছাহাবীগণকে তাঁদের সংবাদ ও তাঁদের উপর যা যা আপতিত হয়েছিল সবই অবহিত করেছিলেন। আর যখন কুরাইশ কাফিরদেরকে এ সংবাদ পৌঁছানো হয় যে, আছিম (রাঃ)-কে শহীদ করা হয়েছে, তখন তারা তাঁর কাছে এক লোককে পাঠায়, যাতে সে ব্যক্তি তাঁর লাশ হতে কিছু অংশ কেটে নিয়ে আসে, যাতে তারা তা দেখে চিনতে পারে। কারণ বদর যুদ্ধের দিন আছিম (রাঃ) কুরাইশদের এক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলেন। আছিমের লাশের (রক্ষার জন্য) মৌমাছির ঝাঁক প্রেরিত হল, যারা তাঁর দেহ আবৃত করে রেখে তাদের ষড়যন্ত্র হতে হিফাযত করল। ফলে তারা তাঁর শরীর হতে এক খন্ড মাংসও কেটে নিতে পারেনি (বুখারী হা/৩০৪৫)। এ হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, যখন কোন মুসলিমকে শুলে বা ফাসিতে চড়ানোর সময় আসবে তখন সে দু’রাকা‘আত ছালাত আদায় করবে।