কখনো কখনো[1] “নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর অর্থাৎ বেজোড় রাকাআত বিশিষ্ট ছলাতে কুনুত করতেন।” আর “তা করতেন রুকূ’র পূর্বে”।[2]
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান বিন আলী (রাযিঃ)-কে বিতরের কিরা'আত শেষ করে এ দু'আটি বলতে শিখিয়েছিলেনঃ
اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِي شَرَّمَا قْضَيْتَ، (فَ)إنَّكَ تَقْضِيْ وَلاَ يُقْضٰى عَلَيْكَ (وَ)إِنَّهُ لا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، (وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ) تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ (لاَ مَنْجَا مِنْكَ إلاَّ إلَيْكَ)
আল্লা-হুম্মাহদিনী ফকীমান হাদাইতা ওয়া আ-ফিনী ফকীমান ‘আ-ফাইতা ওয়া তাওয়ালালানী ফীমান তাওয়াল্লাইত ওয়া বা-রিকলী ফী-মা আতাইতা ওয়া ক্বিনী শাররা মা-কাযাইতা, ফাইন্নাকা তাকযী ওয়ালা- ইউকযা- 'আলাইকা ইন্নাহু লা-ইয়াযিল্লু মাউওয়া-লাইতা ওয়ালা- ইয়া ইযযু মান আ-দাইত[3] তাবা-রাকতা রাব্বানা- ওয়া তা'আ-লাইত, লা-মানজা মিনকা ইল্লা ইলাইকা।[4]
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাকে সঠিক পথ দেখিয়ে তাদের অন্তৰ্গত করো যাদের তুমি হেদায়াত করেছ, আমাকে নিরাপদে রেখে তাদের মধ্যে শামিল করো যাদের তুমি নিরাপদে রেখেছি। তুমি আমার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করে তাদের মধ্যে শামিল কর যাদের তুমি অভিভাবক হয়েছ। তুমি আমাকে যা দান করেছ তার মধ্যে বরকত দাও। তুমি আমাকে সেই অনিষ্ট থেকে রক্ষা কর যা তুমি নির্ধারণ করেছ, কারণ তুমি ফয়সালাকারী এবং তোমার উপর কারো ফয়সালা কার্যকর হয় না। তুমি যার সাথে মিত্ৰতা পোষণ কর তাকে কেউ লাঞ্ছিত করতে পারে না। [আর যার সাথে শক্ৰতা পোষণ করা সে কখনো সম্মানী হতে পারে না।] হে আমাদের রব! তুমি খুবই বরকতময়, সুউচ্চ ও সুমহান। তোমার থেকে পরিত্রাণের স্থল কেবল তোমার নিকটেই রয়েছে।
[2] ইবনু আবী শাইবাহ (১২/৪১/১), আবু দাউদ, নাসাঈ “আসসুনানুল কুবরা”-তে (কাফ ২১৮/১-২), আহমাদ, ত্বাবারানী, বাইহাকী ও “ইবনু আসাকির (৪/২৪৪/২) ছহীহ সনদে, আর তার থেকে ইবনু মানদাহ স্বীয় “আততাওহীদ” গ্রন্থে (৭০/২) শুধু দুআ উদ্ধৃত করেছেন অন্য একটি হাসান সনদে, আর এটি ইরওয়াতেও উদ্ধৃত হয়েছে। (৪২৬)
জ্ঞাতব্যঃ নাসাঈ কুনুতের শেষে এই বর্ধিত অংশ উল্লেখ করেছেনঃ وصلى الله على النبى الأمى আল্লাহ ছলাত বর্ষণ করুন নিরক্ষর নবীর উপর। এর সনদ যঈফ। একে যাঈফ বলেছেন হাফিয ইবনু হাজার, কাসত্বলানী, যুরকানী ও অন্যান্যগণ। এজন্যই বর্ধিত অংশাবলী একত্রিত করার ক্ষেত্রে আমাদের রীতি অনুযায়ী এখানে তা উল্লেখ করলাম না। বরং বই এর ভূমিকায় উল্লেখিত আমাদের শর্তসাপেক্ষে তা উল্লেখ করা থেকে ক্ষান্ত থাকলাম।
