প্রশ্ন: আমাকে এক ভাই দুই হাজার তিউনিসি মুদ্রা কর্জ দিলেন। চুক্তিপত্র লেখার সময় টাকার অঙ্ক উল্লেখ করা হলো জার্মানি মুদ্রায়। তারপর ঋণের মেয়াদ তথা বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর দেখা গেল জার্মানি মুদ্রার মান বেড়ে গেছে। ফলে আমি যখন চুক্তিনামায় উল্লেখিত পরিমাণ টাকা পরিশোধ করলাম, দেখা গেল তাকে তিনশ তিউনিসি মুদ্রা বেশি দেয়া হয়েছে। এখন জিজ্ঞাস্য হলো, আমার ঋণদাতার জন্য এ অতিরিক্ত টাকা নেয়া বৈধ হবে কি? নাকি তা সুদ বলে গণ্য হবে? প্রকাশ থাকে যে, সে চায় আমি জার্মানি মুদ্রায় তার প্রাপ্য টাকা পরিশোধ করি। যেন সে জার্মানি থেকে গাড়ি কিনতে পারে।
উত্তর: ঋণদাতার জন্য আপনাকে যত টাকা কর্জ দিয়েছে অর্থাৎ দুই হাজার তিউনিসি মুদ্রা-এর অতিরিক্ত নেয়া বৈধ হবে না। তবে আপনি যদি উদারতা দেখিয়ে একটু বেশি দেন সেটা ভিন্ন কথা। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-‘লোকদের মধ্যে সেই উত্তম যে তাদের মাঝে ঋণ পরিশোধের বেলায় উত্তম।’ হাদিসটি এভাবে মুসলিম শরিফে বর্ণিত হয়েছে।[1] বুখারিতে এসেছে এভাবে- ‘সর্বোত্তম লোকদের মধ্যে অন্যতম সেই ব্যক্তি যে ভালোভাবে কর্জ আদায় করে।’[2]
আর উল্লেখিত চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে। এর কোনো মূল্য নেই। আমলও করা হবে না সে অনুযায়ী। কারণ এটা শরিয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ চুক্তি। শরিয়তের অসংখ্য দলিল প্রমাণ করে যে, কর্জ নেয়া টাকা তার অনুরূপ পরিমাণ দিয়েই পরিশোধ করতে হয়। তবে যদি ঋণগ্রহীতা উপকারের বদলা হিসেবে কিছু বেশি দেয় তাহলে সেটা উল্লেখিত হাদিসের কারণে বৈধ হবে।[3]
প্রশ্ন: আমার এক মিশর প্রবাসী আত্মীয় আমার কাছে ২৫০০ মিশরি পাউন্ড কর্জ চাইলেন। আমি তার উদ্দেশে ২০০০ ডলার পাঠালাম- যা বিক্রি করে তিনি ২৪৯০ মিশরি পাউন্ড পেলেন। তখন আমরা পরিশোধের ধরন বা তারিখ কোনোটাই উল্লেখ করিনি। ইদানীং তিনি আমার প্রাপ্য পরিশোধ করতে চাচ্ছেন। এখন প্রশ্ন হলো, আমি কি তার থেকে ২৪৯০ মিশরি পাউন্ড নিব- যা বর্তমানে ১৮০০ ডলার সম পরিমাণ না-কি ২০০০ ডলার- যা তাকে ২৮০০ মিশরি পাউন্ড দিয়ে কিনতে হবে?
উত্তর: তার জন্য ওয়াজিব যত ডলার সে কর্জ নিয়েছে তা-ই পরিশোধ করা। কারণ এটাই মূল এমাউন্ট যা সে কর্জ নিয়েছে। তবে উভয়ে একমত হয়ে যদি আপনি পাউন্ড নিতে রাজি হন তাহলে কোনো সমস্যা নেই। ইবনে উমর রা. বলেন, ‘আমরা বকি’ নামক স্থানে দিরহাম দিয়ে উট বিক্রি করতাম পরে আবার দিরহামের বদলে দিনার গ্রহণ করতাম। তেমনি দিনার দিয়ে উট বিক্রি করতাম তারপর দিরহাম গ্রহণ করতাম। এতদশ্রবণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, ‘যতক্ষণ তোমরা (চুক্তির স্থান থেকে) আলাদা না হবে ততক্ষণ বিক্রিত উট তার মূল্য দিয়ে (সেটা যা-ই হোক না কেন) বিক্রি করায় কোনো সমস্যা নেই।[4] আলোচ্য মাসআলায় মুদ্রা বিক্রি করা হচ্ছে ভিন্ন জাতের মুদ্রা দিয়ে যা ঠিক স্বর্ণ দিয়ে রৌপ্য বিক্রির মতো।
সুতরাং আপনারা যখন একমত যে তিনি আপনাকে ডলারের পরিবর্তে মিশরি পাউন্ড দিবেন এ শর্তে যে একমত হওয়ার সময়ের চেয়ে বেশি মূল্য নিবেন না তাহলে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। অতএব আজ যদি ২০০০ ডলারের মূল্য হয় ২৮০০ পাউন্ড তাহলে আপনি ৩০০০ পাউন্ড নিতে পারবেন না। হ্যা শুধু ২৮০০ পাউন্ড নিতে পারবেন আবার শুধু ২০০০ ডলারও নিতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি হয়তো আজকের দরে নিবেন নয়তো তার চেয়ে কমে। এককথায় বেশি নিতে পারবেন না। বেশি নিলে সেটা আপনার দায়িত্ব বহির্ভূত লাভ বলে গণ্য হবে। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দায় বহির্ভূত লাভ গ্রহণ থেকে বারণ করেছেন। তবে যদি কম নেন তাহলে ধরা হবে যে, আপনি কিছু নিয়েছেন আর বাকিটা ক্ষমা করে দিয়েছেন। আর এতে কোনো সমস্যা নেই।[5]
[2]. বুখারি : ২৩০৬
[3]. ইসলামি ফতোয়া সংকলন : ২/৪১৪
[4]. আবু দাউদ : ৩৩৪৫, নাসায়ি : ৫০-৫২
[5]. ইসলামি ফতোয়া সংকলন : ২/৪১৪-৪১৫