ইযয বিন আব্দুস সালাম তার “আল ফাতাওয়া” গ্রন্থে বলেছেন (১/৬৬, বর্ষ ১৯৬২) “কুনুতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ছলাত পাঠ ছহীহ সূত্রে সাব্যস্ত হয়নি এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ছলাত পাঠের অতিরিক্ত কিছু পাঠ করা উচিত নয়।” তাঁর এ বক্তব্য দ্বারা এটাই ইঙ্গিত করেছেন যে, বিদআতে হাসানা বলার অবকাশ সৃষ্টি করা যাবে না। যেমন বর্তমান যুগের কিছু লোক বলে থাকে।
শাইখ আলবানী বলেন, পরবর্তীতে যা উদঘাটন করেছি তা হলো এই যে, রামাযানের কিয়ামুল্লাইলে উবাই বিন কা'ব (রাযিঃ)-এর ইমামতের হাদীছে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি কুনুতের শেষে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ছলাত পাঠ করতেন। আর তা ছিল উমর (রাযিঃ)-এর যুগে। এ হাদীছ বর্ণনা করেছেন ইবনু খুযাইমাহ তার “ছহীহ” গ্রন্থে (১০৯৭)। অনুরূপ বিষয় সাব্যস্ত হয়েছে আবু হালীমাহ মুআয আল-আনছারীর হাদীছেও। তিনিও তাঁর (উমারের) যুগে লোকদের ইমামতি করতেন। এটি বর্ণনা করেছেন ইসমাঈল কাযী (হাদীস নং ১০৭) ও অন্যান্যগণ। অতএব, সালাফগণের আমলের দরুণ এ বর্ধিত অংশটুকু শরীয়ত সম্মত। সুতরাং সাধারণভাবে এ বর্ধিত অংশ বলাকে বিদ'আত বলা সমীচীন হবে না। আল্লাহই সৰ্বজ্ঞ।
[3] এ বর্ধিত অংশটুকু হাদীছে সাব্যস্ত হয়েছে। যেমনটি বলেছেন, হাফিয (ইবনু হাজার) তার “তালখীছ” গ্রন্থে। আমি এটি তদন্ত করে সাব্যস্ত করেছি “মূল গ্রন্থে”। এ তথ্য ইমাম নববীর জ্ঞানগোচর হয়নি যার ফলে তিনি (আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন) তার “রাওযাতুত্ব ত্বা-লিবীন” গ্রন্থে (১/২৫৩ পৃঃ ইসলামী লাইব্রেরী ছাপা) স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে, এ অংশটুকু আলিমগণের পক্ষ থেকে বৃদ্ধিকৃত। যেমন তারা বৃদ্ধি করেছেনঃ فلك الحمد على ما قضيت استغفرك وأتوب اليك আপনার প্রশংসা করি এবং আপনার নিকট ক্ষমা চাই ও তাওবাহ করি। বড় আশ্চর্যের বিষয় এই যে, কয়েক লাইনের পরেই তিনি বলেছেনঃ কাযী আবূত্ ত্বইয়িব কর্তৃক ولا يعز من عاديت অস্বীকার করায় ঐক্যবদ্ধভাবে সকলে তার প্রতি কঠোরতা পোষণ করেছেন। অথচ বাইহাকীর বর্ণনাতে এঅংশটুকু এসেছে। আল্লাহই অধিক জ্ঞানী।
[4] ইবনু খুযাইমাহ (১/১১৯/২) অনুরূপভাবে ইবুন আবী শাইবাহ এবং যাদেরকে তার সাথে পূর্ববর্তী উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।